লেখকঃ আহসান রনি
কখনো বা খুব গরম অনুভূত হবে তারপর হয়তো হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা চোখের পলকেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ। প্রাকৃতিক নিসর্গ আর তুলোর মত মেঘের পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ির খেলা দেখতে সাজেক আদর্শ জায়গা। দিন কিংবা রাত সাজেক যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত, সময় গড়ায় তবু সাজেক পুরাতন হয় না। সাজেকে গেলে অবশ্যই সকালে ভোরের সময়টা মিস করবেন না। মেঘের খেলা আর সূর্যোদয়ের আলোর মেলা এই সময়েই বসে। এই জন্যে আপনাকে খুব ভোরে উঠে চলে যেতে হবে হ্যালিপ্যাডে, সেখান থেকেই সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় দেখা যায়। বিকেলের কোন উঁচু জায়গা থেকে সূর্যাস্তের রঙ্গিন রূপ আপনাকে বিমোহিত করবেই। আর সন্ধ্যার পর আকাশের কোটি কোটি তারার মেলা, আপনার প্রাণ জুড়িয়ে দিবে নিমিষেই। আকাশ পরিস্কার থাকলে দেখা পাবেন মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের।
ভৌগলিক তথ্য
সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। এর আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও যাতায়াতের সুবিধার কারণে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি জেলা দিয়েই সাজেকে আসা যাওয়া করেন। খাগড়াছড়ি সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার।
সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা এক হাজার ৮০০ ফুট। এরা লুসাই আদিবাসী। লুসাই ছাড়াও এখানে ত্রিপুরা ও পাঙখোয়াদেরও কিছু বসতি চোখে পড়ে। সাজেক এর রুইলুই পাড়া থেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন লুসাই ঝর্ণা। স্থানীয় গাইড লুসাই ঝর্ণা বললেও এটি কমলক ঝর্ণা নামেই বেশি পরিচিত। তবে স্থানীয়দের অনেকের কাছেই এটি পিদাম তৈসা বা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিত।
সাজেক এর শেষ গ্রাম কংলক পাড়া। কংলক পাড়া সাজেকের সবচেয়ে উঁচু পাড়া । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত। কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় যেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি।
কখন যাবেন
সাজেকের রূপের আসলে তুলনা হয় না। সারা বছরই বর্ণিল সাজে সেজে থাকে সাজেক। বছরের যে কোন সময় আপনি সাজেক ভ্রমণ করতে পারেন। তবে বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তে সাজেকের চারপাশে মেঘের খেলা দেখা যায় বেশি। তাই এই সময়টাই সাজেক ভ্রমণের জন্যে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।
যাওয়া-আসা
সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা হয়ে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজ। তাই প্রথমেই আপনাকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে সৌদিয়া, শ্যামলি, শান্তি পরিবহন, এস আলম, ঈগল ইত্যাদি বাসে করে যেতে পারবেন। নন এসি এইসব বাস ভাড়া ৫২০ টাকা। এসি বাসে যেতে চাইলে বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহনে ৭০০ টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন। এছাড়া শান্তি পরিবহন বাস সরাসরি দীঘিনালা যায়, ভাড়া ৫৮০ টাকা। ঢাকায় গাবতলী, কলাবাগানসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে এইসব পরিবহণের কাউন্টার। ছুটির দিন গুলোতে যেতে চাইলে আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখা ভালো নয়তো পড়ে টিকেট পেতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি/চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। যাওয়া আসা সহ দুইদিনের জন্যে ভাড়া নিবে ৮,০০০-১০,০০০ টাকা। এক গাড়িতে করে ১২-১৫ জন যেতে পারবেন। তবে লোক কম থাকলে অন্য কোন ছোট গ্রুপের সাথে কথা বলে শেয়ার করে গাড়ি নিলে খরচ কম হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। রিজার্ভ ভাড়া লাগবে ৪০০০-৫০০০ টাকা। তবে পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তা বলে সিএনজি দিয়ে ভ্রমণ না করাই ভালো। অথবা ৪৫ টাকায় বাসে বা ১০০ টাকায় মোটরসাইকেলে করে পৌঁছাতে হবে ২৩ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালায়। দীঘিনালা থেকে ছয় থেকে সাত হাজার টাকায় জিপ (স্থানীয়ভাবে চান্দের গাড়ি নামে পরিচিত) ভাড়া করে সরাসরি চলে যাওয়া যায় সাজেকে। এছাড়া মানুষ কম হলে তিন হাজার টাকায় সি.এন.জি অটোরিকশা ও এক হাজার থেকে ১২ শ টাকায় মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায় সাজেক।
দীঘিনালায় একটি সেনানিবাস রয়েছে যেখান থেকে বাকি রাস্তাটুকু যেতে হবে সামরিক বাহিনীর এসকোর্টে। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হয় সকাল ১০ টা থেকে ১১টার মধ্যে। তাই ঐ সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। সকালের এসকোর্ট মিস করলে অপেক্ষা করতে হবে বিকাল অবধি। যে কোন গাড়ি ঠিক করার আগে কি দেখবেন, কি করবেন এইসব ভালো মত কথা বলে নিবেন। দিঘীনালা পৌঁছে হাতে সময় থাকলে হাজাছড়া ঝর্ণা ঘুরে দেখে আসতে পারবেন।
দিঘীনালা থেকে যাবার পথে বাগাইহাট, মাচালং বাজার, তারপর রুইলুই পাড়া হয়ে পৌঁছে যাবেন সাজেকে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে সময় লাগবে দুই থেকে তিন ঘন্টা। এই সময় আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলার সময়টুকু আপনার জন্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। চারদিকে সারি সারি পাহাড় আর সবুজের সমারোহ আপনাকে ভুলিয়ে দেবে পথের সব ক্লান্তি।
চট্রগ্রাম থেকেও সাজেক যেতে পারেন। চট্রগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি বা দিঘীনালা হয়ে সাজেক যেতে পারবেন। চট্রগ্রামের কদমতলী থেকে বিআরটিসি এসি বাস সারাদিনে ৪টি বাস চলাচল করে, ভাড়া ২০০টাকা । এছাড়া অক্সিজেন মোড় থেকে ১ ঘণ্টা পর পর শান্তি পরিবহনের (ভাড়া ১৯০টাকা) বাস চলাচল করে। চট্রগ্রাম থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।
খাগড়াছড়ি দিয়ে সাজেক যাওয়া সহজ হলেও রাঙ্গামাটি থেকেও সাজেকে যাওয়া যায়। রাঙ্গামাটি থেকে নৌপথ এবং সড়কপথ উভয়ভাবেই বাঘাইছড়ি যাওয়া যায়। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ১০টা ৩০ এর মধ্যে লঞ্চ ছাড়ে যেতে আর সময় লাগে ৫-৬ ঘন্টা। জনপ্রতি ভাড়া ১৫০-২৫০ টাকা। রাঙ্গামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ৮ টা ৩০ ঘটিকার মধ্যে বাস ছাড়ে, জনপ্রতি ভাড়া নেয় ২০০ টাকা। সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা। এছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকেও সরাসরি বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব। বাঘাইছড়ি থেকে জীপ (চাদেঁর গাড়ি) অথবা মোটর সাইকেলে সাজেক ভ্যালীতে পৌঁছানো যায় এতে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৩০০/-টাকা।
কোথায় কোথায় ঘুরবেন
যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তারা সাজেক এর অপরুপ সৌন্দর্য্য দেখা ছাড়াও দেখে আসতে পারেন কমলক ঝর্ণা, সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন সুন্দর এই ঝর্ণাটি। বুনো রাস্তা আর ৮০-৮৫ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে আর উঠতে হবে অনেক খানি পথ। তারপর ঝিরিপথ পাবেন, ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে আবার উঠতে হবে কিছুটা, এইভাবে আরো কিছুক্ষণ ট্রেক করার পর পৌঁছে যাবেন ঝর্ণার কাছে। ঝিরিপথটিও অসম্ভব সুন্দর, অ্যাডভেঞ্চারটি ভালো লাগবে আশা করি। রাস্তাটি বর্ষার সময় খুব পিচ্ছিল থাকে তাই খেয়াল রাখবেন চলার সময়। গাইড রুইলুই পাড়া থেকে ঠিক করে নেবেন, ঝর্ণার কথা বললেই হবে, ৩০০-৩৫০ টাকা নেবে।
সাজেক থেকে ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা , দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন । একদিনে এই সব গুলো দেখতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে পড়বেন ।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে আপনি ঘুরতে পারবেন রিসং ঝরনা এবং আলুটিলা গুহা । সিএনজি বা বাসেই চলে যেতে পারেন এই দুই স্পটে । চাইলে চান্দের গাড়ীর সাথে এভাবে রিজার্ভ করতে পারেন যে সাজেক থেকে ফেরার দিন খাগড়াছড়ি, আলুটিলা, রিসং ঝর্ণা, ঝুলন্ত ব্রীজ এগুলো ঘুরিয়ে দেখাতে হবে সেক্ষেত্রে গাড়ীর রিজার্ভ খরচ এক থেকে দেড় হাজার টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে।
খাগড়াছড়িতে রিসং ঝর্ণা ,আলুটিলা ,হাজাছড়া ঝর্ণা আর সাজেক এগুলো ছাড়াও আপনি অসাধারণ কিছু ঝর্ণা দেখতে পারবেন সেগুলো হলো সিজুক ১,সিজুক ২,তৈদুছড়া ১,তৈদুছড়া ২ ।
চারটার মাঝে সিজুক ১,২ এই দুইটা ঝর্ণা একদিকে আর তৈদুছড়ার দুইটা আরেকদিকে। তবে অবশ্যই অবশ্যই সিজুকের ঝর্ণাগুলোই সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা। তবে সিজুক ১ এবং দুই ঝরনাতে বর্তমানে নিরাপত্তার কারণে যাওয়া যায়না ,সেনাবাহিনীর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে সব ঠিকঠাক থাকলে খুলে দিতে পারে যেকোন সময়।
সিজুক বা তৈদুছড়ার ঝর্ণাগুলো দেখতে আপনাকে প্রথমেই দিঘীনালা যেতে হবে সেখান থেকে গাইড নিয়ে তারপর ঝর্ণাগুলোতে যেতে হবে । চাঁন্দের গাড়ীর প্রয়োজন হতে পারে সেই গাড়ী আপনাকে সাজেক যাবার দিকের রাস্তার দিকে নিয়ে যাবে তারপর এক জায়গায় নামিয়ে দিবে সেখান থেকে আপানকে ট্রেকিং করে ঝর্ণাতে যেতে হবে ,প্রায় এক দেড় ঘন্টা লাগতে পারে। তৈদুছড়াতে যেতে চাঁন্দের গাড়ীর প্রয়োজন নেই। সর্বোচ্চ এক ঘন্টা হাটতে হবে দীঘিনালা থেকে।
দীঘিনালাতে থাকার প্রয়োজন হতে পারে সেক্ষেত্রে আপনি দীঘিনালা গেস্ট হাউজে থাকতে পারেন, এটি দীঘিনালা শহরের বাস স্ট্যান্ডের উল্টো পাশে অবস্থিত । এটি দীঘিনালার আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে একটু মানসম্মত । এখানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে রুম নিয়ে থাকা যাবে ।
দীঘিনালার চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার রাজ – ০১৮২০৭৪১৬৬২, ০১৮৪৯৮৭৮৬৪৯ । শিবু- ০১৮২০৭৪৬৭৪৪ ।
কোথায় থাকবেন
সাজেকে থাকার জন্যে ৪০-এর অধিক রিসোর্ট ও আদিবাসী কটেজ আছে। এক রাতের জন্যে জনপ্রতি ২০০টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পড়বে। ছুটির দিনে যেতে চাইলে মাসখানেক আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখা ভালো, নয়তো ভালো রুম বা কটেজ পাবার নিশ্চিয়তা কম। আর কম দামে থাকতে চাইলে আদিবাসী কটেজ গুলোতে থাকতে পারেন। এছাড়া বর্তমানে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নতুন নতুন অনেক কটেজ হয়েছে। সাজেকের সব কটেজ থেকেই মোটামুটি সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়।
সাজেকের সেরা কিছু রিসোর্ট ও যোগাযোগের উপায়
মেঘ মাচাং : সুন্দর ভিউ ও তুলনামূলক কম খরচে থাকার জন্যে মেঘ মাচাং রিসোর্ট অনেকের পছন্দ। অনেকের কাছে এটি সাজেকের সেরা রিসোর্টের স্বীকৃতি প্রাপ্ত। এখানে আছে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। মেঘ মাচাং-এ পাঁচটি কটেজ আছে । ভাড়া ২৫০০-৩০০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০১৮২২-১৬৮৮৭৭। এক রুমে চারজন থাকতে পারবেন ।
সাজেক রিসোর্ট : বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট সাজেক রিসোর্ট। এই আর নন এসি রুম গুলোর ভাড়া ১০,০০০ – ১৫,০০০ টাকা। আছে খাবারে ব্যবস্থা। সেনাবাহিনিতে কর্মরত বা প্রথম শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যে ডিসকাউন্ট রয়েছে। যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারেঃ ০১৮৫৯০২৫৬৯৪ / ০১৮৪৭০৭০৩৯৫। ওয়েবসাইট: http://rock-sajek.com
রুন্ময় রিসোর্ট : মোট ৫ টি রুম আছে। সাজেকে অবস্থিত। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। আছে তাবুতে থাকার ব্যবস্থা। নিচ তলার রুম ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। আছে তাবুতে থাকার ব্যবস্থা, প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগ: ০১৮৬২০১১৮৫২। ওয়েবসাইট: http://rock-sajek.com
জুমঘর ইকো রিসোর্ট : থাকার জন্যে কাপল রুম এবং শেয়ার রুম দুটাই আছে। ভাড়া ২০০০-৩০০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০১৮৮৪-২০৮০৬০ ।
লুসাই কটেজ : কাপল রুম, ডাবল বেড সহ আছে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। ভাড়া ২০০০-৩০০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০১৬৩৪১৯৮০০৫ ।
রক প্যারাডাইজ কটেজ : আছে ৪, ৬, ৮ জন থাকার কটেজ। ভাড়া ২৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০১৮৪২৩৮০২৩৪ ।
মেঘ পুঞ্জি : এটি সাজেকের আরেকটি সেরা কটেজ হিসেবে জনপ্রিয়। আছে ৪টি কটেজ, প্রতিটিতে ৩-৪ জন থাকা যাবে। ভাড়া ২৫০০-৩০০০টাকা। যোগাযোগঃ ০১৮১৫৭৬১০৬৫ ।
রিসোর্ট রুংরাং : রুংরাং রিসোর্টে আছে ৬টি ডাবল এবং ৪টি কাপল রুম। ভাড়া ডাবল- ২৩০০ টাকা, কাপল- ১৮০০ টাকা। উইক ডে তে রুম ট্যারিফের উপর ২০% ডিসকাউন্ট। যোগাযোগ ০১৮৮৪৭১০৭২৩, ০১৮৬৯৬৪৯৮১৭ ।
জলবুক কটেজ: এটি কংলাক পাড়ার একটু আগে অবস্থিত। ভাড়া ২০০০-২৫০০ টাকা । যোগাযোগঃ ০১৮২০-১৮০৭৫০ / ০১৫৫৮ – ১৮০৭৫০ ।
আলো রিসোর্ট: সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়ায়। ৬ টি রুমের মধ্যে ডাবল রুম ৪ টি (২টি বেড)। ভাড়া ৭০০-১০০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০১৮৬৩৬০৬৯০৬ ।
ইমানুয়েল রিসোর্ট: এটিতে ৮ টি রুম আছে। সাধারণ মানের একসাথে অনেকেই থাকার মত রিসোর্ট। এক রুমে ৪-৮জন থাকতে পারবেন। ভাড়া ৭০০-১৫০০টাকা। যোগাযোগ: ০১৮৬৫৩৪৯১৩০, ০১৮৬৯৪৯০৮৬৮।
সারা রিসোর্ট: রুইলুই পাড়ার কারবারী এই রিসোর্টের মালিক। ছোট টিনের তৈরি ৪টি রুম আছে, ভাড়া ১০০০টাকা। প্রতি রুমে ২জন থাকা যাবে। যোগাযোগ: ০১৫৫৪৫৩৪৫০৭।
আদিবাসী ঘর: এ ছাড়া আরও কম খরচে থাকতে চাইলে আদিবাসিদের ঘরেও থাকতে পারবেন। জনপ্রতি ১০০-৩০০ টাকায় থাকা যাবে। ফ্যামিলি বা কাপল থাকার জন্যে আদর্শ না হলেও বন্ধু বান্ধব মিলে একসাথে থাকা যাবে।
কোথায়, কি খাবেন?
সাজেকে রুইলুই পাড়ায় মূল রাস্তার দুপাশেই রয়েছে বেশকিছু খাবারের হোটেল, যেখানে তবে লোক বেশি হলে আগে থেকে খাবারের অর্ডার করে রাখতে হয়।
এছাড়া সব রিসোর্টেও খাবার ব্যবস্থা আছে তাই আগেই রিসোর্টগুলোতে বলে রাখলে একই খরচে পছন্দমত রান্না করে দেবে। মেনু হিসেবে পাবেন ভাত আলুভর্তা, মুরগীর মাংস ইত্যাদি। এছাড়া আদিবাসী ঘরেও খাওয়া যায়, আগে থেকেই বলে রাখতে হবে কি খাবেন, তাহলে রান্না করে দিবে।
সাজেকে আদিবাসী ও বাঙ্গালি দুই রকমের হোটেলে খাবার ব্যবস্থা আছে। ইচ্ছা করলে আদিবাসী হোটেলগুলো থেকে ব্যাম্বু চিকেনের স্বাদ নিয়ে আসতে পারেন । তবে যারা হালাল খাবার খুজছেন তাদের হয় খাগড়াছড়ি থেকে হালালভাবে জবাই করে মুরগি নিয়ে যেতে হবে না হয় নিজেদের জবাই করে দিতে হবে। তবে বাঙালি হোটেল খাওয়া দাওয়া করলে সে চিন্তা আপনাকে করতে হবেনা। তবে মুরগি ছাড়া ডিম, ডাল, ভর্তা সহ অন্যান্য ননভেজ খাবারও পাওয়া যায় সাজেকে। চাইলে রাতে বার বি কিউও করতে পারবেন। তবে যেখানেই খান না কেন আপনাকে আগে থেকে অবশ্যই অর্ডার করে রাখতে হবে খাবারের কথা। বিশেষ করে সাজকে পৌঁছানোর দিন দুপুরের খাবারাটা খাগড়াছড়ি থেকেই অর্ডার করে গেলে সুবিধে হয়। আপনার জীপ চালকেরই মাধ্যমেই তার পরিচিত কোন দোকানে খাবারের অর্ডার করিয়ে নিতে পারেন। প্রতি বেলায় ১০০ থেকে ২০০ টাকায় খেতে পারবেন অনায়াসে। সাজেকে খুব সস্তায় পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি ফল পাবেন চেখে দেখতে ভুল করবেন না।
সাজেক ভ্রমণ টিপস
- সাজেকে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সবকিছু চলে সোলারে পাওয়ারে। অনেক কটেজে সোলার ব্যবস্থা থাকলেও চার্জ হতে বেশি সময় লাগে আর
সহজলভ্যও নয়। তাই আগে থেকেই মোবাইল ফুলচার্জ দিয়ে নিয়ে যাওয়া ভাল। সাথে পাওয়ার ব্যাঙ্ক থাকলে তো সোনায় সোহাগা।
- সাজেক রবি ও টেলিটক ছাড়া অন্য অপারেটরর নেটওয়ার্ক নেই। তাই সাথে নিতে হবে এই দুই অপারেটরের যেকোন একটি সিম।
- সাজেক যাবার পথ অনেক আঁকাবাঁকা ও উঁচু নিচু, তাই এই পথ বিপদজনক। জীপের ছাঁদে ভ্রমনে সতর্ক থাকুন।
- সাজেক যেতে গাইডের প্রয়োজন হয় না।
- আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নিয়ে নিন। অনুমতি ছাড়া ছবি তুলবেন না।
- আদিবাসী মানুষজন সহজ সরল তাদের সাথে ভদ্র ব্যবহার করুন ও তাদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান।
- ছুটির দিনে গেলে ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই (মাস খানেক) রুম বুকিং দিয়ে রাখুন।
- যাবার পথে কয়েক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প আছে। সেখানে ভ্রমণকারী সদস্যদের কিছু তথ্য জমা দিতে হয়। নিরাপত্তার সার্থে তাদের সহযোগিতা করুন। সাথে করে নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি রাখুন।
- দুই তিন দিনের জন্যে গেলে গাড়ি বসিয়ে না রেখে, শুধু যাবার জন্যে গাড়ি ঠিক করুন, ফিরে আসার সময় অন্য কোন গাড়িতে আসুন কিংবা দিঘীনালা থেকে ফোন করে গাড়ি পাঠিয়ে ফেরত আসতে পারবেন।
বিন্দাস ট্রাভেল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রেদওয়ান খান জানালেন, সাজেকের যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো পর্যাপ্ত গাড়ি নেই এবং যখন ইচ্ছা যাওয়া যায় না, এছাড়া কেউ যদি একা যেতে চায় তার পক্ষেও যাওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে সলো ট্রাভেলার বা দুইতিনজন ঘুরতে যেতে চাইলে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়। সেনাবাহিনী এগিয়ে আসলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সাজেকে পানির সমস্যা একটি ভয়াবহ সমস্যা। রিসোর্টগুলোতে পানির কারণে প্রচুর ভাড়া দিতে হয়, তাই সরকারের পক্ষ থেকে যদি পানি সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় তাহলে পর্যটকরা সহজে ও কম খরচে ঘুরতে পারবেন।
স্বপ্নযাত্রা ট্রাভেল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বিল্লাহ মামুনের মতে, সাজেকের মেঘ, পাহাড়ের অপরুপ সৌন্দর্য্য এবং চান্দের গাড়িতে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার অভিজ্ঞতা ক্রমে ক্রমে ভ্রমণপ্রিয় মানুষদেরকে সাজেকে বারবার টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে অপিকল্পিত কটেজ তৈরী হচ্ছে সাজেকে। সঠিক সরকারি নজরদারি ও তত্বাবধান না থাকায় নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং লাগামছাড়া কটেজ ভাড়া, খাবারের দাম বাড়ানোর ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান খুব জরুরী।
বিল্লাহ মামুনের মতে, পর্যটকদের জন্য সাজেকের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সরকারি উদ্যোগ খুবই জরুরী। এছাড়া সাজেকে কোন ভাল মানের পাবলিক টয়লেট নেই, যার ফলে অনেক সময় পর্যটকরা সমস্যায় পড়েন।
ট্রাভেল বাংলাদেশের কো-ফাউন্ডার দীপ কুন্ড জানান, বর্তমানে বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক ছাড়া থাকা প্রায় অসম্ভব। সাজেকে পর্যটকরা বিদ্যুৎ পান না, সব মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক পান না। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে বিল্লাহ মামুন ও দীপ কুন্ড উভয়ে সাজেকে সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন করা যেতে পারে বলে মতামত জানান।
সকলেই মনে করেন, সাজেক যেহেতু দেশের পর্যটন ক্ষেত্রে একটি বড় সম্পদ, এই সম্পদকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখার জন্য এবং এই জায়গাটির সৌন্দর্য্য সংরক্ষণ করার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং খুব দ্রুত কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
