■ পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত বরিশাল শহর ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ একটি নগরী হিসেবে পরিচিত। এই জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের মন জয় করে নেয় সহজেই।
চলুন জেনে নেয় এই জেলার উল্লেখযোগ্য ১০ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। এগুলো হলো— বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর, দুর্গাসাগর দিঘি, গৌরনদী জমিদার বাড়ি, কলসকাঠি জমিদার বাড়ি, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, ভাটিখানা জোড় মসজিদ, সরকার মঠ, মাধবপাশা জমিদার বাড়ি, লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ও বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ রাজবাড়ি।
বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন পরিচালিত বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরটি শহরের চকবাজার রোডে অবস্থিত। সাম্প্রতিক সময়ে ১৮২১ সালে নির্মিত কালেক্টরেট ভবনকে সংস্কার করে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ২০১৫ সালে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দৃষ্টিনন্দন জাদুঘর ভবনটির দ্বিতীয় তলার ৯টি গ্যালারিতে ৩৫০ এর অধিক উপাদান রয়েছে। এসব গ্যালারিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত সুলতানি, মোগল ও ব্রিটিশ আমলের মুদ্রা এবং বেলে ও কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ রয়েছে।
এছাড়া এখানে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে প্রাপ্ত প্রাচীন নৌকার বিভিন্ন অংশবিশেষ যেমন-তামার পাত, বাটখারা, লৌহদণ্ড, পেরেক ও আলোকচিত্র সংরক্ষিত রয়েছে। জাদুঘরটিতে আরো রয়েছে তৎকালীন কালেক্টরেট ভবনে রাজস্ব আদায়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সিন্দুক। এখানে বরিশাল বিভাগের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিচিতিসহ বরিশালের খ্যাতিমান ব্যক্তি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, লোকশিল্প, বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ ও ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে। সপ্তাহের রবিবার পূর্ণ দিবস এবং সোমবার অর্ধদিবস ছাড়া জাদুঘরটি প্রতিদিন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
দুর্গাসাগর দিঘি
বরিশাল শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নে ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে দুর্গাসাগর দিঘিটি খনন করা হয়। বরিশালের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো এই প্রাচীন দিঘি দুর্গাসাগর। রাজা জয় নারায়ণের মা দুর্গাদেবীর নামে এর নামকরণ করা হয়। দিঘিটিকে অনেকে মাধবপাশা দিঘিও বলে থাকেন। মাধবপাশা গ্রামে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ রাজাদের আবাসস্থল ছিল। তাদের নির্মিত প্রাসাদ, মন্দির ও অন্যান্য ভবনের ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখা যায়। দেশ স্বাধীনের পরে প্রায় ৪৬ একর আয়তনের এই দিঘির মাঝখানে ছোটো আকারের একটি দ্বীপ তৈরি করা হয়।
দিঘির চতুর্দিকে মোট ১.৬ কিমি. (১ মাইল) দীর্ঘ একটি ওয়াকিং ট্রাক রয়েছে। শীতকালে এখানে বহু প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে। তখন পাখির কলকাকলিতে মুখরিত স্থানটি পর্যটকদের মনে অন্যরকম ভালোলাগার পরশ বুলিয়ে দেয়। এই সময়টিই এখানে ভ্রমণের জন্য উৎকৃষ্ট সময়, যদিও বছরের অন্যান্য সময় দিঘির পাড়ের নির্জন পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ১৯৯৭-১৯৯৯ সালে দিঘিটি কিছুটা সংস্কার করা হয়।
গৌরনদী জমিদার বাড়ি
গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠি গ্রামে জমিদার মোহন লাল সাহার স্মৃতি বিজড়িত এই ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। বাড়ির সামনে রয়েছে সিংহ মূর্তি খচিত ১৬০ বছরের পুরাতন দুর্গা মন্দির। ১৮৫০ সালে জমিদার মোহন লাল সাহার পিতা জমিদার প্রসন্ন কুমার সাহা এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। তৎকালীন সময়ে এটি ছিল উপমহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ মন্দির। প্রায় ২৮ মিটার × ১৮ মিটার (৯২ ফুট × ৫৯ ফুট) আয়তনের এই মন্দিরে রয়েছে ৪৫টি স্তম্ভ। জরাজীর্ণ এই জমিদার বাড়িতে এখনো তার উত্তরসূরিরা বসবাস করেন। জমিদার মোহন লাল সাহার বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের মধ্যে ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এখনো টিকে আছে।
কলসকাঠি জমিদার বাড়ি
বাকেরগঞ্জ উপজেলাধীন কলসকাঠি ইউনিয়নের বাজার সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেই প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। কলসকাঠিতে আওরঙ্গপুর পরগণার জমিদারের বসবাস ছিল। জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা জানকী বল্লভ গারুরিয়ার পৈত্রিক নিবাস ত্যাগ করে কলসকাঠি গ্রামে বসতি স্থাপন করে। তার বংশধররা প্রতাপশালী জমিদার ছিল। তাদের চেষ্টায় ১৮৮২ খ্রি. কলসকাঠি বিএম হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদার বাড়িটি বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
বায়তুল আমান জামে মসজিদ
বরিশাল শহরের লঞ্চঘাট থেকে ১৯ কিমি. এবং দুর্গাসাগর থেকে ৪ কিমি. পশ্চিমে উজিরপুর উপজেলায় চাংগুরিয়া গ্রামে দক্ষিণাঞ্চলের এই বৃহৎ মসজিদটি অবস্থিত। ২০০৩ সালে ১৪ একর জায়গার উপর শুরু হয় বায়তুল আমান জামে মসজিদ ঈদগাহ কমপ্লেক্স তৈরির কাজ, শেষ হয় ২০০৬ সালে। স্থানীয়ভাবে এটি গুঠিয়া মসজিদ নামে পরিচিত। তাজমহলের স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত বিশাল এ মসজিদটির কেন্দ্রে রয়েছে কারুকাজ খচিত একটি গম্বুজ। তাই এটি ‘তাজমহল মসজিদ’ নামেও পরিচিত। মসজিদের উঁচু মিনারটি আকর্ষণীয়। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের প্রাচীন কিছু মসজিদের আদলে তৈরি এর দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে।
ভাটিখানা জোড় মসজিদ
বরিশাল শহরের উত্তরপ্রান্তে ভাটিখানায় পাশাপাশি ছোটো পরিসরের দুটি মসজিদ অবস্থিত। এর নির্মাণকাল এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায় না। তবে জনশ্রুতি অনুসারে কয়েকশত বছর আগে খোয়াজ মল্লিক এবং মদন মল্লিক ভ্রাতৃদ্বয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। কিংবদন্তি আছে, তারা অত্যন্ত গরিব ছিলেন কিন্তু গুপ্তধন প্রাপ্তির মাধ্যমে প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হওয়ার পর স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হয়ে এই মসজিদটি তৈরি করেছিলেন। এই জোড় মসজিদের সাথে জড়িয়ে আছে শিয়া ধর্মীয় অনুভূতি। কারণ একটি মসজিদ হযরত আলী (রা.) ও অপরটি হযরত ফাতেমা (রা.)-এর উদ্দেশ্যে নিবেদিত পরবর্তীতে এটি নতুনভাবে সংস্কারের মাধ্যমে বর্ধিত করার ফলে পুরাতন কাঠামো ও নকশা পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
সরকার মঠ
গৌরনদী উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে চন্দ্রহার গ্রামে একটি এক কোঠা বিশিষ্ট আট কোণাকার শিখর মন্দির আছে- যা এর বিশাল উচ্চতার জন্যে সহজেই অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চুন-সুরকি দিয়ে ছোটো আকারের ইট গেঁথে এ মন্দির তৈরি হয়েছে। এ মঠের নিম্নদেশের প্রত্যেক বাহু ১.৯১ মিটার (৬ ফুট) দীর্ঘ এবং প্রায় ৬.২ মিটার (২০ ফুট) প্রশস্ত। মঠটির উচ্চতা ভূমি থেকে প্রায় ২০.২১ মিটার (৬৬ ফুট)। দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে এই কক্ষের একমাত্র প্রবেশপথ। প্রবেশ পথের উপরে বেশ কিছু অংশে প্যানেলের অলংকরণ রয়েছে। মঠটি শিখর মন্দির শিল্পের এক নিদর্শন।
এ সুউচ্চ মঠটির সাথে ইটালির হেলানো পিসা টাওয়ারের মিল রয়েছে। নির্মাণ শৈলীর কারণে এটি কিঞ্চিত হেলে আছে বলে মনে হয়। মঠে কোনো খোদিত লিপি নেই, তবে এর গঠন কৌশল দেখে অনুমান করা হয়েছে যে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে নবাব আলীবর্দি খানের ১৭৪০-১৭৫৬ সালের শাসনামলে সরকার রূপরাম দাশগুপ্ত এটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি আড়াইশ বছরের পুরোনো একটি মঠ। ব্যক্তি উদ্যোগে এ মন্দিরটির পাশে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এটি মাহিলারা মঠ নামেও পরিচিত।
মাধবপাশা জমিদার বাড়ি
বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ রাজবাড়ি থেকে ৩০০ মিটার উত্তরে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। এখানে দুটি অংশে একাধিক প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এখনো টিকে আছে। বাড়িটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। বরিশাল জেলার প্রাচীন জমিদার পরিবার হচ্ছে এই মাধবপাশা জমিদার পরিবার। চৌদ্দ শতকের শুরুতে দনুজমর্দম দেব বা দনুজ রায় মুসলমান বিজয়ীদের দ্বারা বিতাড়িত হওয়ার পর সোনারগাঁও থেকে বর্তমান বাকেরগঞ্জ অঞ্চলে চন্দ্রদ্বীপ নামে একটি ক্ষুদ্র হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। দনুজ রায় ছিলেন মাধবপাশা জমিদারদের পূর্বপুরুষ। দনুজ রায়ের কয়েক পুরুষ পরে হরিবল্লবের সময় পর্যন্ত (১৪৮৭ খ্রি.) চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য স্বাধীন ছিল। এরপর চন্দ্রদ্বীপ মুসলিম সুলতান ও আফগান শাসকদের আশ্রিত বা করদ রাজ্যে পরিণত হয়।
হরিবল্লবের পুত্র জয়দেবের কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তার কন্যা কমলা দেবী রাজ্য শাসন করতেন। কমলা দেবীর উদ্যোগে পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কালাইয়া গ্রামে ১০০ একর স্থানজুড়ে খননকৃত কমলা রাণীর দিঘিটির অস্তিত্ব এখন আর নেই। বর্তমানে এটি একটি ধানক্ষেত। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর মাধবপাশা জমিদারির অবসান ঘটে। মাধবপাশা জমিদারির নিদর্শন হিসেবে দুর্গাসাগর দিঘি এবং বরিশাল-মাধবপাশা রাস্তা এখনো টিকে আছে। রাজবাড়ি থেকে রাজা কন্দর্পনারায়ণ নামাঙ্কিত একটি কামান আবিষ্কৃত হয়েছে। মাধবপাশা জমিদার বাড়ি এবং নিকটস্থ দুর্গাসাগর দিঘি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত।
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের লাকুটিয়া গ্রামে জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। বর্তমানে এ জমিদার বাড়ির স্থানটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের অধিভুক্ত। প্রাচীন একটি অট্টালিকা ছাড়াও এর চারপাশে রয়েছে ছোটো-বড়ো অসংখ্য মঠ ও মন্দির। এছাড়া এখানে বড়ো একটি দিঘি রয়েছে।
বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ রাজবাড়ি
বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ রাজবাড়ি বরিশাল শহর থেকে ১১ কিমি. উত্তর-পশ্চিমে বাবুগঞ্জ থানার মাধবপাশা গ্রামে বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের পাশে অবস্থিত। ১২ হেক্টর জমির উপর এই প্রাচীন রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান। এখানে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের রাজাদের সর্বশেষ নিবাসস্থল ছিল। রাজবাড়ির ১৮৩ মিটার (৬০০ ফুট) দক্ষিণে ২ মিটার (৬ ফুট) উঁচু মঞ্চের উপর একটি সমাধি মন্দির রয়েছে। মন্দিরে দেবদেবীর মূর্তি অঙ্কিত আছে। এটি ১৮ শতকে নির্মিত এবং সে সময় উদয় নারায়ণ এখানে দীর্ঘদিন রাজত্ব করার কারণে মন্দিরটি উদয় নারায়ণের সমাধি বলে মনে করা হয়। রাজবাড়ি থেকে কয়েকশ মিটার পূর্বে সড়কের পাশে শিব মন্দির অবস্থিত। রাজবাড়ির পূর্বে দুর্গাসাগর অবস্থিত।
এছাড়া দেখতে পারেন— কমলাপুর তিন গম্বুজ মসজিদ, বার্থি মন্দির, বরিশাল নৌবন্দর, দপদপিয়া সেতু, চরমোনাই মাদ্রাসা, শর্ষিনা মাদ্রাসা, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, দূত কুমার পীর সাহেব (র.) মাজার শরিফ, চারণ কবি মুকুন্দ দাসের বসতভিটা ও কালী মন্দির, কসবা মসজিদ, গুঠিয়া মসজিদ, পাদ্রিশিবপুর গির্জা, অক্সফোর্ড মিশন চার্চ, ঐতিহাসিক মিয়াবাড়ি মসজিদ, শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর।
ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
লিস্ট তৈরি করা
ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।
হালকা লাগেজ
লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকিং
স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
স্থানীয় খাবার
ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।
অফ-সিজন ভ্রমণ
ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
যাতায়াতের ব্যবস্থা
ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।
অতিরিক্ত টাকা
ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।
ছোট ব্যাগ
ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।
চার্জার
মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।
ইয়ারফোন
ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার জন্য আপনি বাস, লঞ্চ বা বিমানের মাধ্যমে যাত্রা করতে পারেন। প্রতিটি মাধ্যমের সময়, ভাড়া ও সুবিধা অনুযায়ী আপনার উপযুক্ত অপশন বেছে নিতে পারেন।
বাস: সাকুরা, ঈগল, হানিফ, সোনারতরী, কুয়াকাটা এক্সপ্রেস ইত্যাদি বাস ঢাকা থেকে বরিশাল চলাচল করে। এসব বাস ছাড়ার স্থান গাবতলী, সায়েদাবাদ ও আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড।
লঞ্চ: এমভি মানামী: রাত ৮:৩০ মিনিটে ছাড়ে; এমভি কুয়াকাটা-২: রাত ৯:৩০ মিনিটে ছাড়ে; এমভি কীর্তনখোলা-২ ও ১০: রাত ৯টায় ছাড়ে; এমভি সুরভী-৮: রাত ৮টায় ছাড়ে; গ্রীন লাইন ওয়াটারবাস: সকাল ৮টায় ছাড়ে।
বিমান: বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স: রবিবার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ফ্লাইট রয়েছে; নভোএয়ার: প্রতিদিন দুপুর ২:১০ মিনিটে ফ্লাইট রয়েছে; ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স: সাপ্তাহিক ফ্লাইট রয়েছে।
আপনার যাত্রার সময় ও বাজেট অনুযায়ী উপযুক্ত মাধ্যম বেছে নিন।
যেখানে থাকবেন:
হোটেল গ্রান্ড পার্ক
ঠিকানা: বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক), বান্দ রোড, বরিশাল
মোবাইল: ০১৭৭৭৭৩৫১৭১-৭৫
হোটেল সেডোনা
ঠিকানা: সদর রোড, বরিশাল
মোবাইল: ০১৭০৫২৯৩৮৭৮
রিচমার্ট রেস্ট হাউস
ঠিকানা: বি আই ডব্লিউ টি সি ভবন, লঞ্চ ঘাট, বরিশাল
মোবাইল: ০১৩১২০৭১১০৯
হোটেল এরিনা
ঠিকানা: সদর রোড, বরিশাল
মোবাইল: ০১৭২৪৪৪৪৪৮৮
হোটেল এথেনা ইন্টারন্যাশনাল
ঠিকানা: কাঠপট্টি রোড, বরিশাল
মোবাইল: ০১৭১২২৬১৬৩৩
হোটেল রোদেলা
ঠিকান: সাউথ পোর্ট রোড বরিশাল, বরিশাল
মোবাইল:০১৭১১৩৩৩০৮১
হোটেল চারু রেসিডেন্সিয়াল
ঠিকানা: বান্দ রোড, বরিশাল
মোবাইল: ০১৭৩৯৭৩৯৭২৫
ঐতিহ্যবাহী খাবার:
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো মূলত নদীমাতৃক সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জীবনের প্রতিফলন। এখানকার প্রধান আকর্ষণ ইলিশ মাছ, যা দিয়ে ভুনা, সরষে ইলিশ ও সুগন্ধি ইলিশ পোলাও তৈরি হয়। পাশাপাশি চিংড়ি দিয়ে বানানো চিংড়ি মালাইকারি ও ধুন্ধুল-চিংড়ির ঝোলও খুব জনপ্রিয়। শুঁটকি ভর্তা, বেগুন-পটল ভর্তা, কচুপাতা ভাপা ও চালতার টক নানা ঘরোয়া স্বাদের প্রতিনিধিত্ব করে। এখানকার মিষ্টান্ন ও পিঠার মধ্যেও বৈচিত্র্য রয়েছে—নারকেল দিয়ে বানানো মোয়া, পুলি, চিতই ও ভাপা পিঠা বরিশালের হাটবাজার ও ঘরের নিয়মিত অংশ। সব মিলিয়ে বরিশালের খাবারে পাওয়া যায় প্রকৃতি, ঐতিহ্য ও আন্তরিকতার মিশেল।
এছাড়া বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দই ও মিষ্টি ভোজন বিলাসীদের কাছে অতি প্রিয়। গৌরনদীর উত্তর পাশে নদীর বন্দরের কাছে দুধপট্টি এলাকার কয়েকটি মিষ্টির দোকানে এই বিখ্যাত দই উৎপাদিত হয়। স্থানীয় কয়েকটি ঘোষ পরিবার বংশ পরম্পরায় দই মিষ্টির পেশাকে ধরে রেখেছে। গৌরনদীর দই, মিষ্টি ও ঘি-এর সুনাম ও চাহিদা দেশের সর্বত্র রয়েছে। এছাড়া উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া মসজিদ সংলগ্ন গুঠিয়া বাজারের সন্দেশ খুব প্রসিদ্ধ। সুস্বাদু এই সন্দেশের চাহিদা সারা এলাকায় রয়েছে।
সতর্কতা:
ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
পরিকল্পিত ভ্রমণ
পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো।
নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার
নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন
স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।
যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না
যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। এ ধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।
মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন
অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।