পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
চা-বাগানের সবুজের সমারোহ, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের গর্জন আর ঐতিহাসিক স্থানসমূহ মিলে মৌলভীবাজার হয়ে উঠেছে প্রকৃতি ও ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। এ জেলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে মানুষ ফিরে পায় এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি ও স্বস্তি।
চলুন জেনে নেয় মৌলভীবাজারের ১০ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। এগুলো হলো— মণিপুরি জাদুঘর, চা জাদুঘর, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর চা বাগান ও হ্রদ, পাথারিয়া পাহাড়, শ্রীমঙ্গল চা বাগান, হাইল হাওর-বাইক্কা বিল, হাকালুকি হাওর ও হামহাম জলপ্রপাত।
মণিপুরি জাদুঘর
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় মণিপুরি জাদুঘর অবস্থিত। এতে রয়েছে কয়েকশ বছরের পুরোনো ঘণ্টা, যুদ্ধে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জিনিসপত্র এবং মণিপুরিদের তৈরি হস্তচালিত তাঁত। মণিপুরিদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। বৃহত্তর সিলেটে প্রায় সোয়া লাখ মণিপুরি সম্প্রদায় রয়েছে। সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মাধবপুর, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল এবং সুনামগঞ্জের ছাতকে এ সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে। মণিপুরিদের তৈরি হস্তশিল্প খুব জনপ্রিয়। তাদের বড়ো উৎসব রাস পূর্ণিমা প্রতিবছর আশ্বিন মাসে অনুষ্ঠিত হয়।
চা জাদুঘর
দেশের দেড়শ বছরের পুরোনো চা শিল্পের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ব্রিটিশ আমলে চা বাগানে ব্যবহৃত উপকরণ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে শ্রীমঙ্গলে দেশের প্রথম চা জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। দেশের একমাত্র এ চা জাদুঘরের জন্য ব্রিটিশ আমলে চা বাগানে ব্যবহৃত ৪৪টি পুরনো আসবাবপত্র। এমনকি এখানে কেরোসিন চালিত ফ্রিজ ও ব্রিটিশ আমলে চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য ব্যবহৃত ভিন্ন ধরনের মুদ্রা সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও রয়েছে কম্পাস, ঘড়ি, পাম্প টিউবওয়েল, ব্রিটিশ আমলের ফিল্টার, চা গাছের মোড়া ও টেবিল, দিক নির্ণয় যন্ত্র, ফসিল, লোহার পাইপ, রিং কোদাল, তীরধনুকসহ আরো অনেক উপকরণ।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ৩০ কি.মি. দূরে কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১২৫০ হেক্টর এলাকাজুড়ে এই উদ্যান অবস্থিত। ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়া বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর গাছের কাণ্ডগুলো ডালপালাবিহীনভাবে বেশ উঁচু হয়ে ওঠে। এটি রেইন ফরেস্টগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ বনে প্রায় ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বিশাল কয়েকটি পাহাড় এই বনকে ঘিরে আছে। বনের ভেতরে পায়ে চলার ৩টি পথ রয়েছে। দেশের ১৭টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে এটি প্রাচীনতম। নিসর্গ ও জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এ বনাঞ্চলে রয়েছে নানারকম গাছপালা, লতাগুল্ম ছাড়াও লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, হনুমান, বনমোরগ, চিতাবাঘ, কুলু বানরসহ বেশ কিছু বিরল প্রজাতির পশুপাখি। এ বনের আরেকটি অন্যতম আকর্ষণ লাউয়াছড়া খাল।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
সিলেট থেকে ৭০ কি.মি. এবং মৌলভীবাজার সদর থেকে ৭২ কি.মি. দূরে বড়লেখা উপজেলায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত অবস্থিত। এটি দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত এবং এর উচ্চতা ১৬২ ফুট। এখানে ২৭২ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর থেকে জলরাশি অবিরাম ধারায় নিচে পড়ছে। এই পাহাড়ের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে প্রবহমান ছড়া বা ঝরনা রয়েছে। এর ওপরের অংশের নাম গঙ্গামারা আর নিচের অংশ মাধবছড়া। গঙ্গামারা থেকে পানি খাড়াভাবে নিচে গড়িয়ে পড়ে মাধবছড়ায়। গড়িয়ে পড়া পানির আঘাতে নিচে তৈরি হয়েছে বিশাল এক কুণ্ড। জলপ্রপাতের কাছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন-এর উদ্যোগে পিকনিক স্পট, রেস্তোরাঁ ও পার্কিং সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে। এ স্থানটি বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হওয়ার কারণে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এখানে আসেন।
মাধবপুর চা বাগান ও হ্রদ
মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কি.মি. দূরে কমলগঞ্জ উপজেলার পাঁচ কি.মি. দক্ষিণে এর অবস্থান। এই মাধবপুর চা বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে মনোমুগ্ধকর কৃত্রিমভাবে তৈরি মাধবপুর হ্রদ। এ হ্রদে রয়েছে প্রচুর নীল শাপলা ও নীল পদ্ম। চা বাগানের নৈসর্গিক পরিবেশে হ্রদের পানিতে দেশি নৌকায় নৌবিহার করা যায়। শীত মৌসুমে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর অতিথি পাখির সমাগম হয়। কৃত্রিম হ্রদের চারপাশে উঁচু টিলার ওপর অবস্থিত চা বাগানটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট।
পাথারিয়া পাহাড়
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা শহর থেকে ১২ কি.মি. দূরে অবস্থিত এ পাথারিয়া পাহাড়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ কি.মি.। ভূতাত্ত্বিক ধারণা অনুযায়ী, এ পাহাড়ের বয়স ২০ লক্ষ বছরেরও বেশি। বড়লেখার অন্তর্গত পাহাড়টির একাংশ ‘পাথারিয়া’ এবং অপরাংশ ‘মাধবকুণ্ড’ বা ‘মাধবছড়া’ নামে পরিচিত। এই পাথারিয়া পাহাড়ের বুক চিরেই মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের সৃষ্টি। এ সবুজ পাহাড়ে একসময় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অবাধ বিচরণ ছিল। বর্তমানে বাঘ হারিয়ে গেলেও এ বনে হরিণের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এছাড়া এখানে বিভিন্ন পশুপাখি, নানা প্রজাতির গাছপালা রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল চা বাগান
শ্রীমঙ্গলের সবুজ কার্পেটে মোড়ানো চা বাগান পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। বাংলাদেশে মোট ৭টি পাহাড়ি উপত্যকার মধ্যে সিলেট বিভাগে রয়েছে ৬টি। এগুলোর মাঝে চা বাগানের সংখ্যা ১৩৮টি। শুধু শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ৩৮টি চা বাগান। এ জন্য শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানীও বলা হয়। এ অঞ্চলটি যেন মাইলের পর মাইল কেটে-ছেঁটে পরিপাটি করে রাখা ৬০-৭০ সে.মি. উঁচু চা গাছের সবুজ মোজাইক। কোথাও উঁচু কোথাও নিচু আবার কোথাও ঢালু। এখানকার সবচেয়ে মনোরম চা বাগানটির নাম রাজঘাট ফিনলে চা বাগান।
হাইল হাওর-বাইক্কা বিল
মনু ও কুশিয়ারা নদীবিধৌত অববাহিকা এলাকায় মৌলভীবাজারের দক্ষিণ-পশ্চিশ অংশে হাইল হাওরের অবস্থান। কয়েক দশক আগে এই হাওরের আয়তন প্রায় ১০০ বর্গ কি.মি. থাকলেও বর্তমানে এটি সংকুচিত হয়ে ২০ বর্গ কি.মি.-এ নেমে এসেছে। হাওরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোপলা নদী মেঘনা নদীর উজানে মিলিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ জলরাশি আর বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পাখির উপস্থিতি একে মোহনীয় রূপ দান করেছে। হাইল হাওরের অন্তর্গত শতাধিক বিলের মধ্যে বাইক্কা বিল একটি মৎস্য অভয়াশ্রম। শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাইক্কা বিল জীববৈচিত্র্যপূর্ণ একটি অঞ্চল।
বাইক্কা বিলের আয়তন প্রায় ১০০ হেক্টর। এখানে আইড়, কৈ, মেনি, ফলি, পাবদাসহ আরো অনেক প্রজাতির মাছের চাষ হয়। এ বিল শুধু মাছ নয় বরং পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর জন্যও একটি নিরাপদ আবাসস্থল। শীতে আগত অতিথি বা পরিযায়ী পাখিদের দেখার জন্য এ জলাভূমিতে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে। বিলের উল্লেখযোগ্য পাখিগুলোর মধ্যে পানকৌড়ি, কানি বক, সাদা বক, গোবক, ধূপনি বক, হলদে বক, লাল বক, জলপিপি, জলময়ূর, জল মুরগি, কালেম, কুট, শঙ্খচিল, মেছো ঈগল ও কুড়াবাজসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস অন্যতম। এই বিলকে সরকার পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবেও ঘোষণা করেছে।
হাকালুকি হাওর
কুলাউড়া, জুরি ও বড়লেখা তিন উপজেলাকে ঘিরে অবস্থান করছে এশিয়া মহাদেশের জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি। এটি সিলেট শহর থেকে ৩০ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে এবং মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে ৪০ কি.মি. উত্তর-পূর্বে ও বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণে অবস্থিত। হাওরের ৪০ শতাংশ বড়লেখায়। বাকি ৩০ শতাংশ কুলাউড়া, ১৫ শতাংশ ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০ শতাংশ গোলাপগঞ্জ এবং ৫ শতাংশ বিয়ানীবাজার থানার মধ্যে। হাওরের আয়তন ১৮১ বর্গ কি.মি.। হাওরে পানির প্রবাহ আসে জুরী, পানাই, কুশিয়ারা, কান্তিনালা নদী থেকে। এর নামকরণ নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে।
বহু বছর পূর্বে ত্রিপুরার মহারাজ ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘বুকি দেয়’ অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঐ এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি’ বা ‘হাঁকালুকি’। অন্যমতে প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচণ্ড ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তার রাজত্ব মাটির নিচে তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘ধাকালুকি’ বা ‘হাকালুকি’। হাকালুকি হাওরের স্থায়ী জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ জন্মে। এখানে প্রতিবছর শীতকালে প্রায় ২০০ বিরল প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগম হয়। এই পাখি দেখার জন্য প্রকৃতিপ্রেমী ও পাখি পর্যবেক্ষকরা নিয়মিত এসে থাকেন।
হামহাম জলপ্রপাত
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত কুরমাটিলা বনবিটের সন্নিকটে ১৬০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে হামহাম জলপ্রপাত। ১ কি.মি. দূর থেকে এ পানি পড়ার ঝির ঝির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক এ জলপ্রপাত পরিদর্শনে আসেন।
এছাড়াও দেখতে পারেন— বিবির মোকাম, মনিপুরি পল্লী, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, সীতেশবাবুর বন্যপ্রাণীর সেবাশ্রম, মনু ব্যারেজ, হযরত শাহ মোস্তফা (রহ.)-এর মাজার, সিদ্ধার্থ নিমাই শিববাড়ি, প্রাচীন শিব মন্দির, ডেনস্টন সিমেট্রি, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, মাধবকুন্ড ইকোপার্ক, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, ভাড়াউড়া হ্রদ, অন্যান্য হাওর, চা বাগান, আনারস বাগান, রাবার বাগান, ষাড়ারগঞ্জ পাহাড়, নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী, বাঁশ-বেত ঐতিহ্য, রাস মেলা, নীলকণ্ঠ চা কেবিনের সাত রঙা চা, শীতলপাটি, হরিনারায়ণ দিঘি, আগর আতরের রাজধানী।
ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
লিস্ট তৈরি করা
ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।
হালকা লাগেজ
লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকিং
স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
স্থানীয় খাবার
ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।
অফ-সিজন ভ্রমণ
ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
যাতায়াতের ব্যবস্থা
ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।
অতিরিক্ত টাকা
ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।
ছোট ব্যাগ
ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।
চার্জার
মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।
ইয়ারফোন
ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন:
বাস
ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বাস সার্ভিসগুলো হলো:
হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এনা ট্রান্সপোর্ট, বিলাস পরিবহন, রূপসী বাংলা। সহজ ডট কমের মাধ্যমে অনলাইনে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন বাসের টিকিট। টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন। এছাড়া বাসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়েও টিকিট কাটতে পারেন।
ট্রেন
ঢাকা থেকে সরাসরি মৌলভীবাজারে ট্রেন না থাকলেও, আপনি শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে সড়কপথে মৌলভীবাজার যেতে পারেন। এই রুটে যেসব ট্রেন চলাচল করে সেগুলো হলো— পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস। এসব ট্রেন ঢাকা কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে ছাড়ে এবং শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত যায়। ট্রেনের টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন।
যেখানে থাকবেন:
আবাসিক হোটেলসমূহ
হোটেল রেস্ট ইন
ঠিকানা: এম সাইফুর রহমান রোড, মৌলভীবাজার
মোবাইল: ০১৭১৯-৩৩৩৫৫৫
হোটেল তাজ মেট্রো
ঠিকানা: এম সাইফুর রহমান রোড, মৌলভীবাজার
মোবাইল: ০১৩২৬-৪০৫২৩৪
হোটেল নিদশোভা (আবাসিক)
ঠিকানা: সিলেট রোড, মৌলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৭-৭৩২৩৭০
হোটেল সোনার বাংলা (আবাসিক)
ঠিকানা: নতুনবাজার, দক্ষিণ শ্রীমঙ্গল
মোবাইল: ০১৭১২-৩০২১৩৪
আলমাস হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট
ঠিকানা: কোর্ট রোড, মৌলভীবাজার
মোবাইল: ০১৭৯৮-২৮৩০৭৮
রিসোর্টসমূহ
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ
ঠিকানা: রাধানগর, শ্রীমঙ্গল
মোবাইল: ০৯৬৭৮-৭৮৫৯৫৯
গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুর
ঠিকানা: রামনগর, শ্রীমঙ্গল
মোবাইল: ০১৬৭৮-১৭৩১৮৫
সুইস ভ্যালি রিসোর্ট
ঠিকানা: শমশেরনগর, মৌলভীবাজার
মোবাইল: ০১৭৮৬-৪৯৩৭০০
গ্রীন প্লেস টি রিসোর্ট
ঠিকানা: ডলুছড়া, লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল
মোবাইল: ০১৯৮৮-৩৩০০০০
যা খাবেন:
মৌলভীবাজার জেলার খাবার সংস্কৃতিতে অনেক বৈচিত্র্য ও স্বাদ রয়েছে। এখানে কিছু জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে
সাতকরা গোশত – সাতকরা (এক ধরনের টক ফল) দিয়ে রান্না করা গরু বা খাসির মাংস। এর টক-মসলাদার স্বাদ মৌলভীবাজার অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়।
কাঠালের বিচি ভর্তা বা তরকারি– মৌলভীবাজারে কাঠালের বিচি দিয়ে নানারকম সুস্বাদু তরকারি তৈরি হয়, যা স্থানীয়দের পছন্দের খাবার।
চিরচিরি পিঠা– এটি এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী স্ন্যাকস পিঠা যা বিশেষ করে উৎসব বা অতিথি আপ্যায়নে বানানো হয়।
খেজুর গুড় দিয়ে পায়েস– বিশেষ উপলক্ষে বা শীতে খেজুরের গুড় দিয়ে চালের পায়েস তৈরি করা খুবই প্রচলিত।
চাটনি ও আচারের বৈচিত্র্য– বোম্বাই মরিচ, সাতকরা, কুল, আম ইত্যাদি দিয়ে তৈরি স্থানীয় চাটনি ও আচার খুবই স্বাদে ভরপুর।
বাউল ভর্তা বা মিক্স ভর্তা– বিভিন্ন শাক-সবজি, শুকনো মাছ, সরিষা, রসুন, পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি মিশ্র ভর্তা, যা ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়।
সতর্কতা:
ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
পরিকল্পিত ভ্রমণ
পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো।
নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার
নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন
স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।
যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না
যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। এ ধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।
মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন
অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।