পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
বিলটি কমবেশি দৈর্ঘ্যে ৩৩ কিমি এবং প্রস্থে ১৫ কিমি। প্রাথমিক পর্যায়ে চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১,০৮৮ বর্গকিমি। বর্তমানে চলনবিলের আকার বর্ষাকালে ৩৬৮ বর্গকিলোমিটার এবং শুষ্ক মৌসুমে ৮৫ বর্গকিলোমিটার হয়ে থাকে। দেশের সর্ববৃহৎ এ বিল বিভিন্ন খাল বা জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ২২টি ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। প্রাচীন এ বিশাল বিলটিতে বিচরণকারী দানব আকৃতির মাছ, জোঁক ও অন্য প্রাণী সম্পর্কিত অনেক গল্প কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়েই চলনবিলের সৃষ্টি হয়। করতোয়া ও আত্রাই নদীর পরিত্যক্ত গতিপথ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে একটি ব্যাপক বিস্তৃত হ্রদে পরিণত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটি একটি পশ্চাৎ জলাভূমি ছিল।
চলনবিলের গঠন আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্রাই নদী ছিল চলনবিলের পানি সরবরাহের প্রধান প্রণালি যা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার উত্তরাংশ ও দিনাজপুর এলাকার পানি নিষ্কাশন করত। বড়াল নদী চলনবিল থেকে পানি নির্গমন করে যমুনা নদীতে ফেলে। বর্তমানে চলনবিল দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, বিলে পতিত নদীগুলো প্রতি বছর ৬৩ লক্ষ ঘনমিটার পলি বহন করে আনে এবং এর মধ্যে মাত্র ১৫ লক্ষ ঘনমিটার পলি বিভিন্ন নিষ্কাশন প্রণালির মাধ্যমে বিল থেকে বেরিয়ে যায়। সেই হিসাবে বিলটির তলদেশের অনুভূমিক উচ্চতা বছরে গড়ে ১.২৭ সেমি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিলটি দ্রুত ভরাট হয়ে আসার ফলে বিলের ধার দিয়ে গড়ে উঠছে গ্রাম।
কেবল কেন্দ্রের গভীরতম অংশটুকু ছাড়া শুকনো মৌসুমে সমস্ত ছোট-বড় বিল শুকিয়ে যায়। কেন্দ্রের বাইরে প্রান্তীয় এলাকাগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ও উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়। বর্ষার সময় প্রান্ত এলাকায় গভীর পানির আমন ধান চাষ করা হয়। এই বিস্তৃত বিলে নানা প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায় এবং উত্তরবঙ্গের মাছের চাহিদা পূরণে চলনবিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।