পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
এই মেলার মূল আকর্ষণ বাহারি সব মিষ্টি। শুধু মিষ্টি নয়, চুড়ি, ফিতা থেকে শুরু করে গৃহস্থালির নানান জিনিসও মেলে এই গ্রামীণ মেলায়।
তবে মিষ্টির কথা বললেই রসগোল্লা, রাজভোগ, কালোজাম, চমচমের নাম চলে আসে। তবে ‘বালিশ মিষ্টি’র সঙ্গে পরিচিত নন অনেকেই। অন্যসব মিষ্টি হরহামেশা মিললেও বালিশ মিষ্টির দেখা সব জায়গায় মেলে না। ওজনে বড় ও দামেও বেশি এই বালিশ মিষ্টি মিলবে এই প্রেম গোসাই মেলায়।
আয়োজকদের দাবি- সারাদেশ থেকে মেলায় আসে মানুষ। মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ‘বালিশ মিষ্টি’। একটি মিষ্টির ওজন ১ থেকে ১৫ কেজি। যার দাম সাড়ে ৩০০ থেকে শুরু হয়ে ৬০০ টাকা পর্যন্ত ঠেকেছে। ইতিহাস ঐতিহ্যের এই মেলায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। নওগাঁ ছাড়াও দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা আসেন ঐতিহ্যাবাহী এই গ্রামীণ মেলায়।
মেলায় কয়েক হাজার দোকান বসেছে। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীরা জানান- মেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস বালিশ মিষ্টি। সেখান থেকে স্টোলগুলোর দিকে এগুতেই চোখে পড়ল বাহারি ডেকোরেশনে সাজানো মিষ্টির দোকানগুলো। সবচেয়ে বেশি ভিড় মিষ্টির দোকানে।
মিষ্টি বানানো ও বিক্রি হচ্ছে ৫০টির বেশি দোকানে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। মেলায় প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন মিষ্টি বিক্রি হয়। পুরো মেলায় ১০টির বেশি মিষ্টির দোকানে ৩০ থেকে ৩৫ রকমের মিষ্টি পাওয়া যায়। এই মেলা বালিশ মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। এই মিষ্টির একটির ওজন ১ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত। একেকটি মিষ্টির দাম পড়ে ৫ থেকে ৯ হাজার টাকা।
মিষ্টি বিক্রেতারা জানান, তাদের দোকানে রসগোল্লা, রাজভোগ, কালোজাম, চমচম, রসমালাই, প্রাণহরা, সন্দেশ, ছানামুখী, মণ্ডা, বুরিদান, মতিচুর লাড্ডু, কাঁচাগোল্লা রয়েছে। সব মিষ্টির মধ্যে বালিশ মিষ্টির কদর বেশি। তুলনামূলক বড় মিষ্টি। আর স্বাদেও অতুলনীয় হওয়ায় এর চাহিদা বেশি ক্রেতাদের কাছে। সাধারণ মিষ্টি দিনে ৫০ কেজি বিক্রি হলে বালিশ মিষ্টি ৭০ থেকে ৮০ কেজির বেশি বিক্রি হয়। যেসব দোকানে বালিশ মিষ্টি পাওয়া যায় বিক্রির দিক থেকে এমন চিত্র প্রায় সব দোকানে।
মিষ্টির পাশাপাশি গ্রামীণ এই মেলায় চুড়ি, ফিতা, আলতা, খাট, চেয়ার-টেবিলসহ গৃহস্থালির নানা জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় শিশুদের নাগরদোলাসহ নানা খেলনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলা শুরুর সময়ে গুজিশহর উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় মূল মেলা বসতো। তবে মেলা শুধু মেলা প্রাঙ্গণেই সীমিত থাকেনি। পরবর্তী সময়ে আমন ধান কেটে নেওয়ার পর ফাঁকা পড়ে থাকা কৃষিজমির মাঠে বসেছে মেলার বিভিন্ন দোকানপাট।
মেলায় বসানো হয়েছে সার্কাসের প্যান্ডেল। শিশু-কিশোরদের আনন্দ-বিনোদনের জন্য একাধিক নাগরদোলা ও রাইড বসানো হয়েছে। মেলা ঘিরে জামাতা ও আত্মীয়-স্বজনকে আমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করার রেওয়াজ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয় বাহারি পিঠা। মেলা থেকে মিষ্টি কিনে এনে মেয়ে, জামাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের খাওয়ানোর রেওয়াজ ধরে রেখেছেন এলাকাবাসী।