পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
স্থানীয়ভাবে এটি তোতারাম পন্ডিতের ধাপ বা তোতারাম পন্ডিতের বাড়ি নামেও পরিচিত। এটি বগুড়ার শিবগঞ্জের বিহার নামক গ্রামে অবস্থিত। এর পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক দিয়ে নাগর নদী প্রবাহিত হয়েছে। এটি মহাস্থানগড় থেকে প্রায় চার কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে ও ভাসু বিহার থেকে প্রায় এক কি.মি. দূরে অবস্থিত।
বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩৮-৬৪৫ খ্রি. এই সময়কালে বাংলার এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি মহাস্থানগড় থেকে ৬ কি.মি. পশ্চিমে পো-সি-পো বিহার নামে এক বিহারের কথা উল্লেখ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, এই বিহার ধাপই সেই পো-সি-পো বিহার। এখানে ১৯৭৯-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে খনন কাজ চলে। এতে পশ্চিম অংশে পাশাপাশি দুইটি বৌদ্ধ বিহার এবং পূর্ব দিকে একটি মন্দিরের অবকাঠামো আংশিকভাবে উন্মোচিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৫-০৬ সালের দিকে পুনরায় খনন কাজ চালানো হয়। তখন পূর্বে আবিস্কৃত মন্দিরের পাশে আরও একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের কিয়দংশ উন্মোচিত হয়। দুইটি মন্দিরই উত্তরমুখী।
বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে এখানে এক হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্রোঞ্জ নির্মিত ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি, রৌপ্য মুদ্রা, কাঁচের পুঁতি, ৬০টি পোড়ামাটির ফলক চিত্র, পোড়া মাটির সীল মোহর, ধুপদানী, পিরিচ, মাটির পাত্র, ১০০টি নকশা অঙ্কিত ইট, লোহার পেরেক ইত্যাদি।
প্রথম নির্মাণ যুগের স্থাপত্যকাঠামো ও সংশ্লিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ যুগের কাল নির্ধারণ করা হয় চার অথবা পাঁচ শতক। ধারণা করা হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্মাণকাল ছয় থেকে দশ শতকের। চতুর্থ থেকে পঞ্চম নির্মাণ যুগের স্থাপত্যকর্মে অনেক ক্ষেত্রেই পুরানো ইটের পুনর্ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। আরও ধারণা করা হয় আনুমানিক এগারো থেকে বারো শতক এই সময়ের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে এই প্রত্নস্থলটির পতন ঘটে।