লেখকঃ আকতারুজ্জামান কামাল (কলামিস্ট, বন্যপ্রাণী ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ)
নদীপথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন লেখক আকতারুজ্জামান কামাল। কলামিস্ট, বন্যপ্রাণী ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ এই মানুষটি আজ আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। তার ‘ঐতিহ্যের নৌ ভ্রমণ’ লেখাটি ২০০৫ সালে পর্যটন বিচিত্রার সূচনা সংখ্যায় প্রকাশ হয়েছিল। প্রয়াত এই লেখকের স্মরণে তার ভ্রমণ কাহিনিটি আবার প্রকাশ করা হলো।
কলামিস্ট, বন্যপ্রাণী ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ এই মানুষটি আজ আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। তার ‘ঐতিহ্যের নৌ ভ্রমণ’ লেখাটি ২০০৫ সালে পর্যটন বিচিত্রার সূচনা সংখ্যায় প্রকাশ হয়েছিল। প্রয়াত এই লেখকের স্মরণে তার ভ্রমণ কাহিনিটি আবার প্রকাশ করা হলো।
কুয়াকাটা সি-বিচের নাম সে সময় খুব বেশি পরিচিত হয়ে উঠেনি। কিন্তু দক্ষিণ বাংলার পটুয়াখালীর সর্ব দক্ষিণে নদী-খাল বেষ্টিত দুর্গম অঞ্চলের যাতায়াতের হদিস কেউ সঠিকভাবে দিতে সমর্থ হলো না। পর্যটন করপোরেশনের তালিকায় তখন পর্যন্ত কুয়াকাটার কোনো নামগন্ধই ছিল না। অনেক তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনার পর ঠিক হলো রকেট স্টিমারে বরিশাল পর্যন্ত গিয়ে ওখান থেকে গাড়ি ব্যবস্থা করে পটুয়াখালী পৌঁছানো। তারপর কুয়াকাটা খুঁজে নিতে আর কতক্ষণ? একবার দরজা খুঁজে পেলে চৌকাঠ ডিঙাতে কেউ ভাবে না। ঢাকার সদরঘাট থেকে সরাসরি লঞ্চে পটুয়াখালী পৌঁছানো যায়। কিন্তু লঞ্চের ফার্স্ট-ক্লাস কেবিনের সুরতহাল দেখে রেজা ভাই ও নান্টু দুজনেই নদীপথে লঞ্চে ২৫-৩০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার প্রস্তাব বাতিল করে দিলেন। তাই বলে চাওয়ামাত্র রকেট স্টিমারের ফার্স্ট-ক্লাসের টিকিট পাওয়া কি চাট্টিখানা কথা! কমপক্ষে সপ্তাহখানেক আগে থেকেই বুকিং করে না রাখলে রকেট স্টিমারের কেবিন পাওয়া যায় না। আবার ভালো স্টিমারে কেবিন পেতে হলে কবে কোন স্টিমার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে- এসব তথ্য জেনে নিয়ে তবে বুকিং করতে হবে। না হলে কেবিন পেলেও পস্তাতে হবে। এই রকেট সার্ভিসে বেশ কয়েকটি স্টিমার রয়েছে। ভাড়া সমান হলেও সব স্টিমারের মান-মর্যাদা এক সমান নয়। শূদ্র, ব্রাহ্মণের মতো যথেষ্ট তফাৎ রয়েছে। অস্ট্রিচ, মাসুদ, গাজী স্টিমারগুলোর কেবিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও অন্য স্টিমারগুলো সাধারণ মানের। ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে নদীপথে যাতায়াতে অবশ্য রকেট স্টিমারের বিকল্প আধুনিক যাত্রীবাহী লঞ্চ রয়েছে। দ্বীপরাজ, অ্যাটলাস, সাগর, পারাবত- এমন ধরনের বেশকিছু লঞ্চ কোম্পানি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন চালু করেছে, ভাড়াও তুলনামূলক অনেক কম। রকেট স্টিমারে টুইন বেড কেবিনের ভাড়া যেখানে ৯০০ টাকা, সেখানে লঞ্চে বড়জোড় ৬০০ টাকা খরচ করলে সহজেই কেবিন পাওয়া যায়। তবে রকেট স্টিমারে ভ্রমণে যে আয়েশি মেজাজ থাকে, লঞ্চের কেবিনে তার ছিটেফোটাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশেষ ধরনের যাত্রী যাদের কাছে টাকার চেয়ে সময়ের মূল্য বেশি, তাদের জন্য রয়েছে আকাশপথে বিমান সার্ভিস। মাত্র হাজার টাকার বিনিময়ে এক ঘণ্টায় পৌঁছানো যায় বরিশালে।
গাজীর প্রশস্ত ফ্রন্ট ডেকের গার্ডেন চেয়ারে বসে চা পান করতে করতে স্টিমার বুড়িগঙ্গা ব্রিজ, পাগলা ঘাট পেরিয়ে এসেছে। নদীর দুপাড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডকইয়ার্ড, নির্মাণ কারখানা, সিমেন্ট, গরান কাঠ বিক্রয় কেন্দ্র ছাড়াও বিচিত্র ধরনের শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এর ওপর রয়েছে শত শত মালবাহী কোস্টার-বার্জ ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জলযানের ভাসমান অবস্থান। এমনিতেই নদীর প্রবাহ বলতে অনেক বছর ধরে উজানে অবরুদ্ধ, এর ওপর অবৈধ দখলদারির আগ্রাসনে বুড়িগঙ্গা যৌবন হারিয়ে সত্যিকারের এক জীর্ণশীর্ণ বুড়িতে রূপান্তর হয়েছে। বিশাল গাজী স্টিমারের সারেং অনবরত সিটি বাজিয়ে নদীর বুকে চলমান নৌকা, ট্রলার এবং জলযানকে রীতিমতো শাসিয়ে পথ পরিষ্কার জন্য হুঙ্কার দিচ্ছিল। ডেকে চেয়ারে বসে আর বেশিক্ষণ নদী পাড়ের বিচিত্র জনপদের দৃশ্য উপভোগ করা সুযোগ রইল না। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসতেই আলোকোজ্জ্বল বৈদ্যুতিক বাল্বের ইতস্ত বিচ্ছিন্ন ঝলক ছাড়া আর সবকিছুই ধীরে ধীরে মুছে গিয়ে আলো-অন্ধকার রহস্যময়তায় ঢেকে গেল।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সদরঘাট থেকে রকেট স্টিমার ছাড়ার সময় সকাল সাড়ে ৮টার স্থলে ৬টায় পরিবর্তন করা এবং নদীপথের কম বিপর্যয়ের মুখে স্টিমারে চড়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশের গ্রামীণ দৃশ্য উপভোগ করার তেমন সুযোগ থাকে না। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত এ আকর্ষণীয় পথটুকু রাতের অন্ধকারে আড়াল হয়ে থাকে। অথচ এককালে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ^রী, প্রলয়ংকারী মেঘনার গভীর খাড়ি বেয়ে রকেট স্টিমার স্টিম-ইঞ্জিনের ভোঁ বাজিয়ে জমজমাট চাঁদপুর বন্দরে জাহাজ ভেড়াতো। সে সময়কার লাল ফতুয়া গায়ে বিহার উড়িষ্যার পশ্চিমা মুলুক থেকে আসা কুলিদের হাকডাকে গমগম করে উঠতো বন্দর এলাকা। অজ¯্র টুকরি ইলিশ, রুই, কাতল, পাঙ্গাশ, আইড়, বোয়াাল, গজার, চিতল এমনি কতো বিচিত্র ধরনের মাছ জাহাজের খোল থেকে খালাস হয়ে অপেক্ষমান ট্রেনে ভরতি হয়ে চালান হয়ে যেত দেশের আনাচে-কানাচে। ঘণ্টাখানেক বিরতির পর আবার যখন সেই স্টিমার ১৫-২০ মাইল প্রশস্ত ভয়ঙ্কর পদ্মা-মেঘনার মোহনায় উত্তাল ঢেউয়ের বুকে পাড়ি জমাতো, সেই বুক কাঁপানো অভিজ্ঞতার কথা প্রবীণরা কখনোই ভুলতে পারবে না। দিক চিহ্নহীন সেই উথাল পাতাল নদীর বুকে জলকবুতরের মতো ঢেউয়ের তালে দুলতে দেখা যেত শত শত ইলিশ মাছের নৌকা। কী প্রচ- সাহসী এবং বুকের পাটা ছিল এ সমস্ত শিকারী জেলেদের। সাদা, নীল, লাল নানা রং-বেরঙের পাল তুলে আসন্ন মৃত্যুকে তুচ্ছ করে উত্তাল ঢেউয়ের সমুদ্রঙ্গম পারাবার পাড়ি জমাতে তাদের মনে বিন্দুমাত্র ভয়ের লেশ দেখা যায়নি। বাংলাদেশের মতো এমন সাহসী মাঝি-মাল্লা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় কিনা আমার জানা নেই।
ইতিহাসের কালগুণে প্রমত্তা পদ্মা, উত্তাল মেঘনার বুকে স্তরে স্তরে পুঞ্জীভূত ধু ধু বালুচরের অমোঘ পরিবেষ্টনীতে পড়ে সেই সব পদ্মা-মেঘনার খাড়ি নির্জীব নিস্তেজ। নদীর বুকে দেখা যায় না রঙিন পালের বহর। দেখা যায় না ঢেউয়ের নাগরদোলায় চড়ে দুর্বার মাঝি-মাল্লার বাছারি বা ডিঙি নৌকার সাহসী যাত্রা। দেখা মেলে না গভীর সাগর থেকে নদীর স্রোতে চিরায়ত উজানি পথে ছুটে আসা কোটি কোটি ইলিশ মাছের ঝাঁক। নদী প্রবাহের উজানে স্বার্থবাদী মানুষের নির্দয় হস্তক্ষেপে রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ, নিস্তরঙ্গ হয়েছে নদীর গতিপথ, জঞ্জাল জমেছে ভাটি স্রোতের বাঁকে বাঁকে। রুদ্ধ অভিমানে এবং চিরায়ত চেনা পথ খুঁজে না পেয়ে ফিরে গেছে লক্ষ কোটি ইলিশের ঝাঁক। রুই, কাতল, বোয়াল ও পাঙ্গাশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে কলুষিত অনুজালের ভেতর তাদের বংশগত অভ্যাসের ডিম ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতাকে।
সে সময় পদ্মা-মেঘনার এ নদীপথে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত লঞ্চে বা অন্য কোনো জলযানের প্রচলন হয়নি। কয়লাচালিত একমাত্র প্যাডেল হুইলের এসব স্টিমার ছিল নদীপথে চলাচলের নিরাপদ বাহন। যেহেতু এই বিশাল বিস্তৃত জলপথ ছিল বিপদসংকুল, সে কারণে নারায়ণগঞ্জ বাদামতলী থেকে সব স্টিমার সকালে ছেড়ে দিনে দিনে এই পথ পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যা বা রাতের প্রথম ভাগেই পৌঁছে যেত বরিশাল ঘাটে। গভীর রাতে বরিশাল থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এসব স্টিমার কত নদী উপনদী পাড়ি দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সেসব এখন ইতিকথা। প্রবীণদের স্মৃতি রোমন্থনেই হয় তো বেঁচে আছে সেসব উজ্জ্বল দিনের ছবি।
ডিনার টেবিলে ফিশ কাটলেট, মুরগির কারি আর ডাল চচ্চরি খেয়ে রেজা ভাই তেলে বেগুনে জ¦লে উঠলেন। মুরগির সালুনের হলুদ মরিচের ঝাল এবার আমার ওপর ঝেড়ে দিয়ে বললেন- এই নাকি আপনাদের বিখ্যাত রকেট স্টিমারের রেসিপির নমুনা! আমার নিজের ধারণা ছিল না বাংলাদেশ স্বাধীনতার কয়েক বছরের ব্যবধানে ঐতিহ্যবাহী রকেট সার্ভিসের সেই প্রতিষ্ঠিত বিশ্বখ্যাতি আজ শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের অভাবিত উন্নতির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে উন্নত বিশ^ যখন সত্যিকার রকেটে চড়ে আন্তঃগ্রহ পরিভ্রমণের কল্পনাকে বাস্তবে প্রায় রূপান্তরিত করে এনেছে, আমরা তখন আত্মঘাতী ও ভুল রাজনীতির কুটচালে আমাদের প্রতিভাকেই শুধু বিসর্জন দিচ্ছি না বরং উদ্ভট কল্পনায় ফানুস উড়িয়ে জাতিকে প্রবঞ্চনামূলক আত্মতৃপ্তির স্বপ্ন দেখাচ্ছি।
রাতের অন্ধকারের বুক চিরে গাজী স্টিমার তার পেটে টিউমার সদৃশ বিরাট আকারের স্টিম বয়লার ফেলে দিয়ে অধুনা ট্রান্সপ্লান্টেড শক্তিশালী ডিজেল ইঞ্জিনের দুই পাশের বিশাল প্যাডেল হুইলের ঘূর্ণনে নিস্তরঙ্গ। মেঘনার পানি কেটে এগিয়ে যাচ্ছে চাঁদপুরের ¤্রয়িমান বন্দরের দিকে। রাতের আকাশে জ¦ল জ¦ল করে জ¦লছে উজ্জ্বল গ্রহ নক্ষত্র। আলোকোজ্জ্বল শহরের বুকে রাতের আকাশের এমন উজ্জ্বল ঝকমকে চেহারাটা ফুটে উঠে না। এ কারণে চোখের আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকে আকাশের বুকে ফুটে থাকা এমন অজুত লক্ষ কোটি নক্ষত্রের রহস্যময়ী ছবি। উদার প্রকৃতির এমন মায়াময় পরিবেশকে অবহেলা করে বদ্ধ কেবিনের বিছানায় নাক ডেকে ঘুমানোর মধ্যে আমি কোনো অর্থই খুঁজে পাই না। রেজা ভাইয়ের মাঝেও খুঁজে পেলাম সেই একই মানসিকতা। কাজেই রকেট স্টিমারের ফ্রন্ট ডেকে চেয়ার পেতে বসে আমাদের আড্ডা জমাতে কোনো বাধা রইল না।
স্টিমারে বেড়ানোর কথা উঠলেই একটা নস্টালজিয়া আমাকে আবেগতাড়িত করে টেনে নিয়ে যায় পুরনো দিনের মণিকোঠায়। তখনো ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান কায়েম হয়নি। ইংরেজ আমলের অন্তিমপর্ব। আমি তখন ৭/৮ বছরের এক চঞ্চল বালক। এই গাজী স্টিমারে চড়ে জালালদি স্টেশন থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পৌঁছে সেখান থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বিখ্যাত শেখ বাড়িতে ছোট মামার বিয়েতে অংশগ্রহণ করা ছিল আমাদের গন্তব্য পথ। গাজী স্টিমার তখন কয়লার ইঞ্জিনে চলাচল করতো। কিন্তু সেবার স্টিমারের বয়লারে কি এক বিপত্তি ঘটায়, আমাদের সে বরযাত্রী না পৌঁছানোর কারণে বিবাহ বাসরে নেমে এসেছিল আনন্দের পরিবর্তে শব-যাত্রার বেদনা। যাইহোক, নির্ধারিত সময়ের একদিন পরে হলেও বিবাহ উৎসব শেষ পর্যন্ত জমেছিল এবং আমাদের জন্য কই মাছ ভাজা, মুরগির কোরমা, খাসির কাবাবসহ ২১ রকমের পিঠাপুলির জমজমাট খানাখাদ্যের আয়োজনে মুখরিত হয়েছিল।
ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমলের অন্তিমকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ বন্দর ছিল অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণের প্রধান ঘাট। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আজকের বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য নদীপথই ছিল প্রধান। ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত ইস্টার্ন রেলওয়ের কিছু ভাঙাচোরা বগি ও ওয়াগন নিয়ে ভারত বিভাগের সময় গঙ্গার মা ভাগবাটোয়ারায় ভারত ব্রডগেজের ভালো বগি সব আটকে দিয়েছিল বিধায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তা চলাচল করত। অন্য রুট ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ হয়ে জগন্নাথগঞ্জ ও বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত। নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর হয়ে পদ্মার স্রোতে উজিয়ে গোয়ালন্দ পর্যন্ত নদীপথে চলাচল ছিল খুব আয়েশি এবং মালামাল পরিবহণের জন্য খুব সহজ। এসব নদীপথে চলাচলের জন্য সে আমলে অন্ততপক্ষে ৪০/৫০টি কয়লাচালিত বড় বড় স্টিমার ৫/৬টি রুটে নিয়মিত চলাচল করতো।
এর ভেতর সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট ছিল গোয়ালন্দ ঘাট থেকে ছেড়ে আরিচার কাছে কাঞ্চনপুর হরিরামপুরের জালালদি ঘাট, তারপাশা, ষাটনল, চাঁদপুর হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। এ রুটটি জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ ছিল গোয়ালন্দ থেকে সরাসারি ট্রেনে কলকাতাসহ বহুদূর দূরান্তে রেলপথের যোগাযোগ থাকার কারণে।
দ্বিতীয় জনপ্রিয় রুট ছিল নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টিমার চাঁদপুর বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত যাতায়াত। তবে সবচেয়ে দীর্ঘতম নদীপথ ছিল নারায়ণগঞ্জ ঘাট থেকে যে স্টিমারগুলো চাঁদপুর, গোয়ালন্দ, জগন্নাথগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ, তিস্তামুখ ঘাট, ফুলছুড়ি হয়ে আসামের ধুবরী পর্যন্ত চলাচল করত। ৩/৪ দিনের এই দীর্ঘ যাত্রাপথ যাত্রীদের জন্য একগুঁয়েমির বিরক্তি সঞ্চার করলেও কেবিনে বসে উপভোগ করার এমন সুন্দরর সুযোগ অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব ছিল না।
বিচিত্র নামে স্টিমার চলতো সাধারণ যাত্রী পরিবহণের জন্য। যেমন- আলোয়ার, গাজী, সিন্ধি, বালুচ, শেরপা, গারো, কিউই, মাসুদ, মেহমন্ড, অস্ট্রিচ, ইরানি, আফগানি, টিল ইত্যাদি। নিকটবর্তী নৌরুটে চলাচল করত আরও বেশকিছু স্টিমার। যেমন- পিরোজপুর, লাকি, মেকলা, লেপচা, বার্মা, সন্দ্বীপ, শীল, মাজিরি, রাইসা ইত্যাদি।
সদরঘাট থেকে মানিকগঞ্জ রুটে চলতো সান্দ্রা, লেপচা, শিউলি, টিল-টার্ন এমন ধরনের কম ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টিমার। তখনকার দিনে ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ অথবা আরিচা ঘাট পর্যন্ত কোনো হাইওয়ে ছিল না। একমাত্র জলপথ ছিল এ অঞ্চলের যাতায়াতের জন্য সহজ মাধ্যম।
মালামাল পরিবহণের জন্য ছিল বিশেষ ধরনের স্টিমার, যেগুলোকে বলা হতো ডেসপাস স্টিমার। বিশাল আকারের এসব ডেসপাস স্টিমার ৫০০/৬০০ টন মালামাল সযতেœ লোড করে নিয়ে বিভিন্ন বন্দরের উদ্দেশে সারা বছরই বিভিন্ন খরস্রোতে নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, শীতলক্ষ্যা, ব্রহ্মপুত্র, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, তিস্তা, আত্রাই ইত্যাদির নদী প্রবাহ পাড়ি দিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরে আসাম প্রদেশ পর্যন্ত কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্যদিকে চাঁদপুর-বরিশাল থেকে খুলনা হয়ে গভীর সুন্দরবনের খাড়ি বেয়ে ডায়মন্ড হারবার ও কলকাতা পর্যন্ত নদীপথে স্টিমার চলাচলের নিয়মিত চল ছিল। মজার ব্যাপার ছিল এসব স্টিমার, ডেসপাস ও বিশাল আকারের ফ্লোটিং ফ্ল্যাট (যেখানে পরিবহণ করা মালামাল লোডিং ও আনলোডিং করার জন্য জমা করা হয়)। এসব জলযান কলকাতার খিদিরপুর ডকইয়ার্ড থেকে নির্মাণ করা হতো। ১৮৯৫ সাল থেকে ১৯০৩ সালের ভেতর এই ডকইয়ার্ড থেকে যেসব জাহাজ পন্টুন ফ্ল্যাটবার্জ তৈরি করা হয়েছে এখন পর্যন্ত পশ্চিম বাংলায় তার অস্তিত্ব টিকে না থাকলেও বাংলাদেশে তার অনেকগুলো বহাল তবিয়তে চালু রাখা সম্ভব হয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় বেশির ভাগ জলযান কলকাতা বন্দরে বিভিন্ন কৌশলে আগে থেকেই আটকে রাখা হয়েছিল, যাাতে পাকিস্তানের ভাগে এসব জলযান না পড়ে। কিন্তু তৎকালীন মুসলিম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ও খুলনার খান এ সবুরের নেতৃত্বে বেশকিছু স্টিমার ও ফ্ল্যাট পন্টুন খুলনা বন্দরে আটকে রাখায় কিউই, গাজী, অস্ট্রিচ, মাসুদ নামে বেশ কয়েকটি প্যাডেল হুইল স্টিমার পাকিস্তানের ভাগে ধরে রাখতে সক্ষম হয়, এ কারণে আজকে সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথে ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিস চালু রাখা সম্ভব হয়েছে। প্যাডেল হুইল সংযুক্ত এসব স্টিমারে জ্বালানি হিসেবে সরাসরি পাথর কয়লা ব্যবহৃত হতো। বিশাল আকারের বয়লার জাহাজের খোলে স্থাপন করে দগদগে কয়লার আগুনে পানি গরম করে স্টিম জমা করা হতো এবং সেই স্টিমের শক্তিতে ইস্পাত নির্মিত বিভিন্ন কলকব্জা ও বিশাল আকারের ইঞ্জিনকে চালু রাখা সম্ভব হতো। সে সময় নদীপথের সব জলযান কয়লার ইঞ্জিনে চলাচল করতো, এমনকি স্থলপথে রেলও চলতো কয়লার ইঞ্জিনে।
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে সম্পর্কহীন তৎকালীন বাঙালি সমাজ ছিল সম্পূর্ণভাবে কায়িক শ্রমনির্ভর ও পশ্চাৎপদ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতাযাতের বাহন বলতে ছিল পালকি, ঘোড়া বা গরুর গাড়ি। জলপথে গুনটানা, পালতোলা অথবা দাড়টানা কাঠের নৌকা। যেমন- বজরা, পানসি, বাছারি বা গয়নার নৌকা। নদী-খালের বিস্তৃতি ও গভীরতার সঙ্গে ও মালামাল পরিবহণের জন্য ছিল ভিন্ন ধরনের কোষা, ছান্দি বিচিত্র নামে নৌকা। এমন সামাজিক প্রেক্ষাপটে আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার নব আবিষ্কৃত তৎকালীন ব্রিটিশ রাজকর্তৃক প্রবর্তিত বাষ্পচালিত স্টিমার ও ট্রেন; স্থানীয় ভাষায় রেলগাড়িতে চড়ে বেড়ানোর সুযোগ তৎকালীন বাঙালি সমাজে যে কোনো স্তরের লোকের জন্যই ছিল চরম বিস্ময়ের, আনন্দের এক আকর্ষণীয় ভ্রমণ বিলাস।
তখনকার দিনে এসব প্যাসেঞ্জার স্টিমারে উচ্চ শেণির যাত্রীদের জন্য ছিল অত্যন্ত আয়েশি ও আভিজাত্যপূর্ণ প্রথম শ্রেণির কেবিন। দীর্ঘ যাত্রাপথে সদলবলে আড্ডা এবং ডিনার, লাঞ্চ ও ব্রেকফাস্ট করার জন্য ছিল অত্যন্ত রুচিসম্পন্ন সাজানো সেলুন। ফ্রন্ট ডেকে পাতা থাকতো পাহাড়ি বেতের তৈরি গার্ডেন চেয়ার, যেখানে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের ছিল এক রাজকীয় আয়োজন। প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণের সুযোগ ব্রিটিশ আমলে কোনো বাঙালি ভ্রমণকারীর জন্য অত্যন্ত সীমিত ছিল। কেননা, বাঙালি বলতেই তারা ছিল নেটিভ। নেটিভদের জন্য প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র সরকারি উঁচু পদে চাকরি অথবা অত্যন্ত অভিজাত শ্রেণি হিসেবে ব্রিটিশদের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে এমন কতিপয় লোকের জন্য প্রথম শ্রেণিতে যাতায়াতের সুযোগ মিলতো।
তবে দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্য যথেষ্ট ভালো সুযোগ ও কেবিনের ব্যবস্থা থাকলেও মধ্যম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য থাকতো বারোয়ারি কেবিন অর্থাৎ একই কেবিনে একাধিক পরিবার অথবা দলের নিরাপদ অবস্থানের সুযোগ। অন্য সব সাধারণ যাত্রীদের জন্য ছিল উন্মুক্ত ডেক, যেখানে কে কার আগে এসে জায়গা দখল নিতে পারে। এমন প্রতিযোগিতামূলক চর দখলের সুযোগ সাধারণ যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার ফলে প্রতিটি স্টেশনে স্টিমার ভেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই নেটিভ যাত্রীদের ভেতর যে হুলুস্থুল শুরু হতো, ব্রিটিশ প্রভুরা সেসব দৃশ্য দেখে খুব তৃপ্তি নিয়ে উপভোগ করতেন বলে মনে হয়। ডেকের খোলা চত্বরে একবার দখলে নিতে পারলে যার যার বিছানাপত্র, লোটা-কম্বল, বাক্স-পেটরা ইত্যাদি পাহাড় সাজিয়ে দখল করা এলাকা সংরক্ষণের ব্যবস্থাটা পাকাপোক্ত করে নিতে ভুল হতো না অভিজ্ঞ যাত্রীদের। তবে ভোগান্তি হতো নবাগত অথবা অত্যন্ত নিরীহ মেজাজের যাত্রীদের জন্য। অবশ্য জাহাজ চলা শুরু হলে অথবা কিছুক্ষণ অবস্থানের পর পরস্পরের মধ্যে আলাপ আলোচনা এবং বন্ধুত্ব গড়ে উঠতেও বেশি সময় নিত না।
স্টিমারের দ্বিতল ডেকে মাঝ বরাবর থাকতো বারোয়ারি টি-স্টল। জিবে পানি আসা হরেক রকমের মিষ্টি, রসগোল্লা, চমচম, কালোজাম, পানতোয়া, লেডিক্যানি ছাড়াও থাকতো গলাটেপা কাঁচের বোতলে লেমনেড পানীয়, পান, বিড়ি, সিগারেটসহ নানা পণ্য। মুখের সামনে ঝুলানো থাকতো পাকা সবরি অথবা রামপালের সাগর কলার ছড়া। নিচে বাটলারের কিচেন রুম থেকে ভেসে আসতো নদী থেকে সংগৃহীত তাজা ইলিশ ও রুই মাছ রান্নার সুবাস। চিকেন, মাটন অথবা ফিশ ফ্রাইয়ের অভিজাত শ্রেণির রেসিপির সুবাসে সাধারণ যাত্রীদের অর্ধ ভেজানোর তৃপ্তি পাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো প্রত্যাশাও ছিল না, সুযোগও ছিল না।
পাকিস্তান আমলেও রকেট স্টিমারে প্রথম শ্রেণির চাকচিক্য, আভিজাত্যের জৌলুস ব্রিটিশ আমলের মতো অতটা ধারালো না হলেও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সাবেক আমলের ধারাবাহিকতা বহাল রাখা হয়েছিল। রকেট স্টিমারের এই শানশওকত বিদেশি রাষ্ট্রীয় মেহমানদেরকে প্রদর্শন করার জন্য পাকিস্তানে সফর করতে এলে ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি রকেট স্টিমারে এসে খুলনার বিখ্যাত জুটমিল, নিউজপ্রিন্ট মিল এবং শিপইয়ার্ড পরিদর্শনের পর সুন্দরবনের মৃগয়া ভ্রমণ ছিল অবধারিত। বিশেষ করে পাকিস্তানের দোর্দ- প্রতাপশালী প্রেসিডেন্ট ফিল্ডমার্শাল আইয়ুব খানের রকেট স্টিমারে বসে বাটলারের জাদুর হাতের ডিনার না খেতে পারলে তার পূর্ব পাকিস্তান সফর পানসে হয়ে যেত। সে আমলে গাজী, কিউই, অস্ট্রিচ এমন সব স্টিমারে যেসব বাটলার চাকরিতে নিয়োজিত ছিল তাদের অনেকের গলায় এখনো হয় তো প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের দেয়া স্বর্ণপদক শোভা পাচ্ছে। তবে রকেট স্টিমারের প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণের বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়ে যে কোনো নাগরিকের সার্বজনীন অধিকার পাকিস্তান আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রকেট স্টিমারে ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল এদের পাকা বাবুর্চির হাতের লাঞ্চ ও ডিনার। এছাড়া কেতাদুরস্ত বয়-বেয়ারা যেভাবে যাত্রীদের সেবা প্রদান করতো তা মনে রাখার মতো। মাত্র এক টাকা চার আনায় হাতেটানা অত্যন্ত পরিশুদ্ধ মাখন, নিজেদের বেকিং করা সুস্বাদু রুটি, মামলেট, ডাবল এগ পোচ, রামপালের বিখ্যাত সাগর কলাসহ টি-কফি ছিল হেভি ব্রেকফাস্টের নির্ধারিত মেন্যু। লাঞ্চ ও ডিনার ছিল অত্যন্ত উঁচু মানের। ভরা এক বাটি মাখনসহ বাটার টোস্ট, ফিশ ফ্রাই উইথ পটেটো চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, স্মোকড হিলশা, চিকেন রোস্ট, মাটন স্টু এপ্রিকট সহকারে বিগ বাউলসে কাস্টার্ড পুডিংসহ ফিনিশিং টাচ দেয়া হতো টি-কফি দিয়ে। যার মূল্য ধরা হতো মাত্র ৪ টাকা। আর ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ভাড়া ছিল ৭০/৭৫ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণির ভাড়া ছিল ৪০ টাকা আর ইন্টার ক্লাসের ভাড়া ছিল ১৪ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণির ডেকের যাত্রীর ভাড়া ছিল ৮ টাকা। তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্য আলাদা খাবার রেস্টুরেন্টে বসে মাত্র ১০ আনায় পদ্মার তাজা ইলিশ ভাজা, মাংসের কারি ও ডাল ফ্রি পেটচুক্তি খাবারের স্বাদ ছিল অতুলনীয়। এমন সস্তার বাজারেও অফিসিয়াল ট্যুর ছাড়া খুব কম সংখ্যক বাঙালি দেখা যেত, যারা গাঁটের পয়সা খরচ করে রকেট স্টিমারের প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণ করতে সাহসী হতো।
স্টিমারের ওপেন ফ্রন্টডেক চেয়ারে বসে রেজা ভাইয়ের সঙ্গে পুরনো দিনের এসব আলাপচারিতায় কখন যে ঘড়িতে রাত ১টা বাজার নির্দেশক ঘর পার হয়ে গেছে টেরই পাইনি। দূর থেকে চাঁদপুর বন্দরের ঝলমল বৈদ্যুতিক বাতির আলোর ঝলকানি আমাদেরকে জানান দিচ্ছে ঘাট বেশি দূরে নয়। মাস্টার ব্রিজ থেকে সারেং সাহেব সিটি বাজিয়ে স্টিমারের আগমন বার্তা ঘোষণা করে দিচ্ছেন।
সৌখিন ভ্রমণপ্রিয় ব্যক্তিদের কাছে এখনো রকেট স্টিমার অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রথম পছন্দের নৌভ্রমণ। বর্তমানে রকেট স্টিমার বহরে চালু রয়েছে মাসুদ, অস্ট্রিচ, লেপচা ও টার্ন। এই স্টিমারগুলো থাকলেও নিয়মিত সার্ভিসে কখন কোন স্টিমার চালু থাকবে এই নিশ্চয়তা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকষর্ণীয় এবং প্রচুর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও কোনো ট্যুর অপারেটর রকেট সার্ভিস সংযোগ করে কোনো ভ্রমণ প্যাকেজ তৈরি করার ঝুঁকি নেয় না। কারণ, কেবিন রিজার্ভ পাওয়া যাবে কিনা বা রিজার্ভ করলেও ওই দিন কোনো উপরস্থ ব্যক্তি বা কর্মকর্তার ভ্রমণ সূচির কারণে কেবিন বাতিল হবে কিনা এমন অনিশ্চয়তা থেকে যায়। সৎ ও দক্ষ সারেং-সুকানি নিয়োগ দিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনার অধীনে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ পরিচালনায় এবং বিদেশি পর্যটকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সার্ভিসকে ন্যস্ত করা হলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় রিভারাইন ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান।