পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ জমিদারির উত্তরাধিকারী বনওয়ারীলাল রায় তৎকালীন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরাতে বসতি স্থাপন করেন। কালক্রমে স্থানটির নাম হয় বনওয়ারীনগর। তিনি বজরা নৌকায় করে লাটের খাজনা দেওয়ার জন্য তাড়াশ থেকে ইছামতি নদী দিয়ে ফরিদপুর যেতেন। তাছাড়া বলা হয়, তৎকালে বনওয়ারীনগর এলাকা গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ হওয়ায় তিনি মাঝেমধ্যে এ স্থানে শিকার করতে আসতেন। তখন উনিশ শতকের কোনো একসময়ে তিনি ২০ একর স্থানের ওপর এই রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন।
রাজবাড়িটির স্থান নির্ধারণ, গঠন ও নির্মাণশৈলী দেখে জমিদার বনওয়ারীলাল রায়ের স্থাপত্যশিল্পের গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। চারদিকে দিঘিবেষ্টিত একটিমাত্র প্রবেশপথ দিয়ে রাজবাড়িতে ঢুকতেই হাতি, তিরন্দাজ, ময়ূর ইত্যাদির মূর্তিখচিত চিত্তাকর্ষক তোরণ ও ভবন চোখে পড়ে। গেট দিয়ে ঢুকে ডান দিকে জমিদারের একতলা রাজস্ব অফিস। এ ভবন থেকে প্রায় একশ মিটার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের দোতলা ভবনটি ছিল কয়েদখানা এবং টাকশাল। এখানে মোটা লোহার গ্রিল ও দরজা এবং অন্ধকার কুঠুরি লক্ষ্য করা যায়। ডান পাশে মাটির নিচে লোহার সিন্দুকে রাজস্ব আদায় করে রাখা হতো।
জানা যায়, উপজেলা পদ্ধতি চালুর পূর্বে ভবন সংস্কার করার সময় এই সিন্দুকে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের কাঁচা টাকা অর্থাৎ ধাতব মুদ্রা পাওয়া যায়। এ থেকে প্রায় ৯০ মিটার (৩০০ ফুট) দক্ষিণে জমিদারের মূল বাসভবন। বাসভবন সংলগ্ন দক্ষিণে দিঘির ঘাটের তিনটি ধাপে ছাদবিহীন গোসলখানা ও রানির ঘাট রয়েছে। মূল বাসভবনের অনতিদূরেই দিঘির পাড় সংলগ্ন দক্ষিণমুখী জমিদারের হাওয়াখানা। এর ৯০ মিটার (৩০০ ফুট) পূর্বে লাগোয়া একতলা বিনোদবিগ্রহ মন্দির ও দোতলা নাট মন্দির।
শোনা যায়, সুদূর কলকাতার অভিনেতা ও জমিদাররাও এখানে আসতেন। রাজবাড়ি থেকে ৯০০ মিটার (৩০০ ফুট) পূর্ব দিকে দুধ সাগরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে প্রজাদের শিক্ষানুরাগী করে তোলার জন্য সরোদ গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই রাজবাড়িটি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সংস্কারের ফলে ভবনের কারুকাজ ও নকশা আংশিক পরিবর্তন হয়েছে। কালের সাক্ষী এ জমিদার বাড়িটি দেখার জন্য অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে।
যেভাবে যাবেন
পাবনা শহর থেকে বনওয়ারীনগর ফরিদপুরের দূরুত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিমিটার। পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বাস-মিনিবাসে উপজেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পাবনা থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে এ উপজেলায় পৌঁছানো যায়। এ ছাড়া পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে আতাইকুলা হয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে এখানে পৌঁছানো যায়। বাঘাবাড়ি-সেলন্দা নাগডেমড়া হয়ে সড়ক ও নৌপথে যাওয়া যায় বনওয়ারীনগর বাজার। বনওয়ারীনগর বাজারের পিছনেই রয়েছে বাজবাড়ীর বিশাল দিঘী। রাত্রিযাপনের জন্য এখানে জেলা পরিষদের ডাক বাংলো রয়েছে।