পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
বাংলাদেশের ৬,১১৬.১৩ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ ভূখন্ড এই রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। এর উত্তর ও পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে বান্দরবান পার্বত্য জেলা এবং পশ্চিমে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণময় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং তাদের সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যম-িত সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য রাঙামাটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সব সময় আকৃষ্ট করে। রাঙামাটির আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে-
উপজাতীয় জাদুঘর
রাঙামাটি গেলে প্রথমেই যেতে পারেন উপজাতীয় জাদুঘরে। এখানে উপভোগ করতে পারবেন রাঙামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী নানান উপজাতির জীবনাচরণ ও নানা তথ্য। ছোট অথচ অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই জাদুঘরটি খোলা থাকে সোম থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। শনি, রবি ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘর বন্ধ থাকে।
রাজবন বিহার
এ জায়গা থেকে সরাসরি চলে যেতে পারেন রাঙামাটি শহরের রাজবন বিহারে। এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি তীর্থ স্থান এই রাজবন বিহার। এখানে আছে একটি প্রার্থনালয়, একটি প্যাগোডা, বনভান্তের (বৌদ্ধ ভিক্ষু) আবাস্থল ও ভোজনালয়। প্রতি শুক্রবার ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এখানে চলে প্রার্থনা। রাজবন বিহারে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারেন কাপ্তাই লেকের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য।
রাজবাড়ি
রাজবন বিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার রাজবাড়ি। নৌকা দিয়ে এই রাজবাড়িতে যেতে পারেন। অনেক উপজাতির মধ্যে এখনো চালু রয়েছে রাজপ্রথা। আকাঁবাঁকা সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে গাছের ছায়ায় ঘাট বাঁধানো পথের মাথায় এই বাড়িটি দেখে ভালো লাগবে আপনার। এখানে রয়েছে চাকমা সার্কেলের প্রশাসনিক দপ্তরও।
রিজার্ভ বাজার
এবার নৌকা দিয়ে লেক পার হয়ে গাড়িতে করে চলে আসুন রিজার্ভ বাজারে। ঘুরে ফিরে দেখুন রাঙামাটির ব্যস্ততম এই জায়গাটি। রিজার্ভ বাজার থেকেই রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার লঞ্চ ছাড়ে। রিজার্ভ বাজার ঘুরে এবার নিশ্চয়ই ক্ষুধার্ত! খেয়ে নিন এখানকার যে কোনো রেস্টুরেন্টে। রিজার্ভ বাজার থেকে এবার চলুন পর্যটন কমপ্লেক্সে।
পর্যটন কমপ্লেক্স ও ঝুলন্ত সেতু
পুরো রাঙামাটি শহরের সব জায়গাতে লোকাল গাড়ি চললেও এখানে যেতে হবে রিজার্ভ নিয়ে। গাড়িতে তবলছড়ি বাজারে এসে সেখান থেকে পায়ে হেঁটেও পর্যটন কমপ্লেক্সে আসতে পারেন। তবলছড়ি বাজার থেকে এখানকার দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। রাস্তার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এই অল্প পথ নিমিষেই ফুরিয়ে যাবে। একেবারে হাঁটতে মন না চাইলে এখান থেকে রিজার্ভ গাড়ি নিতে পারেন। রাঙামাটির কথা ভাবলে প্রথমে কল্পলোকে যে ছবিটি সবার আগে ভেসে উঠে সেটি হলো পাহাড়ের কোলে রঙিন একটি ঝুলন্ত সেতু। হ্যাঁ, পর্যটন কমপ্লেক্সের ভেতরেই রয়েছে সুন্দর এই ঝুলন্ত সেতু। ঝুলন্ত সেতু ধরে যতই সামনে এগোবেন ততই ছবির মতো দৃশ্য আপনার দুই চোখকে হাতছানি দেবে। ইচ্ছে হবে কাপ্তাই লেকের ভেতরে দূর পাহাড়ি কোনো দ্বীপে চিরদিনের জন্য থেকে যেতে। সেতু পেরিয়ে সামনের পাহাড়ে উঠে ইচ্ছেমতো ঘুরতে পারেন। এখানে থাকতে পারবেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। পাহাড়ে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলে কাপ্তাই লেকে নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন। নৌ ভ্রমণের জন্য এখানেই পেয়ে যাবেন নানা রকম বাহন। এখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে যেতে পারেন প্যাদা টিং টিং কিবা শুভলং।
শুভলং ঝরনা
এটি রাঙামাটি সদর ও বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়। রাঙামাটি শহরের বনরূপা, গর্জনতলী থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। স্পিডবোটে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। শুকনো মৌসুমে এই ঝরনা দেখা যায় না।
সাজেক
সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই পর্যটন স্থানটি ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক সাজেকে বেড়াতে আসেন। সাজেক থেকে ভারত দেখা যায়। ভোরে মেঘের সঙ্গে খেলা করা যায়। সূর্যোদয়ের আগে মেঘগুলো যেন আলিঙ্গন করে চলে যায়। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা হয়ে সাজেকে যান পর্যটকরা। ইতোমধ্যে সাজেকে বাণিজ্যিকভাবে শতাধিক রিসোর্ট গড়ে উঠেছে।
যেভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, পান্থপথ, ফকিরাপুল থেকে ডলফিন, শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, সেন্টমার্টিন, এস আলম বাসে রাঙামাটি আসতে পারেন। শ্যামলী ও সেন্টমার্টিনে এসি সার্ভিস চালু আছে। এছাড়া অন্যান্য বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে চট্টগ্রাম শহরের সিনেমা প্যালেস ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাঙামাটিতে বাস চলাচল করে।
কোথায় থাকবেন
রাঙামাটিতে থাকার জন্য রয়েছে অনেক হোটেল-মোটেল। রয়েছে বিভিন্ন সরকারি বিশ্রামাগার। কাতালতলি এলাকায় সুফিয়া ইন্টারন্যাশনাল, সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল, তবলছড়ির পর্যটন মোটেল, রিজার্ভ বাজারে মোটেল মতিমহল, গ্রিন ক্যাসেল, হোটেল প্রিন্স, লেকসিটি, কলেজগেটে মোটেল জজ, রাজবাড়িতে হোটেল ডিগনিটি অন্যতম। কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় হোটেল শাপলা, ড্রিমল্যান্ড অন্যতম।
কোথায় খাবেন
রাঙামাটিতে বেড়াতে এসে অনেকে আদিবাসী খাবার খেতে চান। তাদের জন্য শহরের রাজবাড়ি এলাকায় রয়েছে একাধিক হোটেল। এর মধ্যে টুগুন রেস্টুরেন্ট, পিবির ভাতঘর, বিজুফুল, স্টিফেন ভাতঘর, বনরূপা বাজারে যদন ক্যাফে, আইরিশ অন্যতম। এছাড়া যারা সাধারণ খাবার খেতে চান, তাদের জন্য আছে বনরূপা বাজারে দারুচিনি, মেজবান ও ক্যাফে লিংক।
কাপ্তাই লেকের মাঝখানে দ্বীপের কোথাও খেতে মন চাইলে চাং পাং, প্যাদা টিং টিং, মেজাং, গরবা রেস্টুরেন্টে খাওয়া যায়। তবে পরিবহণ খরচের তারতম্যের কারণে দাম শহরের রেস্টুরেন্টের চেয়ে এখানে একটু বেশি।