সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা হচ্ছে বাংলাদেশের একটি রেলওয়ে কারখানা, যেটি ১৮৭০ সালে রংপুর জেলার দারোয়ানী থানার সৈয়দপুরে বর্তমান নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক পরিচালিত হয়। এটি বাংলাদেশের দুটি রেলওয়ে কারখানার মধ্যে একটি (আরেকটি হচ্ছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানা), যেখানে রেলওয়ে কোচ ও ওয়াগনসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ করা হয়। সাথে সাথে এটি দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে কারখানা।
১৮৭০ সালে রংপুরের তাজহাট জমিদার এর দান করা জমির উপর একটি মিটার-গেজ বাষ্পচালিত লোকোমোটিভ বাষ্পচালিত লোকোমোটিভের মেরামত শেড হিসেবে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে মিটার-গেজ ও ব্রড-গেজ কোচ ও ওয়াগন মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ইত্যাদি স্থাপন করে ১৯৫৩ সালে ৮০০ একর জমির উপর কারখানাটিকে সম্পূর্ণ সজ্জিত করা হয়। এতে ২৫টি শপ রয়েছে যেখানে মেরামতের কাজ করা হয় এবং ক্যারিজ ও ওয়াগনের জন্য প্রায় ১,২০০টি স্পেয়ার পার্টস ও টুলস তৈরি করা হয়।
মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি কারখানাটিতে কোচ ও ওয়াগন উৎপাদনও করা হতো। কিন্তু ১৯৯৩ সালে তৎকালীণ সরকার রেল সংকোচন নীতির আওতায় এই উদ্যোগ বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে কারখানাটিতে জনবলের সংকট রয়েছে। ২০২০ সাল অব্দি ২,৮২৫টি অনুমোদিত জনশক্তির বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৯১৮ জন স্টাফ (অফিসারসহ), অর্থাৎ প্রায় ৬৮% জনবল ঘাটতি রয়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক কারখানাটির উত্তর পাশে দার্জিলিং গেটসংলগ্ন এলাকায় ২০ একর জমির উপর কোচ ও ওয়াগন উৎপাদনের জন্য একটি নতুন ক্যারিজ শপ যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়। কারখানাটির আধুনিকায়ন ও নতুন জনবল নিযুক্ত করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়।
২০২০ সালের ২৯ আগস্ট সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। এই জাদুঘরে ইংরেজ আমলে ব্যবহৃত প্রেসিডেন্ট সেলুন কোচসহ বিভিন্ন মালামাল ও যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে। এই কারখানায় তিনটি লোকোমোটিভ সংরক্ষিত রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে একটি ন্যারো-গেজ (৭৬২ মি.মি.) বাষ্পচালিত লোকোমোটিভ সিএস ১৫, যা ১৯৩৬ সালে ইংল্যান্ডের ডব্লিউ. জি. বাগনাল তৈরি করে। এটি ১৮ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা ও ৭ ফুট ৬ ইঞ্চি চওড়া। এটি ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত খুলনা-বাগেরহাট রেলপথে সেবা দিয়েছে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে একটি ব্রড-গেজ (১৬৭৬ মি.মি.) বাষ্পচালিত লোকোমোটিভ এসজিসি-জেড ২৪০, যা ১৯২১ সালে যৌথভাবে ভলকান ফাউন্ড্রি ও কের, স্টুয়ার্ট অ্যান্ড কোম্পানি (উভয়ই ইংরেজ প্রতিষ্ঠান) তৈরি করে। এটি ৫৩ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। এটি ১৯২১ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত পাকশী রেলওয়ে বিভাগে কাজ করেছে। তৃতীয়টি হচ্ছে একটি মিটার-গেজ (১০০০ মি.মি.) ডিজেল হাইড্রোলিক লোকোমোটিভ এমএইচজেড-৮ (৩৩৩২) যা ১৯৮২ সালে হাঙ্গেরির গ্যাঞ্জ-ম্যাভেজ তৈরি করে। এটি ৩৮ ফুট লম্বা। এটি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চলেছে।