পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
বান্দরবান প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে এর সবুজে ঢাকা পাহাড়, উন্মত্ত জলপ্রপাত এবং ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর মানুষগুলো। চলুন জেনে নেওয়া যাক বান্দরবানের সেরা ৬ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে:
নীলগিরি
নীলগিরিকে বলা হয় বাংলার দার্জিলিং। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে নীলগিরির অবস্থান। এখানে দীগন্ত জুড়ে সবুজ পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি যে কাউকে বিমোহিত করে রাখবে। নীলগিরি থেকে চারপাশে চোখ মেলে তাকালে সারি সারি মেঘের পাহাড়ে আছড়ে পড়া ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য আপনাকে বিমোহিত করবে। নীলগিরির চূড়া থেকে পাহাড়ের সারির পাশাপাশি আকাশ পরিষ্কার থাকলে আপনার চোখে পড়বে বগালেক, বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া কেওক্রাডং, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও সাঙ্গু নদী।
নীলাচল
বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি নীলাচল যা টাইগারপাড়া এলাকায় অবস্থিত। চারদিকে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের ঢালে কোথাও আঁকা-বাঁকা রাস্তা, পাহাড়ী পাড়া আর রূপালী নদীগুলো যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। এই পাহাড় থেকে এক নজরে দেখা যাবে পুরো বান্দরবান শহর। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যেতে পারে এখান থেকেও।

চিম্বুক পাহাড়
বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। চান্দের গাড়ি দিয়ে চিম্বুক ভ্রমণের সময় এর চারপাশের নয়নাভিরাম প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়। দর্শনার্থীরা যখন এই জায়গা থেকে নিচের দিকে তাকায়, তারা মেঘের ভেলা দেখে অবাক হয়ে যায়। বান্দরবান শহর থেকে পৌঁছাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিকাল ৪টার পর চিম্বুক-থানচি রুটে কোনো যানবাহন চলবে না। সাধারণত পর্যটকরা চিম্বুক, নীলগিরি, মিলনছড়ি, এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণা একসঙ্গে দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া করে।
শৈলপ্রপাত ঝর্ণা
মিলনছড়ির এই জলপ্রপাতটি থানচি থানা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। এর অত্যন্ত ঠাণ্ডা এবং স্বচ্ছ পানিতে প্রচুর পাথর দেখা যায়। ঝর্ণাটি স্থানীয়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির একটি বড় উৎস। জলপ্রপাতের বাইরে একটি বাজারও রয়েছে যেখানে পর্যটকরা তাঁত পণ্য এবং স্থানীয় খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারেন। এখান থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী জীবন গভীরভাবে অবলোকন করা যায়। বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণ চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরির পথের মাঝেই পড়ে শৈলপ্রপাত। তাই নীলগিরি ভ্রমণের গাড়ি মাঝপথে থামিয়ে এই ঝর্ণা দেখে নেয়া যায়।
স্বর্ণ মন্দির
এই বৌদ্ধ মন্দিরটির আসল নাম বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির, যেটি বান্দরবানের সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহের একটি। মিয়ানমারের কারিগরদের কাঠের তৈরি এই অনন্য মন্দিরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে। মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

কেওক্রাডং
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ১৭২ ফুট উঁচু এই পর্বতটি রুমা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ছোট-বড় পাহাড়-পর্বতের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দুর্গম এলাকা। কেওক্রাডং বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। সবুজ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য, শীতল ঝর্ণা, আঁকাবাঁকা পথ, পাহাড়ি রাস্তার ধারে, পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের লুকোচুরির খেলা; এই সব কিছু মিলে মনে নেশা ধরিয়ে দিবে। রুমা থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে মাঝে পড়বে দার্জিলিং পাড়া নামে একটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের গ্রাম। অনেক পর্যটকই যাত্রা বিরতি দিয়ে এই অপূর্ব গ্রামটিতে বিশ্রাম নেন।
ঢাকা থেকে বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাওয়ার উপায়
প্রথমেই বান্দরবান যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি শুধুমাত্র বাস আছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন— শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন- এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানে যেতে পারেন। রাত ১০টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
তবে চট্টগ্রামে সরাসরি যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমান, ট্রেন, বাস; তিনটির যে কোনোটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে লোকাল বাসে যেতে হবে বান্দরবান। চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে বান্দরবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। পরে বান্দরবান থেকে উপরোক্ত দর্শনীয় জায়গাগুলো ভ্রমণের জন্য আছে লোকাল বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, জিপ এবং চান্দের গাড়ি। এই গাড়িগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাওয়া যায়।

সতর্কতা
বান্দরবানের সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ ভ্রমণে যে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সেটি হচ্ছে- আর্মিদের চেকিংয়ের সুবিধার্থে সঙ্গে সব ধরনের পরিচয়পত্র থাকা বাঞ্ছনীয়। বিকেল ৪টার পর আর্মি ক্যাম্প থেকে আর অনুমতি মেলে না। একই সঙ্গে যানবাহন পাওয়ারও কোনো উপায় থাকে না। তাই পুরো যাত্রাটি অনেক সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা উচিত। বর্ষাকালে বান্দরবানকে অধিক সুন্দর দেখালেও এই সময় জায়গাগুলোর বিপজ্জনক অবস্থার কথাও মাথায় রাখতে হবে।
থাকার ব্যবস্থা
অল্প সময়ে বান্দরবানের সকল দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করা সম্ভব নয় তাই সৌন্দর্য্য আহরণে পর্যটকদের প্রায়শই বান্দরবানে রাত্রিযাপন করতে হয়। বান্দরবানের সকল রিসোর্ট ও হোটেলের নাম, অবস্থান, থাকতে কেমন খরচ হবে, শহর থেকে দূরত্ব এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানানো হলো। হোটেল ভাড়া অনেক সময় পরিবর্তন হয়, তাই বুকিং এর আগে যোগাযোগ করে বর্তমান ভাড়া জেনে নিন। এছাড়া বিভিন্ন উপলক্ষে হোটেল ভাড়ার উপর ডিসকাউন্ট অফার থাকে। তাই খরচ কমাতে সেই সময় প্যাকেজ কিংবা অফারগুলোর উপর নজর রাখুন।
বান্দরবানের সেরা হোটেল ও রিসোর্টগুলো—
সাইরু হিল রিসোর্ট
বান্দরবান জেলা শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাইরু হিল রিসোর্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম। বান্দরবান থেকে চিম্বুক পাহাড়ে যাবার পথে দেখা মিলবে চমৎকার এই রিসোর্টের। নান্দনিক ডিজাইন, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধায় সাইরু হিল রিসোর্ট হৃদয়কাড়ে বৈশিষ্ট্যের স্বকীয়তায়। সাইরু হিল রিসোর্টের কটেজগুলোতে রাত্রিযাপন করতে হলে ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।
মোবাইল: ০১৮৪৭-৪১৭৩০৬
ওয়েবসাইট: sairuresort.com

নীলগিরি হিল রিসোর্ট
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪০০ ফুট উপরে নীলগিরি পাহাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত নীলগিরি হিল রিসোর্ট অবস্থিত। সাজানো গোছানো, ছিমছাম এই রিসোর্ট থেকে রাতে জ্যোৎস্না দেখার অপূর্ব অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। এছাড়া চারপাশে শুভ্র মেঘের উড়াউড়িও আপনাকে বিমোহিত করবে নিঃসন্দেহে। নীলগিরি হিল রিসোর্টে মেঘদূত, আকাশলীনা, মারমা, ইনছায়া, ইখিয়াই, মারুইপ্রে, মরুইফং, নীলাঞ্জনা নামের ছোট-বড় মোট ৮টি কটেজ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মোবাইল: ০১৭৬৯-২৯৯৯৯৯
ওয়েবসাইট: nilgiriresortbd.com
লাবাহ টঙ হিল রিসোর্ট
লাবাহ টং হিল রিসোর্ট লিমিটেড বান্দরবানের চিম্বুক রোডে হাফেজগোনায় অবস্থিত, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি হিল রিসোর্ট। বিলাসবহুল এই রিসোর্টে বিভিন্ন মানের রুম, স্যুইট এবং কটেজ রয়েছে যার ভাড়া ১২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।
মোবাইল: ০১৮৯৪-৯৩৮১৫০
ওয়েবসাইট: labahtong.com
ইকোসেন্স রিসোর্ট
ইকোসেন্স রিসোর্ট বান্দরবানের নীলাচলে অবস্থিত একটি ইকো-ফ্রেন্ডলি রিসোর্ট ও সবুজ পাহাড়ি পরিবেশে ঘেরা। ইকোসেন্স রিসোর্টের প্রতিটি কটেজে রয়েছে এয়ার কন্ডিশনিং, হট ও কোল্ড ওয়াটার, হেয়ার ড্রায়ার, ওয়াল-মাউন্টেড এলইডি টিভি, মিনি-ফ্রিজ, চা/কফি সেটআপ, কিং সাইজ বেড এবং ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুবিধা। এই রিসোর্টে থাকতে খরচ হবে ১২ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মোবাইল: ০১৭৭৭-৭৬৫৭৮৯
ওয়েবসাইট: ecosensebd.com
গ্রিন পিক রিসোর্ট
বান্দরবান শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স ছাড়িয়ে আরো আধা কিলোমিটার এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে সবুজ প্রকৃতির কোলে গড়ে তোলা গ্রিন পিক রিসোর্ট। আধুনিক ও প্রয়োজনীয় সকল উপকরণে সুসজ্জিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা, সুইমিংপুল, মাল্টিকুইজিন রেস্তোরাঁ এবং রিসোর্টের অতিথি সেবার মান গ্রিন পিক রিসোর্টকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত করেছে। চোখ জুড়ানো সবুজের কোলে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ এই রিসোর্টে থাকতে হলে খরচ পড়বে সাড়ে ৬ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মোবাইল: ০১৭৪৩-৩৩৫৯৯৯
ওয়েবসাইট: greenpeakresort.com

হোটেল প্লাজা বান্দরবান
নিরিবিলি পরিবেশে বান্দরবান শহরের মধ্যে থাকতে চাইলে হোটেল প্লাজা বান্দরবান হতে পারে আপনার জন্য সঠিক নির্বাচন। নিজস্ব রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থা সম্বলিত এই হোটেলে আছে ১০০ আসনের কনফারেন্স হল, বার বি কিউ এবং কমপ্লিমেন্টারি সকালের নাস্তার সুবিধা। হোটেল প্লাজা বান্দরবানের বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুমে ২৬৪৫ থেকে ৬৩২৫ টাকার বিনিময়ে থাকতে পারবেন। এছাড়াও এখানে ৫০০ টাকার বিনিময়ে এক্সট্রা বেড নেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
মোবাইল: ০১৬৭৮-০৬০১০৭
ওয়েবসাইট: plazabandarban.com
হোটেল নাইট হেভেন
বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের কাছে গড়ে তোলা হয়েছে হোটেল নাইট হেভেন।
এসি, নন-এসি, স্ট্যান্ডার্ড টুইন নন-এসি, ফোর বেড নন-এসি এবং স্যুইট ইত্যাদি ৫ ক্যাটাগরির রুমের যেকোন একটিতে থাকতে হলে ভাড়া লাগবে ১৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মোবাইল: ০১৮৫৮-৯৩৮২৭৩
ওয়েবসাইট: hotelnightheaven.com