পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
১৯৩৪ সালে সত্য পীরের ভিটার সন্ধান পাওয়া যায়। নালন্দা থেকে উদ্ধারকৃত বিপুল শ্রী মিত্রের তাম্র শাসনে সোমপুর বিহারসংলগ্ন এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে। এটি বিষম বাহু ত্রিভুজাকৃতির স্থাপনা। এটি পূর্বে ২৫০ ফুট পশ্চিমে ৩০০ ফুট উত্তরে ১৮৭ ফুটও দক্ষিণে ১৪০ ফুট আয়তনের। এটি এক সময় প্রাচীর ঘেরা ছিল। বর্তমানে উন্মুক্ত এ স্থানটির ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়ে সোমপুর বিহারে প্রবেশকালে।
স্থানীয়দের প্রচলিত ধারণা অনুসারে, সত্যপীর নামক স্থানীয় এক লোকের নামানুসারে এই জায়গাটির নাম হয়েছে ‘সত্যপীরের ভিটা’। কিন্তু নথিপত্রে এই ধারণার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। বরং গবেষণা করে দেখা যায়, সত্যপীরের ঘটনার অনেক আগেই এখানে স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
এ ভিটায় একটি তারা মন্দির এবং বিভিন্ন আকার ও আয়তনের প্রচুর নিবেদন স্তূপের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। মন্দির অঙ্গনের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০টি পোড়ামাটির ফলক, আট হাত বিশিষ্ট দেবীমূর্তি ও বৌদ্ধ ধর্মীয় মতবাদ লিপি খোদিত পোড়ামাটির গোল সীল গুলি থেকেই এই ভিটা ও তারা মন্দিরের অভিন্নতা প্রমাণ হয়েছে।
পুরাকীর্তি সমূহের তিনদিকে বেষ্টনী দেওয়াল ছিল। উত্তর দিকে কোন দেওয়ালের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। পরিবেষ্টিত স্থানের বিশেষ কাঠামো হচ্ছে প্রধান মন্দিরটি। এ মন্দির ১৫ মি প্রশস্ত এবং ২৪ মি দীর্ঘ। আয়তাকার এই মন্দির দুই অংশে গঠিত। পূজার স্থানটি উত্তর দিকে এবং চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ-পথসহ স্তম্ভযুক্ত হলঘরটি দক্ষিণদিকে। হলঘরের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না।
মন্দির এলাকায় ১৩২টি নিবেদন স্তূপ আছে। মন্দিরের চতুর্দিকে বিভিন্ন আকৃতির ও নকশার নিবেদন স্তূপের সংখ্যাধিক্য এবং অলংকরণ এর খ্যাতি ও গুরুত্বের প্রতি সাক্ষ্য দেয়। এখানকার স্তূপগুলির মধ্যে প্রধান মন্দিরের কাছাকাছি অঙ্গনের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত চতুষ্কোণ স্তূপটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
খননের ফলে এই স্তূপের মধ্যস্থলে ১ মি বর্গ বিশিষ্ট একটি বাঁধানো স্মারক-কুঠুরি আবিষ্কৃত হয়েছে। কুঠুরিটি কয়েক হাজার ছোট ছোট মাটির নিবেদন স্তূপের প্রতিকৃতি দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। মনে হয় মন্দিরে আগত হাজার হাজার তীর্থযাত্রী তাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধার প্রতীকস্বরূপ এগুলো স্মারক কুঠুরিতে উৎসর্গ করতেন।
সত্যপীর ভিটায় আবিষ্কৃত প্রধান আবিষ্কারগুলোর মধ্যে পোড়ামাটির ফলক চিত্র, অলংকৃত ইট এবং স্বল্প মূল্যের পাথরের গুটিকা (পুঁতি) অন্যতম। এছাড়া কিছু তারামূর্তি, ব্রোঞ্জ নির্মিত একটি মূর্তি এখানকার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষের উপর মুসলিম যুগের একটি ইটের স্থাপনা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসে আগ্রহ থাকলে এই জায়গাটি হতে পারে চমৎকার একটি ভ্রমণ গন্তব্য। জানা ইতিহাসকে নিজের চোখে দেখে নেবার, মিলিয়ে নেবার এক দারুণ সুযোগ।