পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
গ্যালারিতে আছে একটি করে বঙ্গবন্ধু কর্নার। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অর্জন ও গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর থেকে। শিশুদের জন্যও বেশ শিক্ষণীয় স্থান হতে পারে জাদুঘরটি।
জাদুঘরে ঢুকতেই প্রথমে আছে বিজয় অঙ্গন। এই গ্যালারির ভেতরে ‘ইতিহাস দর্পণ: শশাঙ্ক থেকে শেখ মুজিব’ এই অভিনব উদ্যোগ। এখানে উঠে এসেছে বাংলার ভৌগোলিক ইতিহাস, কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে নানা জনযুদ্ধের স্মারক, পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহি বিদ্রোহ। শুধু যুদ্ধের ইতিহাস নয়, আছে পলাশীর যুদ্ধসহ ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত কয়েকটি কামান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখতে দেখতে দর্শকেরা এসে পড়বেন বিশাল গোলাকার কাচে ঘেরা এক প্রান্তে। বিজয়ের মুক্তির আনন্দ যেন ধরা পড়ে ভবনের এই উন্মুক্ত কাঠামোর মধ্যে। কাচ ভেদ করে আসা প্রাকৃতিক আলোয় ভরা এ প্রান্তে চৌখুপি অঙ্কনে প্রতীকীভাবে তুলে ধরা হয়েছে নিরস্ত্র বাঙালির প্রতিবাদ থেকে সশস্ত্র প্রতিরোধের লড়াই।
প্রাচীন আমলের দুর্গের আদলেই গড়ে উঠেছে এখনকার সেনানিবাস। বাংলার প্রাচীন সেই দুর্গগুলোর ইতিহাস আছে, আছে রেপ্লিকা। আছে অপারেশন সার্চলাইট থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের বড় বড় অপারেশনের প্রামাণ্য দলিল।
সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে সেনাবাহিনীর কর্নারে গেলে অন্য রকম এক আবহ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সশস্ত্র বাহিনীর বাংকারে থেকে লড়াইয়ের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। আছে মুজিব ব্যাটারি কামান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যবহৃত গাড়ি। একটি অংশে অজস্র অস্ত্রের সম্ভার। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্র শুধু নয়, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে থেকে যুদ্ধ করে জয় করা অস্ত্রও আছে।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের ভিন্নতা হলো, এখানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর ভাগ করে বিশাল এক ইন্টারঅ্যাকটিভ মানচিত্র আছে। কোনো একটি সেক্টর স্পর্শ করলেই সেই এলাকা, সেক্টর প্রধানের নাম–পরিচয়, গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনসহ আদ্যোপান্ত উঠে আসবে। সঙ্গে থাকছে ভিডিও। আরেকটি ট্যাবে রয়েছে ২৪ হাজার সেনা মুক্তিযোদ্ধার তথ্য। বিমানবাহিনীর গ্যালারিতে আছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত নানা স্মারক। উড়োজাহাজের নানা যন্ত্রাংশও লক্ষ্য করার মতো। নৌবাহিনীর গ্যালারিতে গেলে দর্শনার্থীরা যেন হারিয়ে যাবেন সমুদ্রতলের রাজ্যে। সেখানে রাখা সাবমেরিনে ঢুকে নৌযুদ্ধের আবহ বোঝা যায়। আছে সমুদ্রতলের পরিবেশের উপস্থাপনা।
মুক্তিযুদ্ধেই শুধু নয়, দেশের নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর রয়েছে অবদান। একটি গ্যালারিতে সেসংক্রান্ত নানা তথ্য–উপাত্ত ও সম্ভার রয়েছে। এরই মধ্যে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা।
আর্ট গ্যালারিসহ মাল্টিপারপাস এক্সিবিশন গ্যালারি, ব্রিফিং রুম, স্যুভেনির শপ, ফাস্ট এইড কর্নার, মুক্তমঞ্চ, থ্রিডি সিনেমা হল, মাল্টিপারপাস হল, সেমিনার হল, লাইব্রেরি, আর্কাইভ, ভাস্কর্য, ম্যুরাল, কফি শপ, আলোকোজ্জ্বল ঝর্ণা, ভার্চুয়াল অ্যাকুয়ারিয়ামের খোঁজ মিলবে এখানে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা প্রাইভেট ভাড়া করে বিজয় সরণিতে নভো থিয়েটারের পাশে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর যেতে পারবেন। এছাড়া আপনার সুবিধা মতো পরিবহণে ফার্মগেট, বিজয় সরণি, সংসদ ভবন অথবা চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে পায়ে হেঁটে যেতে পারবেন সামরিক জাদুঘরে।
কোথায় খাবেন
খাওয়ার জন্যে জাদুঘর কমপ্লেক্সে খুব সুন্দর একটি রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া মিউজিয়ামের কাছে বিজয় সরণিতে বিভিন্ন খাবারের অনেক রেস্টুরেন্ট পাবেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদণহরের সবগুলো গ্যালারি ভালো করে ঘুরে দেখতেই আপনার প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে। তারপরেও হাতে সময় থাকলে খুব কাছেই নভোথিয়েটার, চন্দ্রিমা উদ্যান, বিমান বাহিনী জাদুঘর, সংসদ ভবন এলাকা কিংবা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারেন।
আরও যেসব তথ্য জানা থাকা জরুরি
সকাল ও বিকেল দুই দফায় জাদুঘর খোলে। বুধবার বন্ধ। শুক্রবার বাদে অন্য দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত খোলা। আবার শুরু বিকাল ৩টা থেকে, চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শুক্রবার শুধু বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। তবে রমজান মাসে বুধ ও শুক্রবার জাদুঘর বন্ধ থাকবে। অন্য দিনগুলোতে খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত।
টিকিটের দাম: জনপ্রতি ১০০ টাকা। অনলাইনে টিকিট করে যাওয়া ভালো। এতে কম ঝক্কিতে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। অনলাইনে টিকিট না কিনলে সেক্ষেত্রে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
অনলাইনে টিকিট কিনতে চাইলে https://bangabandhumilitarymuseum.com/visitor/registration এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।