বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ভোলা জেলা নদী ও সাগরের মিলনস্থলে অবস্থিত একটি দ্বীপ জেলা, যা প্রকৃতি, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির অপূর্ব সম্মিলনে সমৃদ্ধ। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর বুকে জেগে ওঠা এই ভূখণ্ডে রয়েছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং পর্যটন সম্ভাবনায় ভরপুর বহু স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নদী, বন, চরাঞ্চল ও স্থাপত্য নিদর্শন একত্রে ভোলাকে গড়ে তুলেছে এক অনন্য দর্শনীয় জেলারূপে।
চলুন জেনে নেয় এই জেলার ৭ উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। এগুলো হলো— মনপুরা দ্বীপ, চর কুকরীমুকরী, ফাতেমা খানম জামে মসজিদ, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর, ঢাল চর ও চর নিজাম, চরাঞ্চল ও তুলাতুলি সৈকত।
মনপুরা দ্বীপ
মনপুরা দ্বীপ হচ্ছে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকার উত্তরদিকে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত একটি দ্বীপ। এটি ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় কিছুটা অংশ জুড়ে অবস্থিত। দ্বীপের নাম কীভাবে মনপুরা হলো সে নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। স্থানীয় বায়োজ্যেষ্ঠদের মতে, দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য ও উপকূলবর্তী খাবার আগন্তুকদের মন জয় করত। এ কারণেই দ্বীপ ও ইউনিয়নের নাম মনপুরা হয়েছে।
অনেকের ধারণা, মনগাজী শাহবাজপুর জমিদারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছিল বিস্তৃত এই জায়গাটি। ফলে তার নামের ওপর ভিত্তি করেই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া একটি অদ্ভূত গল্পও প্রচলিত আছে এ দ্বীপকে ঘিরে। জায়গাটিতে আগে বাঘ ও হাতির মত জন্তু-জানোয়ার বিচরণ করত। এক সময় মনগাজী নামের এক লোক বাঘের আক্রমণে শিকার হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারান। সেই থেকে সবাই দ্বীপটিকে মনপুরা নামে ডাকতে শুরু করে।
বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে মেঘনা নদীর মোহনায় ৩৭৩ বর্গ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে জেগে আছে দ্বীপটি। বরিশালের ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন স্থলভাগটির তিন দিকে মেঘনা আর একদিকে বঙ্গোপসাগর। ভোলা জেলার প্রাণকেন্দ্র থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত মোট চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এক উপজেলা এই মনপুরা। এর উত্তরে উপজেলার নাম তজুমদ্দিন, দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর এবং পূর্বে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া। পশ্চিমে রয়েছে তজুমদ্দিনের কিছু অংশ, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলা।
মনপুরার আকর্ষণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে মাইলের পর মাইল সবুজ ম্যানগ্রোভ বাগান। দক্ষিণের চির সতেজ বনের চারপাশ ঘিরে আছে নদীর ঢেউ। উপজেলা ঘুরে দেখার সময় পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপজেলা পরিষদের ৫ দিঘী এবং চৌধুরী ফিসারিজ প্রজেক্ট। মেঘনা নদীর উপর দিয়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনটি এখানকার বেশ জনপ্রিয় একটি স্থান। বিকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি এখানে ভিড় হয় দ্বীপবাসী ও ভ্রমণকারীদের।
আলমনগর কেওড়া বনে নদীর পার ধরে ভিড় করা হরিণে পাল আলাদাভাবে মনপুরার প্রতিনিধিত্ব করে। জোয়ারের সময় হরিণগুলো মুল সড়কের একদম কাছাকাছি চলে আসে। কখনও এমন অবস্থা হয়, এদের নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হওয়ার জন্য গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এ ছাড়া, মনপুরার চরগুলো শীতের মৌসুমে বিচিত্র ধরনের অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে থাকে। ছোট-বড় সব মিলিয়ে মোট ১০টি চর রয়েছে এই মনপুরায়। এগুলো হলো- চর মুজাম্মেল, চর পাতালিয়া, চর নিজাম, চর পিয়াল, লালচর, চর শামসুউদ্দিন, ডাল চর, কলাতলীর চর ও চর নজরুল।
কুয়াকাটার মতো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এই দ্বীপের খ্যাতি রয়েছে। জনবসতির মাঝে দেখা যায় বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পুকুর, যাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে সারি সারি নারকেল গাছ। যারা সাইক্লিং ভালোবাসেন তাদের জন্য এই মনপুরা সেরা জায়গা। এ ছাড়া সবুজের সমারোহে ক্যাম্পিং করা যেকোনো হোটেলে রাত্রিযাপনের দারুণ বিকল্প হতে পারে।
চর কুকরীমুকরী
ভোলা সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীর মোহনায় চর ফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত এক নয়নাভিরাম চর কুকরীমুকরী। চোখ ধাঁধানো সবুজের সমারোহ আর শান্ত নিশ্চুপ প্রকৃতির বুকে নিজেকে বিলীন করে দিতে চাইলে পর্যটকরা ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এই দ্বীপে। এখানে দেখা মিলবে নানা প্রজাতির পশুপাখি ও সরীসৃপ প্রাণী। এছাড়াও শিয়াল, হরিণ আর বন্য মহিষের বিশাল পালের দেখা পাওয়া যাবে এখানে। নাম না জানা হাজার রকমের গাছের সাথে সারি সারি নারিকেল গাছ আর বিশাল বালুকাময় চরটিতে শীতকালে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির সমাগম লক্ষ করা যায়।
ফাতেমা খানম জামে মসজিদ
ভোলা সদরের বাংলাবাজারে আধুনিক নকশায় নির্মিত হয়েছে বিশাল স্থান জুড়ে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ফাতেমা খানম জামে মসজিদ। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ-এর পৃষ্ঠপোষকতায় এ মসজিদটির নির্মাণকাজ ২০০২ সালে শুরু হয়। মন্ত্রীর মায়ের নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয় এবং উদ্বোধন হয় ২০১২ সালে। ১০,২০০ বর্গফুট আয়তনের দোতলা এ মসজিদে একটি বড় গম্বুজসহ মোট ৫টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরভাগে ৫টি ঝাড়বাতি রয়েছে এবং আলোকসজ্জা অত্যন্ত চমৎকার। ১.৬০ একর স্থান নিয়ে নির্মিত মসজিদের বহিরাঙ্গনের চতুর্দিকে গ্রিল দ্বারা বেষ্টিত এবং ভেতরের অংশ সবুজ ঘাসে ঢাকা। এ মসজিদে ২৫০০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ভোলায় আগত দর্শনার্থীরা নয়নাভিরাম এই মসজিদটি দেখে যেতে পারেন।
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর
মোস্তফা কামাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাবিবুর রহমান সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার ছিলেন। ১৯৬৭ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। ১৯৭১-এর প্রথম দিকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সিপাহী মোস্তফা কামাল ছিলেন দুই নম্বর প্লাটুনে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ১৭ই এপ্রিল দরুইন গ্রামে অবস্থান গ্রহণকারী দুই নম্বর প্লাটুনের উপর মর্টার ও আর্টিলারির গোলাবর্ষণ শুরু করে। এক পর্যায়ে মোস্তফা কামাল তার দলের সৈন্যদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে একাই এল.এম.জি থেকে গুলি চালাতে থাকেন। এক সময় গুলি শেষ হয়ে গেলে, শত্রুর আঘাতে তিনিও লুটিয়ে পড়েন এবং শহিদ হন। বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের স্মৃতিকে সদাজাগ্রত রাখার অভিপ্রায়ে তার কবরের উপর নির্মিত হয়েছে একটি সমাধিসৌধ ও একটি জাদুঘর। যে জাদুঘরে রয়েছে মোস্তফা কামালের ব্যবহার্য সামগ্রী। এখানে অনেক পর্যটক নিয়মিত এসে থাকেন।
ঢাল চর ও চর নিজাম
ভোলা জেলার আশপাশে অসংখ্য চর যেমন- ঢাল চর, চর নিজাম, চর নিউটন, তুলাতলীর চর ইত্যাদিতে সারাবছর মানুষ বসতি স্থাপন করে বসবাস করে না। কেবলমাত্র চাষ এবং মাছ ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলে এবং কৃষক স্বল্প সময়ের জন্য এগুলোতে অবস্থান করে। নদী থেকে মাছ ধরে এই চরগুলোতে জেলেরা শুটকি করে। স্পিডবোট অথবা যন্ত্রচালিত নৌকায় কিছু খাবার ও পানীয়সহ শীত মৌসুমে পর্যটকগণ এসব এলাকায় ভ্রমণ করতে পারেন।
চরাঞ্চল
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বীপ-জেলা ভোলার আনুমানিক বয়স প্রায় তিন হাজার বছর। দ্বীপটি ছিল প্রাচীন বাকলা জনপদের অংশবিশেষ। এই জেলার চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় অনেকগুলো চর। এর মধ্যে দক্ষিণে মেঘভাষান, আইচা, লেতরা, নীল কমল, কচ্ছপিয়া, মায়ারচর, চরমঙ্গল, চরকিশোর, চরফকিরা, চর লক্ষ্মীপক্ষী ইত্যাদি অন্যতম। এ সকল চরের নৈসর্গিক দৃশ্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
তুলাতুলি সৈকত
ভোলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিমি. দূরে অবস্থিত তুলাতুলি সৈকত। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত এ সৈকতটি শহরের লোকদের নিকট অতি পরিচিত একটি স্থান। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় প্রতিদিন বিকেলে অসংখ্য পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয় এ স্থানটি।
এছাড়া আরো দেখতে পারেন— তারুয়া সৈকত, ভোলা মহিষের বাথান, মঙ্গল শিকদার সমুদ্র সৈকত, হযরত উজির চান করনীর মাজার, কৃষি খামার বাড়ি, শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড, নিজাম-হাসিনা ফাউন্ডেশন মসজিদ, চরপাতিলা ও নারকেল বিচ, জ্যাকব টাওয়ার ও চর ফ্যাশন শিশু পার্ক।
ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
লিস্ট তৈরি করা
ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।
হালকা লাগেজ
লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকিং
স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
স্থানীয় খাবার
ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।
অফ-সিজন ভ্রমণ
ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
যাতায়াতের ব্যবস্থা
ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।
অতিরিক্ত টাকা
ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।
ছোট ব্যাগ
ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।
চার্জার
মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।
ইয়ারফোন
ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন:
বাস: ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সাকুরা পরিবহন, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, গ্রিনলাইন, শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস; এরপর সেখান থেকে লঞ্চ/স্পিডবোট। ভোলা যাওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর ঘাট অথবা বরিশালের ভেদুরিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোট/লঞ্চ ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া ঢাকা সদরঘাট থেকে সরাসরি লঞ্চে ভেদুরিয়া ঘাট (ভোলা) বা ইলিশা ঘাট পর্যন্ত সরাসরি কিছু লঞ্চ চলে। ভোলার ভেদুরিয়া ঘাট থেকে সদর উপজেলায় যেতে লোকাল গাড়ি/অটোরিকশা পাওয়া যায়।
ব্যক্তিগত গাড়ি (কার বা মাইক্রোবাস): ঢাকা থেকে কার নিয়ে গেলে আপনাকে লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরী ঘাট পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে ফেরি দিয়ে পার হয়ে ভোলা যেতে হবে।
যেখানে থাকবেন:
হোটেল প্যারাডাইস আবাসিক
ঠিকানা: চরফ্যাশন-ভোলা হাইওয়ে রোড, ভোলা
মোবাইল: ০১৭৫৮৩১৬০১১
দ্য প্যাপিলন হোটেল
ঠিকানা: জামান সেন্টার, সদর রোড, উকিলপাড়া, ভোলা
মোবাইল: ০১৭১১৩৭৫৬২১
হোটেল এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল
ঠিকানা: আমেনা প্লাজা, সদর রোড, ভোলা
মোবাইল: ০১৭০৪১৮৩৯০১
হোটেল জিএম ইন্টারন্যাশনাল
ঠিকানা: এম আর প্লাজা, তারুকদার ভবন সদর রোড, ভোলা
মোবাইল: ০১৭১৭৬৬৭৫২৩
হোটেল জাহান
ঠিকানা: কে জাহান শপিং কমপ্লেক্স, সদর রোড
মোবাইল: ০১৭১৬৪৭৯৯৭৫
মাহবুবা ইন্টারন্যাশনাল
ঠিকানা: মাহবুবা মার্কেট, ৩য় তলা, সদর রোড, ভোলা
মোবাইল: ০১৭১৬০০০৪৬০
রয়েল প্যালেস
ঠিকানা: মালেক ম্যানশন, চকবাজার, ভোলা
মোবাইল: ০১৭২৭০০৯৮৯৭
ঐতিহ্যবাহী খাবার:
ভোলা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারসমূহ ভোলার ভূপ্রকৃতি, নদীনির্ভর জীবনযাত্রা ও কৃষিনির্ভর সংস্কৃতির এক অনন্য প্রতিচ্ছবি বহন করে। এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও স্বাদে অনন্য খাবার হলো ইলিশ মাছ—বিশেষ করে মেঘনা নদীর তাজা ইলিশ দিয়ে তৈরি সরষে ইলিশ, দুধ ইলিশ, ভাজা ইলিশ ও ইলিশ পাতুরি ভোলাবাসীর রসনাকে অতুলনীয় তৃপ্তি দেয়। এছাড়া চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক ঘাস খাওয়া গরুর মাংস দিয়ে ঝাল ভুনা একটি বিখ্যাত স্থানীয় পদ, যা বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে পরিবেশন করা হয়। নদী-খালবিলের চিংড়ি ও কাঁকড়া দিয়ে তৈরি ভুনা ও ঝাল রান্নাও ব্যাপক জনপ্রিয়। শীতকালে খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি পায়েস, দুধ-চিড়ার মিশ্রণ এবং চিড়ার মোয়া মানুষের প্রিয় মিষ্টান্ন। ভোলার ঘরোয়া খাবারে নানা ধরনের ভর্তা যেমন শুটকি ভর্তা, সরষে বাটা দিয়ে বেগুন ভর্তা, কাঁচা আম বা আলু ভর্তা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে দেশি গরুর দুধ দিয়ে তৈরি দই, সন্দেশ ও অন্যান্য মিষ্টান্ন খাবারের তালিকায় স্বাদ ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া এনে দেয়। সব মিলিয়ে ভোলার খাবার সংস্কৃতি একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ, ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক স্বাদের অনন্য উৎসব।
সতর্কতা:
ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
পরিকল্পিত ভ্রমণ
পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো।
নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার
নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন
স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।
যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না
যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। এ ধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।
মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন
অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।