পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
পাবনার জমিদারদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও খ্যাতিমান বলে বিবেচিত তাড়াশ জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন ১৬ শতাব্দীর শেষে মতান্তরে ১৭ শতাব্দীর শুরুতে জনৈক বাসুদেব তালুকদার- যার অপর নাম নারায়ণদেব চৌধুরী। বাসুদেব ঢাকার নবাব ইসলাম খাঁর অতি বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন। সততা ও আনুগত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ নবাব তাকে ‘তাড়াশ মহাল’ বরাদ্দ দেন এবং ‘রায় চৌধুরী’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাড়াশ মহাল মূলত রাজশাহীর সাঁওতাল রাজার জমিদারি ছিল এবং এস্টেটটি ছিল প্রায় ২০০ মৌজা নিয়ে।
জানা যায়, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাড়াশ জমিদার পরিবার এই ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাড়াশ জমিদারির সর্বশেষ বংশধর গৌরসুন্দর রায় নিঃসন্তান হওয়ার কারণে তার দত্তকপুত্র বনওয়ারীলাল রায় জমিদার হন। তিনি জনহিতকর কাজ ও বদান্যতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তারই দত্তকপুত্র রায় বাহাদুর বনমালী রায় প্রায় ৭ একর জমির ওপর তাড়াশ রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন।
পাবনার প্রাসাদোপম ভবনটির সম্মুখ ফ্যাসাড দ্বিতলবিশিষ্ট এবং চারটি সুডৌল বৃত্তাকার স্তম্ভ সহযোগে দ্বিতলের কক্ষটি নির্মিত। প্রাসাদের সামনে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের শেষ প্রান্তে প্রবেশ ফটকটির দুপার্শ্বে দুটি করে চারটি স্তম্ভ রয়েছে। মাঝখানে বিশাল আকৃতির অর্ধবৃত্তাকার খিলানে নির্মিত প্রবেশপথটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। ভবনটি আয়তাকৃতির এবং দৈর্ঘ্যে ৩০ মিটার (১০০ ফুট) ও প্রস্থে ১৮ মিটার (৬০ ফুট)।
চারটি করিন্থিয়ান স্তম্ভের উপরে আকর্ষণীয় দ্বিতল গাড়ি বারান্দা সহজেই পথিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাড়াশ জমিদার ভবনের দুই পার্শ্বে দুটি বর্ধিত অঙ্গ সংযুক্ত রয়েছে এবং সর্বত্র অর্ধ বৃত্তাকৃতির খিলান সুষমভাবে সন্নিবেশিত। তাড়াশ রাজবাড়ি অনেক আগে থেকে সরকারি দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এখনো ভালো অবস্থায় আছে এবং ১৯৯৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত ইমারতের তালিকাভুক্ত হয়।
কীভাবে যাবেন
পাবনার বাইপাস টার্মিনাল থেকে যে কোনো যানবাহনে সরাসরি তাড়াশ ভবনে যেতে পারবেন। রিকশা কিংবা অটোতে উঠে সরাসরি তাড়াশ জমিদার বাড়ি বা তাড়াশ ভবন বললেই নিয়ে যাবে সেখানে। রিকশায় যেতে সময় লাগে ১৫ মিনিট ও ভাড়া ২৫-৩০ টাকা। অটোতে সময় লাগবে ৭-১০ মিনিট ও ভাড়া ১৫ টাকা।