পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
ষোলো শতকের শেষার্ধে এ অঞ্চলে কাকশাল গোষ্ঠী দ্বারা একটি মুসলিম সমাজ গড়ে উঠেছিল এবং এ অঞ্চলটি (শেরপুর মোর্চা নামে ইতিহাসে লিখিত) কাকশালদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। পরবর্তীতে তারা মোগলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। খেরুয়া মসজিদ বাংলায় বিদ্যমান মোগল শাসনামলের মসজিদসমূহের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের মসজিদ হিসেবে চিহ্নিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি সুলতানি আমলের শেষে, বাংলায় মোগল শাসনের সূচনালগ্নে বারো ভূঁইয়া এবং বাংলায় অবস্থানরত আফগান প্রধানদের মোগল বিরোধী বিদ্রোহ চলাকালে নির্মিত।
আয়তাকার মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ১৭.৩৪ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৭.৫ মিটার। মসজিদের ভেতরের মাপ ১৩.৭২ মিটার x ৩.৮ মিটার (৪৫ ফুট × ১২.৫ ফুট)। চারদিকের দেয়াল প্রায় ১.৮৩ মিটার (৬ ফুট) পুরু। মসজিদের চারকোণে রয়েছে চারটি অষ্টভুজ মিনার। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে প্রবেশের জন্য তিনটি দরজা এবং মাঝের দরজাটি অপর দুটি থেকে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের।
উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালেও রয়েছে একটি করে দরজা। ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে আছে আয়তাকার কাঠামোর মধ্যে তিনটি অর্ধগোলাকার অবতল মেহরাব। মাঝের মেহরাবটি অপর দুটি থেকে আকারে বড়। এই মসজিদটির গম্বুজের সাথে সুলতানি আমলের গম্বুজ নির্মাণশৈলীর মিল রয়েছে। ছাদের কার্নিশের দু’ধার সামান্য বাঁকানো। বাংলার কুঁড়েঘরের আদলে নির্মিত এমন ছাদ পনেরো শতকে নির্মিত বাংলার অধিকাংশ স্থাপত্যে লক্ষ করা যায়।
মসজিদের সামনের দেয়ালে প্যানেলিং-এর কাজ করা। এ ধরনের কাজ ঢাকায় অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদেও লক্ষ করা যায়। বাংলার মোগল পর্বের সূচনাকালের মসজিদ হিসেবে খেরুয়া মসজিদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মসজিদটি তৎকালীন বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাক্ষ্য বহন করে।