মো. জিয়াউল হক হাওলাদার
রাজা জয়নারায়ণের মা দুর্গাদেবীর নামানুসারে দুর্গাসাগর দিঘির নামকরণ করা হয়। দুর্গাদেবী তার প্রজাদের প্রতি অত্যন্ত সদয় ছিলেন। তিনি তার প্রজাদের সুপেয় পানির অভাব থেকে মুক্তি দিতে এই দিঘি খননের নির্দেশনা দেন।
এই দিঘি খননের পেছনে একটি কল্পকাহিনি রয়েছে যে, ‘দুর্গাদেবী যতদূর হেঁটে হেঁটে যেতে পারবেন, পুকুরটিও ততদূর খনন করা হববে।’ সে অনুযায়ী পুকুর খনন করা হয়েছে। বাকলা-চন্দ্রদীপ রাজপরিবারের সদস্যদের বাড়ি মাধবপাশা গ্রামে। তাদের দ্বারা নির্মিত প্রাসাদ, মন্দির এবং অন্যান্য ভবনের ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দিঘির মাঝখানে একটি ছোট দ্বীপ তৈরি করা হয়।
স্থানীয় লোকজন একে মাধবপাশা দিঘি নামেও ডাকে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম পুকুর। প্রতিদিন শত শত স্থানীয় এবং আঞ্চলিক পর্যটকরা অনন্য সবুজ, নির্মলতা উপভোগ করতে এবং সেখানে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে বেড়াতে যান। এই দিঘির নীল পানি প্রবল বাতাসের সাথে নেচে নেচে খেলা করে। এই সুন্দর স্থানটি ঋতু নির্বিশেষে বছরের পর বছর পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানে অ্যাঙ্গলিং সুবিধাও রয়েছে। অ্যাঙ্গলাররা বছরে দুবার মাছ ধরতে পারে।
দিঘিটির মোট আয়তন ৬২ একর। পুকুরের চারপাশে সব মিলিয়ে ১.৬ কিলোমিটার (১ মাইল) দীর্ঘ হাঁটার পথ রয়েছে। শীতকালে অনেক পরিযায়ী পাখি সেখানে ভিড় করে। সেই সময় এই জায়গাটি পাখির কিচিরমিচির শোনা যায় এবং কিচিরমিচিরের ধ্বনি দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্লান্ত পর্যটকদের শান্ত করে। যদিও পর্যটকদের শীত, বসন্ত এবং হেমন্ত এই স্থানটি দেখার উপযুক্ত সময়। তবুও দিঘির পাড়ের নির্জন পরিবেশ বছরের অন্যান্য মৌসুমেও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে পুকুরটি কিছুটা সংস্কার করা হয়েছিল। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (সরকারি পর্যটন সংস্থা) ২০১৮-২০২৪ অর্থবছরে ১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকার ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় থাকছে একটি একতলা আবাসন ভবন, ওয়াক-ওয়ে, বিনোদন সুবিধাদি, ডাকবাংলো, ঘাটলা ও বোট ল্যান্ডিং, পিকনিক শেড, শপিং সেন্টার এবং সীমানা প্রাচীর ইত্যাদি। এই পর্যটন স্পটটি শীঘ্রই বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক চালু করা হবে।
পর্যটকরা আকাশপথে, নৌপথে এবং স্থলপথে সহজেই দুর্গাসাগর দিঘিতে পৌঁছাতে পারেন। ঢাকা থেকে বিমানে পর্যটকরা বরিশাল শহরে যেতে পারেন। তারপর স্থানীয় পরিবহণে ২৫ মিনিটের পথ। পর্যটকরা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে বা নিজস্ব পরিবহণে মাত্র তিন ঘণ্টায় বরিশাল যেতে পারেন। পর্যটকরা একটু আগে রওনা দিলে বরিশাল শহরে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। বরিশাল শহর থেকে দুর্গাসাগর দিঘি পর্যন্ত বাস ও স্কুটার সার্ভিস রয়েছে। বরিশাল শহরে পাঁচ তারকা হোটেল এবং অন্যান্য মানসম্মত আবাসন সুবিধা রয়েছে। পর্যটকরা বরিশাল শহরে স্বাচ্ছন্দ্যে রাতযাপন করতে পারবেন। বরিশালে সুস্বাদু খাবারের সাথে চমৎকার খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে, যার মধ্যে ইলিশ মাছ, দই এবং মিষ্টি জাতীয় আইটেম জনপ্রিয়। পর্যটকদের এই সুস্বাদু খাবারগুলি মিস করা উচিত নয়। পর্যটকদের একটি প্যাকেজের অধীনে বরিশাল ভ্রমণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা দুর্গাসগর দিঘির সাথে কাছাকাছি অন্যান্য স্পটও উপভোগ করতে পারেন।