পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
পাবনা জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, জোড় বাংলা মন্দির, আজিম চৌধুরীর জমিদার বাড়ি, শাহী মসজিদ, শ্রী শ্রী অনুকৃল চন্দ্র ঠাকুরের আশ্রম, নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র, পাবনা সুগার মিলস, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর উল্লেখযোগ্য। চলুন জেনে নেই পাবনা জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো সম্বন্ধে।
তাড়াশ জমিদার বাড়ি বা তাড়াশ ভবন
পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে বনমালী রায় বাহাদুরের তাড়াশ ভবন বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা। ১৯১১ সালে নির্মিত এই বাড়িটি এখন পর্যন্ত প্রায় অক্ষত অবস্থায় আছে। পাবনার জমিদারদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও খ্যাতিমান বলে বিবেচিত তাড়াশ জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন ১৬ শতাব্দীর শেষে মতান্তরে ১৭ শতাব্দীর শুরুতে জনৈক বাসুদেব তালুকদার- যার অপর নাম নারায়ণদেব চৌধুরী। বাসুদেব ঢাকার নবাব ইসলাম খাঁর অতি বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন। সততা ও আনুগত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ নবাব তাকে ‘তাড়াশ মহাল’ বরাদ্দ দেন এবং ‘রায় চৌধুরী’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাড়াশ মহাল মূলত রাজশাহীর সাঁওতাল রাজার জমিদারি ছিল এবং এস্টেটটি ছিল প্রায় ২০০ মৌজা নিয়ে।
জানা যায়, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাড়াশ জমিদার পরিবার এই ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাড়াশ জমিদারির সর্বশেষ বংশধর গৌরসুন্দর রায় নিঃসন্তান হওয়ার কারণে তার দত্তকপুত্র বনওয়ারীলাল রায় জমিদার হন। তিনি জনহিতকর কাজ ও বদান্যতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তারই দত্তকপুত্র রায় বাহাদুর বনমালী রায় প্রায় ৭ একর জমির ওপর তাড়াশ রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন।
পাবনার প্রাসাদোপম ভবনটির সম্মুখ ফ্যাসাড দ্বিতলবিশিষ্ট এবং চারটি সুডৌল বৃত্তাকার স্তম্ভ সহযোগে দ্বিতলের কক্ষটি নির্মিত। প্রাসাদের সামনে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের শেষ প্রান্তে প্রবেশ ফটকটির দুপার্শ্বে দুটি করে চারটি স্তম্ভ রয়েছে। মাঝখানে বিশাল আকৃতির অর্ধবৃত্তাকার খিলানে নির্মিত প্রবেশপথটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। ভবনটি আয়তাকৃতির এবং দৈর্ঘ্যে ৩০ মিটার (১০০ ফুট) ও প্রস্থে ১৮ মিটার (৬০ ফুট)। চারটি করিন্থিয়ান স্তম্ভের উপরে আকর্ষণীয় দ্বিতল গাড়ি বারান্দা সহজেই পথিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাড়াশ জমিদার ভবনের দুই পার্শ্বে দুটি বর্ধিত অঙ্গ সংযুক্ত রয়েছে এবং সর্বত্র অর্ধ বৃত্তাকৃতির খিলান সুষমভাবে সন্নিবেশিত। তাড়াশ রাজবাড়ি অনেক আগে থেকে সরকারি দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এখনো ভালো অবস্থায় আছে এবং ১৯৯৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত ইমারতের তালিকাভুক্ত হয়।
বনওয়ারীনগর রাজবাড়ি বা ফরিদপুর রাজবাড়ি
পাবনা সদর থেকে ৪৫ কিমি দূরে ফরিদপুর উপজেলার ঠিক কেন্দ্রস্থলে এই রাজবাড়িটি অবস্থিত। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ জমিদারির উত্তরাধিকারী বনওয়ারীলাল রায় তৎকালীন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরাতে বসতি স্থাপন করেন। কালক্রমে স্থানটির নাম হয় বনওয়ারীনগর। তিনি বজরা নৌকায় করে লাটের খাজনা দেওয়ার জন্য তাড়াশ থেকে ইছামতি নদী দিয়ে ফরিদপুর যেতেন। তাছাড়া বলা হয়, তৎকালে বনওয়ারীনগর এলাকা গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ হওয়ায় তিনি মাঝেমধ্যে এ স্থানে শিকার করতে আসতেন। তখন উনিশ শতকের কোনো একসময়ে তিনি ২০ একর স্থানের ওপর এই রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন।
রাজবাড়িটির স্থান নির্ধারণ, গঠন ও নির্মাণশৈলী দেখে জমিদার বনওয়ারীলাল রায়ের স্থাপত্যশিল্পের গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। চারদিকে দিঘিবেষ্টিত একটিমাত্র প্রবেশপথ দিয়ে রাজবাড়িতে ঢুকতেই হাতি, তিরন্দাজ, ময়ূর ইত্যাদির মূর্তিখচিত চিত্তাকর্ষক তোরণ ও ভবন চোখে পড়ে। গেট দিয়ে ঢুকে ডান দিকে জমিদারের একতলা রাজস্ব অফিস। এ ভবন থেকে প্রায় একশ মিটার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের দোতলা ভবনটি ছিল কয়েদখানা এবং টাকশাল। এখানে মোটা লোহার গ্রিল ও দরজা এবং অন্ধকার কুঠুরি লক্ষ্য করা যায়। ডান পাশে মাটির নিচে লোহার সিন্দুকে রাজস্ব আদায় করে রাখা হতো।
জানা যায়, উপজেলা পদ্ধতি চালুর পূর্বে ভবন সংস্কার করার সময় এই সিন্দুকে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের কাঁচা টাকা অর্থাৎ ধাতব মুদ্রা পাওয়া যায়। এ থেকে প্রায় ৯০ মিটার (৩০০ ফুট) দক্ষিণে জমিদারের মূল বাসভবন। বাসভবন সংলগ্ন দক্ষিণে দিঘির ঘাটের তিনটি ধাপে ছাদবিহীন গোসলখানা ও রানির ঘাট রয়েছে। মূল বাসভবনের অনতিদূরেই দিঘির পাড় সংলগ্ন দক্ষিণমুখী জমিদারের হাওয়াখানা। এর ৯০ মিটার (৩০০ ফুট) পূর্বে লাগোয়া একতলা বিনোদবিগ্রহ মন্দির ও দোতলা নাট মন্দির।
শোনা যায়, সুদূর কলকাতার অভিনেতা ও জমিদাররাও এখানে আসতেন। রাজবাড়ি থেকে ৯০০ মিটার (৩০০ ফুট) পূর্ব দিকে দুধ সাগরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে প্রজাদের শিক্ষানুরাগী করে তোলার জন্য সরোদ গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই রাজবাড়িটি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সংস্কারের ফলে ভবনের কারুকাজ ও নকশা আংশিক পরিবর্তন হয়েছে। কালের সাক্ষী এ জমিদার বাড়িটি দেখার জন্য অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ (আশ্রম-মন্দির)
পাবনা শহরের সন্নিকটে হেমায়েতপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ বা আশ্রম-মন্দিরটি অবস্থিত। শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্র ১৮৮৮ সালে এখানে জন্মগ্রহণ করেন। অনুকূল চন্দ্রের পিতা ছিলেন শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতা মনমোহিনী দেবী। সৎসঙ্গ আশ্রমটি আদিতে সাদামাটা বৈশিষ্ট্যে নির্মিত হয়েছিল। তবে বর্গাকৃতি ভবনটির শীর্ষদেশ চারটি ত্রিভুজ আকৃতির ক্রমহ্রাসমান ছাদে আচ্ছাদিত ছিল। মন্দিরের পাশেই পূজার ঘর অবস্থিত। এ ক্ষুদ্র মন্দিরটি গম্বুজবিশিষ্ট এবং ধনুক বক্র কার্নিশ ও গম্বুজের চারকোণে চারটি দৃষ্টিনন্দন শিখর রয়েছে। অনুকূল চন্দ্রের পিতা-মাতার স্মৃতিরক্ষার্থে এই মন্দির নির্মিত হয়। স্মৃতিমন্দিরটি অন্যান্য ইমারতের তুলনায় এখনো সুসংরক্ষিত অবস্থায় আছে। সম্প্রতি নবনির্মিত সৎসঙ্গ-আশ্রম-মন্দির সমন্বয়ে গঠিত স্থাপত্য নিদর্শনটি সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
অনুকূল চন্দ্র ‘সৎসঙ্গ’ নামে একটি জনহিতকর সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত স্বাবলম্বন ও পরনির্ভরশীলতা ত্যাগের দীক্ষাই অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ আশ্রমের আদর্শ। তিনি মানবকল্যাণে তার সম্পদ, জায়গা সবকিছু উৎসর্গ করেন। পেশায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে অনুসরণযোগ্য বহুবিধ নির্দেশ দান করেন- যেগুলো ভক্তদের কাছে মহাবাণীরূপে সমাদৃত। এক হিসাব অনুযায়ী, অনুকূল চন্দ্র ৮২টি বাংলা এবং ১২টি ইংরেজি ভাষায় বই রচনা করেন। এগুলোতে ধর্মশিক্ষা, সমাজ ইত্যাদি বিষয়ে আদর্শ ও উপদেশ বর্ণিত। এর মধ্যে পুণ্যপুথি, অনুশ্রুতি (৬ খণ্ড), চলার সাথী, শাশ্বতী (৩ খণ্ড) প্রীতিবিনায়ক উল্লেখযোগ্য। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে তার আশ্রম রয়েছে। এই সাধক ১৯৬৯ সালে বিহারে মৃত্যুবরণ করেন। এখানে শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঐ সময় এখানে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। এমনকি ভারত থেকেও লোকজন এখানে আসেন।
জোড় বাংলা মন্দির
পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে দক্ষিণ রাঘবপুরে শহরের পূর্ব-দক্ষিণে জোড় বাংলা মন্দিরটি অবস্থিত। ঘনবসতিপূর্ণ রাঘবপুরে একটি শানবাঁধানো পুকুরের কাছে মন্দিরটি দণ্ডায়মান। জোড় বাংলা মন্দিরের কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। ব্রিটিশ শাসনামলে ইমারতটি প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। স্থানীয় লোকমুখে প্রচলিত কাহিনি থেকে জানা যায়, ব্রজমোহন ক্রোড়ী নামক মুর্শিদাবাদের নবাবের এক তহশিলদার আঠারো শতকের মধ্যভাগে এ মন্দির নির্মাণ করেন। এ মন্দিরটি আয়তনে বৃহৎ না হলেও বাংলাদেশের সকল জোড় বাংলা মন্দিরের মধ্যে সুন্দরতম বিবেচনা করা হয়। এই মন্দিরটি একটি পাকা বেদির উপর ইটের পর ইট গেঁথে নির্মিত। দুটি দোচালা কুঁড়েঘরের চালের মতো দুটি ছাদকে একসঙ্গে জোড়া লাগিয়ে পাকা ছাদ তৈরি করা হয়েছে। এর জন্যই এর নাম হয়েছে ‘জোড় বাংলা মন্দির’।
সমাজ শাহী মসজিদ
পাবনার চাটমোহর উপজেলা থেকে প্রায় ১২ কিমি উত্তর-পূর্বে সমাজ গ্রামে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন শাহী মসজিদ। জনশ্রুতি আছে, প্রায় সাড়ে চারশ বছর আগে ১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন দিল্লির শাসক শেরশাহের পুত্র সুলতান সেলিম মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির ৪ কোণে আরো ৪টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরের দেয়ালে পবিত্র কোরানের আয়াত খোদাই করা রয়েছে। এ মসজিদ থেকে কোরানের আয়াত লিখিত দুটি শিলালিপি ১৯৪২ সালে ভারতের জাদুঘরে নেয়া হয়েছে বলে শোনা যায়। মসজিদটির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রয়েছে হজরত আশরাফ জিন্দানী (রহ.)-এর মাজার। তার পাশেই এক বিশাল দিঘি। শোনা যায়, বাংলা ও বিহারের শাসনকর্তা থাকাকালীন শেরশাহ অবসর কাটাতে আসতেন এ গাঁয়ে। পাঠান সৈন্যদের একটি ঘাঁটিও ছিল এখানে। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই লোকজন আসে।
শীতলাই জমিদার বাড়ি বা এডরুক লিমিটেড
শীতলাই জমিদার বাড়িটি পাবনা জেলার চাটমোহর থানার নিমাইচড়া ইউনিয়নের শীতলাই গ্রামে অবস্থিত। এই জমিদার বাড়ির জমিদার যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রেয় ১৯ শতকের প্রথমদিকে পাবনার রাঘবপুরে ১৫ একর জায়গা জুড়ে সুউচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। প্রাসাদটির নাম হয় ‘শীতলাই হাউজ’। বর্তমানে এটি এডরুক লিমিটেড নামে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উল্লেখ্য, এই ওষুধ কোম্পানিটি ১৯৪৮ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে। এই দ্বিতল বাড়িটি ইন্দো-ইউরোপিয়ান বা ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। পুরো ভবনে মোট ৩০টি কক্ষ রয়েছে।
শীতলাই জমিদার পরিবার মূলত সিরাজগঞ্জ জেলার শরৎনগর এলাকার জমিদার ছিলেন। নাটোরের রাণী ভবানীর শাসনকালে প্রচুর করমুক্ত ‘দেবোত্তর’ সম্পত্তি লাভ করে চাঁদিপ্রসাদ মৈত্রেয় শীতলাই জমিদারির সূচনা করেন। চাঁদিপ্রসাদ মৈত্রেয়ের পুত্র জগন্নাথ মৈত্রেয়-এর বড় সন্তানের নাম ছিল লোকনাথ মৈত্রেয়। লোকনাথ নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার স্ত্রী দুর্গা সুন্দরী চন্দ্রনাথ মৈত্রেয়কে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। এই চন্দ্রনাথ মৈত্রেয়ও নিঃসন্তান হওয়ায় তিনি যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রেয়কে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। এই যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রেয়ই শীতলাই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা।
সুজানগর আজিম চৌধুরী জমিদার বাড়ি বা দুলাই রাজবাড়ি
পাবনা শহর থেকে ১৯ কিমি. দূরে সুজানগর উপজেলার দুলাই বাজারের অর্ধ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রায় আড়াইশ বছর পূর্বে নির্মিত জমিদার বাড়িটির ধ্বংসাবশেষ কালের স্বাক্ষী হিসেবে দণ্ডায়মান। এই জমিদার বাড়িতে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মঠ, একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত অট্টালিকা ও পাঁচটি পুকুর জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আনুমানিক আড়াইশ বছরের পূর্বে দুলাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আজিম চৌধুরীর জন্ম হয়। তিনি ৪০ একর জমির তিন ভাগের এক ভাগজুড়ে নির্মাণ করেছিলেন অত্যাধুনিক ডিজাইনের দ্বিতল বহু দুয়ারি এবং বহু কক্ষের প্রাসাদতুল্য এই অট্টালিকা।
১১টি নিরাপত্তা গেট বেষ্টিত এ অট্টালিকার মূল গেটে দণ্ডায়মান থাকত বিশাল আকৃতির দুটি হাতি। হাতি দুটিকে জমিদার বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীর কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও আজিম চৌধুরীর ভ্রমণ বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হতো। নিরাপত্তা বিধানে হাতি ছাড়াও ছিল দুটি স্বয়ংক্রিয় কামান। মনোলোভা সৌন্দর্যমণ্ডিত বিলাসবহুল এ অট্টালিকার চারদিকে পরিবেষ্টিত ২০ একর আয়তনের একটি দর্শনীয় দিঘি ছিল। বাড়ির অভ্যন্তরে একটি মসজিদ, জমিদার দরবারে কমরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোসলের জন্য একটি বিশাল পুকুর এবং জমিদার পরিবারের মেয়েদের গোসলের জন্য অন্দরমহলের ভেতরে আরো একটি পুকুর খনন করা হয়েছিল।
ঈশ্বরদী রেল জংশন
ব্রিটিশ আমল থেকেই ঈশ্বরদী একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম রেলওয়ে জংশন। পাবনা শহর থেকে ২৬ কিমি দূরে অবস্থিত এ স্টেশনটি পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মিত হওয়ার পূর্বে বর্তমান ঈশ্বরদী এয়ারপোর্টের নিকটবর্তী স্থানে ছিল। সেসময় পদ্মানদীর পশ্চিম পাড়ে রেলওয়ে ঘাট ছিল। তখন নদীপথে রেলওয়ে ফেরিতে যাত্রী ও মালামাল পারাপার করা হতো। পরে পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু চালু হওয়ার পর ঈশ্বরদী স্টেশনটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। সেই থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা স্টেশন থেকে সোজা হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে ঈশ্বরদী জংশন হয়ে আজিমনগর ও আব্দুলপুর পর্যন্ত নতুন লাইন চালু হয়। বর্তমানে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ঈশ্বরদীর সাথে সংযুক্ত। এগুলো হলো-ঈশ্বরদী-খুলনা, ঈশ্বরদী-রাজশাহী, ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর এবং ঈশ্বরদী-ঢাকা।
পাবনা মানসিক হাসপাতাল
পাবনা শহর থেকে ৩ কিমি এবং পাবনা বাস টার্মিনাল থেকে ৭ কিমি দূরে হেমায়েতপুর ইউনিয়নে পাবনা মানসিক হাসপাতাল অবস্থিত। এটি মানসিকভাবে অসুস্থদের যথাযথ সেবা ও চিকিৎসা দানকারী একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পাবনা জেলার সিভিল সার্জন একটি জমিদার বাড়িতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে হেমায়েতপুরে ১১৩ একর জায়গার ওপর হাসপাতালটি স্থানান্তরিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শয্যা সংখ্যা ছিল ৬০। বর্তমানে এর মোট শয্যা সংখ্যা ৫০০।
হাসপাতালটির মোট ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে পেয়িং ও নন-পেয়িংসহ পুরুষ রোগীদের জন্য ১৩টি এবং মহিলা রোগীদের জন্য ৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে একজন পরিচালক রয়েছেন। হাসপাতালের ৩৬৫টি পদের মধ্যে মনোরোগবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, নিদানিক মনস্তত্ত্ববিদ, প্রাণরসায়নবিদ, মনোরোগ অভিজ্ঞ সমাজকর্মী কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য পদে সহকারী হিসেবে সেবিকা, ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, প্রশাসনিক সহকারী রয়েছেন।
এ হাসপাতাল সারাদেশ থেকে আগত মানসিক রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়। সাধারণত ১৮ বছরের নিচে এবং ৬০ বছরের অধিক বয়সি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না। এছাড়া মানসিক প্রতিবন্ধী ও মৃগী রোগীকেও ভর্তি করা হয় না। মাদকাসক্তদের শুধু পেয়িং বেডে ভর্তি করা হয়। যেসব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না তাদের বিনামূল্যে উপদেশ ও ওষুধ দেওয়া হয়। এছাড়াও খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ইত্যাদির ব্যবস্থাও হাসপাতালে রয়েছে। রোগীদের জন্য নিয়মিত মেডিকেল পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। হাসপাতালের অধিকাংশই স্কিটসোফ্রেনিক (সিজোফ্রেনিক) রোগী।
পাবনা মানসিক হাসপাতালে সরকার অনুমোদিত একটি জনকল্যাণ সংস্থা রয়েছে। রোগীরা সুস্থ হওয়ার পর তাদের নিজ বাড়িতে পৌঁছানোর খরচ এই সংস্থা বহন করা ছাড়াও হাসপাতালের সক্ষম রোগীদের চাকরি বা কাজের ব্যবস্থাও করে। বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর থেকে এই সংস্থা বাৎসরিক অনুদান পায়। এছাড়া এটি দুগ্ধখামার, কৃষিখামারসহ কয়েকটি প্রকল্পও পরিচালনা করে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
পাবনা জেলা সদর থেকে ২৩ কিমি দূরে ঈশ্বরদী উপজেলার একটি ইউনিয়ন ও গ্রামের নাম পাকশী। পাকশী একটি প্রধান ব্রডগেজ রেলওয়ে স্টেশন। এ স্টেশনের আধা মাইল উত্তরে গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে অফিস অবস্থিত। পাকশী থেকেই বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পদ্মা নদী অতিক্রম করেছে। এই ১.৮০ কিমি দীর্ঘ রেলসেতুটি ১৯০৯-১৯১৫ সালে নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণে তৎকালে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। শতাব্দী প্রাচীন লৌহ কাঠামোতে নির্মিত সেতুটি দর্শনের জন্য প্রতিদিন অনেক পর্যটক এখানে এসে থাকেন।
বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়টি ঈশ্বরদী উপজেলার পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক সংলগ্ন ২৩৫ একর জমিতে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের স্বল্প বৃষ্টিপাত এলাকার একমাত্র নির্ভরযোগ্য অর্থকরী ফসল ইক্ষু। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫১ সালে মাত্র ১৭ জন জনবল নিয়ে ‘ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র’ নামে স্থাপিত হয়। তখন কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুধু ইক্ষু প্রজনন এবং জাত বাছাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬ সালে ‘বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামে কার্যক্রম শুরু করে।
এটি দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। মূলত এ ইনস্টিটিউট ইক্ষুর উন্নত জাত ও আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল উদ্ভাবন করে এবং তা চাষিদের মধ্যে বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৩৪টি ইক্ষু জাত উদ্ভাবন ও অবমুক্ত করেছে। এর সবগুলোই উচ্চ ফলনশীল ও অধিক চিনি সমৃদ্ধ। এসব জাতগুলো দেশের চিনিকল এলাকার প্রায় ৯৯% এবং চিনিকল বহির্ভূত গুড় এলাকায় প্রায় ৫৭% স্থানজুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে।
চলনবিল
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সমৃদ্ধতম জলাভূমিগুলোর একটি চলনবিল। জলাশয়টি ২৪.৩৫° থেকে ২৪.৭০° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.১০০ থেকে ৮৯.৩৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত-যা নাটোর জেলার সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ উপজেলাজুড়ে অবস্থিত। বিলটি কমবেশি দৈর্ঘ্যে ৩৩ কিমি এবং প্রস্থে ১৫ কিমি। প্রাথমিক পর্যায়ে চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১,০৮৮ বর্গকিমি। বর্তমানে চলনবিলের আকার বর্ষাকালে ৩৬৮ বর্গকিলোমিটার এবং শুষ্ক মৌসুমে ৮৫ বর্গকিলোমিটার হয়ে থাকে। দেশের সর্ববৃহৎ এ বিল বিভিন্ন খাল বা জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ২২টি ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। প্রাচীন এ বিশাল বিলটিতে বিচরণকারী দানব আকৃতির মাছ, জোঁক ও অন্য প্রাণী সম্পর্কিত অনেক গল্প কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়েই চলনবিলের সৃষ্টি হয়। করতোয়া ও আত্রাই নদীর পরিত্যক্ত গতিপথ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে একটি ব্যাপক বিস্তৃত হ্রদে পরিণত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটি একটি পশ্চাৎ জলাভূমি ছিল। চলনবিলের গঠন আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্রাই নদী ছিল চলনবিলের পানি সরবরাহের প্রধান প্রণালি যা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার উত্তরাংশ ও দিনাজপুর এলাকার পানি নিষ্কাশন করত। বড়াল নদী চলনবিল থেকে পানি নির্গমন করে যমুনা নদীতে ফেলে। বর্তমানে চলনবিল দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, বিলে পতিত নদীগুলো প্রতি বছর ৬৩ লক্ষ ঘনমিটার পলি বহন করে আনে এবং এর মধ্যে মাত্র ১৫ লক্ষ ঘনমিটার পলি বিভিন্ন নিষ্কাশন প্রণালির মাধ্যমে বিল থেকে বেরিয়ে যায়। সেই হিসাবে বিলটির তলদেশের অনুভূমিক উচ্চতা বছরে গড়ে ১.২৭ সেমি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিলটি দ্রুত ভরাট হয়ে আসার ফলে বিলের ধার দিয়ে গড়ে উঠছে গ্রাম। কেবল কেন্দ্রের গভীরতম অংশটুকু ছাড়া শুকনো মৌসুমে সমস্ত ছোট-বড় বিল শুকিয়ে যায়। কেন্দ্রের বাইরে প্রান্তীয় এলাকাগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ও উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়। বর্ষার সময় প্রান্ত এলাকায় গভীর পানির আমন ধান চাষ করা হয়। এই বিস্তৃত বিলে নানা প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায় এবং উত্তরবঙ্গের মাছের চাহিদা পূরণে চলনবিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস
বার্ষিক ১৫ হাজার মে. টন রাইটিং, প্রিন্টিং, ব্রাউনিং, র্যাপার ইত্যাদি গ্রেডের কাগজ উৎপাদনের জন্য ১৯৭০ সালে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে পদ্মা নদীর তীরে হার্ডিঞ্জ সেতুর নিকটবর্তী স্থানে জার্মান কনসোর্টিয়ামের আর্থিক সহায়তায় তৎকালীন ইপিআরডিসি নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস স্থাপন করে। পাকশী ইউনিয়নের দিয়ার বাঘইল মৌজায় অবস্থিত মিলটির জমির পরিমাণ ১৩৪ একর। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে কারখানাটির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের প্রচেষ্টায় কারখানাটি চালু করা হয় এবং ১৯৭৪ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু হয়। এই কারখানাটিতে মণ্ড উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যাগাস (আখের ছোবড়া) ব্যবহৃত হতো।
পর্যায়ক্রমে দীর্ঘদিন চলাচলে বিবিধ ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়ায় বিগত ১৯৮৮-৮৯ সালে কারখানাটি বিএমআরই করা হয়। তখন প্রতিদিন কাগজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬০ মেট্রিক টন। তখন কাঁচামাল হিসেবে পুরাতন ও ব্যবহৃত কাগজ ব্যবহার করা হতো। বিগত ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর থেকে কাঁচামালের অস্বাভাবিক স্বল্পতা দেখা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়েস্ট পেপার থেকে মণ্ড উৎপাদনের মাধ্যমে মণ্ডের ঘাটতি কিছুটা মেটানো হয় এবং কাগজ উৎপাদনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। এসব বিবিধ কারণে কারখানাটি কোনো সময়ই পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় চালানো সম্ভব হয়নি। ফলে ২০০২ সালে ৯২৬ জন জনবলকে পে-অফ (চাকরিচ্যুত) ঘোষণা করে কারখানাটি বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে মিলটি জয়েন্ট ভেঞ্চারের পরিবর্তে বেসরকারি খাতে চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু মিলটি অদ্যাবধি চালু করা সম্ভব হয়নি।
পাবনা সুগার মিলস
ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত পাকুড়িয়া মৌজায় ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে পাবনা সুগার মিলস্ লি. অবস্থিত। দৈনিক ১৫০০ মে. টন আখ মাড়াই ও বাৎসরিক ১৫ হাজার মে. টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে বিএসএফআইসি-এর ব্যবস্থাপনায় এ মিলটি স্থাপনের কাজ আরম্ভ হয় এবং ১৯৯৭ সালে প্রকল্পের সমাপ্তি হয়। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে পরীক্ষামূলক উৎপাদন এবং ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু হয়। চিনি ও চিটাগুড় উৎপাদন ছাড়াও এ মিল থেকে চাষিদের ইক্ষু চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সহায়ক ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। ২০০৬ সাল থেকে আখ চাষিদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামালের অভাবে ২০০৯ সালে মিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
ঈশ্বরদী বিমানবন্দর
ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিমি. পশ্চিমে অবস্থিত। ৪৩৭ একর জমির ওপর স্থাপিত এই বিমানবন্দর থেকে ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ বিমানের প্রথম ফ্লাইট চালু হয়। ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৪ সালে পুনরায় চালু হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়ার পর ১৯৯৮ সালে এ বিমানবন্দর থেকে কিছু দিনের জন্য এয়ার পারাবতের ফ্লাইট চালু হলেও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে অদ্যাবধি এ বিমানবন্দর থেকে সকল ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে।
তবে কোনো সিডিউল ফ্লাইট না থাকলেও অফিসিয়ালভাবে বিমানবন্দর ও যোগাযোগ যন্ত্রপাতি সক্রিয় রয়েছে। বিমান শাখায় ১৫ জন জনবলসহ বিমানবন্দরের রানওয়ে, এপ্রোচ, টেক্সিওয়ে সবকিছু কার্যক্ষম আছে। যাত্রী সংকটের কারণে এ বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল লাভজনক না হওয়ায় বিমানবন্দরটি এখনো চালু করা হয়নি। তবে ঈশ্বরদী ইপিজেড স্থাপিত হওয়ার পর বিমানের ফ্লাইট পুনরায় চালুর বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। বিমানবন্দরের ৪৩৭ একর স্থানের মধ্যে ২৯১ একর জমি মিলিটারি ফার্মকে দেওয়া হয়েছে।
শাহ ফরিদ (র.)-এর মাজার
ফরিদপুর উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে বড়াল নদীর ওপারে পার ফরিদপুর গ্রামে এই মাজার অবস্থিত। মাজারের কাছে একটি মসজিদও রয়েছে। জনশ্রুতি মতে, রাজশাহী অঞ্চলের প্রখ্যাত ওলি হযরত শাহ মখদুম (র.)-এর ভাবশিষ্য হযরত শাহ ফরিদ (র.) ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমদিকে রাজশাহী থেকে কুমিরের পিঠে চড়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে বড়াল নদী দিয়ে এ স্থানে (বর্তমান পার ফরিদপুর) এসে থামেন। জায়গাটি তখন গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। হযরত শাহ ফরিদ (র.) সেখানে আস্তানা গাঁড়েন।
তার আল্লাহ ভক্তি এবং বিভিন্ন কেরামতি দেখে এলাকায় তার অনুসারী ও ভক্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই এলাকাটি তার নামানুসারে ফরিদপুর নামে পরিচিতি পায়। লোকশ্রুতি আছে, যে কুমিরের পিঠে চড়ে তিনি এখানে এসেছিলেন সেই কুমির হযরত শাহ ফরিদ (র.)- এর মৃত্যুর পর ৫/৬ বছর পর্যন্ত বছরে ২/১ বার বর্তমান মাজারস্থলের সোজাসুজি বড়াল নদীর ঘাটে ভেসে উঠত। কিন্তু একদিন এক শিকারি কুমিরটি লক্ষ করে গুলি ছোড়ার পর থেকে কুমিরটিকে আর দেখা যায়নি।
পাকশী দরবার শরিফ
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নে অবস্থিত এ দরবার শরিফের প্রধান আকর্ষণ বিশালাকৃতির এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। মোগল আমলে নির্মিত না হলেও এটি মোগল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি করা হয়েছে। তিনতলা এই মসজিদটির চারপাশে চারটি মিনার ও মাঝখানের গম্বুজটির বিশালতা সবাইকে আকর্ষণ করে। মসজিদের সামনে বিশালাকার বাসভবন, মাহফিল করার জন্য বিশালাকারের স্থায়ী স্টেজ, একটি সমৃদ্ধ কুতুবখানা বা লাইব্রেরি, দুটি মাদ্রাসা ভবন রয়েছে। দরবারের ভবন সংলগ্ন একটি বিশালাকার ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলা সনের ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে অনেক ভক্ত এখানে জমায়েত হয়।
ক্ষেতুপাড়া জমিদার বাড়ি
সাঁথিয়া উপজেলা থেকে ৭ কিমি দূরে ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় ৩০০ বছর আগে রাজা নবকুমার রায় এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। এখানে তিনি ১৫৪টি তৌজি নিয়ে জমিদারি পরিচালনা করতেন। রাজার মৃত্যুর পর তার একমাত্র বংশধর পার্বতী চরণ রায় প্রায় ৬০ বছর ক্ষেতুপাড়ার জমিদার ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার পৌত্র দীপক কুমার রায় বাড়িটি শাহজাদপুরের সন্ধ্যারাণীর কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর বাড়িটি ১৯৩৮ সালে একবার সংস্কার করা হয়। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি লতাপাতায় আচ্ছাদিত হয়ে ভগ্নদশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।
তাঁতিবন্দ জমিদার বাড়ি
সুজানগর উপজেলা থেকে ৫ কিমি উত্তরে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। তৎকালীন নাটোর কালেক্টরেটের সেরেস্তাদার উপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী তাঁতিবন্দ জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেও তার অধস্তন পুরুষ বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর শাসনামলেই তাঁতিবন্দসহ আশপাশের এলাকায় তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়ে। আনুমানিক ২০০ বছর আগে তাঁতিবন্দ গ্রামে বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর জন্ম হয়। তার জমিদারি আমলে প্রজাদের বিনোদনের জন্য আকজমকপূর্ণ পূজাপার্বণ আয়োজন করার নাচের ব্যবস্থা করা হতো। এ জন্য তিনি একাধিক হাতি পালন করতেন এবং হাতি পালনের জন্য প্রজাবর্গের কাছ থেকে হাতি খরচ নামে জমা আদায় করা হতো।
তার জমিদারিত্বের সময়কালে শতাধিক বিঘা জমির উপর তিনি এই জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বিশাল এ বাড়ির এক-তৃতীয়াংশজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছিল অত্যাধুনিক ডিজাইনের একাধিক অট্টালিকা, পূজা মন্দির, দিঘি এবং দুটি সুউচ্চ মঠ। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে মঠ দুটি বিজয় বাবুর মঠ নামে পরিচিত ছিল। অত্যন্ত কারুকার্যখচিত এই মঠ দুটি দেখতে ঐ সময় বিভিন্ন জেলা থেকে বহু লোকের সমাগম হতো।
ঘুঘুদহ বিল
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ বিলকে ঘিরে নানান গল্প কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। মাছের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত এই বিলটিতে ব্রিটিশ শাসনকাল থেকেই বড় বড় বোয়াল, কৈ, মাগুর, চিতল, শোল, গজার, সরপুটি, বাইন, রুই, কাতলা ইত্যাদি মাছ পাওয়া যেত-যা বিত্তশালীদের রসনা তৃপ্ত করত। জানা যায়, কোলকাতার বাবুদেরও রসনা মেটাতে এই বিলের মাছ পাঠানো হতো। বিলের মাছ শিকারকে কেন্দ্র করে এখানে কয়েকটি পাড়া গড়ে ওঠে-যেগুলো জিয়ানী পাড়া হিসেবে পরিচিত। এক সময় এলাকার লোকজন এই বিলে ঘটা করে পলো দিয়ে একত্রে মাছ ধরতো। এর নাম ছিল বাউত উৎসব।
দেশ স্বাধীন হবার পর পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁধ নির্মিত হওয়ার পর পানি কমে যাওয়ায় বিলে মাছের পরিমাণ কমতে শুরু করে এবং সাবেক ঐতিহ্য হারিয়ে যায়। পানি কমে যাওয়ায় বিলের চারপাশে প্রায় তিন হাজার বিঘা চাষযোগ্য খাস জমি জেগে ওঠে- যা পরবর্তীতে জোতদারদের দখলে চলে যায়। শান্ত ও স্নিগ্ধ এই বিলটি এখনো মানুষকে আকর্ষণ করে।
এছাড়াও দেখতে পারেন মাসুম খান কাবুলির মসজিদ বা চাটমোহর শাহী মসজিদ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, দুলাই রাজবাড়ি, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, ঈশ্বরদী ইপিজেড, শাহ শরীফ জিন্দানী (র.) এর মাজার, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা, ভাড়ারা মসজিদ, গজনার বিল ও বড়াল ব্রিজ।
ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
লিস্ট তৈরি করা
ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।
হালকা লাগেজ
লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকিং
স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
স্থানীয় খাবার
ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।
অফ-সিজন ভ্রমণ
ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
যাতায়াতের ব্যবস্থা
ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।
অতিরিক্ত টাকা
ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।
ছোট ব্যাগ
ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।
চার্জার
মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।
ইয়ারফোন
ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।
ঢাকা থেকে পাবনা যাবেন যেভাবে:
ঢাকা থেকে পাবনা যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। আপনার পছন্দ, সুবিধা এবং বাজেট অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
বাস
ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর বা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে পাবনার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন অনেকগুলি বাস ছেড়ে যায়। হানিফ, শ্যামলী, এনা, এসআর ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন পরিবহনের নন-এসি, এসি এবং বিলাসবহুল বাস সার্ভিস পাবেন। সহজ ডট কমের মাধ্যমে অনলাইনে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন বাসের টিকিট। টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন। এছাড়া বাসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়েও টিকিট কাটতে পারেন।
ট্রেন
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পাবনার উদ্দেশে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে পাবনা রেলপথে যাতায়াত অপেক্ষাকৃত কম ঝামেলার। ট্রেনের টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন।
ব্যক্তিগত গাড়ি
ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকা থেকে আরিচা ঘাট হয়ে ফেরি পার হয়ে পাবনা যেতে পারেন। এই রুটে যাতায়াত অপেক্ষাকৃত সময়সাপেক্ষ হলেও আপনার নিজের গাড়িতে যাতায়াত অনেক স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।
যে পদ্ধতিতেই যান না কেন, পাবনা পৌঁছানোর পর স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেই আপনি আপনার পছন্দের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
যেখানে থাকবেন:
পাবনায় বেশ কিছু সরকারি রেস্ট হাউজ আছে। এছাড়া জেলা সদরে রাত্রিযাপনের জন্য বেশ কিছু হোটেলও রয়েছে।
সরকারি রেস্ট হাউজ
সার্কিট হাউজ পাবনা
ঠিকানা: ডিসি রোড, পাবনা
ফোন: ০৭৩১-৬৫০৮৮
জেলা পরিষদ, পাবনা।
ঠিকানা: নুরপুর ডাকবাংলো, পাবনা
মোবাইল: ০১৭১৪-৬৬১৩০২
গণপূর্ত বিভাগ, পাবনা।
ঠিকানা: চকছাতিয়ানী চারা বটতলা, পাবনা
মোবাইল: ০১৭১২-২৭৯৪৬৬
সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পাবনা।
ঠিকানা: লাইব্রেরী বাজার, পাবনা
মোবাইল: ০১৭১১-৩৭৩১৫৬
পানি উন্নয়ন বোর্ড, পাবনা।
ঠিকানা: চকছাতিয়ানী পানি উন্নয়ন বোর্ড, পাবনা
মোবাইল: ০১৭১১-৩২৩৩১২
পানি উন্নয়ন বোর্ড (হাইড্রোলজি বিভাগ), পাবনা
ঠিকানা: চকছাতিয়ানী বিসিক-১নং গেট,পাবনা
মোবাইল: ০১৭১১-৩২৩৩১২
বিসিক, পাবনা
ঠিকানা: হিমাইতপুর, বিসিক, পাবনা
ঠিকানা: ০১৭১৫-০০৭৪৪৭
যুব উন্নয়ন, পাবনা।
ঠিকানা: মহেন্দ্রপুর, পাবনা।
মোবাইল: ০১৭১৬-৫০২০৭৭
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, পাবনা।
ঠিকানা: নূরপুর, পাবনা।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৭২৯৭৭
হোটেল
প্রশান্তি ভূবন পার্ক-রেস্ট হাউজ
ঠিকানা: জালালপুর, পাবনা
মোবাইল: ০১৭১২-৮৮৫৭৮২
হোটেল শাপলা, পাবনা
ঠিকানা: এ হামিদ রোড, পাবনা
মোবাইল: ০১৭১২-৭১৪৫৬৯
ইডেন বোডিং, পাবনা
মোবাইল: ০১৭১৪-৪২৩৪৪৩
হোটেল ছায়ানীড়
ঠিকানা: রূপকথা রোড, পাবনা
মোবাইল: ০১৫৫৮-৪৩৯৩৩০
হোটেল পার্ক বোডিং, পাবনা
মোবাইল: ০১১৯৭-০৮৩৩০১
হোটেল শীল্টন, পাবনা
ঠিকানা: এ হাজী হামিদ রোড
মোবাইল: ০১৭১২-৪৩৩২৪৯
হোটেল টাইম গেস্ট, পাবনা
মোবাইল: ০১৭১১-৪০২৬৭৭
পাবনা জেলার বিখ্যাত খাবার
জলযোগের কলিজা সিঙ্গাড়া, চপ; মধুমিতার ভুনা খিচুড়ি; কাশমেরীর চিকেন গ্রিল-স্পেশাল নান; বিরানী হাউজের চিকেন-কাচ্চি, বিরিয়ানি, মুড়িঘণ্ট; বনলতা কফি শপের ফালুদা; শ্যামলের সিঙ্গাড়া, দই, ল্যাংচা, মালাইসর; বনলতার ইরানীভোগ, গাজরের হালুয়া, দই, রসগোল্লা; চাটমোহরের অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের রসমালাই; অনন্ত মোড়ের মালাই রুটি, চা, শাপলা হোটেলের দুপুরের ও রাতের বাংলা খাবার; লক্ষ্মীর চমচম, ছানার সন্দেশ।
সতর্কতা:
ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
পরিকল্পিত ভ্রমণ
পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো
নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার
নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।
নিজের অবস্থান গোপন রাখুন
বর্তমান যুগে অনেকেই নিজের দৈনন্দিন কার্যকলাপ এবং ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। যারা সন্ধ্যার পর বা রাতে ভ্রমণ করেন তাদের জন্য এটি ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অপরিচিতদের সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না। যদি সম্ভব হয়, যাত্রাপথের লাইভ লোকেশন পরিবার বা বন্ধুকে শেয়ার করুন।
চারপাশ পর্যবেক্ষণ করুন
অপরিচিত বা সন্দেহজনক ব্যক্তির সঙ্গে অতিরিক্ত কথা বলা বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা এড়িয়ে চলুন। ব্যস্ত থাকলেও মোবাইলে পুরোপুরি মনোযোগ দেবেন না, চারপাশের পরিস্থিতি লক্ষ্য রাখুন। সন্দেহজনক কিছু দেখলে বা অনুভব করলে বাসচালক বা সহযাত্রীদের জানান।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।
আত্মরক্ষায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখুন
প্রয়োজনে আত্মরক্ষার জন্য ছোটখাটো সরঞ্জাম (যেমন: পেপার স্প্রে, হুইসল, ফোল্ডিং মেটাল সেফটি রড, ইত্যাদি ) সঙ্গে রাখতে পারেন। ফোনের ব্যাটারি ও মোবাইল ডাটা চালু রাখুন, যাতে প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে পারেন।
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন
স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।
যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না
যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। যাত্রীর ছদ্মবেশে অনেক সময় মলম পার্টির লোকেরা খাবারে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে দেয়। এই খাবার গ্রহণের পর যাত্রীরা অচেতন হয়ে পড়লে তারা সর্বস্ব লুটে নেয়। এধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।
মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন
অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।