লেখকঃ ড. মো: আতাউর রহমান
আজ চারশ বছর পর আবার যেন ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেছে ইতিহাস, লালবাগ কেল্লায় লাইট এন্ড সাউন্ড শোতে বিচিত্র সব শব্দে আর আলোর খেলায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে কেল্লায় হাসি, আনন্দ ও বেদনা।
শুরুটা অবশ্য আরো বছর তিনেক আগে। ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে উদ্বোধন করেছিলেন লাইট এন্ড সাউন্ড শো এর। এরপর থেকে বড় কোন অসুবিধা না হলে রোববার ব্যতিত সপ্তাহের বাকি ছয়দিন প্রায় নিয়মিতই প্রদর্শিত হচ্ছে এই শো। কিন্তু গত ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আয়োজিত বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস উপলক্ষে যখন এই শো দেখানো হয়, তখন তা একটু বিশেষ রূপেই ধরা দিয়েছিলো দর্শকদের চোখে।
বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস উপলক্ষ্যে প্রদর্শনী ও সেমিনার হতে হতেই নেমে গেল সন্ধ্যা। ঠিক সেই সময়ই চারপাশ ঢেকে গেল কালো অন্ধকারে। নানা রঙের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল পুরান ঢাকার লালবাগ দুর্গ। লাইট এন্ড সাউন্ড শোয়ের শুরুতেই উঠে আসে বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা নগরীর উদ্ভব। এরপর মোগল শাসন, পলাশী যুদ্ধের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর বর্ণনার সঙ্গে ছিল যাপিত জীবনের চিত্র। পর্যায় ক্রমে উঠে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথাও। ত্রিশ মিনিটের এ শব্দ আলো খেলায় ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় লালবাগ দুর্গের। তার উপর প্রজেকশনের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা হয় সে সময়কাল ঘটনাবলীর চিত্র। সদ্যপ্রয়াত সব্যসাচী লেখক শামসুল হকের চিত্রনাট্যে এই লাইট এন্ড সাউন্ড শোর ধারাবিবরণী দিয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর ও শিমুল ইউসুফ।
পুরো প্রদর্শনীতে কেল্লার জৌলুশ যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি তুলে ধরা হয়েছে এর বিষাদময় অধ্যায়ও। বুড়িগঙ্গার আশীর্বাদ বিধৌত ভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাসাদের আভিজাত্য যেমন মুগ্ধ করে দর্শককে, তেমনি সিপাহী বিদ্রোহের চিত্রায়নে কেল্লা জুড়ে নেমে আসা রক্তের স্রোতের দৃশ্যায়ন দর্শককে শিহরিত করে তোলে, তবে সবথেকে বেশি করুণ রসের সৃষ্টি করে সম্ভবত শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির অকাল মৃত্যু। পরির মত সুন্দরি পরী বিবির সাথে শাহজাদার বিয়ের উৎসবে মুখরিত হওয়ার কথা ছিলো যে প্রাসাদের, সে প্রাসাদ ডুবে যায় বিষন্নতা অন্ধকারে, আর তার দৃশ্যায়ন বিষন্নতা ডুবিয়ে দেয় দর্শকের মনকেও। শায়েস্তা খানের কন্যা হারানোর তীব্র শোক ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবাইকেই। তবে এখানেই শেষ নয়। দুর্গের সবগুলো স্থাপনা, বিভিন্ন সময়ের ইতিহাস আর কালের বিবর্তনে পরিবর্তনগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরন উঠে এসেছে আলো আধারি এই প্রদর্শনীতে।