পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
নওয়াববাড়ির বেশ কয়েকটি ভবন বগুড়া শহরে আছে। তন্মেধ্যে যে দ্বিতল ভবনে নওয়াব পরিবার থাকতেন, তাই এখন নওয়াব বাড়ি বলে পরিচিত। তবে এ ভবনের আশেপাশে একতালা ভবনও আছে দু-একটি। ছোট বড় মিলিয়ে মোট ভবন তিনটি। দ্বিতল ভবন একটি এবং একতালা ভবন দুইটি। দ্বিতল ভবনে ৮টি কক্ষ ৯টি দরজা।
একই ভবনের নিচ তালায় ১৬টি কক্ষের ১৩টি দরজা আছে। কারুভবনের ৪টি কক্ষে ১১টি দরজা আছে। এছাড়া অধঃস্তন কর্মচারীর জন্য ব্যবহৃত ৮টি ভবনেরও ৯টি দরজা আছে। নওয়াব বাড়ির গেট তিনটি। প্রথম গেট খোলা। দ্বিতীয় গেট লোহার তৈরী। তৃতীয় গেট কাঠের তৈরী। প্রধান গেটের উপর একটি ঘণ্টা ঝুলানো আছে। আরো আছে একটি সার্চ লাইট।
গেটের দেওয়ালে নানা ধরনের কারুকাজ করা। বিশাল উঠোনজুড়ে ছোট বড় গাছ আছে ৭১টি। যা বাসভবনের ছায়াদানসহ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সমুদয় বাসভবনের জন্য ব্যবহৃকত জমির পরিমাণ ১১ একর।
বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ি বর্তমানে মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা রাস্তার মোড় থেকে যে পাকা সড়ক পূর্ব দিকে কোর্ট ভবনে গিয়ে নওয়াব বাড়ি রোডে যুক্ত হয়েছে সেই রাস্তার পূর্ব ধারেই নওয়াব বাড়ি অবস্থিত। পূর্বধারে করতোয়া নদী ও দক্ষিণ দিকে কোর্ট কাঁচারী অবস্থিত।
১৯৯৮ সালের মে মাসে বগুড়ার নবাব মোহাম্মাদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম অ্যান্ড অ্যামাউজমেন্ট পার্ক বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে। নবাব প্যালেসে প্রবেশ করলে দেখা যাবে তরুণী-কৃষাণী বধূরা অপেক্ষা করছে তার প্রেমিক কৃষাণের জন্য। নবাববাড়ির চারদিকে পাতাঝরা গাছে পাখি বসে আছে।
কোনো কোনো গাছে পাখিরা ঠোকাঠুকি করছে। পুরনো প্যালেসটি বিশাল এক জাদুঘর। বিনোদন কেন্দ্র, জোড়া ঘোড়ার গাড়ি, কোচওয়ানদের হাতে চাবুক। বগুড়ার নবাববাড়ির অতীত দিনের নেপালি দারোয়ান, মালী, পালকি, বেহারা, কোচওয়ান, টমটম, সিংহ, বাঘ, কুমির, ময়ূর, রাজহাঁস, বিভিন্ন পাখির প্রতিমূর্তি সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
নবাববাড়ি বিরাট হলরুমের দেয়ালে নবাব সৈয়দ আবদুস সোবাহান চৌধুরী, নবাবজাদা সৈয়দ আলতাফ আলী চৌধুরী, তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মাদ আলী, সৈয়দা তহুরুন নেছা চৌধুরানী, সৈয়দা আলতাফুন নেছা চৌধুরানী। নবাব আমলের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে শিল্পী আমিনুল করিম দুলাল এগিয়ে আসেন।
সৈয়দ ওমর আলী চৌধুরীর উদ্যোগে শিল্পী আমিনুল ইসলাম দুলাল তার সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে ইতিহাসের সূতিকাগার নবাববাড়িকে রক্ষা করেন এবং একে দর্শনীয় স্থানে রূপদানের চেষ্টা করেন। শিল্পী দুলালের সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে সৈয়দ ওমর মশগুল, অতিথি আপ্যায়ন, বিলিয়ার্ড খেলা, পড়ার ঘরে বই সাজানো, জলসা ঘরে জলসার দৃশ্য, নায়েবের খাজনা আদায় এমন অনেক দৃশ্য জীবন্ত করে তোলার জন্য ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।
সময়সূচি
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। ৩০ টাকার টিকিট কিনে মূল গেট পার হতে হয়। এরপর ট্রেন, দোলনা, বিমানে চড়া এবং নবাববাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে টিকিট প্রয়োজন হয়। নবাব সৈয়দ আলতাফ আলী চৌধুরীর অবর্তমানে তার ছেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী নবাববাড়ীর একমাত্র উত্তরাধিকার ছিলেন। পরবর্তীকালে তার তিন ছেলে সৈয়দ হাম্মদ আলী, সৈয়দ হামদে আলী ও সৈয়দ মাহমুদ আলী এবং মেয়ে সৈয়দা মাহমুদা আলী পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে নবাব বাড়ির মালিক হন। বর্তমানে এই জাদুঘরের দেখাশোনা করেন সৈয়দ মোহাম্মাদ আলীর ছেলে সৈয়দ হামদে আলী চৌধুরী।