এরিক ওয়েইহেনমেয়ার। চোখে দেখতে পান না। তবে শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি। জয় করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট।
দৃষ্টিহীন ব্যক্তি হিসেবে প্রথম এভারেস্ট জয় করা এরিক যুক্তরাষ্ট্রের পর্বতারোহী। ২০০১ সালের ২৫ মে এ কীর্তি গড়েন। এ জন্য বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকীর প্রচ্ছদে জায়গা পেয়েছেন তিনি।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজের দৃষ্টিশক্তি হারান এরিক। কিন্তু নিজের দৃষ্টিহীনতাকে কখনোই স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হতে দেননি তিনি। হাই স্কুলে পড়ার সময়ই পাথুরে পথ বেয়ে পাহাড়ে চড়ার ব্যাপারে এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করতে থাকেন। স্নাতক পাসের পর এ আকর্ষণ যেন ধীরে ধীরে নেশায় পরিণত হতে থাকে।
এক সময় এরিক জয় করতে থাকেন একের পর এক পাহাড়-পর্বত। এরপর ২০০১ সালের ২৫ মে বিশ্বের প্রথম দৃষ্টিহীন ব্যক্তি হিসেবে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান। তবে অভিযানটি মোটেই সহজ ছিল না তার জন্য।
এভারেস্ট যাত্রার আগে এরিক ও তার দল হিমালয়ের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রস্তুতি হিসেবে যাত্রা করেন আমা ডাবলাম পর্বতে। তবে প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়ার কারণে চূড়ায় পৌঁছা সম্ভব হয়নি। সেখান থেকে নামার সময় গড়িয়ে ১৫০ ফুট নিচে পড়ে মারাত্মক আহত হন এরিক।
দলের বাকি সদস্যদের সাহায্যে নিরাপদে নেমে আসতে পারলেও এভারেস্ট যাত্রার এক মাস আগে পর্যন্ত ফুসফুসে সমস্যার কারণে যাত্রা নিয়ে তার সংশয় থেকেই যায়।
শেষ পর্যন্ত সব আশঙ্কা পেছনে ফেলে ২২ জনের একটি দল নিয়ে এরিক বেরিয়ে পড়েন এভারেস্টের পথে। অনেকেই ভেবেছিলেন, কখনোই সফল হবেন না এরিক। একজন দৃষ্টিহীন মানুষ এত বৈরী আবহাওয়ায় দুর্গম পথ হয় তো পাড়ি দিতে পারবেন না। তবে সবার ধারণা ভুল হয়। দলের আরও ১৮ জনের সঙ্গে এভারেস্ট জয় করেন এরিক।
এরিকের এই অর্জনে তার ছবি ছাপা হয় টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। উঠে আসে তার নানা দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প। এরিক কেবল পর্বতারোহণেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। একা একা স্কাইডাইভিং আর প্যারাগ্লাইডিংয়ের মতো দুঃসাহসিক কাজও করেছেন। মরক্কোর মরুভূমিতে অন্যদের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা হোক কিংবা পর্বতারোহীদের যম ‘সেভেন সামিট’ জয় করা হোক-কোনো কিছুতেই পিছিয়ে থাকার মানুষ নন তিনি।
২০১৪ সালের ৭ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর এরিক তৈরি করেন আরেক নতুন ইতিহাস। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ২৭৭ মাইল পানিতে ‘কায়াকিং’ করেন তিনি। প্রবল খরস্রোতা পানিতে কায়াক নামে পরিচিত নৌকা চালানো মোটেই সহজ কাজ ছিল না।