■ পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
চলুন জেনে নেয় সুনামগঞ্জের উল্লেখযোগ্য ৭টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। এগুলো হলো— হাসন রাজার বাড়ি, সুখাইড় জমিদার বাড়ি, গৌরারং জমিদার বাড়ি, টাংগুয়ার হাওর, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প, ইংলিশ টিলা ও বারেকের টিলা।
হাসন রাজার বাড়ি
মরমি কবি ও সাধক হাসন রাজা সুনামগঞ্জের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশায় ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে লক্ষ্মণশ্রী গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী। তিনি ছিলেন একজন ঐশীপ্রেমী এবং গানের বাণীতে নিজেকে ‘পাগলা হাসন রাজা’, ‘উদাসী’, ‘দেওয়ানা’, ‘বাউলা’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছেন। তার পিতৃকুল এবং মাতৃকুল উভয় ছিল অযোধ্যাবাসী এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী, পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তারা সুনামগঞ্জে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯২২ সালের ৭ই ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। অসংখ্য পর্যটক বাড়িটি পরিদর্শনে আসেন।
সুখাইড় জমিদার বাড়ি
সুখাইড় জমিদার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড়ের জমিদারদের দ্বারা প্রায় ৪০০ বছর আগের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর ঐতিহাসিক স্থাপনা। সুখাইড় জমিদার বাড়িটি ভাটি বাংলার রাজমহল হিসেবে বহুল পরিচিত। আনুমানিক ১৬৯১ সালে মোঘল শাসনামলে রাজা মহামানিক্য দত্ত রায় চৌধুরী হুগলী থেকে আসাম যাওয়ার পথে কালিদহ সাগরের স্থলভূমি ভাটির প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়ে সুখাইড়ে জায়গির কেনেন। ওই সময় থেকেই সুখাইড়ে বাড়ি নির্মাণ পরিকল্পনা শুরু করেন রাজা মহামাণিক্য দত্ত। পাশে পাহাড়ী নদী বৌলাই, হাওরের থৈ থৈ ঢেউ, বন ঝোপ আর সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ থাকায় ১৬৯৫ সালে সুখাইড়ে ২৫ একর জমির ওপর বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন জমিদার মোহনলাল রায় চৌধুরী, জমিদার রাজীব রায় চৌধুরী এবং কেশব রায় চৌধুরী।
কয়েক পুরুষের চেষ্টায় শেষ হয়েছিল বাড়ির নির্মাণকাজ। জমিদারি যুগে সুনামগঞ্জ ছিল ৩২টি পরগনায় বিভক্ত। দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর কারণে সুখাইড় জমিদার বাড়ি হাওর রাজ্যের রাজমহল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল। এ জমিদারির বিস্তৃতি ছিল দক্ষিণে ঘাগলাজুর নদীর উত্তরপাড়, উত্তরে বংশীকুন্ডা, পশ্চিমে ধর্মপাশা এবং পূর্বে জামালগঞ্জ। এক সময় এ বাড়ির মালিকানায় ছিল কালা পানির বিল, ফিরা গাঙ্গের বিল, ধানকুনিয়া বিল, চারদা বিল, কাইমের দাইড়, সোনামোড়ল, পাশোয়া, ছাতিধরা, রাকলা, বৌলাই, নোয়ানদী, চেপ্টা এক্স হেলইন্নাসহ ২০টিরও বেশি জলমহল।
গজারিয়া নদীর উত্তরপাড় থেকে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজবাড়ির সীমানা। জমিদারি প্রথা অনেক আগে বিলুপ্ত হলেও রাজবাড়ি বাংলোঘর, কাচারি ঘর, জলসাঘর, গুদামঘর ও সদরমহল, অন্দরমহল, হাতিশাল, ঘোড়াশাল, খাসকামরাসহ আঙিনার পুকুরসহ বিস্তৃত সীমানা এখনো বাড়িটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে রেখেছে।
গৌরারং জমিদার বাড়ি
গৌরারং জমিদার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। প্রায় দুইশত বছর আগে জমিদার রাজেন্দ্র কুমার চৌধুরী ও জমিদার রাকেশ রঞ্জন চৌধুরীর হাতে এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। প্রায় ত্রিশ একর জমির ওপর তারা এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। তবে তাদের সময় এখানে জমিদারি চালু হলেও মূলত জমিদার রাম গোবিন্দ চৌধুরীর সময়ে এই জমিদার বাড়িটি বিস্তৃত লাভ করে। তিনিই ছিলেন এই এলাকার প্রতাপশালী জমিদার। তার জমিদারির আমলে জমিদার বংশধর ব্যতীত অন্য কেউ এখান দিয়ে জুতা পায়ে দিয়ে হাঁটতে পারত না।
এই জমিদার বাড়িটিতে আলাদা আলাদা ছয়টি ভবন ও রংমহল, অন্দরমহল, সিংহাসন ও জলসা ঘর রয়েছে। রংমহলের দেয়ালে নারী ও লতাপাতার ছবি আঁকা রয়েছে। এছাড়াও মূল ভবনের ডান দিকে একটি দিঘী রয়েছে, যেটিতে জমিদার বাড়ির নারীরা গোসল করতেন। এখানে যাতায়াতের জন্য জল বারান্দাও তৈরি করা হয়। প্রায় একশত বছর আগে এই জমিদার বাড়িটিকে ভূমিকম্পে গ্রাস করে এবং ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীরা এই জমিদার বাড়ির ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ভূমিকম্পের সময় জমিদারের ছোট ভাই মাটি চাপা পড়ে মারা যায়। বর্তমানে জমিদার বংশের কেউই এখানে বসবাস করেন না। দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর এখানকার জমিদারিরও পতন হয়। আর এখানকার শেষ জমিদার ছিলেন নগেন্দ্র চৌধুরী।
তবে এই জমিদার বংশধর এখনো এখানে আছেন। সর্বশেষ জমিদার নগেন্দ্র চৌধুরীর ছেলে নিরঞ্জন চৌধুরী এখন সুনামগঞ্জ শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি অযত্ন ও অবহেলার কারণে প্রায় ধ্বংসের মুখে। জমিদার বাড়ির দেয়ালগুলোতে শ্যাওলায় পরিপূর্ণ এবং প্রায় কয়েক জায়গা ধসে পড়েছে। পুরো জমিদার বাড়িটি এখন লতাপাতা ও জঙ্গলে জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে।
টাংগুয়ার হাওর
এটি টাংগুয়া হাওর নামেও পরিচিত। সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কি.মি. দূরে খাসিয়া-জৈন্তা এবং ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এর অবস্থান। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলাধীন ১০টি মৌজা নিয়ে এই হাওরটি বিস্তৃত। প্রায় অর্ধশত গ্রাম নিয়ে গঠিত এই হাওরের মোট আয়তন প্রায় ১০০ বর্গ কি.মি.। প্রতিবছর এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এই হাওরটিতে ছোটো-বড়ো ১২০টি বিল রয়েছে। এটি দেশের মৎস্য সম্পদের একটি অন্যতম উৎস। এখানে ১৪০টির বেশি প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া কবচ, নলখাগড়া, বনতুলসিসহ বিলুপ্তপ্রায় বহু প্রজাতির গাছগাছালি এই হাওর এলাকায় রয়েছে। টাংগুয়ার হাওরের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। সুনামগঞ্জের অন্যান্য হাওরের মধ্যে নলুয়া, ধানকুনিয়া, দিরাই ও শল্পা উল্লেখযোগ্য।
টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প
চুনাপাথরের প্রাকৃতিক ভান্ডার রয়েছে টেকেরঘাটে। বিচিত্র উপায়ে চুনাপাথর সংগ্রহের পদ্ধতি সত্যিই বিস্ময়কর। সিমেন্ট শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এই চুনাপাথরকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে গ্রামীণ আবহে পাহাড়ী খনি অঞ্চল। একদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মধ্য থেকে চুনাপাথর সংগ্রহ প্রক্রিয়ার আধুনিক আয়োজন। আর এ পারে বাংলাদেশে বিশাল বিস্তৃত হাওর। দিগন্তে মেশা সবুজ ধানের মাঠ সত্যিই প্রকৃতির সাজানো এক মনোরম আঙ্গিনা। চুনাপাথর শিল্পকে ঘিরে টেকেরঘাটে সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন ধর্মী এক জীবন প্রণালী। সাধারণত প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চুনাপাথর সংগ্রহের কাজ চলে। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বড়ছড়াতে সৃষ্টি হয়েছে এক ভিন্ন ধারার জীবন পদ্ধতি।
প্রতি বছর ভারত থেকে বৈধ উপায়ে লক্ষ লক্ষ টন কয়লা আমদানি হচ্ছে এই শুল্ক ষ্টেশন দিয়ে।। ভারতের পাহাড়ী এলাকায় পাহাড়ী অধিবাসীদের কয়লা আহরণ পদ্ধতি, বিচিত্র জীবন ধারা আপনার জানার জন্য চমৎকার বিষয়। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আপনি দেখে আসতে পারেন পাহাড়ী অধিবাসীদের ভারতীয় ভূখন্ড। পাহাড়ী বন্ধুদের জীবন ধারা আপনাকে নাড়া দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ইংলিশ টিলা
ইংলিশ টিলা সুনামগঞ্জ জেলার অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান, যা সিলেটের ছাতকের অন্তর্গত বাগবাড়ি গ্রামে অবস্থিত। বাগবাড়ি গ্রামের প্রায় মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত জর্জ ইংলিশ এসকুয়ারের সমাধিস্থল ইংলিশ টিলা। ১৭৯৪ সালে ইংল্যান্ড থেকে জর্জ ইংলিশ এসকুয়ার নামের এক ইংলিশ ব্যবসায়ী সস্ত্রীক ছাতকে আসেন ব্যবসার জন্য। তিনি এখানে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চুনাপাথর ব্যবসা শুরু করেন, যা ছাতকে সর্বপ্রথম চুনাপাথরের ব্যাবসা এবং তার প্রচেষ্ঠায়ই ছাতকে সম্ভাবনাময় চুনাশিল্পের দ্বার উন্মোচিত হয়। জর্জ ইংলিশ ছাতকে থেকে প্রায় ৫০ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে ১৮৫০ সালে ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করলে তার স্ত্রী হেনরী ইংলিশ স্বামীর ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশুনা করতে লাগেন।
ঐ বছরই মিসেস হেনরী ইংলিশ স্বামীর স্মৃতি রক্ষার্থে টিলার উপর নির্মাণ করেন একটি দর্শনীয় বিশাল স্মৃতিসৌধ, যা পরবর্তীকালে সাহেব মিনার নামে পরিচিতি লাভ করে। জর্জ ইংলিশ মারা যাবার কয়েক বছর পর তার স্ত্রী মিসেস হেনরী ইংলিশ ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে এ দেশ থেকে নিজ দেশ ইংল্যান্ডে চলে গেলে ইংলিশ টিলা ও সাহেবের মিনার সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয়। প্রায় ২৫ ফুট উচু ও বর্গাকারে সাড়ে চারফুট চওড়া মিনারটির গায়ে মার্বেল পাথরে খোদাই করে ইংরেজিতে লিখা আছে ‘ইংলিশ দম্পতির’ ইতিহাস।
বারেকের টিলা
তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে রয়েছে প্রায় ৩শ ফুট উঁচু নয়নাভিরাম বারেকের টিলা। যাদুকাটা নদীর তীর থেকে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচু পথ বেয়ে বারেকের টিলার ওপরে উঠলে চোখে পড়ে সারি সারি ফলদ-বনজ ও ঔষধি গাছ। টিলার ওপর রয়েছে উপজাতিদের গ্রাম কড়াইগড়া ও রাজাই উপজাতি বসতির ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে বাঙালি বসতি। টিলার ওপরে আছে একটি গির্জা। এছাড়া পাহাড়ের ওপর বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড-এর পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে।
এছাড়াও দেখতে পারেন— ডলুরা স্মৃতিসৌধ, শাহ আব্দুল করিমের বসতভিটা, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, শাহ আরেফিনের মাজার, যাদুকাটা নদী, সুরমা নদী ও হাওর-বাওড়।
ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
লিস্ট তৈরি করা
ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।
হালকা লাগেজ
লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকিং
স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
স্থানীয় খাবার
ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।
অফ-সিজন ভ্রমণ
ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
যাতায়াতের ব্যবস্থা
ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।
অতিরিক্ত টাকা
ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।
ছোট ব্যাগ
ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।
চার্জার
মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।
ইয়ারফোন
ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে ভ্রমণের জন্য আপনি সড়ক, রেল ও বিমানপথের সমন্বয়ে বিভিন্ন উপায়ে যেতে পারেন। নিচে প্রতিটি বিকল্প বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
বাস: ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে। নিম্নোক্ত পরিবহন সংস্থাগুলো নিয়মিত এই রুটে বাস পরিচালনা করে। যেমন— এনা পরিবহন: ঢাকার মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে বাস ছাড়ে; শ্যামলী পরিবহন: গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে ছাড়ে; মামুন পরিবহন: সায়েদাবাদ ও ফকিরাপুল থেকে; নূর এন্টারপ্রাইজ: সায়েদাবাদ থেকে। এছাড়া একতা এক্সপ্রেস, সৌদিয়া ট্রান্সপোর্ট, মিতালী পরিবহন ও নিউ লাইন পরিবহনেও যেতে পারেন। বাসের ধরন অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হয়। সাধারণত ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ট্রেন: সুনামগঞ্জে সরাসরি রেল যোগাযোগ নেই। তবে আপনি ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট বা মোহনগঞ্জ পর্যন্ত যেতে পারেন, তারপর সেখান থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জে পৌঁছাতে পারেন।
এছাড়া আপনি ব্যক্তিগত গাড়ি বা রেন্ট-এ-কার ব্যবহার করে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে যেতে পারেন।
আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময় ও বাজেট অনুযায়ী উপযুক্ত মাধ্যম বেছে নিতে পারেন।
যেখানে থাকবেন:
আবাসিক হোটেলসমূহ—
হোটেল রয়েল ইন
ঠিকানা: সুবক্ত রাজা কমপ্লেক্স, পুরাতন বাস স্টেশন, সুনামগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৯২৮৭৩৩৫৫
হোটেল ওমর আবাসিক
ঠিকানা: মেজর ইকবাল রোড, সুনামগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৪৬৮৬৩৩০০
হোটেল আয়ান বাবা আবাসিক
ঠিকানা: মধ্য বাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট
মোবাইল: ০১৭৬৮৮৮৩০০১
হোটেল নূরানী
ঠিকানা: পুরাতন বাসস্টেন্ড, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৫৬৪৬৯১৭০
হোটেল প্যালেস
ঠিকানা: পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ
ফোন: ০৮৭১-৫৫৩৪১
হোটেল খন্দকার
ঠিকানা: জয় বাংলা বাজার, বড়ছড়া, টেকের ঘাট
মোবাইল: ০১৯২৩১০০৪০০
হাওর বিলাস গেস্ট হাউস
ঠিকানা: বসুন্ধরা আ/এ হাজিরপাড়া, সুনামগঞ্জ
মেবাইল: ০১৭ ১৬৩৮ ৮৪৩৯,
হোটেল মিজান আবাসিক
ঠিকানা: জগন্নাথবাড়ি রোড, সুনামগঞ্জ সদর
ফোন: ০১৭৬৫৩০৮৮৪৮
সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউস
ঠিকানা: সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউস, সুনামগঞ্জ সদর, সুনামগঞ্জ
ঠিকানা: ০১৭৩৩৩৪১৯০৪
জেলা পরিষদের ডাক বাংলো
ঠিকানা: উপজেলা সদর, দিরাই
মোবাইল: ০১৯১১৫৩৪৪৬৬
সোনারগা রেস্টুরেন্ট ও হোটেল
ঠিকানা: থানা পয়েন্ট দিরাই
মোবাইল: ০১৭১২৯৩১১৬৫
সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খাবার:
সুনামগঞ্জ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরবেষ্টিত একটি প্রাকৃতিক জেলা, যা শুধু তার জলাভূমি ও দর্শনীয় স্থানেই সীমাবদ্ধ নয়—এ জেলার রান্না ও খাদ্যসংস্কৃতিও সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। হাওরাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক জীবনধারা এবং প্রকৃতির ঘনিষ্ঠতা এখানকার খাবারগুলোতে প্রতিফলিত হয়।
সুনামগঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চিঁড়া, মুড়ি ও খেজুর গুড়। বিশেষ করে শীতকালে এই খাবার এখানকার ঘরে ঘরে খাওয়া হয়, যা শুধু সাদামাটা নয় বরং এক ধরনের আবেগ ও ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। তেমনি টেংরা, শিং, পাবদা, পুঁটি, কৈ প্রভৃতি দেশি মাছ দিয়ে তৈরি সরষে বা টক ঝোল এখানকার হাওরপাড়ের মানুষের নিত্যদিনের খাবারের অংশ। মাছের সঙ্গে তেঁতুল দিয়ে রান্না করা টক মাছ, কিংবা পাটশাক ও চাল কুমড়া দিয়ে মাছের ঝোল—এসব খাবারেও রয়েছে এখানকার নিজস্ব স্বাদ ও ঘরোয়া গন্ধ।
এছাড়া সুনামগঞ্জে শুঁটকি মাছ দিয়ে তৈরি নানা ধরনের রান্না যেমন শুঁটকি ভুনা, শুঁটকি তরকারি বা শুঁটকি ভর্তা খুবই জনপ্রিয়। এসব খাবারে রয়েছে মেঘালয় পাহাড় ও হাওরের মিলে মিশে থাকা স্বাদ। আর ভর্তা তো এই জেলার খাবারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। লাল শাক, বেগুন, কাঁচা মরিচ, রসুন ও সরিষার তেল দিয়ে তৈরি ভর্তার সমাহার পাওয়া যায় এখানকার প্রতিটি গৃহে।
শীত বা উৎসব এলেই চলে আসে পিঠার মৌসুম। চাপটি পিঠা, হাত পিঠা, পাটিসাপটা ইত্যাদি চালের গুঁড়া, নারিকেল ও খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি সুস্বাদু পিঠাগুলো শুধু মুখরোচকই নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সতর্কতা:
ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
পরিকল্পিত ভ্রমণ
পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো।
নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার
নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন
স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।
যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না
যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। এ ধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।
মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন
অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।