পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। শ্রীমঙ্গল শহরটা ছোট, তবে বেশ গোছানো। এই শহরের বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সব স্থাপনার মধ্যেই নান্দনিকতার ছাপ আছে। শহরের বেশির ভাগ জায়গাজুড়েই রয়েছে চা-বাগান। এখানে আপনি যেদিকেই তাকাবেন, দেখবেন চায়ের বাগান, যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। যতদূর চোখ যায় কেবল সবুজের হাতছানি। চা বাগানের সারি সারি টিলা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঘন সবুজ অরণ্যের অপরূপ সৌন্দর্য। এ নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে বেড়ানো যায় বারো মাসজুড়েই। তাই ছুটি কাটানোর জন্য বা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়ানোর জন্য চমৎকার জায়গা হতে পারে শ্রীমঙ্গল।
এখানে যেমন বনভূমি রয়েছে; তেমনি রয়েছে হাওড় আর বিল। পাশাপাশি আদিবাসী খাসিয়া, মনিপুরী, গারো, টিপরা-এদের বাড়িঘরও রয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চা জাদুঘর, টি রিসোর্ট, ডিনস্টন সিমেট্রি, চাকন্যা ভাস্কর্য, নির্মাই শিববাড়ি, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, খাসিয়াপুঞ্জি, টিপরা পল্লী, মনিপুরী পাড়া, গারো পল্লী, নীলকণ্ঠ টি কেবিন, বার্নিস টিলা, গলফ কোর্স, পাখি বাড়ি, বাদুর বাড়ি, লালমাটি পাহাড়, রাবার বাগান, আনারস বাগান, মাধবপুর লেক, হাইল হাওড়, বাইক্কা বিল প্রভৃতি।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
লাউয়াছড়া উদ্যান মৌলভীবাজারের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ (কমলগঞ্জ) সড়কের পশ্চিম পাশে জাতীয় এ উদ্যানের প্রবেশপথ।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এ উদ্যানকে প্রাকৃতিক জাদুঘর বললেও কম হবে। বিভিন্ন প্রকার গাছগাছালি ও পশুপাখি এ বনের শোভা আরও বৃদ্ধি করেছে। সুন্দরবনের পরপরই পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
এই বনে রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ বন্যপ্রাণী ও গাছপালা। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ২৪৬ প্রজাতির পাখি।
এই উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক। এছাড়া চশমা বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, মেছো বাঘ, শিয়াল, মায়া হরিণ ইত্যাদিও দেখা যায় এই বনে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেললাইন। এই জায়গাটি দর্শনার্থীদের কাছে খুব প্রিয়। এছাড়া লাউয়াছড়া যাওয়ার পথে চোখে পড়বে চা-বাগান, উঁচু-নিচু টিলা, আনারস, লিচু ও লেবু বাগান। রাস্তার দুই পাশেই সবুজের ছড়াছড়ি, মনে হবে যেন সবুজের একটি স্বর্গরাজ্য।
উদ্যানে বেড়ানোর তিনটি পথ আছে। একটি তিন ঘণ্টার, একটি এক ঘণ্টার এবং অন্যটি আধ ঘণ্টার পথ। উদ্যানের ভেতরে একটি খাসিয়া পল্লীও আছে।
কীভাবে যাবেন
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণে প্রথমে যেতে হবে চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল। সেখান থেকে অটোরিকশা, জিপ কিংবা গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে।
ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ, শ্যামলী, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি পরিবহণের এসি/ নন এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে থেকে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী ও উপবন এক্সপ্রেস। চট্টগ্রাম থেকে বাসে বা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন চলাচল করে। আকাশপথে ভ্রমণ করতে চাইলে ঢাকা থেকে সিলেটে গিয়ে সড়ক পথে শ্রীমঙ্গলে যেতে পারবেন।
টিকিট
উদ্যানে টিকিট কেটে প্রবশে করতে হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে পার্কিংয়ের জন্য টাকা গুনতে হবে। কেউ গাইড নিতে চাইলে এখানে তিন ক্যাটাগরির গাইড পাবেন।
কোথায় থাকবেন
শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্যে রয়েছে বেশ কিছু সুন্দর মনোরম রিসোর্ট। আছে চা বাগানঘেঁষা অনেক কটেজ ও সরকারি বেসরকারি গেস্ট হাউস। শ্রীমঙ্গল শহরেও রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল। আপনার চাহিদা মতো যে কোনো জায়গায় থাকতে পারবেন।
খাওয়ার ব্যবস্থা
উদ্যানের ভেতরে বা আশপাশে খাবারের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে সঙ্গে কিছু হালকা খাবার নিতে পারেন। শ্রীমঙ্গল ফিরে খেতে হবে। সেখানে নানা ধরনের রেস্তোরাঁ আছে।
মনে রাখবেন
* উদ্যানের ভেতর যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
* বেশি হৈ চৈ করবেন না।
* বন্যপ্রাণীদের স্বাভাবিক চলাফেরা যেন ব্যাহত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
* ভ্রমণের ক্ষেত্রে জোঁক ও সাপ থেকে সতর্ক থাকুন।
* অপরিচিত কারো সাথে একা বনের গভীরে যাবেন না।
চা-বাগান
৪৫০ কিলোমিটার আয়তনের শ্রীমঙ্গলকে বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী বলা যেতে পারে। এখানকার মাইলের পর মাইল বিস্তৃত চা বাগান দেখে মনে হয় পাহাড়ের ঢালে সবুজ গালিচা বিছানো। দেশের সবচেয়ে উন্নতমানের চা এখানেই উৎপন্ন হয়। এখানকার বেশকিছু চা বাগানের নজরকাড়া সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে চলেছে।
শ্রীমঙ্গলের প্রবেশ পথে ‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্য দৃষ্টি কাড়বে। জেলা প্রশাসনের তৈরি এই ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে সাতগাঁও চা-
বাগানের সহায়তায়। এই ভাস্কর্যের সামনে থেকেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে সাতগাঁও চা-বাগান।
এছাড়া পথ চলতে চলতে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে সজীব করবে চা পাতার গন্ধ। রাস্তাার দুন পাশে সারি সারি চা-বাগান যেন সবুজ চাদরে মোড়া কোনো এক স্বপ্নীল ভূমি। যে দিকে যাবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। এর পর্যটন স্পটগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকে।
কখন যাবেন
সাধারণত মে মাসে চা-পাতা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত চলে। এ সময় কর্মচঞ্চল চা বাগান সবুজে পরিপূর্ণ থাকে। চা-শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা দেখতে চাইলে মে থেকে অক্টোবরে ঘুরে আসতে পারেন শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগান থেকে। এছড়া বছরের যে কোনো সময় ঘুরতে যেতে পারেন চা-বাগানগুলোতে।
হাইল হাওড়
মৌলভীবাজার জেলা সদর, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত জলাভূমির নাম হাইল হাওড়। ঐতিহ্যবাহী এই হাওর প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব বৈচিত্র্য ও জীবন জীবিকার বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। হাইল হাওড়ে দেশি-বিদেশি নানা জাতের পাখি, শামুক, ঝিনুক, ফোকল, ঘাস, শাপলা, শালুক, উকল, হিজল-করচ গাছ ইত্যাদি এবং বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল। এই হাওড়ে প্রায় ৯৮ প্রজাতির মাছ ও প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। ১০ হাজার
হেক্টরের এই হাওড়ে প্রচুর লতা ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ থাকার কারণে স্থানীয়দের কাছে এটি লতাপাতার হাওড় নামেও পরিচিত।
হাওড়ের চিরায়ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নীল আকাশ ও পানির মিতালী যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির বাস্তব রূপ। তাই হাওড়ের বুকে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বর্ষাকাল হাওড়াঞ্চল ভ্রমণের সবচেয়ে আদর্শ সময়। তবে যদি নানা পজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখর হতে চান তাহলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ভ্রমণ করতে পারেন।
যাওয়ার উপায়
শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কে অবস্থিত কালাপুর বাজার হয়ে বরুনা-হাজিপুর পাকা রাস্তা ধরে হাজিপুর বাজারে যেতে হবে। স্থানীয়দের কাছে এই বাজারটি ঘাটেরবাজার নামে পরিচিত। ঘাটেরবাজার থেকে যেকোন স্থানীয় যানবাহন কিংবা পায়ে হেঁটে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাইল হাওড়ে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
হাইল হাওড়ের কাছেই শ্রীমঙ্গলের অবস্থান। আর শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে।
বাইক্কা বিল
হাইল হাওড়ের পূর্ব পাশে অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে বাইক্কা বিলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর হাজার হাজার পাখির কলতানে মুখরিত থাকা এই বিলে রয়েছে বালি, বুনো হাঁসের বসতি ও গরু-মহিষের বিশাল চারণ ভূমি। বর্তমানে হাওড়টি ৮০ প্রজাতির মাছ, ১৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ ও প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখির নিরাপদ আবাসস্থল।
১০০ হেক্টরের এই জলাভূমিতে পানকৌড়ি, কানিবক, ডাহুক, জল মোরগ, ধলাবক, ধুপনিবক, রাঙ্গাবক, মাছরাঙ্গা, গোবক, শঙ্খচিল ইত্যাদি পাখি রয়েছে। বিলের বিশাল জলরাশিতে হিজল, কলমি, নযনকারা, পানা, শাপলা, নীল পদ্ম, সিংড়া ও মাখনার মতো নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ রয়েছে।
বাইক্কা বিলকে মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের পর এই বিলকে ঘিরে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে। প্রতি শীতে বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে দূর দূরান্ত থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে ভিড় জমান। ভ্রমণপিপাসুদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সুবিধার্থে বিলের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে একটি দ্বিতল অবজারভেশন টাওয়ার। ওয়াচ টাওয়ার থেকে ঘন সবুজ বন ও পুরো বিলের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
মাধবপুর লেক
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত সৌন্দর্যের লীলাভূমি মাধবপুর লেক। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে এই লেকের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। ১৯৬৫ সালে চা বাগানের টিলায় বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে এই লেক তৈরি করা হয়। প্রায় ৫০ একর আয়তনের মাধবপুর হ্রদের দৈর্ঘ্য তিন কিলোমিটার। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব।
ছোট-বড় পাহাড়ের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকাভাবে বয়ে চলেছে লেকটি। লেকের মাঝে ফুটে থাকা হাজারো বেগুনি শাপলার সৌন্দর্য দেখে শুধু মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকতে হয়। ছবির মতো সুন্দর সারি সারি চা গাছ বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে উঁচু উঁচু টিলা, গাঢ় সবুজ পাহাড় আর মাথার ওপর সুনীল আকাশ। লেকের স্বচ্ছ নীলাভ জলে আকাশের প্রতিবিম্ব আর ফুটে থাকা অসংখ্য শাপলা-শালুকের অলংকরণ যেন শিল্পীর কল্পনার রঙে আঁকা কোনো নিখুঁত ছবি। সবুজ পাতার সতেজ গন্ধ আর চা বাগানের মনোরম দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের আনমনে নিয়ে যায় এক ভিন্ন জগতে। মাধবপুর লেকটি যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়া এক নৈসর্গিক সৃষ্টি। শীতকালে এই লেকে অনেক অতিথি পাখির আগমন ঘটে। মাধবপুর লেকে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভ্রমণকারীরা অবস্থানের সুযোগ পান।
কীভাবে যাবেন
শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত মাধবপুর লেক। প্রথমে শ্রীমঙ্গল থেকে বাস অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমোহনা হয়ে মাধবপুর লেক যেতে পারবেন। এছাড়া শ্রীমঙ্গল চা বাগানের কাছ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিয়েও মাধবপুর লেকে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়া আরও কম খরচে চাইলে শহরে নানা মানের হোটেল আছে।
কোথায় খাবেন
এাধবপুর লেকের আশেপাশে খাবারের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বে কিছু হালকা খাবার সাথে নিতে পারেন। এছাড়া শ্রীমঙ্গল শহরে ফিরে খেতে হবে।
মনিপুরী পল্লী
মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গলের কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নে মনিপুরী সম্প্রদায়ের কাপড়ের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মণিপুরী পল্লী। স্থানীয় মনিপুরীরা এখানে নিজেরা কাপড়ের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে। দেশ বিদেশে মনিপুরী পণ্য সমূহের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এছাড়া নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কারণেও মনিপুরীদের সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী।
প্রতিবছর নভেম্বর মাসে অগ্রহায়ণের শুরুতে মনিপুরী পল্লীতে বসে আকর্ষণীয় রাসমেলা। এই মেলায় দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন। দশনার্থীরা এ সময় কিনতে পারেন মনিপুরী শাল, চাদর, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ব্যাগ, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ইত্যাদি। মনিপুরীদেও তৈরি করা বিভিন্ন জিনিসের দেশে বিদেশে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। আর এ কারণেই রাসমেলা অথবা মনিপুরী পল্লীতে না যেতে পারলেও এখানকার দোকানেই আপনি এসব মনিপুরী পণ্য পেয়ে যাবেন। মাধবপুরে রয়েছে একটি মনিপুরী সাংস্কৃতিক একাডেমি।
পর্যটকদের কাছে শ্রীমঙ্গলের পাহাড়, চা বাগান এবং অরণ্যভূমির নয়নাভিরাম দৃশ্যের পাশাপাশি মনিপুরীদের জীবন ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি বেশ উপভোগ্য। বিশেষ করে মনিপুরি সম্প্রদায়ের নাচের রয়েছে আলাদা খ্যাতি। এ নাচের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়। কোনো পর্যটক পৃথিবীর এই প্রান্তে আসলে তঁকে অবশ্যই মনিপুরী নৃত্য দেখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত।
কীভাবে যাবেন
শ্রীমঙ্গল থেকে সুবিধা মতো যেকোনো স্থানীয় যানবাহন ভাড়া নিয়ে আদমপুরের মনিপুরী পল্লীতে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন/ কী খাবেন
রাতযাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মানের অসংখ্য আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এসব জায়গাতেই খাবারের সুব্যবস্থা আছে।
চা জাদুঘর
চা বাগানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে টি বোর্ডের উদ্যোগে ২০০৯ সালে শ্রীমঙ্গলে চা রিসোর্ট ও জাদঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের চা শিল্পের প্রায় দেড়শ বছরের প্রাচীন ইতিহাস এবং চা চাষ সম্পর্কিত সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চা গবেষণা কেন্দ্রের কাছে চারটি কক্ষে ৪৪টির অধিক সংগ্রহ ও স্মারকের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই চা জাদুঘরকে। চা জাদুঘরের পাশে মনোমুগ্ধকর টি-রিসোর্টের অবস্থান।
চোখ জুড়ানো সবুজ চা বাগানে ঘেরা এই জাদুঘরে ব্রিটিশ শাসনামলে চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ব্রিটিশ বাংলোয় ব্যবহৃত শতাধিক আসবাপত্র, চা প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রপাতি, চা-বাগানের ম্যানেজার ও চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত জিনিস, প্রাচীন রৌপ্য ও তাম্য মুদ্রাসহ বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন স্থান পেয়েছে।
চা জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়।
কীভাবে যাবেন
শ্রীমঙ্গল হতে ইজিবাইক বা অটোরিকশা নিয়ে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চা জাদুঘর।
কোথায় থাকবেন
চা জাদুঘরের পাশেই রয়েছে চা-বাগানঘেঁষা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন টি-রিসোর্ট। অগ্রিম বুকিং দিয়ে এখানে থাকা যায়। এছাড়া কম খরচে রাতযাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলে বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন
শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন হোটেল আছে। সেখান খাবার বেশ জনপ্রিয়। তবে রিসোর্টে থাকলে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। আর শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসলে অবশ্যই সাত রঙের চায়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।