ভারতের আসামের দক্ষিণ অবস্থিত মেঘালয় রাজ্যটি জয়ন্তিয়া, খাসি ও গারো পাহাড় নিয়ে গঠিত। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি আসাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মেঘালয় রাজ্য আত্মপ্রকাশ করে। ‘মেঘালয়’ নামটি নাকি স্বনামন্য ভাষাবিদ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নির্বাচিত হয়েছিল। মেঘালয়ের তিনটি জাতিগোষ্ঠী হলো- খাসি, জয়ন্তিয়া ও গারো। শিলং হলো খাসিদের অতি প্রিয় শহর। ধর্ম খ্রিস্টান হলেও উপজাতীয় সংস্কার এবং মূল্যবোধের প্রতি এরা শ্রদ্ধাশীল। খাসি সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। পরিবারের ছেলেরা মায়ের পদবি ব্যবহার করে, পারিবারিক সম্পত্তির অধিকার বর্তায় কনিষ্ঠা কন্যার ওপর, মেঘালয়ের উপজাতীয় মানুষ বিশেষ করে খাসিরা অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল ও সংগীতপ্রিয়। মেঘালয়ের পর্যটন পরিকাঠামো প্রধানত খাসি পাহাড়কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। জয়ন্তিয়া পাহাড়ের জোয়াই অঞ্চলে পর্যটকদের উপস্থিতি কিছুটা বাড়লেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা গারো পাহাড় আজও সাধারণ পর্যটকদের ভ্রমণসূচির বাইরে রয়ে গেছে।
শিলং
মনে রাখবেন শিলং শহরে রাত আটটা মানেই বেশ রাত। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, পথে লোক চলাচল বেশ কমে যায়। ট্যাক্সির দেখা মেলাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। হোটেলের বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে ডিনার সারলে সময় থাকতেই নিজেদের হোটেলে ফিরে যাবেন। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং খাসি পাহাড়ের প্রধান শহর। গুয়াহাটি থেকে সড়কপথে শিলংয়ের দূরত্ব ১০১ কিলোমিটার।
পল্টনবাজার থেকে ভোর না হতেই শেয়ারের সুমোজাতীয় গাড়ি শিলংয়ের উদ্দেশে ছুটতে আরম্ভ করে। এছাড়া রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বাস সার্ভিস। গুয়াহাটি থেকে শিলং যাওয়ার পথে পড়ে জোড়বাত মোড়, বার্নিহাট, উমলিং নংপো আর উমসিং নামে ছোটবড় জনপদ। এর পরই পথের ডানদিকে চোখে পড়বে অপরূপ উমিয়াম লেক, যা বড়াপানি নামেও পরিচিত। উমিয়াম লেককে পেছনে ফেলে রেখে হালকা চড়াই পথ ধরে আরও ১৬ কিলোমিটার গেলেই শিলং। শিলংয়ের প্রাণকেন্দ্র হলো পুলিশবাজার এলাকা। প্রচুর হোটেল ছাড়াও এখানে রয়েছে মেঘালয় রাজ্য পরিবহণের বাস টার্মিনাল, ট্যাক্সিস্ট্যান্ড আর মেঘালয় ট্যুরিজমের কাউন্টার।
শিলং শহরে পায়ে হেঁটে বেড়ানো এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা। এখানে পদে পদে বৈচিত্র্য। পুলিশবাজার-বড়বাজার এলাকায় ঘোরাঘুরি করলে দেখা যাবে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নানান ভাষাভাষীর মানুষ এখানে বিক্রেতা বা ক্রেতা রূপে উপস্থিত। পথের ধারেই রকমারি পসরা সাজিয়ে বসে আছে খাসি নারী-পুরুষের দল।
শিলং বেড়ানোর বিশেষ জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে- এলিফ্যান্ট ফলস, লেডি হায়দারী পার্ক, ওয়ার্ডস লেক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন, শিলং পিক, ক্যাথলিক ক্যাথিড্রাল, বিশপ-বিডন ফলস, স্টেট মিউজিয়াম।
কেনাকাটা
শিলং শহরে সুলভমূল্যে কেনাকাটার জন্য বড়বাজার ও পুলিশবাজার এলাকা সুবিধাজনক। কেনার জন্য রয়েছে কমলালেবুর মধু, বেত ও বাঁশের তৈরি সামগ্রী, খাসি চাদর, কমলালেবুর জেলি, মাশরুম, গৃহসজ্জার উপকরণ ও শীতবস্ত্র।
মেঘলায়ে যেতে চাইলে একটি ভ্রমণ পরিকল্পা থাকার দরকার। একটি সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্রমণের খরচ কেমন হবে, কীভাবে যেতে হবে, থাকবেন কোথায়, খাবেন কী, পাসপোর্ট, ভিসা, যাতায়াত ভাড়া, বর্ডার ইমিগ্রেশন ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আগেভাগে জেনে নিতে হবে।
কীভাবে যাবেন, খরচ কেমন
ঢাকা থেকে যেকোনো এসি/নন-এসি বাসে সিলেট। বাসগুলো রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে ছেড়ে যায় এবং সকাল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে পৌঁছে।
সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে জাফলংয়ের বাস পাওয়া যায়। কদমতলী থেকে জাফলংগামী বাসে উঠতে হবে। সময় লাগবে দুই ঘণ্টার মতো। এখান থেকে কেউ শিলং যেতে চাইলে স্থানীয়ভাবে শেয়ার ট্যাক্সি আছে। রিজার্ভ ট্যাক্সি নিয়েও ঘুরে বেড়ানো যাবে। লোকেশন অনুসারে সারাদিনের জন্য ভাড়া ৩,০০০-৩,৫০০ রুপি।
ট্যাক্সির ঝামেলায় না গেলে মেঘালয় ট্যুরিজম বোর্ডের ট্যুরিস্ট বাসে করেও ভ্রমণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ রুপি লাগতে পারে।
কোথায় থাকবেন
মেঘালয়ে ঘুরতে গেলে থাকলে পারেন শিলংয়ে। এখানে ১৫০০-৩০০০ টাকার মধ্যে ভালো হোটেল পাবেন।
কী খাবেন
সব জায়গায় মুরগি, ডিম, ভাত, নুডলস, পরোটা পাবেন। চলতি পথে লুচি, আলুদম চা, পানি, রুটি, বিস্কুট, ডিম ইত্যাদি পাবেন।
পাসপোর্ট ও ভিসা
বিদেশ ভ্রমণের জন্য বৈধ পাসপোর্ট ও সংল্লিষ্ট দেশের ভিসা থাকা আবশ্যক। তাই আপনার যদি পাসপোর্ট না থাকে তাহলে পাসপোর্ট করে নিন। ভারতীয় ভিসার আবেদন করার সময় ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের পোর্ট অব এন্ট্রি-এক্সিট অবশ্যই ‘ইণ জঙঅউ উঅডকও’ সিলেক্ট করুন।
ভ্রমণ কর/ট্রাভেল ট্যাক্স
স্থলপথে ভ্রমণ করের পরিমাণ ৫০০ টাকা। যা আগেই নির্ধারিত ব্যাংক বা বর্ডারে সোনালী ব্যাংকের বুথে জমা দিতে পারবেন।
ইমিগ্রেশনে যা করতে হবে
ডাউকি বর্ডারের বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে অন্যান্য বর্ডারের তুলনায় সহজ ও ভিড় কম থাকে। প্রথমেই ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করতে লাইন ধরে পুলিশের কাছ থেকে একটা বহিরাগমন কার্ড (উবঢ়ধৎঃঁৎব ঈধৎফ) সংগ্রহ করে পূরণ করে পাসপোর্টসহ জমা দিতে হবে।
ইমিগ্রেশন শেষ করে কাস্টমস অফিসে গিয়ে এন্ট্রি করতে হবে। এখানে ভ্রমণ করের রশিদ জমা দিতে হবে। কাস্টমসের কাজ শেষ হলে বিজিবি নাম এন্ট্রি করবে তাদের নির্ধারিত খাতায়।
বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ হয়ে গেলে ভারতের অংশে ঢুকতেই বিএসএফ পাসপোর্ট চেক করে ভেতরে ঢুকতে দেবে। পরে ভারতীয় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস অফিসে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। সেখানে অৎৎরাধষ ঈধৎফ পূরণ করে ইমিগ্রেশন শেষ করতে হবে।
মনে রাখবেন
উপজাতীয় মানুষদের বা তাদের বাড়িঘরের ছবি তোলার আগে অবশ্যই অনুমতি নেবেন। নারীদের ছবি তোলার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।