মহিউদ্দিন হেলাল – (চেয়ারম্যান এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার, সম্পাদক পর্যটন বিচিত্রা)
পর্যটন একটি বহুমাত্রিক শিল্প। সে বিবেচনায় একক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পর্যটন শিল্প বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা না থাকায় বিগত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে অসীম সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই শিল্পের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি এবং এই শিল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করে সামনে এগিয়ে নেয়ার যথাযথ পরিকল্পনাও রচিত হয়নি।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটিসহ হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (হোটেল সোনারগাঁও) ও বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা) নামের প্রতিষ্ঠান থাকলেও কাক্সিক্ষত পর্যটন উন্নয়নে সম্মিলিত উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পর্যটন সেবা নিশ্চিত করতে ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এ সকল প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম পরিকল্পনা করতে হবে। বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে যথাযথভাবে আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে পর্যটকদের সেবা প্রদান শুরু হয় বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে। এরপর এয়ারপোর্ট, এয়ারলাইন্স, হোটেল, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পর্যটন সেবা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।
পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে অনেকগুলো সেক্টর। উল্লেখ্য যে, একটি পর্যটন গন্তব্য বা দর্শনীয় স্থানের পর্যটন সেবা নিশ্চিত করতে যে সকল উন্নয়ন অবকাঠামোর প্রয়োজন পড়ে তন্মধ্যে অন্যতম হলো যাতায়াত ব্যবস্থা, আবাসন ব্যবস্থা ও বিনোদন ব্যবস্থার উন্নয়ন। আর এসব হলো জনগণের মৌলিক চাহিদার অংশ। তবে এই অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনায় যদি পর্যটন শিল্পের গুরুত্বকে বিবেচনায় নেয়া হয় বা পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো তৈরি করা হয়, সেক্ষেত্রে জনগণের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এই অবকাঠামো নিজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হতে পারে। একটি অবকাঠামো যদি পর্যটন সেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়; স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল করতে পারে।
সে বিবেচনায় অনেকগুলো সেক্টরের সম্মিলিত উদ্যোগে যেমন পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে, তেমনি অনেকগুলো সংশ্লিষ্ট শিল্প পর্যটনকে একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তাদের উদ্যোগ গ্রহণ করলে বা পর্যটনবান্ধব অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের অধীনে পর্যটন শিল্প অগ্রাধিকার শিল্প হিসেবে ঘোষোণার মধ্য দিয়ে এই শিল্পের সম্মিলিত উদ্যোগের আলোকিত অধ্যায়ের শুভ সূচনা হবে এমন প্রত্যাশা পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের।
খুলবে পর্যটনের দুয়ার-এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার
দেশের পর্যটন একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। পর্যটন শিল্পে গতি ফেরাতে ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শুরু হলো ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার ২০২৪। পর্যটন শিল্পের সকল গন্তব্যসহ হোটেল, রিসোর্ট, এয়ারলাইন্স, ক্রুজলাইন্স, থিমপার্ক, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট ও সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের গতি ফেরাতে ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা, ঢাকায় পর্যটন বিচিত্রার উদ্যোগে এই মেলা। পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে মেলায় থাকছে দেশ ও বিদেশ ভ্রমণে নানাবিধ প্যাকেজ অফার। মেলার বি২বি সেশন, ডেসটিনেশন ও প্রোডাক্ট প্রেজেন্টেশন, প্যানেল ডিসকাশনসহ নানাবিধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা হবে। পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে এই মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পর্যটকদের মধ্যে আবারও নুতনভাবে ভ্রমণের উদ্দীপনা তৈরি হবে, তারা সাশ্রয়ী মূল্যে বেড়ানোর সুযোগ পাবে এবং আসন্ন মৌসুমে সকল পর্যটন গন্তব্য পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে। পাঠক ও পর্যটকদের প্রতি এমন প্রত্যাশাই রইলো।