পর্যটন বিচিত্রা ডেক্স
প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এই বনে হিজল, করচসহ ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে।
বর্ষায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ রাতারগুল। পানির ওপর এমন বনে রয়েছে এক ধরনের বুনো সৌন্দর্য। পর্যটকদের কাছে এর আবেদন অন্য রকম। হিজল-করচের নিবিড় মমতা রোমাঞ্চের শিহরণ জাগায় পর্যটকদের মনে। তাই জলে ভাসা রাতারগুল বন হাতছানি দেয় পর্যটকদের। রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে থাকে। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মেলে নানান পজাতির পাখি। কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে।
আবার শীতকালে রাতারগুলের জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
পানিতে অর্ধেক গা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বনের গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে নৌকায় চড়ে ঘুওে বেড়ানোর মজাই আলাদা। রাতে কান পাতলেই শেয়ালের হুক্কাহুয়া শোনা যায়। ঝিঁঝি পোকা আর ব্যাঙের ডাকে মধ্যরাতের রাতারগুল জলাবন বেশ রহস্যময় হয়ে উঠল। সারাদিন ভ্রমণের জন্য জায়গাটিতে পাওয়া যাবে ছোট ছোট খোলা নৌকা।
সিলেট বন বিভাগের উত্তর সিলেট রেঞ্জে-২ এর অধীন প্রায় তিন হাজার ৩২১ একর জায়গা জুড়ে রাতারগুল জলাবন। এর মধ্যে ৫০৪ একর জায়গায় মূল বন, বাকি জায়গা জলাশয় আর সামান্য কিছু উঁচু জায়গা।
বাংলাদেশ বন বিভাগ ১৯৭৩ সালকে রাতারগুল বনের ৫০৪ একর এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। এ বনে দেখা যায় নানান প্রজাতির পাখি। এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ঘুঘু, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়ি ইত্যাদি।
বন্যপ্রাণীর মধ্যে আছে- বানর, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালি, মেছোবাঘ ইত্যাদি। নানান প্রজাতির সাপেরও অভায়শ্রম এই বন।
রাতারগুল জলাবনের একেবারে শুরুর দিকটায় মুর্তার বন। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই খোলা জায়গার পুরোটাই পানিতে ডুবে থাকে। এর পরেই মূল বন। বনের গহীনে গাছের ঘনত্ব বেশি। কোথাও কোথাও সূর্যের আলো পর্যন্ত পানি ছুঁতে পারে না। কয়েকদিন পাহাড়ি ঢল না থাকলে বনের পানি এত বেশি স্বচ্ছ হয় যে, বনের সবুজ প্রতিবিম্বকে মনে হয় বনের নিচে আরেকটি বন। এই সময়টা রাতারগুলের ছবি তোলার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
রাতারগুলে বেড়াতে দিতে হবে ‘ফি’
রাতারগুলের বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশের পাশাপাশি ভিডিও ধারণ এবং নৌকা ভ্রমণ করতে চাইলে ফি দিতে হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় বনটির বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশ, পার্কিং, ভিডিও ধারণ এবং নৌকা ভ্রমণের ফি নির্ধারণ করে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করে।
এজন্য রাতারগুলের বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশ করতে প্রাপ্ত বয়স্কদের ৫০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক (১২ বছরের নিচে) ও পরিচয়পত্রধারী শিক্ষার্থীদের ২৫ টাকা করে ফি দিতে হবে। আর বিদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবেশ ফি ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা।
এছাড়া একদিন একটি ক্যামেরা দিয়ে রাতারগুলের বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় শুটিং করতে চাইলে ‘ফিল্মিং ফি’ দিতে হবে ১০ হাজার টাকা।
দেশি দর্শনার্থীদের প্রতিবার ইঞ্জিনবিহীন নৌকা ভ্রমণের ফি ১০০ টাকা। বিদেশিদের জন্য এই ফি ধরা হয়েছে এক হাজার টাকা।
এছাড়া বাস বা ট্রাকের প্রতিবারের পার্কিং ফি ২০০ টাকা। পিকআপ, জিপ, কার ও মাইক্রোবাসের পার্কিং ফি ১০০ টাকা এবং অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের পার্কিং ফি ধরা হয়েছে ২৫ টাকা।
কীভাবে যাবেন
সিলেট শহর থেকে কয়েকটি পথে আসা যায় রাতারগুল। সবচেয়ে সহজ পথটি হলো- শহর থেকে মালনিছড়ার পথে ওসমানী বিমানবন্দরের পেছনের সড়ক ধরে সোজা সাহেব বাজার হয়ে রামনগর চৌমুহনী। সেখান থেকে হাতের বাঁয়ে এক কিলোমিটার গেলেই রাতারগুল। সিলেটের আম্বরখানা, শাহজালাল মাজার থেকে সাহেব বাজার কিংবা চৌমুহনী লোকাল অটোরিকশা যায়।
কিছু পরামর্শ
পানিতে ডুবে থাকা অবস্থায় রাতারগুল জঙ্গল বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। এই বনের চারদিকে পানি পূর্ণ থাকে বলে ভ্রমণের সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এই বনে বেড়ানোর সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বনের গাছে ডালে অনেক সময় সাপ থাকে। এছাড়া কম বেশি জোঁকেরও উপদ্রব আছে। সাঁতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখা জরুরি।
এছাড়া ছাতা, বর্ষাতি কিংবা পঞ্চ, রোদ টুপিও সঙ্গে নিতে হবে। এখানে বেড়ানোর নৌকাগুলো অনেক ছোট। এক নৌকায় পাঁচজনের বেশি উঠবেন না।