কসবা মসজিদ বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামে এর অবস্থান। বরিশালের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে এটিই আয়তনে সবচেয়ে বড়। নয় গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটির সাথে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের অনেকাংশেই মিল রয়েছে। পোড়ানো লাল ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বর্গাকার এ মসজিদটি।
মসজিদের অভ্যন্তরভাগ চারটি পাথরের স্তম্ভ দ্বারা নয়টি চতুষ্কোণ ‘বে’-তে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি বে’র উপর একটি করে গম্বুজ রয়েছে। প্রতি গম্বুজের ভিত্তির নিচে পরস্পর ছেদকারী খিলানগুলোর চারটি ত্রিকোণাকার জায়গায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পেন্ডেন্টিভ অলঙ্করণ। ভবনটির কার্নিশ প্রচলিত বাঙালি রীতিতে কিছুটা বাঁকানো। মসজিদের অলংকরণে ব্যবহৃত হয়: পোড়ামাটির বুটিদার নকশা, খাঁজকাটা হীরক আকৃতির নকশা, প্যাঁচানো নকশা, শিকল নকশা এবং গোলাপ নকশা। মিহরাবের কুলুঙ্গিতে এবং দরজার খিলানে এখনো এ নকশাগুলোর নমুনা টিকে আছে।
মসজিদের চারকোণে রয়েছে ৪টি ছোট মিনার বা বুরুজ। এই বৃত্তাকার বুরুজগুলো ছাদ পর্যন্ত প্রলম্বিত। বুরুজগুলো নিচ থেকে উপরে ক্রমশঃ সরু হয়ে গেছে। এগুলোর ভিত্তি কিছুটা বাঁকানো এবং চূড়া একেবারে সমান। ছাদের উপরে তিন সারিতে মোট নয়টি গম্বুজ রয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ চারটি পাথরের স্তম্ভের উপর ভর করে দণ্ডায়মান। মনে করা হয় স্তম্ভগুলো আগ্নেয় শিলাজাত ব্যাসল্ট কিংবা ডলেরাইট পাথর দিয়ে নির্মিত।
মসজিদের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে তিনটি করে খিলান বা প্রবেশ পথ। এগুলোর মধ্যে মাঝের খিলানটি অন্য দুটির চেয়ে বড়। বর্তমানে পূর্ব দিকের তিনটি খিলান খোলা থাকলেও উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের মাঝের খিলানগুলোই শুধু খোলা রয়েছে। বাকি খিলানগুলো ইট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে; যা পূর্ব দেয়ালের খিলানগুলোর সাথে মিল রেখেই তৈরি করা হয়েছে। বহিঃপ্রাচীরের পশ্চিম দিকে একটি বাড়তি দেয়াল বা প্রজেকশন আছে।
এছাড়া, কসবা মসজিদের উত্তর দিকে দূত মল্লিক নামক এক মনীষীর মাজার রয়েছে। ৮৯০ বঙ্গাব্দের ১ জ্যৈষ্ঠ (১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দ) মাজারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাজার সংরক্ষণের জন্য সম্রাট জাহাঙ্গীর লাখেরাজ সম্পত্তি দান করেন। এ দানপত্রে সম্রাজ্ঞী নূর জাহান কর্তৃক খোদিত পাঞ্জা কসবার কাজী পরিবারের কাছে রক্ষিত আছে।
এ মসজিদ নির্মাণের তারিখ সংযুক্ত কোনো শিলালিপি পাওয়া যায় নি। তবে জনশ্রুতি আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীর এর আমলে এই জঙ্গলকে চাষাবাদের উপযোগী করার জন্য এক দল লোক জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করার সময় এ মসজিদটির সন্ধান পান। মসজিদের কোনো প্রতিষ্ঠাতা বা নির্মাণকারীর সন্ধান না পেয়ে তখন ওই এলাকার মুসলমানরা এর নাম রাখেন ‘আল্লাহর মসজিদ’।
কসবা মসজিদের ভূমি-নকশা, পরিমাপ, অভ্যন্তরীণ বিন্যাস, ছাদের উপর গম্বুজের অবস্থান, প্রবেশ দরজার অবস্থান ও অলংকরণ, চারকোণের বুরুজসমূহ প্রভৃতি দেখলে একে বাগেরহাটের খান জাহান নির্মিত নয়গম্বুজ মসজিদ এবং খুলনার মসজিদকুঁড় মসজিদের অনুকৃতি বলে মনে হবে। খান জাহানি স্থাপত্য রীতির সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ মিল থাকায় মনে করা হয় যে, খান জাহান আলী কর্তৃক এ অঞ্চল মুসলিম অধিকারে আসার পর পনেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে কসবা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এতে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে।