প্রতিবছর মাঘ মাসের প্রথম দিনে সুন্দরবন উপকূলে অনুষ্ঠিত হয় ‘বনবিবির মেলা’। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গতকাল বুধবার খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন–সংলগ্ন চরামুখা গ্রামে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ মেলা।
সুন্দরবন ঘিরে কয়েক শ বছরের এক লৌকিক বিশ্বাসের নাম ‘বনবিবি’। সুন্দরবন উপকূলের অনেক মানুষের বিশ্বাস, বন্য প্রাণীরা সব অরণ্যের দেবী বনবিবির অনুগত। জেলে, বাওয়ালি আর মৌয়ালদের তিনি সুরক্ষার দেবী।
বনবিবির মেলা উপলক্ষে চরামুখা গ্রাম যেন উৎসবে মেতেছিল। গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত বনবিবির মন্দির ঘিরে ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় ছিল মানুষের ঢল। মন্দিরের ভেতরে বনবিবির প্রতিমা। এর সঙ্গে বনবিবির ভাই শাহ জঙ্গলী ও গাজী আউলিয়া; শিশু দুখে, তার দুই চাচা ধন ও মনের প্রতিমাও আছে।
এ ছাড়া আছে দক্ষিণ রায় তথা বাঘের মূর্তি। মন্দিরে দিনভর পুঁথিপাঠের মধ্য দিয়ে বনবিবিকে স্মরণ, প্রসাদ বিতরণসহ নানান কর্মকাণ্ড চলে। আর সন্ধ্যায় শুরু হয় মেলা। নানান পণ্য নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে মেলায় আসেন দোকানিরা। আসে খাবার, খেলনা, মৃৎশিল্পসহ নানান কিছু।
চরামুখা গ্রামে সেই ১২৮৩ বঙ্গাব্দ থেকে বনবিবির পূজা ও মেলা হচ্ছে বলে জানান বনবিবি মন্দিরের সভাপতি ভোলানাথ মাঝি। তিনি বলেন, ‘এবার নিয়ে মেলার আয়োজন ১৪৩ বছরে পদার্পণ করল। পৌরাণিক রীতি অবলম্বনে বনবিবির পূজার পাশাপাশি এখানে মেলা হয়। বনবিবি সুন্দরবন উপকূলের হাজারো সুন্দরবনজীবীর মনে ভক্তি, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের স্তম্ভ হয়ে আছেন। বনে গিয়ে যাতে বনজীবীরা নিরাপদে ফিরে আসতে পারেন, ভালো আয়রোজগার হয়, সে কারণে আদিকাল থেকে এই পূজা হয়ে আসছে।’