পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের রস্তুমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিছানাকান্দি। পানি-পাথরের শয্যাখ্যাত এই পর্যটনকেন্দ্র ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের কোলে অবস্থিত। বর্ষায় এক, শীতের আরেক রূপ ধারণ করে সবুজ পাহাড়ের কোলে পাথুরে বিছনাকান্দির পিয়ান নদ। ভরা বর্ষায় পাহাড়ের বুক চিরে আসা বিছনাকান্দিতে পাথরের মাঝ দিয়ে ছলাৎ ছলাৎ পানির আওয়াজ থাকলেও শীতে প্রায় পানিহীন পাথুরে বিছনাকান্দি। ক্ষণে ক্ষণে নানা রূপে ধরা দেয় পর্যটকদের চোখে। বিছনাকান্দির পুরো এলাকায় পড়ে আছে ছোট-বড় পাথর। পাহাড়ের কোলে এ যেন পাথরের বিছানা। শীতে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসুর মন কাড়বে শীতের বিছনাকান্দি।
সিলেট শহর থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়গুলো একটু বেশিই সবুজ, পাহাড়ের গায়ে ঝরনাগুলোও প্রাণবন্ত। তবে এসব ঝরনার কাছে গিয়ে পানি ছোয়ার সুযোগ নেই। শুধুই দুই চোখ ভরে উপভোগ করা। কারণ সবগুলোই ভারতে।
সিলেট শহর থেকে হাদারপাড় হয়ে গেলে পিয়াইনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যাওয়া যাবে। বিছনাকান্দিতে প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের সবটুকুই ঢেলে দিয়েছেন অপার মহিমায়। চারিদিকে শুধুই সবুজ আর সবুজ। ওপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। বিছনাকান্দির বিছানায় যেতে যেতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবেন ভ্রমণপ্রেমী যে কোনো মানুষ।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বিছনাকান্দি যেকোনো সময় ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। তবে বর্ষাকাল বিছানাকান্দি ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। চারদিকে প্রচুর পানি প্রবাহ থাকার কারণে এই সময় বিছানাকান্দির প্রকৃত সৌন্দর্র্য দেখতে পাওয়া যায়। শীতের বিছানাকান্দি দেখতেও অপরূপ।
যাওয়ার উপায়
বিভিন্ন পথে যাওয়া যায় বিছনাকান্দি। তবে হাদারপাড় থেকে সবচেয়ে সহজ ও ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে। সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় প্রথমে যেতে হবে হাদারপাড়। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে হবে বিছনাকান্দি।
কয়েকজন মিলে রিজার্ভ নেওয়াই ভালো। তবে দলে লোক কম হলে লোকাল ইঞ্জিনচালিত নৌকাও পাওয়া যাবে।
এছাড়া বিছনাকান্দি যাওয়ার অন্য পথটি হল সিলেট শহর থেকে বাস কিংবা যে কোনো বাহনে চড়ে আগে যেতে হবে জাফলংয়ের পথে সারিঘাট। সেখান থেকে অটোরিকশায় গোয়াইনঘাট হয়ে বিছানাকান্দি।
কোথায় থাকবেন
ঢাকা থেকে রাতের বাসে যাত্রা করে সারাদিন ঘুরে আবার পরের রাতে ফিরতে পারেন। তবে এই জায়গায় সময় নিয়ে বেড়াতে ভালো লাগবে। সারাদিন বেড়ানো শেষে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেটে।
কোথায় খাবেন
বিছনাকান্দিতে কিছু অস্থায়ী খাবারের হোটেল রয়েছে। প্রয়োজনে সাথে কিছু শুকনো খাবার, পানি ইত্যাদি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার চাহিদা মতো সবকিছুই পাবেন।
সাবধানতা
* বর্ষায় পাহাড়ি ঢল থাকে বলে পিয়াইন নদে। এ সময় স্রোত খুব বেশি। তাই বিছনাকান্দি যাওয়ার পথে ছোট নৌকা এড়িয়ে চলা উচিত। ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে বেড়াতে যাওয়া ভালো।
* এখানকার নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট থাকে না। যারা সাঁতার জানেন না, সঙ্গে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নেবেন।
* বিছনাকান্দি জায়গাটি আসলে নোম্যানস ল্যান্ড ঘেঁষা। সীমান্তে চলাচলের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। সীমান্ত যাতে অতিক্রম না করেন সেদিকে খেয়াল রাখুন।
* পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
* স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
* সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন।