পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
মাথায় বরফের সাদা ক্যাপ পরে থাকা নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট তারানাকি এখন আর শুধু একটি পর্বত নয়। বর্তমানে তারানাকি মাউঙ্গা নামে পরিচিতি পাওয়া এই পর্বতকে স্থানীয় মাউরি জনগোষ্ঠী বরাবরই তাদের পূর্বপুরুষ হিসেবে ভেবে এসেছে।
কিন্তু অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতকের উপনিবেশকারীরা তাদের কাছ থেকে এই পবিত্র ভূমি কেড়ে নিয়েছিল। অবশেষে নিউজিল্যান্ড সরকার একটি নতুন আইন পাস করে এই পর্বতকে সম্পূর্ণ মানবিক অধিকার ও দায়িত্ব প্রদান করেছে। বিষয়টিকে ঐতিহাসিকভাবে ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন আইন অনুযায়ী, তারানাকি মাউঙ্গার মানুষ সত্তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘তে কাহুই তুপুয়া’। আইনিভাবে এখন এই পর্বত ও তার আশপাশের ভূমিকে একটি জীবন্ত ও অবিভাজ্য সত্তা হিসেবে গণ্য করা হবে। এতে পর্বতটির সংরক্ষণ, ঐতিহ্যগত ব্যবহার ও এর সুস্থতা রক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই আইনটি মাউরি জনগণের বিরুদ্ধে উপনিবেশবাদী অন্যায়ের স্বীকৃতি হিসেবে এসেছে। ১৮৬৫ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা মাওরিদের বিদ্রোহ দমনের জন্য তাদের ভূমি বাজেয়াপ্ত করেছিল। পরে শত বছর ধরে ওই সব অঞ্চলে পর্যটন ও শিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং পর্বতটিকে ঘিরে মাউরিদের যেসব ঐতিহ্যগত কর্মকাণ্ড প্রচলিত ছিল সেগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়।
সর্বশেষ নতুন আইনি অধিকার তারানাকি পর্বতটির স্বাস্থ্য ও সুস্থতা রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এর ফলে, কেউ চাইলেই ওই অঞ্চলটির ভূমি জোর করে কিনতে পারবেন না। এ ছাড়া পর্বতটি ঘিরে মাউরিদের ঐতিহ্যগত ব্যবহারের যেসব প্রথা ছিল সেগুলো আবারও প্রবর্তন করা হবে এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া যাবে। তবে, সাধারণ মানুষের জন্য পর্বতে প্রবেশ ও ভ্রমণ এখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি।
আইনটি পাস হওয়ার সময় সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে ভোট দিয়েছেন। সংসদ গ্যালারিতে উপস্থিত মাউরি জনগোষ্ঠী আনন্দে ‘ওয়াইতা’ (মাওরি গান) গেয়ে মুহূর্তটি উদ্যাপন করেন।
নিউজিল্যান্ড বিশ্বে প্রথম দেশ, যেখানে প্রকৃতিকে আইনিভাবে ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৪ সালে তে উরেওরা নামে এক বিশাল বনভূমিকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে ওয়াঙ্গানুই নদীকেও একই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।