পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
১৯৬৫-৬৬ সালে ১শ’ ৩৩ দশমিক ৭১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার ও দাতাদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৩ মার্চ ১৯৬৭ সালে মিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালের জুন মাসে। মূলত দেশের বিভিন্ন চিনিকল থেকে প্রাপ্ত আখের ছোবড়া (ব্যাগাস)-এর ওপরে ভিত্তি করেই মিলটি স্থাপিত হয়। এ আখের ছোবড়া (ব্যাগাস) পাকশী নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলের মূল কাঁচামাল। এছাড়া সিলেট পাল্প, বেদেশী পাল্প, পাটকাঠী, গমের নাড়া, কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। চিনিকলগুলো চিনি উৎপাদনের জন্য আখ মাড়াইয়ের পর উদ্বৃত্ত আখের ছোবড়া (ব্যাগাস) সড়ক ও রেলপথে মিলে আনা হতো।
নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল কাগজ সভ্যতার ইতিহাসে অত্যাধুনিক মিল হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিল। এই মিলের কাগজ উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নত ব্যাগাস ডাইজেস্টার পাল্প মিলওয়াশিং, স্কিনিং, রিচিং, রিফাইনিং, ওয়েবারজেশন, ডায়িং, ক্যালেন্ডারিং, রিউইনজিং, ফিনিশিং। দৈনিক ৬০ মেট্রিকটন (৬৫ জিএসএস) ভিত্তিতে বার্ষিক ১৫ হাজার মেট্রিকটন প্রডাক্ট মিক্সড ভিত্তিতে সাদা ছাপা বাদামি, মেনিফোল্ড, ব্লু ম্যাচ ইত্যাদি কাগজের উৎপাদন শুরু হয় ২৫ জুলাই ১৯৭০ সালে।
১৯৭০-৭১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে ২ হাজার ৬শ’ ৫৭ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদিত হয়। কিন্তু মার্চ ১৯৭১ থেকে জুন ১৯৭৩ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎপরবর্তী মেরামতের জন্য মিলটি বন্ধ থাকে। এরপর ১৯৭৫ সালের মার্চ মাস থেকে ১৩১ জন কর্মকর্তা এবং ১১৩৮ শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে নর্থবেঙ্গল পেপার মিল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে।
পর্যায়ক্রমে দীর্ঘদিন চলাচলে বিবিধ ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়ায় বিগত ১৯৮৮-৮৯ সালে কারখানাটি বিএমআরই করা হয়। তখন প্রতিদিন কাগজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬০ মেট্রিক টন। তখন কাঁচামাল হিসেবে পুরাতন ও ব্যবহৃত কাগজ ব্যবহার করা হতো। বিগত ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর থেকে কাঁচামালের অস্বাভাবিক স্বল্পতা দেখা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়েস্ট পেপার থেকে মণ্ড উৎপাদনের মাধ্যমে মণ্ডের ঘাটতি কিছুটা মেটানো হয় এবং কাগজ উৎপাদনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়।
এসব বিবিধ কারণে কারখানাটি কোনো সময়ই পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় চালানো সম্ভব হয়নি। ফলে ২০০২ সালে ৯২৬ জন জনবলকে পে-অফ (চাকরিচ্যুত) ঘোষণা করে কারখানাটি বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে মিলটি জয়েন্ট ভেঞ্চারের পরিবর্তে বেসরকারি খাতে চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু মিলটি অদ্যাবধি চালু করা সম্ভব হয়নি।