পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
সকালবেলায় পূর্ব দিগন্তের জলরাশি ভেদ করে লাল থালার মতো সূর্যোদয়। বিকালে আবার পশ্চিম দিগন্তে একই রূপে পানিতে ডুব দেয়া। একই জায়গা থেকে এরকম সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মনোহর দৃশ্য দেখার বিরল জায়গা এ দেশেই আছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অপার সৌন্দর্যের এই লীলাভূমির নাম কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এখানকার সমুদ্র সৈকতে আগে যারা কখনো যাননি তারা গিয়ে মুগ্ধ হবেন এই অসীম সৌন্দর্যে। শুধু সমুদ্র সৈকত নয়; এখানে আছে দেখার মতো আরও অনেক জায়গা। কুয়াকাটা নামের উৎস সেই প্রাচীন কূপ দেখতে পাবেন এখানে এলে। সমুদ্র সৈকতের খুব কাছেই রয়েছে এটি। এই কূপের সঙ্গেই রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির। মন্দিরের ভেতরে রয়েছে ব্রোঞ্জ নির্মিত বৌদ্ধ মূর্তি। এর কাছেই আছে রাখাইন পল্লী। ঘুরে দেখতে পারেন উপজাতিদের এই এলাকাটি। এখান থেকে পূর্ব দিকে মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরের পাথর নির্মিত বুদ্ধ মূর্তিটি এই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি। কুয়াকাটা সৈকত ধরে পূর্ব দিকে এগোলে রয়েছে গঙ্গামতির চর। এই জায়গাটি খুবই আকষর্ণীয়। এর আগে রয়েছে গঙ্গামতির বাঁক। সকাল বেলা সূর্যোদয়ের দৃশ্য ভালোভাবে দেখতে হলে আসতে হবে এখানে। কুয়াকাটা সৈকত থেকে এই দুইটি জায়গাতে যেতে পারেন মোটরবাইকে।
সাগরের জলরাশিতে বেড়ানোর জন্য লাইফবোট প্রস্তুত থাকে। পাশাপাশি রয়েছে স্পিডবোট ও ওয়াটার বাইক। যে যেটা পছন্দ করেন, সেটাতে উঠে ঘুরতে পারবেন। কুয়াকাটার নিকটবর্তী লেম্বুর চর, ফাতরার চর, গঙ্গামতী, আশার চরে পর্যটকদের যাতায়াতের জন ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ যদি চর বিজয় ভ্রমণ করতে চান, সে ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া সৈকতের পশ্চিম দিকে শুঁটকি পল্লী। ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গা থেকেও।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে পারেন সড়কপথ কিংবা জলপথে। তবে পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ অতি সহজেই কুয়াকাটায় যেতে পারবেন। আগের মতো ফেরি পারাপারের ভোগান্তি নেই, কুয়াকাটায় পৌঁছাতে সময়ও কম লাগবে।
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে সাড়ে ৫-৬ ঘণ্টায় পটুয়াখালী যাওয়া যায়। আগে এই পথ পাড়ি দিতে ফেরি ঘাটেই পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। ঢাকার সায়দাবাদ থেকে সাকুরা পরিবহণ ও আরামবাগ থেকে গ্রিন লাইন পরিবহণের এসি বাস পটুয়াখালী চৌরাস্তায় যায়। এছাড়া কমলাপুর ও গুলিস্তান থেকে বিআরটিসির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চলাচল করে পটুয়াখালীতে।
আবার কেউ চাইলে লঞ্চেও যেতে পারেন। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী এসে সেখান থেকে বাসে যেতে পারেন কুয়াকাটা।
কোথায় থাকবেন
কুয়াকাটায় অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল আছে ৭৪টি। এর বাইরে আছে ৫৬টি হোটেল-মোটেল। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির হোটেল রয়েছে ১৫টির মতো। এতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজারের মতো পর্যটক রাত যাপন করতে পারেন। এর মধ্যে ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন করপোরেশনের পর্যটন মোটেল, পর্যটন হলিডে হোমস্ কুয়াকাটা ও কুয়াকাটা ইয়ুথ ইন। ব্যক্তি মালিকাধীন হোটেলের মধ্যে রয়েছে-বিচ হ্যাভেন, সাগর কন্যা রিসোর্ট লি., হোটেল মোহনা ইন্টারন্যাশনাল লি., কুয়াকাটা গেস্ট হাউজ, হোটেল নীলাঞ্জনা, হোটেল কুয়াকাটা ইন, হোটেল বনানী প্যালেস।