পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
উঁচু-নিচু সবুজ টিলা-পাহাড় ও তিনটি কৃত্রিম লেক নিয়ে মানিকছড়িতে ডিসি অ্যাডভেঞ্চার ও ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে উঠছে। ১৬০ একর আয়তনের অ্যাডভেঞ্চারনির্ভর পার্কটি দেশে এই প্রথম। প্রকৃতি দর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার রাইডে পর্যটকরা অংশ নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম থেকে আসা কয়েকজন তরুণ পর্যটক জানান, এখানকার ভিন্নতা হলো এখানে একসঙ্গে অনেক অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটিস করা যায়, যা দেশের অন্য কোথাও নেই। জিপলাইন, হাইকিং, ওয়াল হাইকিং খুব এনজয় করা যায়। তারা আরও জানান, এখানে ইকো ট্যুরিজম পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়েছে। প্রকৃতিকে অক্ষুণ্ন রেখে সুন্দর পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটিসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
পর্যটক রাহেল ও রোমান জানান, শহরের অদূরে প্রকৃতির সঙ্গে থাকার যে অনূভ‚তি, সেটা আমরা এখানে পেয়েছি। আমরা ক্যাম্পিং করেছি। দারুণ অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তরুণ পর্যটকদের কাছে পার্কটি নতুন গন্তব্য হয়ে উঠবে। পার্কটি প্রকৃতিবান্ধব। এখানে জিপলাইন, জায়ান্ট সুইং, ট্রি টপ ভিন্নধর্মী অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটিসে অংশ নিয়েছি। খুব ভালো লেগেছে।
ডিসি অ্যাডভেঞ্চার ও ইকো-ট্যুরিজম পার্কের অপারেশন হেড এবং ওয়াইল্ডারনেস বিডির প্রতিষ্ঠাতা সাদাব ইয়াসির বলেন, ডিসি পার্কের সীমানাজুড়ে হাইকিং ট্রেইল হচ্ছে। বাংলাদেশে এত সুন্দর ভিউ নিয়ে জিপলাইন কোথাও নেই। এছাড়া ট্রি টপ ওয়াকিং রয়েছে। পর্যটকরা এখানকার সব অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি এনজয় করতে পারেন। লেকে কায়াকিং রয়েছে। এছাড়া ট্র্যাডিশনাল বাঁশের ভেলাও রয়েছে। ওয়াটার জিপলাইনের পাশাপাশি ক্লাইম্বিং ওয়ালের চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রতিটি অ্যাডভেঞ্চার রাইডের জন্য পর্যাপ্ত গাইড ও নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অ্যাভভেঞ্চারভিত্তিক বিভিন্ন রাইডে অংশগ্রহণকারীদের জন্য গাইডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হেলমেটসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে ক্যাম্পিং ট্যুরে তাঁবুবাসের ৮৫০ টাকার প্যাকেজ আছে। এর মধ্যে তিন বেলা খাবার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া সব অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটির প্যাকেজ ৮০০ টাকা।
মানিকছড়ির ইউএনও রক্তিম চৌধুরী বলেন, এ মুহূর্তে একটা ডিজিটাল সার্ভে করে মাস্টার প্ল্যান করা দরকার। এখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বেড়াতে আসা পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য ক্যাম্পিংয়ের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে রিসোর্টও নির্মাণ করা হবে। এ বিশাল পার্কে অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পর্যটন মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে মাউন্টেইন বাইকিং, সুইমিং, জঙ্গল ট্র্যাকিংসহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাক্টিভিটিস চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ শীতে ক্যাম্পিং ট্যুর ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতে পারে। পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, এখানে নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি নেই। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি মানিকছড়ি থানা পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পুরো জেলায় প্রকৃতিবান্ধব পর্যটন গড়ে তেলা হচ্ছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা প্রশাসন পর্যটনের উন্নয়ন করছে। ইতোমধ্যে আলুটিলা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় মানিকছড়ি ডিসি অ্যাডভেঞ্চার ও ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। পার্কটিতে ১০০ প্রজাতির ৩০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এখানে এসে পর্যটকরা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন বলে আশা করি।