■ পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
বরগুনা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই নয়, তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অতিথিপরায়ণ মানুষের জন্যও প্রসিদ্ধ। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য বরগুনা একটি আদর্শ গন্তব্য, যেখানে একদিকে রয়েছে বিস্তীর্ণ সমুদ্রসৈকত, অপরদিকে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, নদীভাঙনকবলিত জনপদ, এবং নানান ঐতিহাসিক স্থাপনা। এসব আকর্ষণীয় স্থানের মাধ্যমে আমরা যেমন প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে পারি, তেমনি বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনধারাকেও খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারি।
চলুন জেনে নেয় বরগুনা জেলার দর্শনীয় ৫ গন্তব্য সম্পর্কে। এগুলো হলো— ঐতিহাসিক বিবিচিনির শাহী মসজিদ, সোনাকাটা পর্যটন কেন্দ্র, হরিণবাড়িয়া বনকেন্দ্র ও লালদিয়ার চর, অংকুচান পাড়া বৌদ্ধ বিহার ও রাখাইন সংস্কৃতি।
ঐতিহাসিক বিবিচিনির শাহী মসজিদ
বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিমি. (৬ মাইল) দূরে বিবিচিনি ইউনিয়নে এই মসজিদটি অবস্থিত। জানা যায়, ১৬৫৯ খ্রিষ্টাব্দে হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ (র.) পারস্য থেকে এই এলাকায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে বিবিচিনিতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তার কন্যা চিনিবিবি এবং ইসাবিবির নামানুসারে গ্রামের নামকরণ করা হয় এবং মসজিদটির নাম রাখা হয়েছে বিবিচিনি শাহী মসজিদ।
বর্গাকারে নির্মিত মসজিদটির পরিমাণ ১০ মিটার × ১০ মিটার (৩৩ ফুট × ৩৩ ফুট) এবং দেয়ালগুলো দুই মিটার চওড়া। মসজিদের ইটগুলো মোগল আমলের ইটের অনুরূপ। সমতল ভূমি থেকে মসজিটি ৯ মিটার (৩০ ফুট) উঁচু টিলার উপর অবস্থিত। তার উপর প্রায় ৮ মিটার (২৫ ফুট) উচ্চতায় এই মসজিদটি নির্মিত। মসজিদের পাশে রয়েছে ৩টি কবর। যা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ধর্মী। কবর ৩টি সাধারণ কবরের ন্যায় হলেও লম্বা ৭ মিটার (২৩ ফুট)।
এলাকাবাসীর মতে সেখানে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ্ (র.) এবং তার কন্যা চিনিবিবি এবং ইসাবিবি। সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ্ (র.) পরলোকগমন করেন এবং মসজিদের পার্শ্বে তাঁকে সমাহিত করা হয়। উল্লেখ্য, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মসজিদ হিসেবে এটি পর্যটকদের নিকট আকর্ষণীয়।
সোনাকাটা পর্যটন কেন্দ্র
তালতলী উপজেলায় সাগরের পাড় ঘেঁষে সোনারচরে এই ইকোপার্কটি অবস্থিত। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এখানকার অরণ্যের মুক্ত পরিবেশে চিত্রা হরিণের বিচরণ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে মেছো বাঘ, কুমির, শুকর ও কাঠবিড়ালিসহ নানা প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। এই চরে হরেকরকম সামুদ্রিক পাখির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পর্যটন কেন্দ্রে সমুদ্রসৈকতে আছড়ে পড়া ২/৩ মিটার ঢেউ যে কাউকে মুগ্ধ করে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্যও এ সোনারচর খ্যাত। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এই ইকোপার্কে বেড়াতে আসেন।
হরিণবাড়িয়া বনকেন্দ্র ও লালদিয়ার চর
পাথরঘাটা উপজেলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হরিণবাড়িয়া বনকেন্দ্র। এখানে রয়েছে চোখ জুড়ানো বিস্তীর্ণ সবুজ ধানক্ষেত, সুদৃশ্য তালগাছ এবং নারকেল-সুপারির বাগান। উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব সড়ক পথে প্রায় ১২ কিমি. (৭.৫ মাইল)। এখানে সমুদ্রের কূল ঘেঁষে বনভূমি রয়েছে। এই বনভূমির আয়তন প্রায় ১৭৬২ একর। এখানে রয়েছে প্রচুর হরিণ।
লালদিয়ার চরসহ সম্পূর্ণএলাকাটি বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণে। বনভূমির ভেতর বেশ কিছু ছোটো খাল প্রবাহিত। জোয়ারের সময় এই খাল পানিতে পূর্ণ হয়ে যায় আবার ভাটার সময় তা পানি শূন্য কর্দমাক্ত থাকে। মৎস শিকারিগণ ছোটো আকারের নৌকায় মৎস শিকারের জন্য বনের এ খালগুলোতে বিচরণ করে। মাছ শিকারই এ অঞ্চলের জনগণের আয়ের প্রধান উৎস।
পাথরঘাটা উপজেলা থেকে ১৬ কিমি. (১০ মাইল) দক্ষিণে লালদিয়ার চর অবস্থিত। হরিণবাড়িয়া থেকে লালদিয়া পর্যন্ত স্থান জুড়ে রয়েছে সুন্দরবনের সমতুল্য গরান বনভূমি। এই লালদিয়ার চরের পাশেই বঙ্গোপসাগর থেকে জেগে ওঠা ভূমিতে বনবিভাগ বনভূমি সৃজন করেছে। এই বনের পূর্বে বিষখালী নদী এবং পশ্চিমে বলেশ্বর নদী। দুই নদী এবং সাগরের মোহনা এ বনকে ঘিরে রেখেছে।
লালদিয়া চরটিতে বন্যপ্রাণীর মধ্যে বানর, হরিণ, শুকর ও শিয়াল ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী দেখা যায় না। শীতের মৌসুম শুরুতেই নানা জাতের অতিথি পাখির আগমনে চরটি মুখরিত হয়ে ওঠে। বন সংলগ্ন পূর্বপ্রান্তে সমুদ্রসৈকত। নদী ও সাগর বেষ্টিত এই চর পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
অংকুচান পাড়া বৌদ্ধ বিহার
তালতলী বৌদ্ধ বিহার থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের অংকুচান পাড়ায় রয়েছে মার্বেল পাথরের তৈরি একটি বুদ্ধ মূর্তি। স্থানীয়দের মতে, প্রায় ১০০ বছর পূর্বে ব্রিটিশ আমলে বার্মার মাগুলি থেকে মূর্তিটি আনা হয়। পর্যটকগণ বৌদ্ধ বিহার দর্শনের পাশাপাশি এ এলাকার রাখাইনদের বিচিত্র জীবন প্রণালি ও সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
রাখাইন সংস্কৃতি
বরগুনা জেলার দক্ষিণ অঞ্চলে রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। সতেরো শতকের শেষ দিকে রাখাইনরা এখানে এসে বসতি গড়ে তোলে। রাখাইনরাই এই উপকূলভাগে পতিত জঙ্গল কেটে আবাদ করে কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলে। এখানে জমিতে ধানক্ষেত দেখা যায়। রাখাইনরা তাদের পার্বণিক প্রয়োজনসহ আত্মীয়-পরিজন আপ্যায়ন ও নিজেদের মুড়ি-মুড়কি, খৈ, পিঠা, পায়েস, জর্দা খাওয়ার প্রয়োজনে তারা নানা জাতের বিভিন্ন ধানের চাষ করে থাকে।
রাখাইনদের নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থায় রয়েছে বৈচিত্র্যময় কুটিরশিল্প, কৃষিকাজ, শূকরসহ পশু পালন। রাখাইন সংস্কৃতির অন্যতম অনুষ্ঠান হলো- বাঘ শিকার, কিন্নর নাচ, রাক্ষস নাচ, বানর নাচ ইত্যাদি। তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- গৌতম বুদ্ধের জন্মবার্ষিকী পালন, মাঘী পূর্ণিমা, বৈশাখি পূর্ণিমা, রাস উৎসব ইত্যাদি।
এছাড়াও দেখতে পারেন— পদ্ম সৈকত ও মাছের আড়ত এবং তালতলী বৌদ্ধ বিহার।
ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
লিস্ট তৈরি করা
ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।
হালকা লাগেজ
লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকিং
স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
স্থানীয় খাবার
ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।
অফ-সিজন ভ্রমণ
ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
যাতায়াতের ব্যবস্থা
ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।
অতিরিক্ত টাকা
ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।
ছোট ব্যাগ
ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।
চার্জার
মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।
ইয়ারফোন
ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার জন্য আপনি সড়ক ও নৌপথ—এই দুটি প্রধান মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন।
বাস: ঢাকা থেকে বরগুনা পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে। জনপ্রিয় বাস সার্ভিসগুলো হলো— সাকুরা পরিবহন, মিয়া পরিবহন, আবদুল্লাহ পরিবহন, সুগন্ধা পরিবহন, পটুয়াখালী এক্সপ্রেস, মেঘনা পরিবহন। ঢাকা থেকে বরগুনার দূরত্ব প্রায় ২৯২ কিলোমিটার। বাসে যেতে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
লঞ্চ: ঢাকা থেকে বরগুনা পর্যন্ত সরাসরি লঞ্চ সার্ভিসও রয়েছে, যা বিশেষ করে রাতের যাত্রার জন্য জনপ্রিয়। লঞ্চ সার্ভিসগুলো হলো— এম ভি বন্ধন -৭, যুবরাজ -৪, যুবরাজ-২, আল্লাহু মর্জি, নুসরাত ও মশিরন খান। লঞ্চে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগবে। তবে সেটা নদীর অবস্থা ও লঞ্চের গতির উপর নির্ভর করে।
যেখানে থাকবেন:
বরগুনা রেস্ট হাউজ হোটেল
ঠিকানা: সিরাজ উদ্দিন সড়ক, বরগুনা
মোবাইল: ০১৭১৮৫৮৮৮৫৬
হোটেল বে অব বেঙ্গল
ঠিকানা: সদর রোড, বরগুনা
মোবাইল: ০১৭৪৭৭০৪৪৭৭
হোটেল আলম
ঠিকানা: বরগুনা
মোবাইল: ০১৭১৬১৪৩৪১৪
গ্র্যান্ড খান গেস্ট হাউজ অ্যান্ড ইভেন্ট ক্যাফে
ঠিকানা: বরগুনা-নিশানবাড়িয়া রোড, বরগুনা
মোবাইল: ০১৮৬৬৬১৬১৫৮
হোটেল সি ভিউ
ঠিকানা: পশ্চিম ক্রোক, বরগুনা
মোবাইল: ০১৭৭৬৪৬৭৭৮৯
হোটেল তাজবিন
ঠিকানা: সদর রোড, বরগুনা
ফোন: ০৪৪৮-৬২৫০৩
হোটেল গ্রিনভিউ ইন্টারন্যাশনাল
ঠিকানা: বরগুনা
মোবাইল:০১৮৫৭৭৩৫৫২৫
হোটেল প্রিন্স টাওয়ার
ঠিকানা: বরগুনা
মোবাইল: ০১৭৬৪৫১৬৮১১
জেলা পরিষদ ডাকবাংলো
ঠিকানা: জেলা পরিষদ,বরগুনা
ফোন: ০৪৪৮-৬২৪১০
ঐতিহ্যবাহী খাবার:
বরগুনা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে প্রধানত ইলিশ মাছের বিভিন্ন পদ যেমন ভাজি, ভুনা, সরষে ইলিশ ও পাতুরি বিশেষ জনপ্রিয়, কারণ এই জেলা বঙ্গোপসাগর ও নদ-নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় তাজা ইলিশ সহজলভ্য। এছাড়াও দেশি মাছের তরকারি, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, পাটশাক ও চালকুমড়ার ঘন্ট, কাঁচা কলার কোপ্তা এবং নারকেল ও গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা-পায়েস বরগুনার ঘরোয়া রান্নার অনন্য অংশ। নারকেল ব্যবহার করে বানানো মোয়া, চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ও তালের পিঠাও স্থানীয়দের মাঝে খুব জনপ্রিয়। বরগুনার এই খাবারগুলো শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং এ অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও বহিঃপ্রকাশ।
সতর্কতা:
ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
পরিকল্পিত ভ্রমণ
পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো।
নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার
নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন
স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।
যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না
যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। এ ধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।
মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন
অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।