পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন মুসলিম। জমিদার আজিম চৌধুরীর নামে জমিদার বাড়িটির নাম হলেও এই জমিদার বাড়িটির মূল গোড়াপত্তনকারী হচ্ছেন জমিদার আজিম চৌধুরীর পিতা রহিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনিই এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা।
জমিদার বাড়িটি আজিম চৌধুরীর নামে হওয়ার কারণ হলো —তিনি যখন এই জমিদার বাড়ির জমিদারি পান তখনই এই জমিদার বাড়িটি বিস্তার লাভ করে। তিনি তার জমিদারির সময় ৩টি নীল কুঠি স্থাপন করেন দুলাই গ্রামে। এই জমিদার বাড়িটি একটি দোতলা বিশিষ্ট প্রাসাদ।
এই জমিদার বাড়িতে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মঠ, একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত অট্টালিকা ও পাঁচটি পুকুর জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আজিম চৌধুরী ৪০ একর জমির তিন ভাগের এক ভাগজুড়ে নির্মাণ করেছিলেন অত্যাধুনিক ডিজাইনের দ্বিতল বহু দুয়ারি এবং বহু কক্ষের প্রাসাদতুল্য এই অট্টালিকা।
১১টি নিরাপত্তা গেট বেষ্টিত এ অট্টালিকার মূল গেটে দণ্ডায়মান থাকত বিশাল আকৃতির দুটি হাতি। হাতি দুটিকে জমিদার বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীর কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও আজিম চৌধুরীর ভ্রমণ বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হতো। নিরাপত্তা বিধানে হাতি ছাড়াও ছিল দুটি স্বয়ংক্রিয় কামান।
মনোলোভা সৌন্দর্যমণ্ডিত বিলাসবহুল এ অট্টালিকার চারদিকে পরিবেষ্টিত ২০ একর আয়তনের একটি দর্শনীয় দিঘি ছিল। বাড়ির অভ্যন্তরে একটি মসজিদ, জমিদার দরবারে কমরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোসলের জন্য একটি বিশাল পুকুর এবং জমিদার পরিবারের মেয়েদের গোসলের জন্য অন্দরমহলের ভেতরে আরো একটি পুকুর খনন করা হয়েছিল।
কথিত আছে জমিদারী আমলে বর্তমান পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায় এই জমিদার বংশধরদের মতো আরেকটি জমিদার বংশ ছিল। যা ছিল হিন্দু জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর জমিদার বংশ। হিন্দু জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর সাথে এই মুসলিম জমিদার আজিম চৌধুরীর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল।
বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি প্রায় ধ্বংসের মুখে। যদিও তা বর্তমানে এই জমিদার বাড়ির বংশধররা রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। আসলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর তা সরকারের অধীনস্থ হয়ে যায়। পরে এই জমিদার বাড়ির বংশধররা দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই জমিদার বাড়িটি ১৯৯৪ সালে ফিরে পান। তারপর থেকেই তারা এই জমিদার বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন।