পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
অভয়ারণ্যটির অবস্থান দেশের পূর্বাঞ্চলের বিভাগ সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। ঢাকা থেকে সড়কপথে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরত্বে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির অবস্থান। সুন্দরবনের পরেই এই শুকনো ও চিরহরিৎ বনটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনভূমি। একই সঙ্গে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবেও স্বীকৃত এই অঞ্চলটি।
ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন সমগ্র অভয়ারণ্যটির আয়তন এক হাজার ৭৯৫ দশমিক ৫৪ হেক্টর। হবিগঞ্জ বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের রেমা, কালেঙ্গা, ও ছনবাড়ী- এই তিনটি বিট পড়েছে অভয়ারণ্যের মধ্যে। অরণ্যের ভেতর দিয়ে ট্রেকিং পথে সিন্দুরখান ইউনিয়ন হয়ে পিচঢালা পথে শ্রীমঙ্গল পৌঁছা যায়।
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ভ্রমণে কি কি দেখবেন
বনে প্রবেশ করতেই স্বাগত জানাবে মনোরম একটি লেক। পাশেই সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে পুরো বনভূমি এক নজরে দেখে নেওয়া যায়। এই অভয়ারণ্যে ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৬৭ প্রজাতির পাখি। পাখি প্রেমিদের জন্য এই অভয়ারণ্য সর্বোত্তম জায়গা।
তবে একসঙ্গে অনেক পাখির দেখা পাওয়ার জন্য খুব ভোরে বনের ভেতর ঢুকতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পাহাড়ি ময়না, ভিমরাজ, কাও ধনেশ, ফোটা কান্টি সাতভারলা, শালিক, শ্যামা, শামুক খাওরি, ও টুনটুনিসহ আরও দুর্লভ প্রজাতির পাখি। এখানকার প্রধান আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে শকুন দর্শন। বনভূমিটি শকুনের নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসেবে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত। এই বনে তিন প্রজাতির বানরের দেখা মেলে। এগুলো হলো- লাল বানর, নিশাচর লজ্জাবতী বানর, এবং উল্টোলেজি বানর। এ বনে কাঠবিড়ালী আছে ৫ প্রজাতির, যেগুলোর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি শুধুমাত্র এখানেই পাওয়া যায়। সাপের মধ্যে দেখা যায় দুধরাজ, কোবরা, দাঁড়াশ ও লাউডগা।
এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ট্রেকিংয়ের জন্য রয়েছে তিনটি ট্রেইল। একটি আধা ঘণ্টার, একটি এক ঘণ্টার এবং একটি তিন ঘণ্টার পথ। এই পথে আদিবাসীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। এখানে মোট চার আদিবাসীর বসবাস- ত্রিপুরা, সাঁওতাল, উড়ং ও তেলুগু।
ভ্রমণকালীন কিছু সতর্কতা
অভয়ারণ্য ভ্রমণে দিক নির্দেশনা ও থাকা-খাওয়া বন্দোবস্তের জন্য সঙ্গে অবশ্যই গাইড নেওয়া আবশ্যক। ট্রেকিংয়ের সময় সঙ্গে হালকা শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, এবং স্যালাইন রাখা জরুরি। জংলি জোঁক থেকে বাঁচতে পায়ে বড় মোজা পরা যেতে পারে কিংবা সঙ্গে লবণ রাখা ভালো। বনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার্থে যেখানে সেখানে পলিথিন, খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট, এবং পানির বোতল ফেলা যাবে না।
সবশেষ, হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ট্রেইল তিনটির যেকোনো একটির ট্রেকিংয়ে পাওয়া যাবে সারা জীবনের জন্য অমূল্য এক অভিজ্ঞতা। তাই শতভাগ উপভোগের জন্য পুরো ট্যুরের জন্য ন্যূনতম দুই দিন সময় নিয়ে যাওয়া উচিত। পাখিপ্রেমিদের জন্য রীতিমতো স্বর্গরাজ্য বলা যেতে পারে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটিকে।