ভুটান বেড়ানোর স্বর্গরাজ্য। উঁচু পর্বতমালা, ঘন বনজঙ্গল, সবুজ ভ্যালি এবং সনাতন সংস্কৃতি ভুটানের ঐতিহ্য। ভুটান পৃথিবীর একমাত্র ধর্মরাষ্ট্র, যেখানে সকল আইনকেই ঈশ্বরের আইন বলে ধরে নেয়া হয়। ভুটানের মোহময় প্রকৃতি এবং পর্যটন আকর্ষণ উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে ভুটান এমন এক অভিজ্ঞতা যা আপনি পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাবেন না।
থিম্পু
ভুটানের সব থেকে বড় আকর্ষণ এর রাজধানী থিম্পু। থিম্পু নদীর ধারে সিলভান ভ্যালিতে অবস্থিত, থিম্পু শহর ট্রাডিশনাল এবং এথনিক ভুটানিজ কলা, স্থাপত্যশিল্প, সংস্কৃতির পীঠস্থান। থিম্পুর ইউনিক ফ্লেভার আপনাকে বার বার এখানে আসতে বাধ্য করবে।
কী দেখবেন
সিমতোখা জং -১৬২৭ সালে তৈরি এই জং থিম্পু ভ্যালির গেটওয়ে। থিম্পুর সব থেকে পুরোনো এই জংয়ে আছে রিগনে স্কুল ফর জংঘা অ্যান্ড মোনাস্টিক স্টাডিস। ফ্রেশকো এবং স্লেট কাভিংস সিমতোখার বিশেষ আকর্ষণ। থিম্পু জং ফোট্রেস অফ দ্য গ্লোরিয়াস রিলিজিয়ান) ১৬৬১ সালে তৈরি এই জং থিম্পু শহরের প্রানকেন্দ্র। এখানে আছে প্রধান সরকারি ডিপার্টমেন্ট, দ্য ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি, রাজার থ্রোন রুম এবং সেন্ট্রাল মনাস্টিক বডির গ্রীস্মকালীন হেডকোয়ার্টাস।
মেমোরিয়াল কর্টেন
ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দরজি ওয়াঙ্গচুকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৭৪ সালে এই স্তপা তৈরি করা হয়েছিল। ভিতরের বিভিন্ন পেইন্টিং এবং স্ট্যাচু বৌদ্ধ ফিলোজফির প্রতিফলন ঘটায়। পায়ে পায়ে থিম্পুর রাস্তা ঘুরে বেরানো অভিজ্ঞতার তুলনা হয় না। বিশেষ করে উইকএন্ড মার্কেট যেতে ভুলবেন না।
থিম্প থেকে পুনাখা
দোচুলা পাস হয়ে ড্রাইভ করে পৌঁছানো যায় থিম্পু থেকে ৭০ কিমি দূরে অবস্থিত পুনাখায়। আকাশ পরিস্কার থাকলে ৩০৫০মিটার উঁচু এই পাস থেকে পুরো হিমালয়ান রেঞ্জ দেখা যায়। পুনাখা ভুটানের সব থেকে উর্বর ভ্যালি। দেখে নিন ফো ছু এবং মো ছু নদী এবং অবশ্যই পুনাখা জং। এছাড়া ন্যাশনাল লাইব্রেরি, হ্যান্ডিক্রাফট এস্পোরিয়াম, পেইন্টিং স্কুল এবং ট্র্যাডিশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটও দেখে আসতে পারেন।
পারো
থিম্পু ছাড়া ভুটানে আরও অনেক আকর্ষণীয় জায়গা আছে। প্রথমে আলাপ করে নিতে পারেন হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট শহর পারোর সঙ্গে। পারো জুড়ে আছে নানা রকম গল্পকথা। এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দ্যর্য না ভোলার মতো। বিশেষ করে বসন্ত ঋতুতে পারোর রুপ দেখার মতো। পারোতে দেখে নিন পারো জং, ন্যাশনাল মিউজিয়াম। তবে পারোর সব থেকে বড় আকর্ষণ টাইগার নেস্ট। এই মনাস্ট্রি পারো থেকে ৮০ কিমি দূরে একটি ক্লিফের ওপর অবস্থিত। হেঁটে ওঠার পথটিও খুব সুন্দর। ভুটান ট্যুরিজম এখানে একটি সুন্দর কফি হাউস তৈরি করে দিয়েছে। পারোতে থাকার ব্যবস্থা অবশ্য কম। সুতরাং আগে থেকে বুকিং করে নেয়া দরকার।
বুমথাং
ভুটানের আধ্যাত্মিক হার্টল্যান্ড অবশ্য বুমথাং। ভুটানের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন জং, মন্দির এবং মহল এখানে অবস্থিত। দেখে নেবেন ওয়াংগডিচোলিং প্যালেস, জাম্বে লাখ্যাং মন্দির এবং সব থেকে বড় ভুটানিজ জং জাকার। পাশাপাশি হেঁটে দেখে নিন হট স্প্রিং এরিয়া। জার্নি শক্ত হলেও পথ খুব সুন্দর। এই এলাকায় ব্লু শিপ, মাস্ক ডিয়ার, হিমালয়ান ভাল্লুক চোখে পড়তে পারে। বুমথাংয়ে একমাত্র জাকারেই ভালো রেস্তোরাঁ পাবেন।
কখন যাবেন
অক্টোবর এবং নভেম্বর ভুটান যাওয়ার সব থেকে ভালো সময়। তখন আকাশ পরিস্কার থাকে এবং পাহাড় ভালোভাবে দেখা যায়। পাশাপাশি আবহাওয়াও ভালো থাকে এবং বিভিন্ন উৎসব এই সময় অনুষ্ঠিত হয়।
খেয়াল রাখুন
সপ্তাহের শনি-রবিবার ও অন্যান্য সাধারণ ছুটির দিনে ফুন্টশোলিংয়ের ইমিগ্রেশন অফিস বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে অফিস চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। থিম্পু ও পারো ভ্রমণের অনুমোদন সংগ্রহ করতে হয়। দলের প্রতিটি সদস্যের ছবি প্রয়োজন হবে। খুব বেশি ভীড় না থাকলে সাধারনত আধঘণ্টাতেই কাজ হয়ে যায়। তবে পুনাখা অন্যান্য শহরে যেতে হলে থিম্পুর ইমিগ্রেশন অফিস থেকে অনুমোদন নিতে হবে। সেখানে সকালে কাগজপত্র জমা দিলে বিকেলে অনুমোদন পাওয়া যায়। অন্যথায় প্রায় পুরো দিনটাই লেগে যাবে।
জেনে রাখুন
আপনাকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে ইউএস ডলার ব্যবহার করতে হবে। ইউএস ডলার আয় স্থানীয় মুদ্রার পরির্তন করে নেয়া ভালো এক্ষেত্রে অবশ্যই ডলার এক্সচেঞ্জ সার্টিফিকেট সংগ্রহে রাখবেন। বর্ডার প্রয়োজন হতে পারে। ভারতীয় ও ভুটানে মুদ্রার মান একই। তবে ভুটানে ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট চলে না।
থিম্পু, পারোতে ঠান্ডা বেশি। সেই তুলনায় পুনাখায় ঠান্ডা কম। শীতের দিনে থিম্পু পারোতে বরফ পড়ে। এপ্রিল-মে মাসেও ঠান্ডা থাকে তবে সে তুলনায় অক্টোবরে মোটামুটি সহনশীল পরিবেশ। তবে শীতের জন্য প্রস্তুতি থাকা চাই।