পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ ও বাংলো
তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠককে স্মরণ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা বাগান ব্যবস্থাপকের বাংলোয় দেশকে স্বাধীন করার জন্য ঐতিহাসিক এক শপথ অনুষ্ঠিত হয়। এ শপথে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকেই সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল এবং এস, কে ও জেড ফোর্স গঠন করাসহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অতিগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।
এতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী। তিনি ভারতের আগরতলা থেকে এসে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মেজর সি আর দত্ত, মেজর জিয়াউর রহমান, কর্নেল এম এ রব, ক্যাপ্টেন নাসিম, মেজর খালেদ মোশাররফ, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী, ভারতের ব্রিগেডিয়ার শুভ্রমানিয়ম, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী, লেঃ সৈয়দ ইব্রাহীম, মেজর কে এম শফিউল্লাহ, মেজর কাজী নূরুজ্জামান, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর নূরুল ইসলাম, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। তেলিয়াপাড়া চা বাগান ম্যানেজার বাংলোটিকে ৩ নম্বর সেক্টর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বৈঠক শেষে এম.এ.জি ওসমানী নিজের পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ওসমানী ও রবের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের নকশা প্রণয়ন এবং যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার শপথ করানো হয়। শপথবাক্য পাঠ করান এম.এ.জি ওসমানী।
এই সভাতেই একটি রাজনৈতিক সরকার গঠনের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার সরিয়ে নেওয়া হয়। তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বাংলোর পূর্ব-দক্ষিণ কোণে নির্মাণ করা হয়েছে ২, ৩ ও ৪নং সেক্টরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে এ স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ। বুলেটের আকৃতিতে তৈরি এই সৌধের সামনে দু’টি ফলকে অঙ্কিত রয়েছে শামসুর রাহমান’এর বিখ্যাত “স্বাধীনতা তুমি” কবিতা। চারপাশের চা-বাগানের সবুজের বেষ্টনীতে স্মৃতিসৌধসহ রয়েছে একটি লেক। লাল শাপলা ফোটা এই লেক বর্ষাকালে আকর্ষণীয় রূপ ধারণ করে।
চা বাগান
হবিগঞ্জের চা বাগান গোটা বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম আকর্ষণ। চা বাগান দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকাগুলো হলো জুরী বালি, কাপনা পাহাড়, লংলি ভ্যালির লোহাইউনি। এখানকার উল্লেখযোগ্য চা বাগান হলো চুনারুঘাট উপজেলার রামগঙ্গা চা বাগান। রামগঙ্গা চা বাগান লম্বায় আনুমানিক ৪ কি.মি. ও চওড়ায় প্রায় ২.৫ কি.মি.। বাগানের ভেতরটা সামান্য উঁচু। প্রায় সমতল ও মাঝারি উচ্চতার অনেক টিলার সমাহার এখানে দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া সারি সারি চা গাছের মাঝে বড়ো বড়ো কড়ই, লৌহশিরীষ, রাধাকৃষ্ণ প্রভৃতি ছায়াবৃক্ষ এখানে দেখতে পাওয়া যায়।
শংকর পাশা মসজিদ
সাড়ে ছয়শ বছরের পুরোনো হবিগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী উচাইল শংকরপাশা শাহী মসজিদ একটি নান্দনিক শিল্প নিদর্শন। এটি বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে (খ্রি. ১৪৯৩-১৫১৯) নির্মিত হয়েছে। একটি বারান্দাসহ এক সালাতকোঠা আকারে তৈরি হয়েছে। বর্গাকার সালাতকোঠাটির প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ ফুট। আর বারান্দা ৫.২৫ ফুট চওড়া। সালাতকোঠার ছাদ একটি আধাগোলাকার বড়ো গম্বুজ দিয়ে ঢাকা। এখানে গম্বুজের সংখ্যা তিনটি। এ মসজিদের অন্যতম আকর্ষণ ইটের প্রচুর অলংকরণ করা দেয়ালের কারুকাজ। এর দক্ষিণ অঙ্গনে বিশাল দিঘির পাড়ে একটি কবর আছে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এ কবরে মসজিদের নির্মাতা শাহ মজলিস আমিন সমাহিত আছেন। তিনি এ অঞ্চলের মুসলিম বিজেতা হিসেবে পরিচিত।
বানিয়াচং
এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং। বানিয়াচং উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত বানিয়াচং গ্রামের আয়তন ৮৪ বর্গকিলোমিটার। এ গ্রামের মোট অধিবাসী প্রায় এক লক্ষ। হাওরবেষ্টিত বানিয়াচং উপজেলার মোট আয়তন ৪৮২ বর্গকিলোমিটার। বৃহৎ জমিদারি ভূ-সম্পত্তির রাজধানী হিসেবে এটিকে রক্ষায় ‘গড়ের খাল’ নামে প্রতিরক্ষা পরিখা খনন করেছিলেন তৎকালীন জমিদার বা রাজারা। বানিয়াচংয়ের উত্তরে যাত্রা দিঘি, মজলিশপুর দিঘি, কামালখানী দিঘি, জামালপুর দিঘি, দেওয়ান দিঘি, ঠাকুরাইন দিঘি ও শ্যাম বাউলের আখড়ার দিঘি উল্লেখযোগ্য।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবস্থিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানটির আয়তন প্রায় ২৪৩ হেক্টর। ২০০৫ সালে এই উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ উদ্যানে সাতটি পাহাড়ি ছড়া অর্থাৎ ঝরনা আছে বলেই এর নামকরণ হয় সাতছড়ি। এ উদ্যানটি ইতঃপূর্বে রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট নামেও পরিচিত ছিল। এ উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান রয়েছে। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান রয়েছে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২০০ এর বেশি প্রজাতির গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, গাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, জাম, জামরুল, সিধাজুরুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেতগাছ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চিরসবুজ এবং প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর এ উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু ও প্রায় ১৫০-২০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে নানা প্রকার অতিথি পাখি এখানে আসে। এ বনে গিবন ছাড়াও উলটোলেজি বানর, কালোমাথা হনুমান, লজ্জাবতী বানর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়।
কমলা রানীর দিঘি
বানিয়াচং গ্রামে রয়েছে কমলা রানীর দিঘি। কমলা রানীর দিঘির আরেক নাম ‘সাগর দিঘি’। দেশের বৃহত্তম এই দিঘি কমলাবতীর দিঘি বা পদ্মাবতীর দিঘি নামে পরিচিত। গ্রামের মধ্যস্থলে প্রায় ৬৫ একর আয়তনের এ দিঘিটির দৈর্ঘ্য ২ কি.মি. এবং প্রস্থ ১ কি.মি.। ১৯৪২ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ দিঘির পাড়ে বসে পল্লি কবি জসীমউদ্দীন রচনা করেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘কমলা রানীর দিঘি’। দিঘিটির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে বানিয়াচং রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রাজা কেশব মিশ্রের প্রাচীন রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। এ দিঘি খননকে কেন্দ্র করে অনেক লোককাহিনি প্রচলিত আছে।
হাওর
সমগ্র সুনামগঞ্জ জেলা, হবিগঞ্জ জেলার বৃহদংশ এবং সিলেট শহর ও মৌলভীবাজার জেলার অংশবিশেষ অনেকগুলো হাওর দিয়ে বেষ্টিত। সিলেট জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাওরগুলো হলো-শনির হাওর, হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর, দেখার হাওর, মাকার হাওর, ছাইয়ার হাওর, টাংগুয়ার হাওর এবং কাউয়া দিঘি হাওর। বর্ষায় হাওরগুলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ সকল হাওরে একদিকে যেমন প্রচুর মাছ পাওয়া যায়, অপরদিকে তেমন এগুলোর নৈসর্গিক দৃশ্য যে কাউকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। একজন পর্যটক ইঞ্জিনচালিত নৌকায় হাওরগুলোতে ভ্রমণ করতে পারেন।
রেমা কালেঙ্গা বন
রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি বনাঞ্চল। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় এর অবস্থান। রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এটির আরো সম্প্রসারণ করা হয়। গোটা অঞ্চল রেমা, কালেঙ্গা, ছনবাড়ি, ও রশিদপুর -এ চারটি বিটে ভাগ করা।
বিস্তীর্ণ এ অঞ্চলটি যেহেতু প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, এজন্য বনের দেখভালের জন্য রয়েছে ১১টি ইউনিট ও ৭টি ক্যাম্প। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভালো অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম। তবে নির্বিচারে গাছ চুরি ও বন ধ্বংসের কারণে এ বনভূমির অস্তিত্বও বর্তমানে হুমকির মুখে। রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। বর্তমানে এই বনে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা-লতাগুল্ম পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখির জন্য এই বন সুপরিচিত এবং এদের মধ্যে রয়েছে — ভীমরাজ, টিয়া, পাতি ময়না, লালমাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, রাজ ধনেশ, শকুন, কালো মথুরা, লাল বনমোরগ, প্যাঁচা, মাছরাঙ্গা, ঈগল, চিল প্রভৃতি।
এই বনে তিন প্রজাতির বানরের বাস। এগুলো হলো— উল্টোলেজি বানর, লাল বান্দর ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর। তাছাড়া এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালী দেখা যায়। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি একমাত্র এ বনেই পাওয়া যায়। বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য আরও রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, দেশি বন শুকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু ইত্যাদি। শঙ্খচূড়, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা প্রভৃতি সহ এ বনে আঠারো প্রজাতির সাপের দেখা পাওয়া যায়। শকুনের নিরাপদ এলাকা-২ তফসিল অনুসারে রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।
এছাড়াও দেখতে পারেন বানিয়াচং বিথঙ্গলের আখড়া, রশিদপুর গ্যাস ক্ষেত্র, খোয়াই নদী, শাহজিবাজার ফ্রুটস ভ্যালি, সুলতানশি হাবেলি, রামনাথের ভিটা, সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ.)-এর মাজার।
ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ছোট কিছু ভুল আপনার আনন্দময় ভ্রমণকে বিব্রতকর করে তুলতে পারে। তাই ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য এবং স্মরণীয় করে তুলতে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে পারেন।
লিস্ট তৈরি করা
ভ্রমণের সময় আপনি কী কী করবেন এই পরিকল্পনাগুলো লিখে ফেলুন। এতে করে আপনার ভ্রমণের সময় যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। লিস্ট অনুযায়ী ঠিক করুন কোথায় কোথায় যাবেন এবং সেখানে কত সময় অতিবাহিত করবেন।
হালকা লাগেজ
লাগেজ যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনি খুব সহজেই ব্যাগ বহন করতে পারবেন। অন্যথায় ভারী ব্যাগ আপনার ভ্রমণকে তিক্ত করে তুলতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকিং
স্যান্ডেল বা জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে ব্যাগে নিন এতে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস পত্র নোংরা হবে না। এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
স্থানীয় খাবার
ভ্রমণে যতটুকু সম্ভব স্থানীয় খাবার খাবেন এবং সেই খাবারের স্বাদ বুঝতে চেষ্টা করবেন। আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খান তাহলে আপনার ঘুরতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন যেখানে খায় সেখানে খাবার চেষ্টা করুন।
অফ-সিজন ভ্রমণ
ভ্রমণ মৌসুমের বাইরে ভ্রমণ করলে খরচ কমে আসবে। অফ সিজনে সাধারণত পর্যটক কম থাকে। তাই হোটেল থেকে শুরু করে পরিবহন ও খাবার প্রায় সব জায়গাতেই আপনি কম খরচে চলতে পারবেন। তাই অফ সিজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
যাতায়াতের ব্যবস্থা
ভ্রমণের স্থানের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন। কারণ এসব ভ্রমণে আমাদের সবচেয়ে বেশি ঠকতে হয় স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে। ভাড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গাড়িচালকরা আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইবেন।
অতিরিক্ত টাকা
ভ্রমণে সবসময় আপনার বাজেটের বাইরে কিছু টাকা সাথে রাখুন। যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে হেল্প করবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট ক্রেডিট কারডের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা সাথে রাখতে পারেন।
ছোট ব্যাগ
ভ্রমণে মোবাইল, মানিব্যাগ ও ছোট ছোট দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। কিছু ব্যাগ পাওয়া যায় যেটি কোমরে রাখা যায়।
চার্জার
মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার ব্যাংক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুমের বাইরে যাবার সময় পাওয়ার ব্যাংকটি সঙ্গে নিতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ অনেক বেশি খরচ হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা নিরাপদ।
ইয়ারফোন
ভ্রমণের সময় কাটানোর জন্য ইয়ারফোন বা এমপিথ্রি প্লেয়ার সঙ্গে নিতে পারেন। ছোট মাপের কোনো স্পিকার সঙ্গে নিতে পারেন। এতে করে গ্রুপের সবাই একসঙ্গে গান শুনতে পারবেন এবং একটি ভালো আড্ডা জমে উঠবে।
ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ যাবেন যেভাবে:
ঢাকার মহাখালী থেকে হবিগঞ্জ নন এসি (এনা) বাস ভাড়া ৪৬০ টাকা। সায়েদাবাদ থেকে মডার্ণ বা দিগন্ত বাস, ভাড়া ৪০০ টাকা। বাসগুলো বি ক্যাটাগরির। তাই শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক এগুলোতে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত এসে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিএনজি করে হবিগঞ্জ যাওয়াটা আরামদায়ক হয়। সায়েদাবাদ থেকে এসব বাসের নন এসি ভাড়া ৫৩০ টাকা। এসি গ্রিনলাইন, লন্ডন এক্সপ্রেসের ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা হয়ে থাকে। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা। রিজার্ভ নিলে ২০০-২৫০ টাকা।
হবিগঞ্জ সদরে কোনো রেলওয়ে স্টেশন নেই। তাই ট্রেনে আসলেও শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে নামতে হবে। ওখান থেকে সিএনজি করে হবিগঞ্জে যাওয়া যাবে। শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত শোভন চেয়ার ভাড়া ২৩৫ টাকা। স্নিগ্ধা ৪৫৫ টাকা। এসি ৫৪০ টাকা। ঢাকা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জয়ন্তিকা, কালনী ও উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে।ট্রেনের টিকিট কাটতে এখানে ক্লিক করুন।
যেখানে থাকবেন:
হোটেল রয়েল
ঠিকানা: পায়রা ম্যানশন, মহাপ্রভু মন্দির রোড, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭১১-৩৪৬৭০২
হোটেল আমাদ রেসিডেন্সিয়াল
ঠিকানা: আমির চান্দ কমপ্লেক্স, বদিউজ্জামান খান রোড, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৩২-৫২১১৫২
হোটেল সোনার তরী
ঠিকানা: আশরাফ জাহান কমপ্লেক্স, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৩৪-৫৭৯২৩৬
সিহাব রেস্ট হাউস আবাসিক
ঠিকানা: সিনেমা হল সড়ক, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৪৪-৫৬৮২১৫
হোটেল স্টার
ঠিকানা: পুরনো পৌরসভা রোড, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭১৯-০৪৬১৬৫
হোটেল সোনার বাংলা
ঠিকানা: হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৩৭-৫৪৭৯৮৯
হোটেল আল জামিল
ঠিকানা: সার্কিট হাউজ রোড, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭১৮-৭৯২১৭৪
হোটেল পার্ক
ঠিকানা: রামকৃষ্ণ মিশন রোড, শঙ্কর সিটি, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৪২-৮০১০২৭
অনিতা হোটেল
ঠিকানা: সিনেমা হল রোড, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭৩০০৪৪৫৩৪৯
হোটেল সম্রাট
ঠিকানা: আশরাফ জাহান কমপ্লেক্স, কালী বাড়ি রোড, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭১৮-১৮০০১৬
শাপলা রেস্ট হাউজ
ঠিকানা: সিনেমা হল রোড, হবিগঞ্জ
মোবাইল: ০১৭১২-৯৬২৮৩৩
কি খাবেন
হবিগঞ্জে অনেকগুলো জনপ্রিয় খাবার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চুনারুঘাটের ইলিশ মাছ, বানিয়াচংয়ের তেতুলের আচার, লাউয়াছড়ার মধু, হবিগঞ্জের চা, বানিয়াচংয়ের লুচি, হবিগঞ্জের গরুর মাংসের কালা ভুনা, হবিগঞ্জের পোলাও, খিচুড়ি, হবিগঞ্জের ঝালমুড়ি ও ফুচকা।
এছাড়া ছিকর নামে একটি খাবার রয়েছে। এটি হবিগঞ্জ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি মাটি দিয়ে তৈরি একটি খাবার। ছিকর তৈরির জন্য, মিহি মাটিকে রোদে শুকিয়ে নিয়ে এর সাথে লবণ মিশিয়ে তা বেলে ছাঁচে দিয়ে পোড়ানো হয়। ছিকর সাধারণত ভাতের সাথে খাওয়া হয়।
সতর্কতা:
ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—
পরিকল্পিত ভ্রমণ
পরিকল্পিতভাবে ভ্রমণ করলে যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। যদি বাস বা ট্রেনের টিকিট বুকিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে মাঝামাঝি আসন নিন। রাতের বেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে জানালার পাশে বা বাসের খুব পেছনের আসন এড়িয়ে চলাই ভালো
নির্ভরযোগ্য যানবাহন ব্যবহার
নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য বাস বা যানবাহন বেছে নিন। সরকারি বা স্বীকৃত পরিবহন সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করুন। বাস বা গাড়ির রুট ও সময়সূচি সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা (যেমন উবার, পাঠাও) ব্যবহার করলে গাড়ির তথ্য যাচাই করুন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
খুব বেশি ভিড় থাকলে বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে সেই যানবাহনে না ওঠাই ভালো। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন মানিব্যাগ, ফোন বা ব্যাগ নিজের কাছেই রাখুন।
জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন
স্থানীয় পুলিশ, বাস সার্ভিস হেল্পলাইন ও পরিচিতজনের নম্বর সহজেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখুন। বিপদের সময় ৯৯৯ (বাংলাদেশের জরুরি সেবা) তে কল করুন।
যাত্রাপথে অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাবেন না
যাত্রাকালে অনেক যাত্রী পার্শ্ববর্তী যাত্রীকে ভদ্রতার খাতিরে বা বন্ধুসুলভভাবে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে অনুরোধ করেন। এ ধরণের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কিছু না খাওয়া নিরাপদ।
মোবাইল ফোন নিরাপদে রাখুন
অনেকেই বাসে বা গণপরিবহনে যাত্রাকালে মোবাইল ফোন বের করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করেন। এ ধরনের অভ্যাস ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বসলে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন বের না করে নিরাপদ। সম্ভব হলে, যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন বের না করে, নিরাপদে পকেটে বা ব্যাগে রাখুন।