রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ঝালপুকুর গ্রামের চড়ক মেলায় সাঁওতাল যুবকরা তাদের জীবনসঙ্গীকে খুঁজে নেন। পয়লা বৈশাখের দিন দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়নে ঝালপুকুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় এই চড়ক মেলা।
সহজে বিয়ের জন্য কনে খুঁজে পাওয়ার জন্য এই মেলা একটি ভালো মাধ্যম বলে জানান অনেকে। মনের মতো কনে খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া অনেক খাটুনির ব্যাপার। তাই সাঁওতাল তরুণ-যুবকেরা এই মেলায় এসে কনে খুঁজে নেন। মনের মতো কনের দেখা পেলে তার সঙ্গে আলাপ জমান। দুজন দুজনকে নিজেদের পরিবার ও নিজেদের তথ্য আদান-প্রদান করেন। নিজেদের মধ্যে সমঝোতা হলে উভয়ের পরিবারের মাধ্যমে বিয়ের আয়োজন করা হয়।
গ্রামের এই মেলা সম্পর্কে এক প্রবীন ব্যক্তি বলেন, আমার বাবা-দাদারাও বলতে পারেননি ঠিক কবে থেকে মাহাতোদের আয়োজনে এই মেলা হয়ে আসছে। চৈত্রসংক্রান্তির রাতে চড়কপূজা হতো। চাঁদের আলোয় রাতজুড়ে মাদল-বাঁশির তালে তালে আদিবাসী মেয়েরা নাচগান করতেন। সকালের লাল সূর্যের মিষ্টি আভায় চড়ক ঘুরিয়ে মেলা শেষ করা হতো। মেলা থেকে মানুষ কিনে নিয়ে যেত মিঠাই, মণ্ডা,শিশুদের খেলনা। মেয়েরা চুড়ি-ফিতা, আলতা-সিঁদুর, শাখা-পলা, দা-বঁটিসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস। তবে ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে রাতে আর মেলা বসে না।’
তিনি আরও জানান, যখন থেকে রাতের মেলা বন্ধ হলো, তখন থেকে রাতভর নাচ-গানের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলো মেলায় আসা মানুষেরা। এরপর চরকা ঘোরানোর আগে সাঁওতালদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল এসে নাচ-গান করত। কয়েক বছর থেকে তা-ও বন্ধ গেছে। আগের ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে এ মেলার। তবে এখনো সাঁওতাল মেয়েরা সেজেগুজে মেলায় আসে। সাঁওতাল যুবকেরা আসেন কনে খুঁজতে। কেউ পান, কেউ পান না। তবে এগুলো জানা যায় না, গোপনেই থাকে। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সাঁওতাল যুবকদের মেলায় এসে বিয়ের জন্য কনে খোঁজার এই বিশেষত্বটুকু টিকে আছে আজও।