পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘সাকরাইন উৎসব’ আজ মঙ্গলবার। প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ পৌষসংক্রান্তিতে এ উৎসব উদযাপন করা হয়। এদিন রংবেরঙের ঘুড়িতে ছেয়ে যায় ঢাকার আকাশ। উৎসব ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই অলিগলিতে বিরাজ করে আলাদা আমেজ। ধুম পড়ে যায় ঘুড়ি ও নাটাই কেনাবেচার।
বিক্রেতারা জানান, এবারও প্রজাপতি, চক্ষুদার, কাউটাদার, চশমাদার, পঙ্খিরাজ, পান, চ্যাপলা, বোয়াদার, ঈগল, লাভ ঘুড়ি, সাদা ঘুড়ি, দাবা ঘুড়ি, চারবোয়া, চিল, বাদুরসহ নানা নামের ঘুড়ি এসেছে। সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে নাটাই ও সুতা। সাধারণ ঘুড়ি আকৃতিভেদে ৫ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়। নকশা ও বিদেশি ঘুড়ির দাম ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা। নাটাইয়ের দাম ১০০ থেকে ৮০০ টাকা।
শাঁখারীবাজারের ঘুড়ি ব্যবসায়ী লোকনাথ নাগ বলেন, জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক বেশি। ঘুড়ি বানাতে খরচ বেশি হচ্ছে। তাই দামও একটু বেশি। আমার কাছে ১০ থেকে ৪০০ টাকা দামের ঘুড়ি রয়েছে। নকশা করা ঘুড়ির দাম একটু বেশি। এ ছাড়া কম দামি, হালকা নকশার ঘুড়িও আছে।
সাকরাইনে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার বাড়িগুলোর ছাদ থেকে ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা রঙের ঘুড়িতে ছেয়ে যায় আকাশ। সন্ধ্যার পর শুরু হয় আতশবাজি, গানবাজনা ও আগুনের খেলা।
আদি ঢাকা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মানস বোস বাবুরাম বলেন, পুরান ঢাকায় আদিকাল থেকেই সাকরাইন উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা ঘুড়ি ওড়ানোর এ উৎসবকে ডিজে পার্টিতে রূপান্তর করেছে।
ঢাকাবাসী ও বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সভাপতি শুকুর সালেক বলেন, সাকরাইন মূলত পারিবারিক উৎসব। সবাই পরিবারের সঙ্গে পিঠাপুলি আর ঘুড়ি উড়িয়ে দিনটি উদযাপন করে। ডিজে পার্টি, উচ্চ স্বরে গান বাজানো আমাদের কালচার নয়। একে-অন্যের বাসায় দাওয়াত দেওয়া, এটাই আমাদের উৎসবের অনুষঙ্গ। বর্তমানে এসব কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে জৌলুস। সাকরাইন উৎসবে ভর করেছে ‘অপসংস্কৃতি’। এগুলো সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।