- রোদেলা নীলা #
আষাঢ় মাসের বৃষ্টি সে বছর জেকে বসেছিল শহরে ; মনে মনে ভেবে নিলাম এতো দিনের পরিকল্পিত ইচ্ছে এবার বাস্তবায়নের সময় এসেছে । হুম চা বাগানের বেষ্টনি ঘেরা রাজপ্রাসাদ ‘ দি প্যালেস ‘ দেখার শখ ছিল বহুদিনের । বৃষ্টির সেই দিন গুলো আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল ।
কিন্তু ডাকলেইতো আর হবে না ,পাঁচ তারকা হোটেল রিসোর্ট বলে কথা ; যেতে হবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই । এক রাত হলেও প্যালেসে বসে মাথার ওপর খোলা আকাশ দেখবার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের ।
ঢাকার উত্তরায় প্যালেসের কর্পোরেট অফিসে ফোন দিয়ে আমার ইচ্ছের কথা জানালাম ,আরো জানালাম এই ভয়ংকর সুন্দর রাজপ্রাসাদ নিয়ে ফিচার করতে চাই । মার্কেটিং ম্যানেজার মিস্টার ওয়াহিদ ভাই আমাকে ইমেইলে আমার পরিচয়সহ যাবতীয় ইচ্ছে এবং প্রস্তুতির কথা লিখে জানিয়ে দিতে বললেন , আমি তাই করলাম আর ঠিক সেই বিকেলেই আমি অনুমতি পেয়ে গেলাম রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করার ।
অনুমতি যেহেতু পাওয়াই গেল তবে আর দেরি করে লাভ নেই । তড়িঘড়ি ব্যাগ গুছিয়ে হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম পরদিন ভোরেই , কিন্তু হবিগঞ্জ শহরে রাত্রি যাপন করে লাভ হবে না ,কারন বাহুবল হচ্ছে ওখান থেকে আরো চল্লিশ মিনিট পথ আগে । তাই সিদ্ধান্ত নিলাম শৃমঙ্গল থেকে যাবার । এর আগে আমি বহুবার শৃমঙ্গল থেকেছি ,তাই হোটেল গুলো অপরিচিত নয় । শহরের মাঝ খানেই হোটেল প্লাজা , ছিমছাম নিরিবিলি পরিবেশ পেলাম এবং ব্যবস্থাপক নারায়ন চন্দ্র দেব দাদা আমাকে বেশ কিছু পরামর্শ দিলেন প্যালেস যাবার । তার বুদ্ধিই অবশেষে কাজে লাগলো । আমি একটি গাড়ি ভাড়া করে নিলাম আর সংগে নিলাম একজন গাইড ।
শৃমঙ্গল থেকে বাহুবল যেতে আমার সময় লেগেছে প্রায় দু’ঘন্টা । দু’ধারে চা বাগানের সবুজ গায়ে মেখে ছুটে চলেছে আমাদের টয়োটা । কালো গাড়িটা যখন সরু পথ মাড়িয়ে পুটিজুরী বাজার পেরিয়ে বৃন্দাবন চা বাগান ছেড়ে রাজপ্রাসাদের ফটকে তখন কালো জামা পড়া প্যালেসের প্রহরী খাতা হাতে এগিয়ে এলেন ,আমি নিজের নাম বললাম । মুহূর্তে খুলে গেল রাজপ্রাসাদের সদর দরজা-হিং টিং ঝটাং !! সত্যি মনে হচ্ছিল কোন এক বিখ্যাত রাজার বাগান বাড়িতে আমার প্রবেশ ঘটলো , দু’ধারে সাজানো গোছানো বাগানের মাঝে পীচ ঢালা পথ ধরে চার চাকা এগিয়ে চলেছে । আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ,পাশ দিয়ে সাদা রং-এর বাগি কার চলছে । অবাক বিস্ময়ে এই প্রথম দেখলাম এক দালান থেকে অন্য দালানে যাত্রি পৌঁছে দেবার এক অনন্য গাড়ি যার রঙ সাদা ,সামনে একজন চালক আর পেছনে দল বেঁধে অতিথিরা বসে আছেন ।
ঢাকা থেকে মাত্র ২০০ কি. মি. দূরে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাছে এতো নয়নাভিরাম অভিজাত রিসোর্ট বানানো হয়েছে , যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতাম না । ১৫০ একর জমির ওপর নির্মিত এই রিসোর্টে রয়েছে অত্যাধুনিক সমস্ত সুবিধা । সবার হাতেই কালো ওয়াকি টকি ,তার মানে সূতো ছিঁড়ে যাবার কোন সম্ভাবনাই নেই ।
যারা অবকাশ যাপনের জন্য থাইল্যান্ড-ব্যাংকক –দুবাই বেছে নেন তাদের জন্য দি প্যালেস একটি উপযোগি জায়গা যেখানে তারা উন্নত দেশের সব সুবিধা পাবেন । প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা পাঁচ তারকা হোটেল ‘দি প্যালেস রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা ‘ সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ।
আবাসনের জন্য এখানে রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় পাঁচ তারকা সুবিধা সমেত পাখিডাকা , ছায়ায় ঘেরা ২৩টি ভিলা । তার মধ্যে ১ বেডরুমের ৮টি বাংলোর প্রতি রাতের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা । ২ বেডরুমের ৮টি বাংলোর ভাড়া প্রতি রাতে ২৫ হাজার টাকা। ৩ বেড রুমের ৪টি বাংলোর ভাড়া প্রতি রাতে ৩৫ হাজার টাকা। ২টি প্রেসিডেন্সিয়াল ভিলার প্রতি রাতের ভাড়া ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এগুলোতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে , ভিলা গুলো একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব থাকাতে প্রাইভেসি রয়েছে আবার নিজেস্ব ওয়ার্লেস থাকাতে প্রয়োজনের সময় সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে । ভিলা দু’টির নামকরণ আমেরিকায় মুক্তিযুদ্ধের তহবিল গঠনে কাজ করা পন্ডিত রবি শংকর ও জর্জ হ্যারিসনের নামে করা হয়েছে ।
আমার গাড়ি যখন প্রধান টাওয়ারে থামলো তখন ভীষন সম্ভাসনে ভূষিত হলাম । প্যালেসের মহা ব্যবস্থাপক জনাব জোসেফ লিটন গোমস এবং হিউম্যান রিসোর্সের সহকারি ব্যবস্থাপক জনাব জাকির আহমেদ আমাকে বেশ আতিথিয়তা করলেন । ডাইনিং রুমে বসে আনারসের শরবত পান করতে করতেই আমার চোখ একদম চঞ্চল হয়ে উঠলো , এ যেন নিপুন হাতে সাজানো খাবার ঘর । গল্প করার ছলে জেনে নিলাম এই রাজপ্রাসাদ গড়ার পেছনে কাদের স্বপ্ন কাজ করছিল । সিলেট ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন কয়েকজন বন্ধু একদিন আড্ডাচ্ছলেই প্ল্যান করেছিলেন কিছু একটা করার , সেই অনেক গুলো ইচ্ছের মধ্যে একটি ইচ্ছে আটকে যায় আর সেটি হচ্ছে – এই ছোট ছোট টিলার ওপর পাঁচ তারকা মানের রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলা । সেই পরিকল্পনাকারিদের পদবিসহ নামগুলো এবার জেনে নেই ঃ জনাব কামাল হোসেন , চেয়ারম্যান, জনাব আফিফুর রহমান , ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আব্দুস সালাম ,পরিচালক, আব্দুল আওয়াল ,পরিচালক, আব্দুল আহমেদ ,পরিচালক । ২০১৪ সালের কোন এক স্বর্নালি দিনে দি প্যালেসের উদবোধন ঘটে ,সেই থেকে দর্শনার্থি পর্যটকদের আকাঙ্ক্ষার জায়গা হয়ে গেছে এই রাজপ্রাসাদ ।
প্রধান টাওয়ারের বহুতল ভবনে থাকার জন্য আছে ১০৭টি রুম । আর রুমগুলো সাজানো হয়েছে প্রাসাদ বলতে যা বুঝায় তার স্বার্থকতা নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন তার সব দিয়ে। রুমগুলোর ভাড়াও আলাদাভাবে নির্ধারণ করা। এক্সিকিউটিভ কিং ৫৫টি রুমের ভাড়া ১০ হাজার টাকা করে। সিগনেচার কিং ২২টি রুমের ভাড়া ১১ হাজার টাকা করে। আর সিগনেচার টুইন ৩০ রুমের ভাড়া ১২ হাজার টাকা করে।
প্যালেসে রয়েছে চারটি বড় সভাকক্ষ , ৪শ’জনের ব্যাংকুয়েট হল , ছোটদের খেলার জায়গা তিনটা , বিলিয়ার্ড , ফুটবল , বাস্কেটবল , ২টি টেনিস কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট , ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস এর সুবিধা , দুটি জিম , রিমোট কন্ট্রোল কার রেসিংয়ের ব্যবস্থা। চোখ জুড়ানো দুটো সুইমিংপুল আছে, (১টি পুরুষ আর একটি মহিলা), একদিক থেকে জলধারা এসে পাহাড়ের গা বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে , এটাকে বলা হয় ইনফিনিটি পুল। এর চতুর্দিকে সবুজ ছন গাছগুলোও সিলেটের ঐতিহ্য । দু’টো সিনেপ্লেক্স এর মধ্যে ১টি থ্রিডি ও অন্যটি টুডি। আর স্পা রুমে ঢুকেতো আমার ভীষন লোভ লেগে গেল ,বডিতে তেল দিয়ে বাথ নেবার যে পক্রিয়া তাতে বোধ করি যে কোন বয়সি মহিলাই বেশ আরাম পাবেন । শরীর চর্চা করবার জন্য রয়েছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি , তার মানে হচ্ছে এই রাজপ্রাসাদে থাকলে কোন কিছুর অভাব হচ্ছে না একদমই।
যতো এগুচ্ছি দু’ধারে দু’ দুটো ঝুলন্ত সেতু নজর কেড়ে নিল । জুম্মাবার হওয়াতে আমার সুবিধেই হয়েছে , সবাই নামাজে চলে গেছেন আর আমি ঢংঢাং করে ছবির মডেল হচ্ছি । মসজিদটিও দেখার মতোন , আমি ছবি তুলে নিলাম মন মতো । এখানে দু’টো নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকায় নেই কোন ভোগান্তি । রোদ লাগলেই ভেতরে ঢুকে এসির বাতাস খেয়ে নিচ্ছি ,বিদ্যুৎ চলে যাবার কোন প্রশ্নই উঠছে না । ‘ হেলিকপ্টার যারা আসবেন তাদের নামার হেলিপ্যাড আছে তিনটা । প্রত্যেকটা জিনিস আলাদা আলাদা করে বিশ্লেষন করবার মতোন নিপূন হাতে তৈরি ।
৫টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে প্যালেসে । এগুলো হলো : অলিভ রেস্টুরেন্ট , রেভ্যুলেশন ক্যাপে , নস্টালজিয়া , সাইগন ও সিসা লাউঞ্জ । অ্যারাবিয়ান খাবার সিসা ইতালিয়ান , মেক্সিকান , ইন্ডিয়ান , কন্টিনেন্টাল , ভিয়েতনামি খাবার এবং আন্তর্জাতিক বুফেতে মিলে সবধরনের খাবার । দুপুরের খাবারে জনপ্রতি ব্যয় হবে ১২৫০+ আর রাতের খাবারে জনপ্রতি ব্যয় হবে ১৫০০+। এখানে জানিয়ে রাখতেই হয় যে ওদের এই খরচের সাথে কোন পানীয় ও পানি যুক্ত নয়।
আমাকে দি প্যালেস ঘুরে দেখাবার জন্য সালমানের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল , ও আমাকে নিয়ে উঠে গেল একদম জিমের ছাদে ,যদিও এই সুযোগ সবার ভ্যাগ্যে জোটে না ; ওখানে দাঁড়িয়ে প্রায় পুরো প্যালেস দেখা যায় ।ওপর থেকে বাচ্চাদের খেলার জায়গা আর ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে কীযে ভালো লাগছিল সেটা লিখে বোঝানো সম্ভব নয় । আমি দৌঁড়ে নেমে সাদা মোড়ায় বসে পড়লাম , এতো অদ্ভূত সুন্দর ছবি তোলার জায়গা আর দ্বিতীয়টি নেই ,ক্যামেরার ফ্ল্যাশ চলতেই থাকলো ।
আমার বিশ্রামের জন্য একটি রুম দেওয়া হয়েছিল ,সেই রুমে ঢুকেতো আমি মহা খুশি ।লিখবার জন্য আবার চেয়ার টেবিল আছে । ইশ, এখানে বছরের পর বছর থাকতে পারলেতো ক’খানা উপন্যাস যে লিখে ফেলতাম কে জানে ! থাক , এতো দামী জায়গায় এতো লোভ করতে নেই । আমি নরম বিছানায় খানিক শরীর এলিয়ে নিলাম ,মাথার কাছের পর্দাটা সড়িয়ে দেখলাম এক সহস্র সবুজ আমাকে ঘিরে আছে জানালার ওই পারে ।
বিকেল প্রায় গড়িয়ে এসেছে ,ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে । রাজার প্রাসাদে ঘুরতে এসেছি , একটু বৃষ্টির ছাট না নিলেই নয় । তাই বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম ; ইতিমধ্যে অনেক অতিথি ভিজে নিচ্ছেন বর্ষার জলে ,আমি কিছুক্ষন হাত বাড়িয়ে ভিজলাম আর প্রত্যক্ষ করলাম এই আবহাওয়াতেও সাদা বাগিতে করে ঠিক ঠাক অতিথিদের তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে ।আমার হাতে প্যালেসের ফুল ওয়াই ফাই ,এই বাদলা দিনে তাই ভিডিও শেয়ার করতে ভুল করলাম না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । কে জানে , এমন দৃশ্য আর কোথাও পাবো কীনা !
বিকেলে সালমান আমাকে লেকের ধারে নিয়ে গেল । লেকে মাছ ধরা যায় । মাছ ধরার জন্য রয়েছে বড়শি আর আধারের ব্যবস্থা । এক সাথে ৫০ জন এখানে মাছ শিকার করতে পারে , তবে মাছ শিকারের পর তা রান্না করতে যেতে হবে রেস্টুরেন্টে। এর জন্য দিতে হবে আলাদা চার্জ । হাঁটার জন্য রয়েছে ৭ কিলোমিটার ট্রেইল । বাই-সাইকেল চালানোর জন্যও ট্রেইল রয়েছে। আর হাঁটা চলার সময় পুরো এলাকা জুড়ে সাউন্ড সিস্টেমে মিষ্টি মধুর সঙ্গীত উপভোগ করা যায় । যতো দূরেই যাচ্ছি ওয়াইফাই সুবিধা পাচ্ছি পুরো এলাকাজুড়ে।
প্যালেসে রয়েছে সব ধরনের মৌসুমী ফলের গাছ। অতিথিদেরকে এই ফল আপ্যায়ন করানো হয়। আর সব ধরনের সবজি চাষ করা হয় কমপ্লেক্সের ভিতরে। ফলে এখানে নেই কোনো ভেজাল খাবার। সেখানে রয়েছে ২টি ট্যারেস । একটি হল ফাউন্টেইন ভিউ ট্যারেস আর অপরটি হল টি-গার্ডেন ভিউ ট্যারেস। পার্কিং জোনে রাখা যায় ৮০টি গাড়ি। আর অতিথিদের সেবা করার জন্য সেখানে কর্মরত রয়েছেন ২৯০ জন কর্মী। অতিথিদের যাতে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য দর্শনার্থীদেরকে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয় না। এমনকি রেস্টুরেন্ট ও সিনেপ্লেক্সেও বাহিরের অতিথির প্রবেশ নিষিদ্ধ।
প্যালেসে ঘুরতে হলে আপনাকে কমপক্ষে একরাত ওইখানে থাকার জন্য রুম বুকিং দিতে হবে। রুম বুকিংয়ের খরচের সাথে যে যে জিনিসগুলো ফ্রি পাবেন : দু’জনের জন্য সকাল বেলার ব্যুফে নাস্তা (৬০-৭০টি আইটেম থাকে, সকাল ১০:৩০ পর্যন্ত যত ইচ্ছা খান)। পাচঁ বছরের নিচে বাচ্চা হলে সে ফ্রী। পাঁচ তারকা মানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম যেখানে পাবেন ২ লিটার মাম পানি, চা/কফি বানানোর সরঞ্জাম , জুতো , টুথপেস্ট-টুথব্রাশ , সাবান , শ্যাম্পু , ওজন মাপার মেশিন , লোশন , লকার , শাওয়ার ড্রেস , ব্যাগ , পুরো এরিয়ার ম্যাপ , টিভি, কলম , প্যাড , চিরুনী , কটন , শাওয়ার ক্যাপ , লন্ড্রি ব্যাগ এমনকি সুই-সুতো ।
ঢাকা থেকে বাসে , ট্রেনে , গাড়িতে এবং হেলিকপ্টারে আসা যাবে এই প্যালেসে। ঢাকা থেকে সিলেট রুটের যেকোন বাসে উঠে বললেই হবে , হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি বাজারে নামিয়ে দিতে । পুটিজুরি বাজার বলা মাত্র ওরা বুঝবে । বাজারে নেমে যে কোনো সিএনজিকে বলবেন প্যালেস। ভাড়া নিবে ১০০ টাকা । যারা বৃন্দাবন চা বাগানের সরু রাস্তাটা পার হতে অনিরাপদ বোধ করেন তাদের জন্য আলাদাভাবে দি প্যালেস নিরাপদে গাড়ি দিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন , বিশেষ করে দেশের বাইরের অতিথিদের ।
দি প্যালেসে যারা কর্মরত আছেন তাদের প্রায় সবাই দুবাই থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত , তাই তাদের হাঁটা চলাতে দারূন প্রফেশনালিজম মিশে আছে । আর নিরাপত্তা নিয়ে এখানে ভাব্বার কোন অবকাশ নেই ,কারন এই কাজে যারা নিয়োজিত তারা সেনাবাহিনী থেকে ট্রেনিং করা অবসরপ্রাপ্ত অফিসার । ভাবছেন কেও যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে কী হবে ? সেই ব্যাবস্থাও আছে , প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা দেবার জন্য দি প্যালেসে সার্বক্ষনিক ডাক্তার রয়েছে । সুতরাং , বাংলাদেশের মতোন একটি উন্নয়নশীল দেশে এক সাথে এতো সুবিধা নিয়ে অবকাশ যাপন সুযোগ আর কোথাও নেই এটি নিঃ সন্দেহে বলা যেতেই পারে ।
সন্ধ্যা নেমে এলে লিটন গোমস ভাই নাস্তার ব্যবস্থা করলেন , শুধু গ্রিন টি পান করতে চেয়েছিলাম । তিনিতো প্রায় বিশ পদের ফ্রুট কেক নিয়ে হাজির , আমিযে কোনটা রেখে কোনটা খাই ; চিন্তায় পড়ে গেলাম । কারন দুপুরে লাঞ্চেই খেয়েছি ১৫ পদ আর কুককে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়েছি তার নিপূণ রন্ধনশৈলির জন্য । চা শেষ করে দো’তলায় উঠে ঝালরবাতির ছবি তুলে নিলাম । রাত বাড়ছে ; আমাকে শহরে ফিরতে হবে । বাইরে এসে পা বাড়িয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম ; রাতের জৌলসে আলোকিত রাজপ্রাসাদ যেন আমাকে অভিবাদন জানালো –‘ তুমি আর একবার এসো এই রাজার প্রাসাদে ।‘ আমি মনে মনে কোন এক রাজপুরির রাজকন্যা হয়ে পুনরায় ঘরে ফেরার আকাংখা নিয়ে চা বাগানে হারিয়ে গেলাম ।
প্রকৃতি সুস্থ হয়ে উঠলে যারা ‘দি লাকজারিয়াস প্যালেস’ ঘুরে আসতে চান তারা কল করবেন এই নম্বরে – ০১৯১০০০১০০০ । আর এক ক্লিকে ভিজিট করুন ওয়েবসাইট –http://www.thepalacelife.com/contactus.php. ফেসবুক পেইজেও যোগাযোগ করতে পারেন –https://www.facebook.com/thepalaceluxuryresort/
আমার ইউটিউব চ্যানেলে এক নজরে দ্যা প্যালেস –https://www.youtube.com/watch?v=U6pp5tgJh_M
লেখক # গল্পকার এবং নাগরিক সাংবাদিক