মনপুরা দ্বীপ হচ্ছে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকার উত্তরদিকে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত একটি দ্বীপ। এটি ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় কিছুটা অংশ জুড়ে অবস্থিত।
দ্বীপের নাম কীভাবে মনপুরা হলো সে নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। স্থানীয় বায়োজ্যেষ্ঠদের মতে, দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য ও উপকূলবর্তী খাবার আগন্তুকদের মন জয় করত। এ কারণেই দ্বীপ ও ইউনিয়নের নাম মনপুরা হয়েছে। অনেকের ধারণা, মনগাজী শাহবাজপুর জমিদারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছিল বিস্তৃত এই জায়গাটি। ফলে তার নামের ওপর ভিত্তি করেই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে।
এছাড়া একটি অদ্ভূত গল্পও প্রচলিত আছে এ দ্বীপকে ঘিরে। জায়গাটিতে আগে বাঘ ও হাতির মত জন্তু-জানোয়ার বিচরণ করত। এক সময় মনগাজী নামের এক লোক বাঘের আক্রমণে শিকার হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারান। সেই থেকে সবাই দ্বীপটিকে মনপুরা নামে ডাকতে শুরু করে।
বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে মেঘনা নদীর মোহনায় ৩৭৩ বর্গ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে জেগে আছে দ্বীপটি। বরিশালের ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন স্থলভাগটির তিন দিকে মেঘনা আর একদিকে বঙ্গোপসাগর। ভোলা জেলার প্রাণকেন্দ্র থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত মোট চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এক উপজেলা এই মনপুরা।
এর উত্তরে উপজেলার নাম তজুমদ্দিন, দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর এবং পূর্বে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া। পশ্চিমে রয়েছে তজুমদ্দিনের কিছু অংশ, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলা।
মনপুরার আকর্ষণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে মাইলের পর মাইল সবুজ ম্যানগ্রোভ বাগান। দক্ষিণের চির সতেজ বনের চারপাশ ঘিরে আছে নদীর ঢেউ। উপজেলা ঘুরে দেখার সময় পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপজেলা পরিষদের ৫ দিঘী এবং চৌধুরী ফিসারিজ প্রজেক্ট। মেঘনা নদীর উপর দিয়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনটি এখানকার বেশ জনপ্রিয় একটি স্থান। বিকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি এখানে ভিড় হয় দ্বীপবাসী ও ভ্রমণকারীদের।
আলমনগর কেওড়া বনে নদীর পার ধরে ভিড় করা হরিণে পাল আলাদাভাবে মনপুরার প্রতিনিধিত্ব করে। জোয়ারের সময় হরিণগুলো মুল সড়কের একদম কাছাকাছি চলে আসে। কখনও এমন অবস্থা হয়, এদের নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হওয়ার জন্য গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
এ ছাড়া, মনপুরার চরগুলো শীতের মৌসুমে বিচিত্র ধরনের অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে থাকে। ছোট-বড় সব মিলিয়ে মোট ১০টি চর রয়েছে এই মনপুরায়। এগুলো হলো- চর মুজাম্মেল, চর পাতালিয়া, চর নিজাম, চর পিয়াল, লালচর, চর শামসুউদ্দিন, ডাল চর, কলাতলীর চর ও চর নজরুল।
কুয়াকাটার মতো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এই দ্বীপের খ্যাতি রয়েছে। জনবসতির মাঝে দেখা যায় বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পুকুর, যাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে সারি সারি নারকেল গাছ। যারা সাইক্লিং ভালোবাসেন তাদের জন্য এই মনপুরা সেরা জায়গা। এ ছাড়া সবুজের সমারোহে ক্যাম্পিং করা যেকোনো হোটেলে রাত্রিযাপনের দারুণ বিকল্প হতে পারে।