■ পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
অনেকেই মনে করেন এটি ভ্রমণের অনুপযোগী সময়, কিন্তু বাস্তবে কিছু প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করলে গরমেও চমৎকার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব।
গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের উপকারিতা
ভিড় কম হওয়া: শীত বা ছুটির মৌসুমে পর্যটনস্থলে ভিড় লেগেই থাকে। গ্রীষ্মকালে তুলনামূলকভাবে কম লোকজন ঘুরতে যান, ফলে পর্যটনস্থল অনেকটা ফাঁকা থাকে। এতে নিরিবিলি পরিবেশে ঘোরা যায়।
খরচ কম: গরমের সময় অনেক রিসোর্ট, হোটেল, ট্রাভেল এজেন্সি ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে। এ সময় ভ্রমণ করলে তুলনামূলকভাবে কম খরচে মানসম্পন্ন সেবা পাওয়া যায়।
ফলমূলের মৌসুম: বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল মানেই আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজের মৌসুম। এ সময় বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করে স্থানীয় ফলমূলের স্বাদ নেয়া যায়।
গ্রীষ্মে ভ্রমণের চ্যালেঞ্জ
প্রচণ্ড গরম: প্রখর রোদে ভ্রমণ ক্লান্তিকর হতে পারে। সূর্যের তাপ শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে হিট স্ট্রোক বা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে।
ঘাম ও অস্বস্তি: গ্রীষ্মের ঘাম, গা চটচটে ভাব ও অস্বস্তি অনেককে বিরক্ত করতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘ রোড ট্রিপে এটি কষ্টকর হতে পারে।
পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি: এই সময় পানি বিশুদ্ধ না হলে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েডের মতো রোগ হতে পারে।
প্রস্তুতি ও করণীয়
হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক: সাদা বা হালকা রঙের সুতি পোশাক শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। ঢিলেঢালা জামা বাতাস চলাচল নিশ্চিত করে।
সানগ্লাস ও সানস্ক্রিন: রোদ থেকে চোখ ও ত্বক রক্ষায় সানগ্লাস ও এসপিএফ ৩০+ সানস্ক্রিন অপরিহার্য।
পর্যাপ্ত পানি: শরীর হাইড্রেট রাখতে প্রতিনিয়ত পানি পান করতে হবে। সঙ্গে গ্লুকোজ বা ওআরএস রাখা ভালো।
ছাতা ও ক্যাপ: ছাতা বা টুপি রোদে মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচায়।
হালকা খাবার: গ্রীষ্মে ভারী খাবার পরিপাক সমস্যার সৃষ্টি করে। ফলমূল, জুস, সালাদ খাওয়া ভালো।
গরমে ঘোরার উপযোগী স্থানসমূহ (বাংলাদেশে)
সিলেট: চা বাগান, জলপ্রপাত (মাধবকুণ্ড, হাম হাম), জাফলং, বিছানাকান্দি – এসব সবুজ ও জলভিত্তিক স্থান গরমে আরামদায়ক।
সাজেক: উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত সাজেক ভ্যালি তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা এবং মনোমুগ্ধকর।
কক্সবাজার বা কুয়াকাটা: সাগরের বাতাস গরমে প্রশান্তি দেয়। তবে দুপুরের রোদ এড়িয়ে বিকেলে বা সকালে ঘোরা উচিত।
রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান: এলাকাগুলোর প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠান্ডা এবং শান্ত। কাপ্তাই লেক, নীলগিরি, নীলাচল, বগালেক জনপ্রিয়।
চন্দ্রনাথ পাহাড় ও সীতাকুণ্ড: চট্টগ্রামের কাছেই হওয়ায় কম সময়ে পাহাড়ি ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়।
আন্তর্জাতিকভাবে গরমে ঘোরার উপযোগী কিছু দেশ
থাইল্যান্ড: গ্রীষ্মে থাইল্যান্ডে বিচ ট্যুর জনপ্রিয়। পাতায়া, ফুকেট, ক্রাবির মতো সৈকত আরামদায়ক।
মালয়েশিয়া: ল্যাংকাউই ও কুয়ালালামপুর ভ্রমণে কম খরচ ও নিরাপদ পরিবেশ পাওয়া যায়।
নেপাল: পাহাড়ি দেশ হওয়ায় গরমেও ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে। পোখারা, কাঠমাণ্ডু উপযুক্ত গন্তব্য।
শ্রীলঙ্কা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং সাগর তীরবর্তী স্থানগুলোতে গরম সহনীয় থাকে।
গরমে ঘোরার সময় করণীয় ও সতর্কতা
- দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করতে হবে।
- দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলা ভালো।
- শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা নিতে হবে।
- নিজের ও পরিবারের জন্য ফার্স্ট এইড কিট সঙ্গে রাখা উচিত।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম অপরিহার্য।
গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের টিপস
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার খবর দেখে নেওয়া
যাতায়াত: এসি বাস, ট্রেন বা বিমান ব্যবহার করলে গরমের কষ্ট কমে
খাবার: পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ খাবার খাওয়া
ছবি তোলা: দুপুরের পরিবর্তে সকালের আলোতে ছবি তুললে বেশি ভালো আসে
চার্জ: মোবাইল পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা প্রয়োজন
গরমকাল মানেই ঘরে বসে থাকা নয়। উপযুক্ত প্রস্তুতি নিলে গরমেও এক সুন্দর ও নিরাপদ ভ্রমণ সম্ভব। বরং এ সময় ভ্রমণ করলে খরচ কম, ভিড় কম এবং প্রকৃতিকে এক নতুন রূপে দেখার সুযোগ মেলে। সতর্কতা মেনে চললে গরমের ভ্রমণ হতে পারে স্মরণীয় ও উপভোগ্য।