পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
লালাখাল সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। এটি কারো কাছে সারি নদ, কারো কাছে লালাখাল, আবার কারো কাছে নীলনদ নামেই পরিচিত। পাহাড়ঘেরা স্বচ্ছ এই নদের পানির রং নীল। নদীর গভীরতা যেখানে বেশি, পানির রং সেখানে গাঢ় নীল।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি লালাখাল। প্রকৃতিকে একান্তে অনুভব করে শীতল হতে লালাখালের জুড়ি মেলা ভার। এই নদীর গা-ঘেঁষে উঁচু-নিচু পাহাড়। পাহাড়ে ঘন সবুজ বন, পাখ-পাখালি। এক কথায় নদী, পাখ-পাখালি ও নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার লালাখালজুড়ে। নীল পানি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এখানকার মানুষের জীবনযাত্রাও চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া বাড়তি পাওনা আদিবাসীদের সঙ্গে ভাব জমানোর সুযোগ।
সিলেট থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এ নদ বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
লালাখালের জিরো পয়েন্টে রয়েছে সুন্দর এক চা-বাগানসহ ফ্যাক্টরি। কাছেই আছে সুপারিবাগান। বাগানের পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ আপনাকে নিয়ে যাবে অচেনা এক দেশে। একটু এগোলেই ওপারে ভারতের সীমান্ত আপনাকে জানিয়ে দেবে, আর এগোনোর পথ নেই।
শীত-বসন্তের মাঝামাঝি সময়টা লালাখাল ভ্রমণের জন্য সঠিক সময়। শীতের শুরু থেকে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি পর্যন্ত নদের নীল স্বচ্ছ পানি চোখে পড়ে। শুকনো মৌসুমে নদের অনেক স্থানে ভেসে ওঠে চর।
ভরা পূর্ণিমায় মেঘ, পাহাড় আর নদীর মিতালী দেখতে লালাখাল ঘুরে আসতে পারেন। লালাখালের বিভিন্ন অংশে নীল, সবুজ এবং স্বচ্ছ পানির দেখা মিলে। চাইলে তামাবিল অংশের স্বচ্ছ পানির সারি নদীর ওপর দিয়ে স্পিডবোট বা নৌকায় লালাখালে যেতে পারেন। ৪৫ মিনিটের এ যাত্রা আপনাকে লালাখালের সৌন্দর্র্যে মুগ্ধ করে রাখবে। সন্ধ্যার পর নদীতে নৌকা থাকে না, তাই সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে যাওয়া উত্তম। রাতে লালাখালের রূপে মোহিত হতে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে আসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
যেভাবে যাবেন
সিলেট আর জাফলংয়ের মাঝামাঝি সারিঘাট। লালাখালে যেতে হলে সিলেটের শিশুপার্কের সামনে থেকে লেগুনা অথবা জাফলংয়ের বাসে সিলেট-তামাবিল সড়ক ধওে যেতে হবে সারিঘাট। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিতে পারেন। নৌপথে যেতে চাইলে আগে সারিঘাট পর্যন্ত একই নিয়মে বাস বা লেগুনায় গিয়ে নৌযান ভাড়া নিতে হবে। ফেরার পথে এখান থেকে বাসে কিংবা লেগুনায় আসতে পারবেন। রাত ৮টা পর্যন্ত যানবাহন পাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন
লালাখালে একটিমাত্র রিসোর্ট রয়েছে। তাই আগে থেকে বুকিং না দিলে জায়গা পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া সিলেট শহরে রাত যাপন করে এক দিনেও লালাখাল ঘুরে আসতে পারেন অনায়াসে। অথবা সকালে বিছনাকান্দি হয়ে বিকালে লালাখাল ঘুরতে পারেন। সন্ধ্যার দিকে নদীতে কোনো নৌকা থাকে না। তাই ভ্রমণ বা ঘোরাঘুরি সন্ধ্যার আগেই শেষ করতে হবে।
সাবধানতা
* লালাখালের পানিতে নামার সময় পানির গভীরতা খেয়াল রাখবেন।
* প্রয়োজনে গাইড কিংবা সঙ্গে যাওয়া কারও পরামর্শ নিন।
* পানিতে প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের প্যাকেট বা ময়লা জাতীয় কোনো কিছু ফেলবেন না।