পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
সৃজনশীল চিন্তা আর সঠিক পরিচর্যায় ভালো কিছু করা যায় সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সাগর তীরবর্তী ফৌজদারহাট-পতেঙ্গা সংযোগ সড়কের ১৯৪ একরের পরিত্যক্ত জায়গা এক সময় ছিল মাদকের আখড়া। আর সে জায়গাটি এখন নানা ফুলে সুসজ্জিত বাগান। বিস্তীর্ণ জলরাশি আর তার পাড় ঘেঁষেই ফুলের সাম্রাজ্য। শীতপ্রধান দেশের রানি টিউলিপ ফুল থেকে শুরু করে দেশীয় গাঁদা, লাল, নীল, হলুদ বর্ণের ডালিয়া ছাড়াও আছে নানা বর্ণের মেরিগোল্ড, চন্দ্রমল্লিকার মতো রং-বেরঙের প্রায় ১২২ প্রজাতির পাঁচ হাজারেরও বেশি ফুল পার্কে শোভা পেয়েছে।
এসব ফুল নজর কাড়ছে সবারই। পতেঙ্গা থেকে সাগর পাড় ধরে যাওয়ার পথে সীতাকুন্ডের প্রবেশপথে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশেই এ পার্কের অবস্থান।
গত বছরের শুরুতে বেহাত হওয়া ১৯৪ একর সরকারি জায়গা উদ্ধার করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বঙ্গোপসাগরের পাড়ে উদ্ধার হওয়া সেই জায়গায় গড়ে তোলা হয় ‘চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক’।
অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের পর এ ডিসি পার্কে গত বছর আয়োজন করা হয়েছিল প্রথম ফুল উৎসব। যেখানে ব্যাপক সাড়া মিলেছিল দর্শনার্থীদের। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও ফুলের মেলার আয়োজন করা হয়। ২৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া মাসব্যাপী ফুল উৎসব উপভোগ করতে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল।
নানা রঙের ফুল আর গাছ দিয়ে সাজানো এ পার্কে এ বছরও ফোটানো হয় টিউলিপ। ফুল উৎসবে ছিল চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ১৫টি সাম্পানের প্রদর্শনী, সাম্পান বাইচ, ঘুড়ি উৎসব, পুতুল নাচ, ভায়োলিন শো, চিত্র প্রদর্শনীর মত নানা ধরনের আয়োজন।
জেলা প্রশাসন জানায়, চট্টগ্রামের দ্বিতীয় ফুল উৎসবে ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, চেরী, জাকারান্ডা, উইলো, উইস্টেরিয়াসহ নানা প্রজাতির দেশি- বিদেশি ১২৭ প্রজাতির কয়েক লাখ ফুলের সমারোহে সেজেছিল ডিসি পার্ক। দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল নেদারল্যান্ডস থেকে আনা বাল্বের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ফোটানো সাড়ে পাঁচ হাজার টিউলিপ।
পার্কেটিতে আসলে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। ফুল উৎসব ছাড়াও হাজারো দর্শক প্রতিদিন ঘুরতে আসেন এই পার্ক। মাদকের আখড়া থেকে ফুলের বাগানে রূপান্তর করায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রশংসা করছেন দর্শনার্থীরা। কারণ ফুলের সুবাসে মেরিন ড্রাইভ সড়কের চারপাশের চিত্রই পাল্টে গেছে। সড়কে এখন হরেকরকমের ফুলের সুবাস।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ডিসি পার্ক, নৌকা জাদুঘর, পর্যটন বাস ও ফুল ডে ট্যুর, স্কুল বাস, বার্ড পার্ক এই ৬টি প্রকল্প একই সাথে যাত্রা করে। চট্টগ্রামের প্রতি উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ করার মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সরকারি জমি উদ্ধার করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।