ট্রেকিং খুব সহজ কাজ নয়। ঝরনার সন্ধানে দুর্গম পথ পাড়ি দেয়া, পাহাড় বেয়ে ওঠা, বন জঙ্গলের পথ মাড়িয়ে, কখনো বা কাদা মাখা ঢালু রাস্তা ধরে এগিয়ে চলা, আবার ঝরনা ধারার পিচ্ছিল পথে হাঁটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
ট্রেকিং করতে যাওয়ার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখাও জরুরি। বিশেষ করে প্রথম বার ট্রেকিং করতে গেলে প্রস্তুতি না নিয়ে বেরিয়ে পড়লে সমস্যা হতে পারে। ট্রেকিং করতে যাওয়ার আগে কোনো বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে-
শারীরিকভাবে ফিট থাকা
ট্রেকিংয়ের জন্য শারীরিক ফিটনেস খুবই জরুরি। শারীরিকভাবে সবল না থাকলে ট্রেক করতে যাওয়া একেবারেই উচিত নয়। ট্রেক করতে যাওয়ার আগে তাই শরীরচর্চা করা জরুরি। নিয়মিত কার্ডিয়ো, স্ট্রেংথ ট্রেনিং করতে হবে।
মানসিক প্রস্তুতি জরুরি
ট্রেক করতে যাওয়ার আগে শুধু শারীরিকভাবে ফিট থাকলে হবে না, মানসিক দৃঢ়তাও প্রয়োজন। ট্রেক করতে যাওয়া আর বেড়ানো কিন্তু এক ব্যাপার নয়। ট্রেক করতে গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে সমস্যার সমাধান করতে হলে মানসিক স্থিরতা প্রয়োজন।
ট্রেকিংয়ের প্রয়োজনীয় জিনিস
শুধু জামাকাপড় নিয়ে বেরিয়ে পড়লে ট্রেকিং করা যায় না। ট্রেকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র প্রয়োজন। ব্যাকপ্যাক, তাবু, লাঠি এবং ট্রেকিং করতে কাজে লাগবে- এমন আরও অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসের খোঁজখবর নিয়ে সেগুলো সঙ্গে রাখতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় সেই সব জিনিস একটি হালকা ওজনের ব্যাগে ভরে নেওয়াই ভালো।
ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে
ট্রেকিং করতে গেলে ওষুধ নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক। ওষুধের প্যাকেটে নিজস্ব ওষুধপত্রের পাশাপাশি থাকবে নাকের ড্রপ, ওআরএস, আমাশা, জ্বরের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ। ভালো ক্রেপ ব্যান্ডেজ, নিক্যাপ অবশ্যই রাখুন সঙ্গে। ব্যথার বাম বা স্প্রে সঙ্গে নিতে ভুলবেন ন। একটা ডায়েরিতে দরকারি ফোন নম্বর লিখে নিয়ে যান। নিজের পরিচয়পত্রও সঙ্গে রাখুন। যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজে লাগতে পারে।
পর্যাপ্ত পোশাক
যেখানে যাচ্ছে সেখানকার পরিবেশের কথা মাথায় রেখে পোশাক বাছাই করুন। তিন-চারটে ফুল হাতা জামা, টিশার্ট, সোয়েটার, সঙ্গে বেশ কিছু পকেটওয়ালা কার্গো প্যান্টও ভরে নিতে হবে ব্যাগে। মোজা, গ্লাভস, টুপি নিতে ভুলবেন না যেন। অন্তর্বাসও নিতে হবে বেশ কয়েক জোড়।
শুকনো খাবার সাথে নিন
দ্রুত শক্তিবর্ধক ও সহজেই হজম হয় এমন শুকনো খাবার ব্যাগে রাখুন। চিড়া-গুড়, মুড়ি, চকলেট, খেজুর, ওটসবার, ম্যাংগো বার, কুকিজ, বাদাম এগুলো খুব ভালো অপশন হতে পারে। গ্লুকোজ ও স্যালাইন নিতে ভুলবেন না। খাওয়ার পানির উৎস সম্পর্কে আগেই ধারণা নিয়ে রাখতে হবে। একদিনের বেশি ট্রেকিংয়ের পরিকল্পনা থাকলে কেক, বিস্কুটের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার নিতে হবে। দিয়াশলাই বা লাইটার ও ছোট স্টোভ নিয়ে গেলে চা, ইনস্ট্যান্ট নুডলস অথবা স্যুপ বানিয়ে নিতে পারবেন।
অন্যান্য দরকারি বিষয়
ট্রেকিংয়ের পূর্ব প্রস্তুতির সময় আরও যেসব বিষয় মাথায় রাখতে তা এক নজরে জেনে নিন।
* যে জায়গা ট্রেকিংয়ে যাচ্ছেন সেখানকার আবহাওয়া, রাজনৈতিক অবস্থা, পরিবেশ–পরিস্থিতি, কাছাকাছি লোকালয়ের অবস্থান-এসব বিষয়ে ধারণা আগে থেকেই রাখতে হবে।
* লোকাল ট্যুর গাইড বা পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাউকে দলে রাখলে খুবই ভালো হয়।
* কোন পথে কী বিপদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, কোন পথে কীভাবে চললে সুবিধা হয়- সে সম্পর্কে গাইডের থেকে জেনে নিন।
* কাদের সঙ্গে ট্রেকিংয়ে যাচ্ছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। সবার মধ্যেই শারীরিক ফিটনেস, সহযোগিতার মনোভাব এবং সব পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা থাকা খুব দরকার।
*সানগ্লাস, হ্যাট, ট্রেকিং স্টিক- এগুলো ছাড়া আপনার প্রস্তুতি অসম্পূর্ণ।
* রাতে তাঁবুতে থাকার পরিকল্পনা থাকলে তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ সঙ্গে নিতে হবে। লোক সংখ্যা অনুযায়ী ও আবহাওয়া বুঝে তাঁবু কিনে নিতে পারেন। দড়ি, টর্চ লাইট অবশ্যই নিতে হবে।
* টয়লেট্রিজ যেমন—ব্রাশ, পেস্ট, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টিস্যু ইত্যাদিও সঙ্গে রাখতে হবে।
* এখন সবাই স্মার্টফোনের গুগল ম্যাপে নিজের অবস্থান, গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় সবই দেখে নিতে পারেন। কিন্তু দুর্গম এলাকায় জিপিএসের ভালো সাপোর্ট পাওয়া যায় না। পথ হারিয়ে যেন না ফেলেন, সেজন্য ম্যাপ এবং কম্পাসের ব্যাবহার শিখে নিতে হবে।
*রুট প্ল্যানের ম্যাপ ব্যাগে রাখতে ভুলবেন না।
* ক্যামেরা, বাইনোকুলার, মোবাইল রাখার জন্য পানি নিরোধক জীপলক ব্যাগ সাথে রাখা আবশ্যক।