পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
নওগাঁ জেলা এমন এক বিশেষ জায়গা, যেখানে প্রচুর ইতিহাস আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলে এক হয়ে গেছে। যদি আপনি ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন এবং ইতিহাস আর সংস্কৃতিতে আগ্রহী হন, তাহলে নওগাঁ আপনার ভ্রমণ তালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত। চলুন জেনে নেয় নওগাঁ জেলার উল্লেখযোগ্য ৮ গন্তব্য সম্পর্কে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন। ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।
পাহাড়পুরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার বলা যেতে পারে। আয়তনে এর সাথে ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা হতে পারে। এটি ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্মচর্চা কেন্দ্র ছিল। শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, চীন, তিব্বত, মায়ানমার ( তদানীন্তন ব্রহ্মদেশ), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা ও ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন। খ্রিষ্টীয় দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।
পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্ড্রনগর (বর্তমান মহাস্থান) এবং অপর শহর কোটিবর্ষ (বর্তমান বানগড়)এর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছিল সোমপুর মহাবিহার। এর ধ্বংসাবশেষটি বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজশাহীর অন্তর্গত নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। অপর দিকে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে এর দূরত্ব পশ্চিমদিকে মাত্র ৫ কিমি।
প্রত্নতাত্ত্বিক এই নিদর্শনটির ভূমি পরিকল্পনা চতুর্ভূজ আকৃতির। এটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত, প্লাইস্টোসীন যুগের বরেন্দ্র নামক অনুচ্চ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। মাটিতে লৌহজাত পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাটি লালচে। অবশ্য বর্তমানে এ মাটি অধিকাংশ স্থানে পললের নিচে ঢাকা পড়েছে। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০.৩০ মিটার উচুতে অবস্থিত পাহাড় সদৃশ স্থাপনা হিসেবে এটি টিকে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন একে ‘গোপাল চিতার পাহাড়’ আখ্যায়িত করত। সেই থেকেই এর নাম হয়েছে পাহাড়পুর, যদিও এর প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার।
৭ম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে হিউয়েন ৎসাং পুন্ড্রবর্ধনে আসেন ও তার বিস্তারিত বিবরণে সোমপুরের বিহার ও মন্দিরের কোন উল্লেখ নেই। গোপালের পুত্র ধর্মপাল (৭৮১ – ৮২২ খ্রি) সিংহাসনে আরোহণ করে দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন ও রাজ্যকে বাংলা বিহার ছাড়িয়ে পাকিস্তানের উত্তর – পশ্চিম সীমান্তের গান্ধার পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। সম্রাট ধর্মপাল অনেক নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ ছিলেন ও তিনিই বিক্রমশীলা ও সোমপুর বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।
অন্য মতে, বিখ্যাত তিব্বতীয় ইতিহাস গ্রন্থ “পাগ সাম জোন ঝাং” এর লেখক অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ধর্মপালের পুত্র দেবপাল (৮১০-৮৫০)কর্তৃক সোমপুরে নির্মিত বিশাল বিহার ও সুউচ্চ মন্দিরের উল্লেখ করেছেন। সোমপুর বিহারের ভিক্ষুরা নালন্দা, বুদ্ধগয়া প্রভৃতি ভারতীয় বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থানে অর্থ ও ধন রত্ন দান করতেন বলে বিভিন্ন লিপিতে উল্লেখ করা আছে যা ১০ – ১১শ শতাব্দীতে সমৃদ্ধশীল অবস্থার ইঙ্গিত বহন করে।
এছাড়া ৯ম শতাব্দী পর্যন্ত পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সোমপুর বিহার ছাড়াও অগ্রপুর (রাজশাহীর অগ্রাদিগুণ), উষ্মপুর, গোটপুর, এতপুর ও জগদ্দল ( রাজশাহীর জগদল) বিহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। ৯ম শতাব্দীর শেষভাগে গুর্জর রাজ প্রথম ভোজ ও মহেন্দ্র পাল, পাল সাম্রাজ্যের বিশেষ ক্ষতিসাধন করেন।
পরে ১০ম শতাব্দীর শেষভাগে পাল বংশীয় রাজা মহীপাল (৯৯৫ – ১০৪৩) সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন ও সোমপুর বিহার মেরামত করেন। কিন্তু মহীপাল ও তার পুত্র নয়াপালের মৃত্যুর পর আবার পাল বংশের পতন শুরু হয়। এই সুযোগে মধ্যভারতের চেদীরাজ কর্ণ, চোলরাজ রাজেন্দ্র ও দিব্বো নামের এক দেশীয় কৈবর্ত সামন্ত নরপতি পর পর বরেন্দ্রভূমি আক্রমণ করেন। নালন্দায় পাহাড়পুর মন্দির ও বিহার ধ্বংসের উল্লেখ সম্ভবত এ সময়ের আক্রমণের। ১১শ শতাব্দীতে পাল বংশীয় রামপাল হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। ১২শ শতাব্দীতে দাক্ষিণাত্যের কর্ণাট থেকে আগত সেন রাজারা বাংলা দখল করেন। তাদের নিকটে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা হারায় সোমপুর। এ সময় শেষবারের মত সোমপুরের পতন শুরু হয়।
১৩শ শতাব্দীর শুরুতে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ – বিন – বখতিয়ার খিলজী বাংলায় আক্রমণ করে প্রায় উত্তরবঙ্গই দখল করেন। সম্ভবত এই মুসলমান শাসকদের মূর্তিবিরোধী মনোভাবের ফলেই বৌদ্ধদের এই বিহার ও মন্দির সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে যায়।
বৌদ্ধ বিহারটির ভূমি-পরিকল্পনা চতুষ্কোনাকার। উত্তর ও দক্ষিণ বাহুদ্বয় প্রতিটি ২৭৩.৭ মি এবং পূর্ব ও পশ্চিম বাহুদ্বয় ২৭৪.১৫ মি। এর চারদিক চওড়া সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল। সীমানা দেয়াল বরাবর অভ্যন্তর ভাগে সারিবদ্ধ ছোট ছোট কক্ষ ছিল। উত্তর দিকের বাহুতে ৪৫টি এবং অন্য তিন দিকের বাহুতে রয়েছে ৪৪টি করে কক্ষ। এই কক্ষগুলোর তিনটি মেঝে আবিষ্কৃত হয়েছে।
প্রতিটি মেঝে বিছানো ইঁটের ওপর পুরু সুরকী দিয়ে অত্যন্ত মজবুতভাবে তৈরি করা হয়েছিল। সর্বশেষ যুগে ৯২টি কক্ষে মেঝের ওপর বিভিন্ন আকারের বেদী নির্মাণ করা হয়। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, প্রথম যুগে সবগুলো কক্ষই ভিক্ষুদের আবাসকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীকালে কিছু কক্ষ প্রার্থনাকক্ষে রুপান্তর করা হয়েছিল।
কক্ষগুলোর প্রতিটিতে দরজা আছে। এই দরজাগুলো ভেতরের দিকে প্রশস্ত কিন্তু বাইরের দিকে সরু হয়ে গেছে। কোন কোন কক্ষে কুলুঙ্গি পাওয়া যায়। কুলুঙ্গি সম্বলিত কক্ষগুলোর মেঝেতে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য বেশ কিছু দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। ভেতরের দিকে কক্ষগুলোর দৈর্ঘ্য ৪.২৬ মি এবং প্রস্থ ৪.১১ মি। কক্ষের পেছনের দিকের দেয়াল অর্থাৎ সীমানা দেয়াল ৪.৮৭মি এবং সামনের দেয়াল ২.৪৪মি চওড়া। কক্ষগুলোর সামনে ২.৫মি প্রশস্ত টানা বারান্দা আছে। ভেতরের দিকের উন্মুক্ত চত্বরের সাথে প্রতিটি বাহু সিঁড়ি দিয়ে যুক্ত।
বিহারের উত্তর বাহুর মাঝ বরাবর রয়েছে প্রধান ফটক। এর বাইরের ও ভেতরের দিকে একটি করে স্তম্ভ সম্বলিত হলঘর এবং পাশে ছোট ছোট কুঠুরি আছে। এই কুঠুরিগুলো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হত। প্রধান ফটক এবং বিহারের উত্তর-পূর্ব কোনের মাঝামাঝি অবস্থানে আরও একটি ছোট প্রবেশ পথ ছিল।
এখান থেকে ভেতরের উন্মুক্ত চত্বরে প্রবেশের জন্য যে সিঁড়ি ব্যবহৃত হত তা আজও বিদ্যমান। উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম বাহুতেও অনুরূপ সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল। এদের মাঝে কেবল পশ্চিম বাহুর সিঁড়ির চিহ্ন আছে। উত্তর বাহুর প্রবেশ পথের সামনে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত একটি পুকুর ছিল। ১৯৮৪-৮৫ সালের খননে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রথম নির্মাণ যুগের পরবর্তী আমলে এ পুকুর খনন করা হয় এবং এসময় এ অংশের সিঁড়িটি ধ্বংস করে দেয়া হয়। পরবর্তীকালে পুকুরটি ভরাট করে দেওয়া হয়।
পাহাড়পুর জাদুঘর
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন একটি জাদুঘর রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ষাটের দশকে এখানে জাদুঘরটি স্থাপন করেন। ১৯৯৪ সালে পুরাতন জাদুঘরের পরিবর্তে চার গ্যালারিবিশিষ্ট একটি নতুন জাদুঘর ভবন তৈরি করা হয়।
এই জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ব্রোঞ্জের তৈরি বুদ্ধের আবক্ষ মূর্তি, বেলে পাথরের চামুণ্ডা মূর্তি, লাল পাথরের দণ্ডায়মান শীতলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের দণ্ডায়মান গণেশ, বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি, হরগৌরীর ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্মী নারায়ণের ভগ্ন মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি, বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, নন্দী মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সূর্য মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের শিবলিঙ্গ ও বেলে পাথরের মনসা মূর্তি এবং দুবলহাটির মহারানির তৈলচিত্র।
কুসুম্বা মসজিদ
নওগাঁ জেলার আত্রাই নদীর পশ্চিমে মান্দা উপজেলার অন্তর্গত কুসুম্বা গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য। গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহ’র রাজত্বকালে জনৈক সুলায়মান মসজিদটি নির্মাণ করেন। পূর্বদিকের কেন্দ্রীয় প্রবেশদ্বারের উপরে স্থাপিত একটি শিলালিপি অনুসারে এ মসজিদটির নির্মাণকাল ৯৬৬ হিজরি (১৫৫৮-৫৯ খ্রি.)।
এ মসজিদটি ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত। মসজিদটির মূল গাঁথুনি ইটের তৈরি হলেও এর বাইরের এবং ভেতরের দেয়ালে পেন্ডেন্টিভের খিলান পর্যন্ত পাথরের আস্তরণ দিয়ে আবৃত। মেহরাবগুলো খোদাইকৃত পাথরের নকশা দিয়ে বহুলভাবে অলংকৃত। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী এই মসজিদটি দেখতে আসেন।
দুবলহাটি রাজবাড়ি
নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ৬ কিমি. দূরে ঐতিহ্যবাহী দুবলহাটি রাজবাড়ির অবস্থান। দুবলহাটি রাজবাড়ি প্রায় দু’শ বছরের প্রাচীন স্থাপনা এবং তৎকালীন জমিদার রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর সময়ে এই বাড়িটির ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়। দুবলহাটির জমিদারির বিস্তৃতি ছিল সিলেট, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও ভারতের কিছু অংশ জুড়ে।
৫ একর এলাকা জুড়ে নির্মিত বিশাল প্রাসাদের বাইরে দিঘি, মন্দির, স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, ১৬ চাকার রথসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিদ্যমান ছিল। রোমান স্টাইলের বড় বড় পিলার সজ্জিত দুবলহাটি রাজপ্রাসাদে সাড়ে তিনশ কক্ষ ছিল, যার মধ্যে ছিল ৭টি আঙিনা। প্রাসাদের ভেতর কোনোটি ৩ তলা আবার কোনোটি ছিল ৪ তলা ভবন।
এছাড়াও একটি গোল্ডেন- সিলভার ও একটি আইভরির তৈরি সিংহাসন ছিল। ব্রিটিশরা সিংহাসন দুটি নিয়ে যায়। ১৮৬৪ সালে রাজ পরিবারের উদ্যোগে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে স্কুলটির নামকরণ হয় রাজা হরনাথ উচ্চ বিদ্যালয়।
কথিত আছে, জনৈক লবণ ও গুড় ব্যবসায়ী রঘুনাথ এ এলাকায় এসে ব্যবসা শুরু করেন এবং বিল পত্তন নেন। এভাবে তিনি ধীরে ধীরে প্রচুর জমির মালিক হন। রঘুনাথের বিত্ত-বৈভবের খবর দিল্লিতে পৌঁছে গেলে মোগল দরবারের নির্দেশে মুর্শিদাবাদের নবাব তাঁকে রাজস্ব প্রদানের আদেশ দেন।
তিনি নবাবকে জানান, তিনি যে এলাকায় থাকেন সেখানে শুধু পানি, কোনো ফসল হয় না। এরপর নবাব তাঁকে প্রতিবছর রাজস্ব হিসেবে ২২ কাহন কৈ মাছ প্রদানের নির্দেশ দেন। তবে অনেক ঐতিহাসিকের মতে, জগতরাম দুবলহাটি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনিই দুবলহাটি বাজবাডিটি নির্মাণ করেন। রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী পরবর্তীতে সপরিবার ভারতে চলে যান।
পতিসর কাচারিবাড়ি
রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত উত্তরবঙ্গের নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই উপজেলাধীন একটি গ্রাম পতিসর। জেলাশহর থেকে ২৬ কিমি. এবং আত্রাই রেল স্টেশন থেকে ১২ কিমি. দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নাগর নদীর তীরে গ্রামটি অবস্থিত। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাচারি ছিল এই পতিসরে। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম পতিসরে আসেন।
পতিসরের দোতলা কুঠিবাড়ির স্থাপত্যশৈলী শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের কুঠিবাড়ির অনুরূপ। ‘রবীন্দ্র সরোবর’ নামের পুকুরটি এখন মজা ডোবায় পরিণত হয়েছে। পতিসরের কুঠিবাড়ি ও পদ্মাবোটে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছিন্নপত্রের অনেক চিঠি এবং বিদায় অভিশাপ কাব্যনাট্য রচনা করেন। এছাড়াও কবি পল্লির সার্বিক উন্নয়নের জন্য স্থাপন করেন অনেকগুলো পাঠশালা, রবীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, পতিসর কৃষি ব্যাংক (১৯০৫) ইত্যাদি। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি কৃষি, তাঁত ও মৃৎশিল্পের সমবায় সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর নোবেল পুরস্কারের এক লক্ষ টাকাও তিনি পতিসর কৃষি ব্যাংকে দিয়েছিলেন। পতিসর এখন একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বহু রবীন্দ্রভক্ত প্রতিবছর পতিসর পরিদর্শনে আসেন। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এখানে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি সরকার এটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করেছে।
জগদ্দল মহাবিহার
জেলা সদর থেকে ৫৪ কিমি. দূরে ধামইরহাট উপজেলায় জগদ্দল গ্রামে এই মহাবিহারের অবস্থান। গ্রামটিতে ছড়িয়ে আছে বিক্ষিপ্ত প্রাচীন ঢিবি ও পরিত্যক্ত পুকুর। এখানে একটি বৃহৎ আকৃতির ঢিবিতে ১৯৯৬ সাল থেকে খনন কার্য শুরু হয়। খননের ফলে একটি বিহারের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। জগদ্দল মহাবিহারের আদি পরিব্যাপ্তি এবং সম্ভাব্য সময়কাল এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। ধারণা করা হয়, জগদ্দল মহাবিহার নির্মাণ করেন রামপাল (১০৭৭-১১২০)। তবে স্থানীয় জনগণ এটাকে বটকৃষ্ণ রায় নামক একজন জমিদারের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ বলে মনে করে।
মহাদেবপুরের ১০৮ কক্ষবিশিষ্ট মাটির বাড়ি
বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে গ্রাম। লোককথা, লোকগীতি, পালা ও পুথিতে গ্রামের মাটির বাড়ি একটা বিরাট স্থান দখল করে আছে। দেশের একমাত্র ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়িটি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। ১৯৮৬ সালে তৈরি করা এই বাড়িটি ৩ বিঘা জমির ওপর নির্মিত।
প্রাসাদের মতো বাড়িটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯১.৫ মিটার (৩০০ ফুট) এবং প্রস্থ ৩০.৫ মিটার (১০০ ফুট), আর দেয়াল ৬-৭ মিটার (২০-২২ ফুট) পর্যন্ত উঁচু। মাটির এই দোতলা বাড়িটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। বাড়িটির সৌন্দর্য বাড়াতে চুন ও আলকাতরার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। মাটির বাড়িটি এখন প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।
শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর
মান্দা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিমি. দক্ষিণে অবস্থিত কালীগ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ‘শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর’। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি কৃষি জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ২০০০ সালে শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ নিজ উদ্যোগে ৩ বিঘা জমির ওপর এই কৃষি পাঠাগার ও জাদুঘর নির্মাণ করেন।
প্রবেশপথের বাঁ পার্শ্বে কৃষি জাদুঘর এবং ডান দিকে কৃষি পাঠাগারের অবস্থান। আর এর আশপাশে রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক ফলদ ও ঔষধি গাছ। কৃষি লাইব্রেরিতে কৃষি বিষয়ের ওপর ৭,৭০০ বই রয়েছে। কৃষি জাদুঘরে স্থান পেয়েছে বিলুপ্ত প্রায় কৃষি সরঞ্জামাদি, গরুর গাড়ি, গরুর গোমাই, মাথাল, ঢেঁকি, মই, লাঙল, জোয়াল, পানি সেচের যন্ত্র, পালকি, নৌকা, কোদাল, কাস্তে, ঝাড়ু, তেল ভাঙা ঘানি, বাঁশের তৈরি টোপা, মাছ ধরার যন্ত্র, ধান রাখার মাটির তৈরি বড় মটকি, ধান মাড়াই মেশিন, কীটনাশক স্প্রে মেশিন, শ্যালো মেশিন ও গোলাঘর।
কৃষি তথ্য পাঠাগারে কৃষি বিষয়ক বই পড়ে কৃষকরা তাদের ফসলের সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। কৃষি বিষয়ে নতুন কিছুর উদ্ভাবন হলে এখানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে কৃষকদের দেখানো হয়ে থাকে। জাদুঘরে রাখা বিলুপ্তপ্রায় কৃষি উপকরণ দেখে পর্যটকরা চমৎকৃত হবেন।
লাইব্রেরিতে কৃষি বিষয়ের ওপর ৭,৭০০ বই রয়েছে। কৃষি জাদুঘরে স্থান পেয়েছে বিলুপ্ত প্রায় কৃষি সরঞ্জামাদি, গরুর গাড়ি, গরুর গোমাই, মাথাল, ঢেঁকি, মই, লাঙল, জোয়াল, পানি সেচের যন্ত্র, পালকি, নৌকা, কোদাল, কাস্তে, ঝাড়ু, তেল ভাঙা ঘানি, বাঁশের তৈরি টোপা, মাছ ধরার যন্ত্র, ধান রাখার মাটির তৈরি বড় মটকি, ধান মাড়াই মেশিন, কীটনাশক স্প্রে মেশিন, শ্যালো মেশিন ও গোলাঘর।
কৃষি তথ্য পাঠাগারে কৃষি বিষয়ক বই পড়ে কৃষকরা তাদের ফসলের সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। কৃষি বিষয়ে নতুন কিছুর উদ্ভাবন হলে এখানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে কৃষকদের দেখানো হয়ে থাকে। জাদুঘরে রাখা বিলুপ্তপ্রায় কৃষি উপকরণ দেখে পর্যটকরা চমৎকৃত হবেন।
এছাড়াও দেখতে পারেন বলিহার রাজবাড়ি, ঠাকুর মান্দা মন্দির, চৌজা মসজিদ, আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান, ভীমের পান্টি, দিব্যক জয় স্তম্ভ, মাহি সন্তোষ মসজিদ, হলুদ বিহার, অগ্রপুরী বিহার ও সত্য পীরের ভিটা।
ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
লিস্ট তৈরি করা
ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।
হালকা লাগেজ
লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকিং
স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
স্থানীয় খাবার
ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।
অফ-সিজন ভ্রমণ
ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
যাতায়াতের ব্যবস্থা
ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।
অতিরিক্ত টাকা
ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।
ছোট ব্যাগ
ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।
চার্জার
মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।
ইয়ারফোন
ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।
ঢাকা থেকে নওগাঁ যাবেন যেভাবে:
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস ও ট্রেনে নওগাঁ যাওয়া যায়। বাসে যেতে চাইলে গাবতলী বা মহাখালী থেকে শ্যামলী, হানিফ, এসআর, কেয়া, টিআর এবং মৌ এন্টারপ্রাইজে যেতে পারেন। সহজ ডট কমের মাধ্যমে অনলাইনে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন বাসের টিকিট। টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন। এছাড়া বাসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়েও টিকিট কাটতে পারেন।
আর ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশকিছু ট্রেন চলাচল করে। লালমনি এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সান্তাহার যেতে হবে। এরপর সান্তাহার স্টেশনে নেমে অটোরিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চড়ে নওগাঁ শহরে যেতে হবে। ট্রেনের টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন।
যেখানে থাকবেন:
মেসার্স আফসার রেস্ট হাউজ
ঠিকানা: সদর হাসপাতাল রোড, নওগাঁ
মোবাইল: ০৭৪১-৬৩১৫৩
মেসার্স হোটেল রাজ
ঠিকানা: পার-নওগাঁ, নওগাঁ
মোবাইল: ০১৭৪১-৬২৪৯২
মেসার্স হোটেল আরিফ
ঠিকানা: ইসলামপুর সড়ক নওগাঁ বাজার, নওগাঁ
মোবাইল: ০১৭৪১-৬৩২৪৭
মেসার্স হোটেল স্মরণী
ঠিকানা: পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড প্রধান সড়ক, নওগাঁ
মোবাইল: ০১৭৪১-৬১৬৮৫
মেসার্স হোটেল প্লাবন
ঠিকানা: শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক কাঁচা বাজার রোড, নওগাঁ
মোবাইল: ০১৭৪১-৬২৮৮৪
মেসার্স হোটেল যমুনা
ঠিকানা: শহীদ কাজী নূরুন্নবী মার্কেট পার-নওগাঁ, নওগাঁ
মোবাইল: ০১৭৪১-৬২৬৭৪
মেসার্স হোটেল ফারিয়াল
ঠিকানা: পার-নওগাঁ, সান্তাহার রোড নওগাঁ
মোবাইল: ০১৭৪১-৬২৭৬৫
মেসার্স হোটেল অবকাশ
ঠিকানা: পার-নওগাঁ, সান্তাহার রোড নওগাঁ
মোবাইল: ০১৭৪১-৬২৩৫৬
মেসার্স হোটেল আগমনী
ঠিকানা: মুক্তির মোড়, নওগাঁ
মোবাইল: ০১৭৪১-৬৩৩৫১
কোথায় খাবেন
নওগাঁয় খাওয়ার জন্য বেশকিছু ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে। এ ছাড়াও নওগাঁর বিখ্যাত খাবার প্যারা সন্দেশ, যা শহরের মিষ্টির দোকানেই পাবেন। বিখ্যাত এ সন্দেশ খেতে ভুলবেন না কিন্তু।
সতর্কতা:
ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
পরিকল্পিত ভ্রমণ
পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো
নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার
নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন
স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।
যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না
যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। এ ধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।
মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন
অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।