পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ‘বাংলার ভোজ’ শীর্ষক বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উৎসব-২০২৫ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল।
তিনি বলেন, আমরা যা খাই, আমরা আসলে তাই। খাদ্যের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের নিজের জিনিস, নিজের পোশাক, নিজের সংস্কৃতি, নিজের ভাষা, নিজের খাদ্য— এগুলো নিয়ে এক সময় আমাদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা ছিল। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে যে, নব্বয়ের পরে যে প্রজন্ম বড় হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই নিজেদের ভাষা, নিজেদের পোশাক, খাবার এগুলোর ব্যাপারে গর্বিত। উদাহরণ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা যখন দেশের বাইরে যাই তখন দেখি ইন্ডিয়ার রেস্টুরেন্ট। কিন্তু ভেতরে গেলে দেখা যায় আসলে সেটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। এই জিনিস একটা সময় খুব বেশি প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এখন বাংলাদেশি অনেক উদ্যোক্তারা গর্ববোধ করে বলে যে এটা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট।
তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলার ভোজ নামক এই অনুষ্ঠান যারা আয়োজন করেছেন, আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি এই ধরনের আয়োজন একটি দারুন উদ্যোগ। আমি আমার স্ত্রী-সন্তানকে বলব এ ধরনের অনুষ্ঠানে আসার জন্য। পাশাপাশি আপনারাও আপনাদের পরিচিতদের বলবেন এখানে আসতে। তবে বাংলার ভোজের পেছনে যারা আছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে চাই যে, এই ধরনের আয়োজন দেশের বাইরে নিয়ে যান। এটা নিউ ইয়র্ক, টরেন্টো কিংবা দুবাইয়ের মতো স্থানে আয়োজন করেন। সেক্ষেত্রে আমার মন্ত্রণালয় পুরোটা না পারলেও কিছুটা সহযোগিতা অবশ্যই করবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, বাঙালির খাবারের যে একটা বৈচিত্র্যতা আছে এবং খাবার যে সংস্কৃতির একটি বড় অংশ তারই বহিঃপ্রকাশ এই আয়োজন। আমরা এই সংস্কৃতিকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের এই অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে অনেক বড় উদ্যোগ আছে। আমরা যেহেতু স্কিল নিয়ে কাজ করি; এই দক্ষতাকে আমরা স্বীকৃতি দিতে চাই। যিনি ঘরে রান্না করেন, তাকেও আমরা সার্টিফিকেটের আওতায় আনতে চাই এবং তাদেরকে আমরা বিভিন্ন জায়গায় উপস্থাপন করতে চাই। যিনি ভালো চা বানান, তাকেও সার্টিফিকেট দিতে চাই। কারণ তিনি ওই চা বানিয়েই একটি ফাইভ স্টার হোটেলে চাকরি পেতে পারেন।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বাংলার ভোজ’ শীর্ষক বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উৎসব-২০২৫।
মেলায় সহযোগিতা করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন। মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে প্রায় শতাধিক উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেছেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশ শেফ সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার এবং শনিবার মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশের ইলিশ, নাটোরের কাচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী, সুন্দরবনের মধু, কুমিল্লার রসমালাইসহ নানাবিধ দেশি খাবার প্রদর্শনী, বিপণন ও উপভোগের ব্যবস্থা রয়েছে।