লেখক: জাকারিয়া মন্ডল (প্রধান বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আমাদের বার্তা)
উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত পর্বত শ্রেণির মাঝখানে লম্বাটে উপত্যকাও সমান্তরালে বিস্তৃত। রাস্তা আর পাহাড়ের মাঝখানে দূরত্ব খুবই কম। রাস্তার দুপাশের ছোট ছোট শহর, জনবসতিগুলো তাই লম্বাটে জ্যামিতিক নকশা হয়ে পর্বত পাদদেশে শায়িত। গায়ে গা ঠেকানো ভবন, ঘর-বাড়ি।
ভরদুপুরে যান চলাচল কম। কোথাও যানজট নেই। পিচঢালা মসৃণ পথে উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটছে শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী ট্রাভেল কোম্পানি এইটকেন স্পেন্সের ট্যুরিস্ট বাস। ভেতরে সহনীয় শীতলতা। আয়েশি আসন। জানালার কাঁচ গলে দ্বীপদেশ শ্রীলংকার প্রকৃতি পাঠে নিমগ্ন বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ছয় ভ্রামণিকের অনুসন্ধানী চোখ। কান খাড়া করে শুনছে ট্যুর গাইড লেকচারার সুদেশ বিক্রমাসিংহের বয়ান। শ্রীলংকান ট্যুরিজম প্রমোশন ব্যুরোর আমন্ত্রণে এতো দূর এসে কোনো কিছুই হেলায় হারাতে রাজি নয় কেউ।
সেই সকালে ডাম্বুলা জেলার হোটেল কানডালামা হেরিটেন্স থেকে শুরু হয়েছে যাত্রা। তারপর সিগিরিয়া রক জয় করে ছুটছে তো ছুটছেই। মধ্যপ্রদেশের উত্তর প্রান্ত থেকে ছুটতে ছুটতে দুপুর নাগাদ মাতালে জেলাও পেছনে পড়ে গেল। কুডুগালা পার হওয়ার পর হাতের ডানে সঙ্গী হলো পিনগা ওয়ি খাল। রাস্তার পশ্চিম ছুঁয়ে লেগেই রইলো যাত্রাপথে।
পড়ন্ত বিকালে পিনগা ওয়ি খালের পতিত মুখের দেখা মিললো। মিশেছে মহাবেলি গঙ্গার সঙ্গে।
৩৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাবেলিই শ্রীলংকার প্রধান নদী। এর জন্ম দক্ষিণে, এই মধ্যপ্রদেশেরই উচ্চভূমিতে। নুয়ারা এলিয়ার হর্টন ন্যাশনাল পার্কে। আর দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ত্রিনকোমালে বে-তে, বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। সেখানে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় তৈরি করেছে এই নদী। এর অববাহিকার আয়তন ১০৪৪৮ বর্গকিলোমিটার; যা গোটা শ্রীলংকার মোট আয়তনের এক-পঞ্চমাংশ প্রায়। শ্রীলংকার পাওয়ার সোর্স মূলত জলবিদ্যুৎ; যার ৪০ শতাংশই যোগান দেয় মহাবেলিতে গড়ে তোলা গোটা ছয়েক প্রকল্প।যাত্রাপথে বারবার দিক পরিবর্তন করেছে মহাবেলি গঙ্গা। এই যেমন এখানে, পিনগা ওয়ির পতিত মুখের কাছে অনেকটা ভি আকৃতির মোচড় নিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে এসে পূর্ব দিকে একটু ঘুরে ফের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এগিয়েছে। তাতেই তৈরি হয়েছে একটা ভি আকৃতির উপদ্বীপ। এই উপদ্বীপটাই ক্যান্ডি শহর। শহরের দক্ষিণ দিকটাকে ভিত্তিভূমি ধরলে উত্তর প্রান্তটা নিশ্চয়ই তার চূড়া। পাহাড়ি এই শহরটাকে তাই আকৃতিতেও পাহাড়ের মতোই মনে হয়।
মহাবেলির পাশাপাশি খানিক এগিয়ে উত্তর সীমানার চূড়ার পাশ দিয়েই ক্যান্ডি শহরে প্রবেশ করলো ট্যুরিস্ট বাস।
ক্যান্ডির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচুতে। এই শহর মধ্যপ্রদেশের রাজধানী। কলম্বোর পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর। শ্রীলংকার প্রাচীন রাজাদের সর্বশেষ রাজধানী। প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরে জনসংখ্যা লাখ দেড়েক। অধিবাসীদের অধিকাংশই সিংহলী। তবে তামিল ও মুর গোষ্ঠীর বসবাসও আছে। ক্যান্ডি নামটি চালু আছে ঔপনিবেশিক সময় থেকে। তার আগে এখানে ছিল নানা নাম। নানা কিংবদন্তি। সবগুলোরই সারমর্ম ছিলো ‘মহান শহর’। কলম্বো থেকে এই স্থানের দূরত্ব ১১৬ কিলোমিটার।উপকূলীয় অঞ্চলের তুলনায় ক্যান্ডি শহর তুলনামূলক আদ্র ও শীতল। তবে সার্বিক বিচারে গ্রীষ্মম-লীয় আবহাওয়া বিরাজ করে। বছরের গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে এখানে।
পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম শহর। বহুতলের বড়ই অভাব। রাস্তার দুপাশের অধিকাংশ ভবন ঐতিহ্যের আবহ বইছে। শেষ বিকালে ট্যুরিস্ট বাস থামলো ‘দ্য স্যাক্রেড টেম্পল অব টুথ’ এর সামনে।
চৌহদ্দির ভেতরে নানা প্রজাতির গাছ। ফুলের ঝোপ, ভাস্কর্য। পিলারের ওপরে দন্ডামান একটা ভাস্কর্যের উঁচু করা হাতে একটা পাখি বসা। চুপচাপ। শেষ বিকালের আলোয় ওটাকেও ভাস্কর্য বলেই ভ্রম হলো। সেই ভুল ভাঙাতেই যেন উড়াল দিলো পাখিটা। একটু সামনেই পবিত্র দাঁতের মন্দির। তার ওপরে অনেক পাখির আয়েশি উড়াউড়ি। এতক্ষণ দলছুট হয়ে থাকা পাখিটা গিয়ে যোগ দিলো তাদের দলে। একটু পর তাকে আর আলাদা করে চেনা গেল না।
ওপরে পাখির ঝাঁক। নিচে অনিন্দ্য সুন্দর মন্দির ভবন। সোনালী ছাদ। খাঁজকাটা সাদাটে দেয়াল। অবয়বে ঐতিহ্যের স্ফুরণ। চুনাপাথর, মার্বেল, কাঠ, হাতির দাঁতের তৈরি অনন্য এক স্থাপনা।
সামনের ও পাশের চত্বরজুড়ে অগণিত মানুষের যাওয়া-আসা। কিন্তু কোথাও জটলা নেই। হই-হট্টগোল নেই। সামনের চত্বর থেকে একটু ঘুরে ডানে এগোলে মূল মন্দিরে প্রবেশের ফটক। পবিত্র মনে মন্দিরে ঢুকছে ভক্তরা।
ভেতরে একগুচ্ছ ভবন। একেকটা একেক নির্মাণশৈলীতে গড়া। কতো রঙ! কতো নকশা! প্রতিটিরই আলাদা আলাদা তাৎপর্য। পাথরের স্তম্ভে নকশা উৎকীর্ণ। গর্ভগৃহের সামনে সারি করে রাখা অতিকায় হস্তিদন্তগুলো যেন শ্রদ্ধায় নত। ছাদে ঝুলন্ত ঝাড়বাতি। নকশি ঝালর। কোথাও কাঠের, কোথাওবা পাথরের সিঁড়ি। কোথাও আবার সিঁড়িতেও ভাস্কর্য উৎকীর্ণ।
দোতলার গর্ভগৃহের সামনে প্রার্থনায় রত অগণিত ভক্ত। লাল, নীল পদ্মকলিসহ নৈবেদ্য হাতে নিয়ে মানুষের আসা-যাওয়ার মিছিলটা চলছে তো চলছেই। মন্দিরের ওপাশের চত্বরে সারি সারি প্রদীপে আলোর নৈবেদ্য। ক্যামেরার চোখে আলোর পবিত্রতা ধরবেন বলে আবীর আবদুল্লাহ ছুটলেন সেদিকে। পেছন পেছন শাকিল বিন মুশতাক।
এই মন্দির শ্রীলংকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ ঐতিহ্য। বুদ্ধের একটি দাঁতাবশেষ এখানে সুরক্ষিত। কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত সেই কক্ষটি ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয় বার্ষিক প্রার্থনা উৎসবের সময়, জুলাই মাসে। দাঁতটিকে তখন রাখা হয় স্তূপ আকৃতির সোনার পাত্রে। ক্যান্ডি শহরজুড়ে তখন বার্ষিক শোভাযাত্রার আড়ম্বর। গোটা শ্রীলংকা তো বটেই, সারা বিশে^র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই তখন তাদের এই মহাতীর্থের কাছে ছুটে আসতে চান। দ্বীপদেশ শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রাটা হয় তখন। এই শোভাযাত্রা ক্যান্ডি শহরকে শ্রীলংকার সাংস্কৃতিক রাজধানীর মর্যাদায় আসীন করার অন্যতম কারণ বৈকি। বার বার সংস্কার হওয়ার পরও অপার সৌন্দর্য ধারণ করা দাঁতের মন্দিরকে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মর্যাদা দিয়েছে ইউনেস্কো।এই দাঁতের মন্দির বা টুথ অব টেম্পল মূলত ক্যান্ডিয়ান রাজ্যের রয়াল প্যালেস কমপ্লেক্সের অংশ। অনতি দূরেই ছিল রাজার বসবাস। মন্দিরের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন তিনি। মন্দিরের বাদ্য-বাজনার সুরে মিশে থাকতো নানা ভাব ও ভাষার আবহ। বাদ্যের বিশেষ সুর শুনেই রাজা বুঝতেন কখন মন্দিরে আসতে হবে তাকে।
বর্তমান মন্দিরের খানিক উত্তরে রাজার মূল প্রাসাদের অস্তিত্ব এখনও বর্তমান। কিছু অংশে জাদুঘর। আরও উত্তরে উদাবাত্তা কেলে স্যাঙ্কচুয়ারি। শহরের ভেতরে এমন অভয়ারণ্য বিরলই বটে।
মন্দিরের পূর্বদিকে ক্যান্ডি লেক। জল ছুঁয়ে অনবরত উড়ছে পাখির ঝাঁক। ভর সন্ধেতেও নীড়ে ফেরার নাম নেই। লেকের পাড়জুড়ে সমবেত দর্শনার্থীরা বিমুগ্ধ বিস্ময়ে দেখছে পাখিদের উড়াউড়ি। দলপতি আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল দলের অন্য সদস্যদের খোঁজ করছিলেন। একটু পরই এসে হাজির হলেন তারা। মূল দলের সঙ্গে মন্দিরে ঢোকেননি।
ট্যুরিজম কর্মকর্তা জুদে মুরসালিনকে নিয়ে ক্যান্ডির কাঁচাবাজার দেখতে গিয়েছিলেন সাজ্জাদ হোসেন ও আজিম খান রনি। তারা ‘লাল কলা’র ছবি তুলে নিয়ে এসেছেন। সাধারণ কলা দশ টাকা হলে এই কলা বিকোয় প্রতি পিস ৪০ টাকায়। পৌরুষ বর্ধক হিসেবে নাকি ভালো কাজ করে। শ্রীলংকায় আসার পর থেকেই এই নিয়ে হাসি-মশকরা চলছে। এমন শক্তিবর্ধক থাকতেও কেন গোটা শ্রীলংকার জনসংখ্যা এক ঢাকা শহরের জনসংখ্যাকেই ছাড়াতে পারছে না তা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা নেহায়েত কম হয়নি। আর এক প্রস্ত হাসির রোল পড়লো সবার ভেতরে।
লেকের পাড় ঘুরে ছুটলো ট্যুরিস্ট বাস। ডিনার হলো পাহাড়ের ওপরেই ছোট একটা টিলার মাথায়। হোটেল আর্লস রিজেন্সির এক সুন্দর রেস্তোরাঁয়। লাইফ মিউজিকের আবহে নানা পদের খাবারের বুফে আয়োজন। এক কোনায় শ্রীলংকার স্পেশাল খাবার কত্তুরোটি তৈরি হচ্ছে। তপ্ত তাওয়ার ওপর রুটি ডিমভাজি, নানা পদের সবজি দিচ্ছেন শেফ। দুই হাতে দুই ছুরি নিয়ে সেগুলো অনবরত কেটে চলেছেন। সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে দেখতে ক্ষুধা বাড়তে থাকে।
ডিনার শেষে ফের পথে গড়ায় ট্যুরিস্ট বাস। এবার দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে মহাবেলি গঙ্গা পার হয়ে থামে বুলেটের মতো শেপ নেওয়া আর একটা বদ্বীপে, পাহাড়ের কোলে।
জুলাই থেকে বর্ষা শুরু হয় ক্যান্ডিতে। এখন ফেব্রুয়ারির শেষ প্রায়। সন্ধ্যার পর থেকে ক্যান্ডির আকাশ তবু মেঘলা। আর্লস রিজেন্সি হোটেলে পৌঁছানোর খানিক পরই ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হলো। বাতাসের বেয়াড়াপনা নেই, বাওছিটানি নেই। চারতলার বারান্দায় বসে সুন্দর বৃষ্টি উপভোগ করা যায়।
পাহাড়ের কোলে কয়েকটা ভবন নিয়ে পাঁচ তারকা হোটেল আর্লস রিজেন্সি। ভবনগুলো ছাদযুক্ত ওয়াকওয়েতে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। পুরো কম্পাউন্ডটাই ইতিহাস ও ঐতিহ্যে মোড়া, প্রকৃতিবান্ধব। পাহাড় না কেটে ঢালের উচ্চতার সঙ্গে সমন্বয় করে ভবন বিন্যাস। তাই সব স্থাপনা একই সমতলে নয়। ওপরের ঢালে দোতলা হলে, নিচের ঢালে চারতলা ভবন। কী অভূতপূর্ব সমন্বয়!
সামনে রিসিপশন ভবনের ওপাশে আরও উঁচু পাহাড়ি ঢালে সারি সারি আলো। ঢালজুড়ে বসবাসের চিহ্ন। আলোমালার পেছনে রাতের আঁধার মেখে কালচে হয়ে আছে পাহাড়টা। মাঝরাত অবধি একটা জম্পেশ আড্ডার পর গভীর ঘুম।
কাক ডাকা ভোরে বিছানা ছাড়তেই সঙ্গী স্নিগ্ধ প্রকৃতি। রাতের বৃষ্টিধোয়া গাছের পাতাগুলো সকালের আলোয় হাসছে। ভেজা বুনোপথে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছেন কেউ কেউ। নিচের সুইমিংপুলে ইউরোপীয় ললনাদের জলকেলি। ইউক্রেনে সদ্য যুদ্ধ বাধিয়ে দিলেও রাশিয়ান ট্যুরিস্টের ঢল থামেনি শ্রীলংকায়। বেড়াতে এসে ওরা আয়েশ করতে জানে। কিন্তু বাংলাদেশি ভ্রামণিকদের সে ফুরসত কোথায়। তড়িঘড়ি নাস্তার টেবিলে ছুটলো সবাই।
একটু পর ফের মহাবেলি পার হয়ে ক্যান্ডি শহরে। পূর্ব দিকে গেলে এই রাস্তাতেই পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। কিন্তু এবারের যাত্রাটা তার বিপরীতে, মানে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। আড়াআড়িভাবে শহরটা পার হয়ে পশ্চিম প্রান্তে পেরাডেনিয়া রয়াল বোটানিক্যাল গার্ডেন। ক্যান্ডিকে বেড় দেওয়ার আগে দক্ষিণ থেকে এসে এখানে একটা ইউ আকৃতির শেপ নিয়েছে মহাবেলি। তারপর উত্তরে ছুটেছে ক্যান্ডি শহরকে ডানে রেখে।
এখানকার এই ইউ আকৃতির বেড়েই পেরাডেনিয়া গার্ডেন। পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক দিয়ে মহাবেলি বেষ্টন করে রেখেছে পেরাডেনিয়াকে। দক্ষিণের প্রবেশ পথ দিয়েই মূল বাগানে ঢুকতে হয়।
এই পেরাডেনিয়া তাবৎ এশিয়ার মধ্যেই অন্যতম সেরা বোটানিক্যাল গার্ডেন হিসেবে বিবেচিত। দর্শনীয় এই বাগানের গোড়াপত্তন প্রায় সাড়ে ছয়শ বছর আগে। ১৩৭১ খ্রিষ্টাব্দে। গার্ডেনের আর্কাইভে এর ইতিহাস লিপিবদ্ধ। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৩৭১ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন রাজা তৃতীয় বিক্রমাবাহু। তার রাজসভা স্থাপন করেন মহাবেলি নদীর তীরে। রাজসভার কাছে শুরু হয় এক বাগানের শুভযাত্রা। তবে কোনো এক রানির জন্য এই বাগানের জন্ম বলেও মত মেলে।
১৭৪৭ থেকে ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সিংহাসনে আসীন হন রাজা কীর্তি শ্রী রাজসিংহে। তার সময়ে এটি রাজবাগানের মর্যাদা পায়। ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজা রজধি রাজাসিংহে এখানে বসবাস করেন। তার আগে রাজা বিমলা ধর্মসুরিয়া এখানে যে বিহার ও স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন সেগুলো সংস্কার করেন রাজা রজধি।
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে অনেক যুদ্ধ আর আগ্রাসনের শিকার হয় পেরাডেনিয়া গার্ডেন। মহাবেলি নদীর উত্তর তীরে গণরূপাতে রাজা দ্বিতীয় রাজসিংহের সঙ্গে পর্তুগিজদের ঐতিহাসিক যুদ্ধ হয়। আরও পরে ইংরেজরা ক্যান্ডি দখল করলে অনেক কিছুর সঙ্গে ধ্বংস করা হয় পেরাডেনিয়ার বিহার ও স্তূপ। নানা সময়ে এই বাগানের স্থানান্তরও ঘটেছে কয়েক দফা। অনেক অস্থির সময় পাড়ি দিয়ে পেরাডেনিয়া ফিরেছে তার ভিত্তিভূমিতে। ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে আলেকজান্ডার মুন এই গার্ডেন পুনর্গঠন করেন। সেই বাগান এখন আরও অনেক বেশি বিস্তৃত। এখানে এখন অনেক প্রজাতির বৃক্ষরাজি, পুষ্পমালার সমাবেশ।বর্তমানে প্যারাডেনিয়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের আয়তন ১৪৭ হেক্টর। আছে চার হাজার প্রজাতির গাছ। পাম প্রজাতির গাছই আছে দুশ’রও বেশি। আছে দর্শনীয় অর্কিড কালেকশন। ফুলের আধিক্য ছাড়াও আছে ওষুধি ও মসলা প্রজাতির নান্দনিক প্রদর্শনী। পাম গাছের ছায়াঘেরা পথ মন জুড়িয়ে দেয়।
মূল গেট দিয়ে ঢুকে একটু এগোতেই বিপুল বিস্ময়ে থামতে হয় ডাবল কোকোনাট বৃক্ষের নিচে। একগুচ্ছ গাছে ঝুলে আছে সিসিলির অতিকায় ডাব। ডাবল কোকোনাট বলতে কেউ যদি শ্রীলংকার জনপ্রিয় কিং কোকোনাটের দুই গুণ বুঝে থাকেন, তাহলে মস্ত ভুল হয়ে যাবে। এই ফল সাধারণ ডাবের চেয়ে কয়েকগুণ বড়ো। একটা নারিকেল পরিপক্ক হতে সময় লাগে বছর পাঁচেক। দামও তাই আকাশছোঁয়া। পৃথিবীর বৃক্ষরাজির বৃহত্তম বীজ উৎপাদনের ক্ষমতা এই প্রজাতির নারকেল গাছই দেখিয়ে যাচ্ছে।
ডাবল কোকোনাটের সঙ্গ ছেড়ে বাঁয়ের পথ ধরে আরও এগোতে একটা লেক। শ্রীলংকার মানচিত্রের আদলে গড়া। ভালো করে দেখলে মনে হবে, গোটা শ্রীলংকা দ্বীপটাকেই শুইয়ে রাখা হয়েছে এখানে। কেবল জলবেষ্টিত স্থলের বদলে স্থলবেষ্টিত জলদ্বীপ। প্রান্তজুড়ে জলগুল্ম। অন্যতম আকর্ষণ নীল নদ অববাহিকার প্যাপিরাস। কাগজের ম- তৈরির জন্য যার খ্যাতি জন্ম থেকেই শুনে আসা। আর একটা অন্যতম দর্শনীয় উদ্ভিদ হলো পানিকলা। লেকজুড়েই নানা প্রজাতির ওয়াটার লিলি।
লেকের অদূরে নানা প্রজাতির বাঁশঝাড়। বার্মা থেকে আনা পৃথিবীর দীর্ঘতম বাঁশ। প্রায় ৪০ মিটার উঁচু। ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার বেড়। কচি বাঁশগুলো দিনে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার করে বাড়ে। যেন দ্রুত বড় হতে হতে আকাশ ছুঁতে চায়। এমন মহাবাঁশ ছাড়াও আছে হলুদ বাঁশ, পালকপাতা বাঁশ, কাঁটা বাঁশ। মোট সাত প্রজাতির বাঁশ আছে এখানে। আকাশছোঁয়া ডগাগুলো বাতাসে দুলে যেন অভিবাদন জানাচ্ছে দর্শনার্থীদের।
সামনে অতি সুন্দর একটা পামবন পেরিয়ে ডানে উন্মুক্ত চত্বর। দুই একরজুড়ে সবুজ ঘাসের গালিচা। এর নাম গ্রেট লন। মাঝখানে জীবন্ত ছাতার মতো ছায়া ছড়িয়ে রেখেছে জাভার ডুমুর গাছ। গ্রেট লনের ওপাশে বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অস্তিত্ব পাওয়া গেল। শ্রীলংকায় এসে স্মারক হিসেবে একটা গাছ রোপন করেছিলেন তিনি। সেই গাছ এখন আশেপাশের আর সব গাছের মাথা ছাড়িয়ে যেতে চাইছে।
গ্রেট লন ছাড়াতেই একটা মহিরুহ। বহুধাবিভক্ত শাখা-প্রশাখায় অদ্ভুত সুন্দর নকশা গড়ে রেখেছে। একটা ডাল নেমে এসে বসার আসন বানিয়ে রেখেছে যেন। সেখানে বসে-দাঁড়িয়ে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করার জন্য ভিড় জমেছে দর্শনার্থীদের। কেউ ছবি তুলছেন, তো কেউ দাঁড়িয়ে আছেন সিরিয়াল পাওয়ার অপেক্ষায়।
সামনে আর একটা পাম এভিনিউ। শ্রীলংকার পামগাছগুলো বাংলাদেশের তুলনায় সরু, লম্বা। ২১ মিটার উঁচু হয় একেকটা। এখানেও তার ব্যতিক্রম দেখা গেল না। এই বাগানে পাম এভিনিউ আছে তিনটি। অনন্য ফ্লাওয়ারিং ট্রি সমাবেশের মধ্যে রয়েছে ২০ হেক্টরজুড়ে আট হাজার আরবোরিটাম।
ফ্লাওয়ারিং ট্রি গার্ডেনের পাশেই শত প্রজাতির ফার্নের সমাবেশ। আছে রকমারি পুষ্পশোভিত ফুলবাগান। নানা প্রজাতির ক্যাকটাস। মসলা বাগানে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দেরও আগে রোপিত বৃক্ষ। বিশ্বজুড়ে খ্যাতি কুড়ানো মরিচ আর দারুচিনি বৃক্ষের প্রদশর্নী।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও ডিউক অব এডেনবুর্গ শ্রীলংকা সফরে এসেছিলেন ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে। সে বছরের ২৪ অক্টোবর তারা একটা অশোক গাছ রোপন করেছিলেন এখানে। একই বছরের ৫ মার্চ জাপানের ক্রাউন প্রিন্স আকিহিতো ও ক্রাউন প্রিন্সেস মিকিহিতো রোপন করেছিলেন ইয়োলো ট্রামপেট ট্রি। দুটো গাছই পাশাপাশি। বয়সে কয়েক মাস বড় ট্রামপেট ট্রি শাখা বাড়িয়ে যেন আগলে রেখেছে অশোক গাছটাকে। শ্রীলংকায় যার পরিচিতি দুঃখহীন বৃক্ষ নামে। গাছটির ঘনপাতার ফাঁকে লালচে ফুলের উঁকি। অদূরে অর্কিড হাউসে পৃথিবীর বৃহত্তম অর্কিড। বেরোনোর মুখে বিক্রয় কেন্দ্রে হস্তশিল্পের রকমারি পসরা।
এরই মধ্যে দিনের দ্বিতীয় প্রহর পার হতে চলেছে। ফের যাত্রা শুরু হতে না হতেই আর একবার থামতে হলো মহাবেলির পাড়ে। গাছপালার ফাঁকে কুলকুলিয়ে বইছে মহাবেলি। এবারের যাত্রা এই মহাবেলিরই উৎস্য মুখের পাশে। শ্রীলংকার শীতল শহর নুয়ারা এলিয়ায়।
লেখক: প্রধান বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আমাদের বার্তা ও নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন
‘ক্যান্ডির কোলে
জাকারিয়া মন্ডল
রোদজ¦লা দুপুর। কিন্তু হুটহাট বেরসিক মেঘের বেয়াড়াপনা। মাঝে মধ্যে তাই মুখ ভার আকাশের। মেঘের ছায়ায় দুপাশের সবুজে ছাওয়া পাহাড় কখনো কালচে, কখনোবা জ¦লে উঠছে রোদের আলোয়।
উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত পর্বত শ্রেণির মাঝখানে লম্বাটে উপত্যকাও সমান্তরালে বিস্তৃত। রাস্তা আর পাহাড়ের মাঝখানে দূরত্ব খুবই কম। রাস্তার দুপাশের ছোট ছোট শহর, জনবসতিগুলো তাই লম্বাটে জ্যামিতিক নকশা হয়ে পর্বত পাদদেশে শায়িত। গায়ে গা ঠেকানো ভবন, ঘর-বাড়ি।
ভরদুপুরে যান চলাচল কম। কোথাও যানজট নেই। পিচঢালা মসৃণ পথে উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটছে শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী ট্রাভেল কোম্পানি এইটকেন স্পেন্সের ট্যুরিস্ট বাস। ভেতরে সহনীয় শীতলতা। আয়েশি আসন। জানালার কাঁচ গলে দ্বীপদেশ শ্রীলংকার প্রকৃতি পাঠে নিমগ্ন বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ছয় ভ্রামণিকের অনুসন্ধানী চোখ। কান খাড়া করে শুনছে ট্যুর গাইড লেকচারার সুদেশ বিক্রমাসিংহের বয়ান। শ্রীলংকান ট্যুরিজম প্রমোশন ব্যুরোর আমন্ত্রণে এতো দূর এসে কোনো কিছুই হেলায় হারাতে রাজি নয় কেউ।
সেই সকালে ডাম্বুলা জেলার হোটেল কানডালামা হেরিটেন্স থেকে শুরু হয়েছে যাত্রা। তারপর সিগিরিয়া রক জয় করে ছুটছে তো ছুটছেই। মধ্যপ্রদেশের উত্তর প্রান্ত থেকে ছুটতে ছুটতে দুপুর নাগাদ মাতালে জেলাও পেছনে পড়ে গেল। কুডুগালা পার হওয়ার পর হাতের ডানে সঙ্গী হলো পিনগা ওয়ি খাল। রাস্তার পশ্চিম ছুঁয়ে লেগেই রইলো যাত্রাপথে।
পড়ন্ত বিকালে পিনগা ওয়ি খালের পতিত মুখের দেখা মিললো। মিশেছে মহাবেলি গঙ্গার সঙ্গে।
৩৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাবেলিই শ্রীলংকার প্রধান নদী। এর জন্ম দক্ষিণে, এই মধ্যপ্রদেশেরই উচ্চভূমিতে। নুয়ারা এলিয়ার হর্টন ন্যাশনাল পার্কে। আর দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ত্রিনকোমালে বে-তে, বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। সেখানে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় তৈরি করেছে এই নদী। এর অববাহিকার আয়তন ১০৪৪৮ বর্গকিলোমিটার; যা গোটা শ্রীলংকার মোট আয়তনের এক-পঞ্চমাংশ প্রায়। শ্রীলংকার পাওয়ার সোর্স মূলত জলবিদ্যুৎ; যার ৪০ শতাংশই যোগান দেয় মহাবেলিতে গড়ে তোলা গোটা ছয়েক প্রকল্প।
যাত্রাপথে বারবার দিক পরিবর্তন করেছে মহাবেলি গঙ্গা। এই যেমন এখানে, পিনগা ওয়ির পতিত মুখের কাছে অনেকটা ভি আকৃতির মোচড় নিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে এসে পূর্ব দিকে একটু ঘুরে ফের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এগিয়েছে। তাতেই তৈরি হয়েছে একটা ভি আকৃতির উপদ্বীপ। এই উপদ্বীপটাই ক্যান্ডি শহর। শহরের দক্ষিণ দিকটাকে ভিত্তিভূমি ধরলে উত্তর প্রান্তটা নিশ্চয়ই তার চূড়া। পাহাড়ি এই শহরটাকে তাই আকৃতিতেও পাহাড়ের মতোই মনে হয়।
মহাবেলির পাশাপাশি খানিক এগিয়ে উত্তর সীমানার চূড়ার পাশ দিয়েই ক্যান্ডি শহরে প্রবেশ করলো ট্যুরিস্ট বাস।
ক্যান্ডির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচুতে। এই শহর মধ্যপ্রদেশের রাজধানী। কলম্বোর পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর। শ্রীলংকার প্রাচীন রাজাদের সর্বশেষ রাজধানী। প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরে জনসংখ্যা লাখ দেড়েক। অধিবাসীদের অধিকাংশই সিংহলী। তবে তামিল ও মুর গোষ্ঠীর বসবাসও আছে। ক্যান্ডি নামটি চালু আছে ঔপনিবেশিক সময় থেকে। তার আগে এখানে ছিল নানা নাম। নানা কিংবদন্তি। সবগুলোরই সারমর্ম ছিলো ‘মহান শহর’। কলম্বো থেকে এই স্থানের দূরত্ব ১১৬ কিলোমিটার।
উপকূলীয় অঞ্চলের তুলনায় ক্যান্ডি শহর তুলনামূলক আদ্র ও শীতল। তবে সার্বিক বিচারে গ্রীষ্মম-লীয় আবহাওয়া বিরাজ করে। বছরের গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে এখানে।
পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম শহর। বহুতলের বড়ই অভাব। রাস্তার দুপাশের অধিকাংশ ভবন ঐতিহ্যের আবহ বইছে। শেষ বিকালে ট্যুরিস্ট বাস থামলো ‘দ্য স্যাক্রেড টেম্পল অব টুথ’ এর সামনে।
চৌহদ্দির ভেতরে নানা প্রজাতির গাছ। ফুলের ঝোপ, ভাস্কর্য। পিলারের ওপরে দ-ায়মান একটা ভাস্কর্যের উঁচু করা হাতে একটা পাখি বসা। চুপচাপ। শেষ বিকালের আলোয় ওটাকেও ভাস্কর্য বলেই ভ্রম হলো। সেই ভুল ভাঙাতেই যেন উড়াল দিলো পাখিটা। একটু সামনেই পবিত্র দাঁতের মন্দির। তার ওপরে অনেক পাখির আয়েশি উড়াউড়ি। এতক্ষণ দলছুট হয়ে থাকা পাখিটা গিয়ে যোগ দিলো তাদের দলে। একটু পর তাকে আর আলাদা করে চেনা গেল না।
ওপরে পাখির ঝাঁক। নিচে অনিন্দ্য সুন্দর মন্দির ভবন। সোনালী ছাদ। খাঁজকাটা সাদাটে দেয়াল। অবয়বে ঐতিহ্যের স্ফুরণ। চুনাপাথর, মার্বেল, কাঠ, হাতির দাঁতের তৈরি অনন্য এক স্থাপনা।
সামনের ও পাশের চত্বরজুড়ে অগণিত মানুষের যাওয়া-আসা। কিন্তু কোথাও জটলা নেই। হই-হট্টগোল নেই। সামনের চত্বর থেকে একটু ঘুরে ডানে এগোলে মূল মন্দিরে প্রবেশের ফটক। পবিত্র মনে মন্দিরে ঢুকছে ভক্তরা।
ভেতরে একগুচ্ছ ভবন। একেকটা একেক নির্মাণশৈলীতে গড়া। কতো রঙ! কতো নকশা! প্রতিটিরই আলাদা আলাদা তাৎপর্য। পাথরের স্তম্ভে নকশা উৎকীর্ণ। গর্ভগৃহের সামনে সারি করে রাখা অতিকায় হস্তিদন্তগুলো যেন শ্রদ্ধায় নত। ছাদে ঝুলন্ত ঝাড়বাতি। নকশি ঝালর। কোথাও কাঠের, কোথাওবা পাথরের সিঁড়ি। কোথাও আবার সিঁড়িতেও ভাস্কর্য উৎকীর্ণ।
দোতলার গর্ভগৃহের সামনে প্রার্থনায় রত অগণিত ভক্ত। লাল, নীল পদ্মকলিসহ নৈবেদ্য হাতে নিয়ে মানুষের আসা-যাওয়ার মিছিলটা চলছে তো চলছেই। মন্দিরের ওপাশের চত্বরে সারি সারি প্রদীপে আলোর নৈবেদ্য। ক্যামেরার চোখে আলোর পবিত্রতা ধরবেন বলে আবীর আবদুল্লাহ ছুটলেন সেদিকে। পেছন পেছন শাকিল বিন মুশতাক।
এই মন্দির শ্রীলংকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ ঐতিহ্য। বুদ্ধের একটি দাঁতাবশেষ এখানে সুরক্ষিত। কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত সেই কক্ষটি ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয় বার্ষিক প্রার্থনা উৎসবের সময়, জুলাই মাসে। দাঁতটিকে তখন রাখা হয় স্তূপ আকৃতির সোনার পাত্রে। ক্যান্ডি শহরজুড়ে তখন বার্ষিক শোভাযাত্রার আড়ম্বর। গোটা শ্রীলংকা তো বটেই, সারা বিশে^র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই তখন তাদের এই মহাতীর্থের কাছে ছুটে আসতে চান। দ্বীপদেশ শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রাটা হয় তখন। এই শোভাযাত্রা ক্যান্ডি শহরকে শ্রীলংকার সাংস্কৃতিক রাজধানীর মর্যাদায় আসীন করার অন্যতম কারণ বৈকি।
বার বার সংস্কার হওয়ার পরও অপার সৌন্দর্য ধারণ করা দাঁতের মন্দিরকে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মর্যাদা দিয়েছে ইউনেস্কো।
এই দাঁতের মন্দির বা টুথ অব টেম্পল মূলত ক্যান্ডিয়ান রাজ্যের রয়াল প্যালেস কমপ্লেক্সের অংশ। অনতি দূরেই ছিল রাজার বসবাস। মন্দিরের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন তিনি। মন্দিরের বাদ্য-বাজনার সুরে মিশে থাকতো নানা ভাব ও ভাষার আবহ। বাদ্যের বিশেষ সুর শুনেই রাজা বুঝতেন কখন মন্দিরে আসতে হবে তাকে।
বর্তমান মন্দিরের খানিক উত্তরে রাজার মূল প্রাসাদের অস্তিত্ব এখনও বর্তমান। কিছু অংশে জাদুঘর। আরও উত্তরে উদাবাত্তা কেলে স্যাঙ্কচুয়ারি। শহরের ভেতরে এমন অভয়ারণ্য বিরলই বটে।
মন্দিরের পূর্বদিকে ক্যান্ডি লেক। জল ছুঁয়ে অনবরত উড়ছে পাখির ঝাঁক। ভর সন্ধেতেও নীড়ে ফেরার নাম নেই। লেকের পাড়জুড়ে সমবেত দর্শনার্থীরা বিমুগ্ধ বিস্ময়ে দেখছে পাখিদের উড়াউড়ি। দলপতি আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল দলের অন্য সদস্যদের খোঁজ করছিলেন। একটু পরই এসে হাজির হলেন তারা। মূল দলের সঙ্গে মন্দিরে ঢোকেননি।
ট্যুরিজম কর্মকর্তা জুদে মুরসালিনকে নিয়ে ক্যান্ডির কাঁচাবাজার দেখতে গিয়েছিলেন সাজ্জাদ হোসেন ও আজিম খান রনি। তারা ‘লাল কলা’র ছবি তুলে নিয়ে এসেছেন। সাধারণ কলা দশ টাকা হলে এই কলা বিকোয় প্রতি পিস ৪০ টাকায়। পৌরুষ বর্ধক হিসেবে নাকি ভালো কাজ করে। শ্রীলংকায় আসার পর থেকেই এই নিয়ে হাসি-মশকরা চলছে। এমন শক্তিবর্ধক থাকতেও কেন গোটা শ্রীলংকার জনসংখ্যা এক ঢাকা শহরের জনসংখ্যাকেই ছাড়াতে পারছে না তা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা নেহায়েত কম হয়নি। আর এক প্রস্ত হাসির রোল পড়লো সবার ভেতরে।
লেকের পাড় ঘুরে ছুটলো ট্যুরিস্ট বাস। ডিনার হলো পাহাড়ের ওপরেই ছোট একটা টিলার মাথায়। হোটেল আর্লস রিজেন্সির এক সুন্দর রেস্তোরাঁয়। লাইফ মিউজিকের আবহে নানা পদের খাবারের বুফে আয়োজন। এক কোনায় শ্রীলংকার স্পেশাল খাবার কত্তুরোটি তৈরি হচ্ছে। তপ্ত তাওয়ার ওপর রুটি ডিমভাজি, নানা পদের সবজি দিচ্ছেন শেফ। দুই হাতে দুই ছুরি নিয়ে সেগুলো অনবরত কেটে চলেছেন। সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে দেখতে ক্ষুধা বাড়তে থাকে।
ডিনার শেষে ফের পথে গড়ায় ট্যুরিস্ট বাস। এবার দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে মহাবেলি গঙ্গা পার হয়ে থামে বুলেটের মতো শেপ নেওয়া আর একটা বদ্বীপে, পাহাড়ের কোলে।
জুলাই থেকে বর্ষা শুরু হয় ক্যান্ডিতে। এখন ফেব্রুয়ারির শেষ প্রায়। সন্ধ্যার পর থেকে ক্যান্ডির আকাশ তবু মেঘলা। আর্লস রিজেন্সি হোটেলে পৌঁছানোর খানিক পরই ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হলো। বাতাসের বেয়াড়াপনা নেই, বাওছিটানি নেই। চারতলার বারান্দায় বসে সুন্দর বৃষ্টি উপভোগ করা যায়।
পাহাড়ের কোলে কয়েকটা ভবন নিয়ে পাঁচ তারকা হোটেল আর্লস রিজেন্সি। ভবনগুলো ছাদযুক্ত ওয়াকওয়েতে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। পুরো কম্পাউন্ডটাই ইতিহাস ও ঐতিহ্যে মোড়া, প্রকৃতিবান্ধব। পাহাড় না কেটে ঢালের উচ্চতার সঙ্গে সমন্বয় করে ভবন বিন্যাস। তাই সব স্থাপনা একই সমতলে নয়। ওপরের ঢালে দোতলা হলে, নিচের ঢালে চারতলা ভবন। কী অভূতপূর্ব সমন্বয়!
সামনে রিসিপশন ভবনের ওপাশে আরও উঁচু পাহাড়ি ঢালে সারি সারি আলো। ঢালজুড়ে বসবাসের চিহ্ন। আলোমালার পেছনে রাতের আঁধার মেখে কালচে হয়ে আছে পাহাড়টা। মাঝরাত অবধি একটা জম্পেশ আড্ডার পর গভীর ঘুম।
কাক ডাকা ভোরে বিছানা ছাড়তেই সঙ্গী প্রকৃতি। রাতের বৃষ্টিধোয়া গাছের পাতাগুলো সকালের আলোয় হাসছে। ভেজা বুনোপথে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছেন কেউ কেউ। নিচের সুইমিংপুলে ইউরোপীয় ললনাদের জলকেলি। ইউক্রেনে সদ্য যুদ্ধ বাধিয়ে দিলেও রাশিয়ান ট্যুরিস্টের ঢল থামেনি শ্রীলংকায়। বেড়াতে এসে ওরা আয়েশ করতে জানে। কিন্তু বাংলাদেশি ভ্রামণিকদের সে ফুরসত কোথায়। তড়িঘড়ি নাস্তার টেবিলে ছুটলো সবাই।
একটু পর ফের মহাবেলি পার হয়ে ক্যান্ডি শহরে। পূর্ব দিকে গেলে এই রাস্তাতেই পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। কিন্তু এবারের যাত্রাটা তার বিপরীতে, মানে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। আড়াআড়িভাবে শহরটা পার হয়ে পশ্চিম প্রান্তে পেরাডেনিয়া রয়াল বোটানিক্যাল গার্ডেন। ক্যান্ডিকে বেড় দেওয়ার আগে দক্ষিণ থেকে এসে এখানে একটা ইউ আকৃতির শেপ নিয়েছে মহাবেলি। তারপর উত্তরে ছুটেছে ক্যান্ডি শহরকে ডানে রেখে।
এখানকার এই ইউ আকৃতির বেড়েই পেরাডেনিয়া গার্ডেন। পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক দিয়ে মহাবেলি বেষ্টন করে রেখেছে পেরাডেনিয়াকে। দক্ষিণের প্রবেশ পথ দিয়েই মূল বাগানে ঢুকতে হয়।
এই পেরাডেনিয়া তাবৎ এশিয়ার মধ্যেই অন্যতম সেরা বোটানিক্যাল গার্ডেন হিসেবে বিবেচিত। দর্শনীয় এই বাগানের গোড়াপত্তন প্রায় সাড়ে ছয়শ বছর আগে। ১৩৭১ খ্রিষ্টাব্দে। গার্ডেনের আর্কাইভে এর ইতিহাস লিপিবদ্ধ। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৩৭১ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন রাজা তৃতীয় বিক্রমাবাহু। তার রাজসভা স্থাপন করেন মহাবেলি নদীর তীরে। রাজসভার কাছে শুরু হয় এক বাগানের শুভযাত্রা। তবে কোনো এক রানির জন্য এই বাগানের জন্ম বলেও মত মেলে।
১৭৪৭ থেকে ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সিংহাসনে আসীন হন রাজা কীর্তি শ্রী রাজসিংহে। তার সময়ে এটি রাজবাগানের মর্যাদা পায়। ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজা রজধি রাজাসিংহে এখানে বসবাস করেন। তার আগে রাজা বিমলা ধর্মসুরিয়া এখানে যে বিহার ও স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন সেগুলো সংস্কার করেন রাজা রজধি।
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে অনেক যুদ্ধ আর আগ্রাসনের শিকার হয় পেরাডেনিয়া গার্ডেন। মহাবেলি নদীর উত্তর তীরে গণরূপাতে রাজা দ্বিতীয় রাজসিংহের সঙ্গে পর্তুগিজদের ঐতিহাসিক যুদ্ধ হয়। আরও পরে ইংরেজরা ক্যান্ডি দখল করলে অনেক কিছুর সঙ্গে ধ্বংস করা হয় পেরাডেনিয়ার বিহার ও স্তূপ। নানা সময়ে এই বাগানের স্থানান্তরও ঘটেছে কয়েক দফা। অনেক অস্থির সময় পাড়ি দিয়ে পেরাডেনিয়া ফিরেছে তার ভিত্তিভূমিতে। ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে আলেকজান্ডার মুন এই গার্ডেন পুনর্গঠন করেন। সেই বাগান এখন আরও অনেক বেশি বিস্তৃত। এখানে এখন অনেক প্রজাতির বৃক্ষরাজি, পুষ্পমালার সমাবেশ।
বর্তমানে প্যারাডেনিয়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের আয়তন ১৪৭ হেক্টর। আছে চার হাজার প্রজাতির গাছ। পাম প্রজাতির গাছই আছে দুশ’রও বেশি। আছে দর্শনীয় অর্কিড কালেকশন। ফুলের আধিক্য ছাড়াও আছে ওষুধি ও মসলা প্রজাতির নান্দনিক প্রদর্শনী। পাম গাছের ছায়াঘেরা পথ মন জুড়িয়ে দেয়।
মূল গেট দিয়ে ঢুকে একটু এগোতেই বিপুল বিস্ময়ে থামতে হয় ডাবল কোকোনাট বৃক্ষের নিচে। একগুচ্ছ গাছে ঝুলে আছে সিসিলির অতিকায় ডাব। ডাবল কোকোনাট বলতে কেউ যদি শ্রীলংকার জনপ্রিয় কিং কোকোনাটের দুই গুণ বুঝে থাকেন, তাহলে মস্ত ভুল হয়ে যাবে। এই ফল সাধারণ ডাবের চেয়ে কয়েকগুণ বড়ো। একটা নারিকেল পরিপক্ক হতে সময় লাগে বছর পাঁচেক। দামও তাই আকাশছোঁয়া। পৃথিবীর বৃক্ষরাজির বৃহত্তম বীজ উৎপাদনের ক্ষমতা এই প্রজাতির নারকেল গাছই দেখিয়ে যাচ্ছে।
ডাবল কোকোনাটের সঙ্গ ছেড়ে বাঁয়ের পথ ধরে আরও এগোতে একটা লেক। শ্রীলংকার মানচিত্রের আদলে গড়া। ভালো করে দেখলে মনে হবে, গোটা শ্রীলংকা দ্বীপটাকেই শুইয়ে রাখা হয়েছে এখানে। কেবল জলবেষ্টিত স্থলের বদলে স্থলবেষ্টিত জলদ্বীপ। প্রান্তজুড়ে জলগুল্ম। অন্যতম আকর্ষণ নীল নদ অববাহিকার প্যাপিরাস। কাগজের তৈরির জন্য যার খ্যাতি জন্ম থেকেই শুনে আসা। আর একটা অন্যতম দর্শনীয় উদ্ভিদ হলো পানিকলা। লেকজুড়েই নানা প্রজাতির ওয়াটার লিলি।
লেকের অদূরে নানা প্রজাতির বাঁশঝাড়। বার্মা থেকে আনা পৃথিবীর দীর্ঘতম বাঁশ। প্রায় ৪০ মিটার উঁচু। ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার বেড়। কচি বাঁশগুলো দিনে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার করে বাড়ে। যেন দ্রুত বড় হতে হতে আকাশ ছুঁতে চায়। এমন মহাবাঁশ ছাড়াও আছে হলুদ বাঁশ, পালকপাতা বাঁশ, কাঁটা বাঁশ। মোট সাত প্রজাতির বাঁশ আছে এখানে। আকাশছোঁয়া ডগাগুলো বাতাসে দুলে যেন অভিবাদন জানাচ্ছে দর্শনার্থীদের।
সামনে অতি সুন্দর একটা পামবন পেরিয়ে ডানে উন্মুক্ত চত্বর। দুই একরজুড়ে সবুজ ঘাসের গালিচা। এর নাম গ্রেট লন। মাঝখানে জীবন্ত ছাতার মতো ছায়া ছড়িয়ে রেখেছে জাভার ডুমুর গাছ। গ্রেট লনের ওপাশে বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অস্তিত্ব পাওয়া গেল। শ্রীলংকায় এসে স্মারক হিসেবে একটা গাছ রোপন করেছিলেন তিনি। সেই গাছ এখন আশেপাশের আর সব গাছের মাথা ছাড়িয়ে যেতে চাইছে।
গ্রেট লন ছাড়াতেই একটা মহিরুহ। বহুধাবিভক্ত শাখা-প্রশাখায় অদ্ভুত সুন্দর নকশা গড়ে রেখেছে। একটা ডাল নেমে এসে বসার আসন বানিয়ে রেখেছে যেন। সেখানে বসে-দাঁড়িয়ে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করার জন্য ভিড় জমেছে দর্শনার্থীদের। কেউ ছবি তুলছেন, তো কেউ দাঁড়িয়ে আছেন সিরিয়াল পাওয়ার অপেক্ষায়।
সামনে আর একটা পাম এভিনিউ। শ্রীলংকার পামগাছগুলো বাংলাদেশের তুলনায় সরু, লম্বা। ২১ মিটার উঁচু হয় একেকটা। এখানেও তার ব্যতিক্রম দেখা গেল না। এই বাগানে পাম এভিনিউ আছে তিনটি। অনন্য ফ্লাওয়ারিং ট্রি সমাবেশের মধ্যে রয়েছে ২০ হেক্টরজুড়ে আট হাজার আরবোরিটাম।
ফ্লাওয়ারিং ট্রি গার্ডেনের পাশেই শত প্রজাতির ফার্নের সমাবেশ। আছে রকমারি পুষ্পশোভিত ফুলবাগান। নানা প্রজাতির ক্যাকটাস। মসলা বাগানে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দেরও আগে রোপিত বৃক্ষ। বিশ^জুড়ে খ্যাতি কুড়ানো মরিচ আর দারুচিনি বৃক্ষের প্রদশর্নী।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও ডিউক অব এডেনবুর্গ শ্রীলংকা সফরে এসেছিলেন ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে। সে বছরের ২৪ অক্টোবর তারা একটা অশোক গাছ রোপন করেছিলেন এখানে। একই বছরের ৫ মার্চ জাপানের ক্রাউন প্রিন্স আকিহিতো ও ক্রাউন প্রিন্সেস মিকিহিতো রোপন করেছিলেন ইয়োলো ট্রামপেট ট্রি। দুটো গাছই পাশাপাশি। বয়সে কয়েক মাস বড় ট্রামপেট ট্রি শাখা বাড়িয়ে যেন আগলে রেখেছে অশোক গাছটাকে। শ্রীলংকায় যার পরিচিতি দুঃখহীন বৃক্ষ নামে। গাছটির ঘনপাতার ফাঁকে লালচে ফুলের উঁকি। অদূরে অর্কিড হাউসে পৃথিবীর বৃহত্তম অর্কিড। বেরোনোর মুখে বিক্রয় কেন্দ্রে হস্তশিল্পের রকমারি পসরা।
এরই মধ্যে দিনের দ্বিতীয় প্রহর পার হতে চলেছে। ফের যাত্রা শুরু হতে না হতেই আর একবার থামতে হলো মহাবেলির পাড়ে। গাছপালার ফাঁকে কুলকুলিয়ে বইছে মহাবেলি। এবারের যাত্রা এই মহাবেলিরই উৎস্য মুখের পাশে। শ্রীলংকার শীতল শহর নুয়ারা এলিয়ায়।