পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে রয়েছে প্রকৃতির এই রূপের আধার। সিলেটের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান এটি। সেখানকার সাদা পাথর, রোপওয়ে, পাথর কোয়ারি আর পাহাড়ি মনোলোভা দৃশ্য মুগ্ধ করার মতো। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা ধলাই নদের বুকে স্বচ্ছ জল আর সাদা পাথরের মুগ্ধতায় মন ভরে যায় পর্যটকদের।
চারপাশে ছড়িয়ে আছে সাদা পাথর। মনে হয় যেন, প্রকৃতি শুভ্র বিছানা বিছিয়ে রেখেছে। মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি। চারদিকে ঘিরে আছে ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড়। তার ওপর যেন আছড়ে পড়েছে মেঘ। এ ছাড়া চারপাশে আছে সবুজ প্রকৃতি। সব মিলিয়ে প্রকৃতির যেন অপরূপ এক স্বর্গরাজ্য। পর্যটকরা এই অপূর্ব স্থানটি উপভোগের জন্য ছুটে আসেন সাদা পাথরের দেশে।
ভোলাগঞ্জ সীমান্তে প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনাধারা একদিকে ধলাই নদের পানির যোগানদাতা অন্যদিকে এই পানি প্রবাহই ভোলাগঞ্জের রূপের উৎস। সবুজ পাহাড়, মেঘের হাতছানি আর বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা পাথর ধলাই নদের বুকে মিলে মিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
বর্ষায় নদের বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা ভরাট নদীর শোভা বাড়িয়ে দেয় হাজারগুণ। সাদা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ঝরনার পানির তীব্র স্রোতে নয়ন জুড়ায়। অনেকেই সাদা পাথর পর্যটন স্পটকে ছবিতে বিছনাকান্দি ভেবে ভুল করেন!
ধলাই নদের উৎস মুখের পাথর পরিবেষ্টিত জয়গাটুকু ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট বা সাদা পাথর নামে পরিচিত। সাদাপাথর এলাকাটি দেখতে অনেকটা ব-দ্বীপের মতো। ধলাই নদ বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দুভাগে বিভক্ত হয়ে চারপাশ ঘুরে আবার মিলিত হয়েছে। ধলাই নদের পানির সাথে ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পাথর নেমে আসে। পাথর উত্তোলনকে সহজ করতে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়। ভোলাগঞ্জ থেকে সোয়া ১১ মাইল দীর্ঘ এই রোপওয়ে চলে গেছে ছাতক পর্যন্ত, যা ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে রোপওয়ের টাওয়ারগুলো কালের স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। রোপওয়ে বন্ধ হলেও থেমে নেই পাথর উত্তোলন। এখনো অনেক স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকার উৎস এই পাথর উত্তোলন।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সারা বছরই সাদা পাথরের দেশে ঘুরতে যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় এ স্থানের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই সময় যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। অন্য সময় গেলে সেখানে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে বা ছড়ায় পানির পরিমাণ কম থাকবে। শীতকালে সাদা পাথর এলাকায় নৌকা চলাচল করার মতো পানি থাকে না। তখন পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে।
কীভাবে যাবেন
সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। সিলেট থেকে বাস, সিএনজিচালিত অটো, লেগুনা বা প্রাইভেটকারে করে যাওয়া যায় ভোলাগঞ্জ। বর্তমানে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার রাস্তার অবস্থা অনেকটা ভালো।
সিলেটের আম্বরখানা থেকে অটো ও মজুমদারী এলাকা থেকে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার বিআরটিসি, লোকাল ও টুরিস্ট বাস পাওয়া যায়। এসব যানবাহন কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজারে নামাবে। সেখান থেকেই ট্রলারে চলে যেতে পারেন সাদা পাথর।
কোম্পানীগঞ্জ পৌঁছে টুকের বাজার ঘাট থেকে ট্রলারে সাদা পাথর পৌঁছতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। এখানে নৌকা রিজার্ভ করে নিতে হয়, অন্যথায় ভুগতে হবে।
সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ সরাসরিও যাওয়া যায়। ১০ মাইল নামক স্থান থেকে নৌকা নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হবে অটোরিকশায়।
সিলেটে ফিরে আসার সময় আপনার অবস্থান অনুযায়ী চরারবাজার/দয়ারবাজার/ভোলাগঞ্জ থেকে সরাসরি অটো নিয়ে চলে আসতে পারেন সিলেটের আম্বরখানায়।
কোথায় থাকবেন
ভোলাগঞ্জ বা কোম্পানীগঞ্জ থাকার মতো খুব ভালো আবাসিক হোটেল নেই। যদি কোনো কারণে ভোলাগঞ্জে থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে যেতে হবে। সেখানে সাধারণ মানের নন-এসি আবাসিক হোটেল ও জেলা পরিষদের ডাক বাংলো রয়েছে।
তবে সকালে রওনা হলে ভোলাগঞ্জ ঘুরে বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যেই সিলেট শহরে ফিরে আসা যায়। তাই রাতে থাকার জন্যে সিলেট শহরে ফিরে আসাই ভালো।
কোথায় খাবেন
ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর কিংবা ১০নং ঘাটে ভালোমানের খাবার হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। ভাত মাছ ও দেশীয় খাবার খাওয়ার মতো সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। ভোলাগঞ্জ যাওয়ার রাস্তায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে কয়েকটি মাঝারি মানের খাবার হোটেল আছে। ভোলাগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সিলেট থেকে নাস্তা করে নিলে সারাদিন ঘুরে সিলেটে ফিরে এসে রাতের খাবার খেতে পারবেন। তবে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেলই একমাত্র ভরসা।
সতর্কতা:
* সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসার চেষ্টা করবেন।
* সাদা পাথর কতক্ষণ থাকবেন সেটা নৌকার মাঝিকে আগেই জানিয়ে রাখুন।ৎ
* সীমান্তবর্তী জায়গা, তাই সাবধানে থাকতে হবে।
* নদী পথে ভোলাগঞ্জ শুধুমাত্র বর্ষাকালে যাওয়া যায়।
* বর্ষাকালে নদীর পানিতে অনেক স্রোত থাকে, সাঁতার না জানলে বেশি পানিতে নামবেন না।